দীঘা বেড়াতে যাব
‘নিয়মমাফিক জীবনের সাথে করে একটু আড়ি
জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে আসি তাড়াতাড়ি।’
গত এপ্রিল মাসে স্কুল জীবনের সর্বশেষ পরীক্ষা অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম। এখন রেজাল্টের অপেক্ষায়। স্কুল জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেবে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনই আবার কলেজ জীবন নিয়ে ভাবলে একরাশ স্বপ্ন এসে চোখে ভিড় করছে। জীবনের এই সন্ধিক্ষণটা এই ছুটির মরশুমে উপভোগ করছি। এতদিন স্কুলে থাকাকালীন পড়াশোনার চাপে কোনওদিনই সেভাবে গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া হয়নি। তবে, এবার দীঘা যাওয়ার প্ল্যান করেছি। শুধু ঠাকুরকে ডাকছি, আমরা যখন দীঘা বেড়াতে যাব, তখন যেন একটু মেঘলা আবহাওয়া থাকে। প্রচণ্ড গরমে ঘুরতে কষ্ট হবে। দীঘার আশপাশে তালসারি, চন্দনেশ্বর মন্দির ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আর মনে মনে ঠিক করে রেখেছি, সমুদ্রের ধারে হাঁটব এবং টুক টুক করে ঝিনুক কুড়িয়ে নেব।
— প্রীতি দাস,
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী,
মেজিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
ছবি এঁকে ছুটি কাটছে
সামনের বছর আমার মাধ্যমিক। তাই এ বছর লেখাপড়ায় এতটুকু ফাঁকি দেওয়া চলছে। গরমের ছুটিতে বেশ কয়েকবার বেড়াতে গেলেও এ বছর বাবা-মা বলেই দিয়েছেন, নৈব নৈব চঃ। তাই মন দিয়ে পড়াশোনা করছি। তবে, লম্বা ছুটিতে তো আর সব সময় বই মুখে করে বসে নেই! ছুটির আনন্দ উপভোগ করার একটা পন্থা খুঁজে নিয়েছি আমি— ছবি আঁকা। সময় সুযোগ পেলেই ছবি আঁকছি। এছাড়াও আমার নাচের ক্লাস থাকছে। সেই সঙ্গে দু’-একটা গল্পের বইও পড়ে ফেলেছি। তবে, সব কিছুর মধ্যে ছবি এঁকে ছুটি কাটানোটা সত্যিই আমার কাছে অভিনব।
— সায়নী বন্দ্যোপাধ্যায়, দশম শ্রেণি, পুরুলিয়া শান্তময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
চার সপ্তাহে চার বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা
বৃষ্টি পড়ার কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমার গরমের ছুটির একমাত্র প্ল্যান ছিল বাড়িতে পাখার নীচে শুয়ে দিন কাটাব। গরমে রোদে পুড়ে ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এর মধ্যেই এগিয়ে এল ছুটি। কিন্তু যেদিন বৃষ্টি নামল, সেদিন আমার ছুটি কাটানোর পরিকল্পনায় খানিকটা বদল এল। এ বছর গরমের ছুটিতে আমার ভাগ্যে ‘দীপুদা’ (দীঘা-পুরী-দার্জিলিং) ভ্রমণের কোনও রকম সম্ভাবনা নেই, তা আগেই জেনে গিয়েছিলাম। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঠিক করে নিই সপ্তাহে একদিন করে এক-একজন বন্ধুর বাড়িতে আমরা কয়েকজন আড্ডা দেব। গরমের ছুটি চলবে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে। তার মানে চার বন্ধুর বাড়িতে বসবে সাপ্তাহিক আড্ডার আসর। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সবের সঙ্গে প্রাত্যহিক পড়াশোনা তো থাকছেই।
— শ্রীজিতা মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণি, পাঠভবন (বিশ্বভারতী)
গ্রীষ্মের দুপুরে বই পড়ার মজাটাই আলাদা
সত্যিই দুঃস্বপ্ন যেন আর কিছুতেই পিছু ছাড়তে চায় না। দু’বছর পর করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে যেই স্কুল খুলল, কিছুদিন ক্লাস করলাম, অমনি অসহ্য গরম এসে কোথা থেকে হাজির হল। আর গরমের ছুটিও এল এগিয়ে। তবে, এটা ঠিকই যে, গ্রীষ্মের অলস দুপুরে রোমহর্ষক বই পড়ার মজাটাই আলাদা। বই পড়েই কাটছে আমার গরমের ছুটি। এবারের ছুটিতে কাকাবাবু সমগ্রের পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ডটা শেষ করব বলে স্থির করেছি। অ্যাডভেঞ্চার গল্পের মধ্যে রাজা রায়চৌধুরী ও সুনন্দ রায়চৌধুরী অর্থাৎ কাকাবাবু-সন্তু জুটিটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। এর মধ্যে ব্ল্যাকহোল ও কসমোলজি নিয়ে জানার নেশাও আমাকে গ্রাস করেছে। স্টিফেন হকিংসের ‘দ্য ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ আই সি’ বই দু’টি জোগাড় করেছি। এই বই দু’টিও পড়ার ইচ্ছা রয়েছে। আর পড়ার বই তো রয়েইছে। সব মিলিয়ে বইয়ের সঙ্গে কাটছে এবারের গরমের ছুটি।
— চন্দন মাহাতো,
নবম শ্রেণি,
রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁকুড়া
গাছের সঙ্গে সময় কাটছে
দিন পনেরোর বেশি হয়ে গেল গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। তবে, পড়াশোনা থমকে নেই। টিউশনের কল্যাণে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে। সিকিম যাওয়ার প্ল্যানও হয়েছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলিতে এ সময়ে যথারীতি টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। তাই টিকিট না পাওয়ায় সেই প্ল্যান গিয়েছে ভেস্তে। বেড়াতে যাওয়া হয়নি তো কী হয়েছে, আমি আমার মতো করে গরমের ছুটিতে মজা করছি। আমাদের বাড়ির মধ্যে যে ফাঁকা জায়গাটা রয়েছে, তাতে হরেক রকমের গাছ লাগিয়েছি। রোজ গাছে জল দিচ্ছি। আমার উৎসাহে বাবা-ই গাছের চারাগুলো কিনে এনে দিয়েছে। গাছের সঙ্গে সময় কাটাতে দারুণ লাগছে। তাছাড়া এ পৃথিবীকে দূষণে হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে যে, গাছই আমাদের একমাত্র বন্ধু। তাই যে করেই হোক আমাদের সকলকে সবুজ বাঁচাতেই হবে।
— বিদ্যারতি হাজরা,
দশম শ্রেণি,
সালকিয়া কে বি আর গার্লস হাইস্কুল
সাঁতারে ভর্তি হয়েছি
এ বছর গরমের ছুটির অভিজ্ঞতা আমার কাছে অন্য রকম। কারণ এই লম্বা ছুটির সুযোগেই আমি সাঁতারে ভর্তি হয়েছি। সাঁতার কাটতেও খুব মজা লাগছে। আগামী বছর আমি মাধ্যমিক দেব। তাই লেখাপড়ার চাপও খুব বেশি। কিন্তু সাঁতারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বুঝতে পারছি— এ জন্যই বলে খেলাধুলো মানুষকে চাপমুক্ত রাখে। আমাদের প্রজন্মের জন্য শরীরচর্চা একান্ত প্রয়োজন। টিভি ও মোবাইলের প্রতি যে আকর্ষণটা ছিল, সাঁতারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সেটা অনেকটা কমে গিয়েছে। ফলে মায়ের বকুনিও কমেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্কুল খুললে পড়ার চাপ সামলে সাঁতারটা চালিয়ে যাব। আর এখন গরমের ছুটিতে বাড়িতে বসে তরমুজ, লিচু আর আম— মানে গ্রীষ্মকালীন ফল চুটিয়ে খাচ্ছি।
— গৌরব মণ্ডল,
দশম শ্রেণি,
বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়