বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

স্টেডিয়ামের  জল বিক্রেতা 
থেকে দুরন্ত স্ট্রাইকার
জয় চৌধুরী

আটের দশকের মাঝামাঝি। স্থান ত্রিচুর মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে সোডার বোতল কাঁধে ঘুরে বেড়াত ১৩ বছরের এক কিশোর। মাত্র ২৫ পয়সার বিনিময়ে সেই জল তুলে দিত কোনও তৃষ্ণার্ত দর্শকের হাতে। সেসময় স্থানীয় লিগের ম্যাচ থাকলে রোজই দেখা যেত এই ছোট্ট ছেলেটিকে। তবে শুধু জল বিক্রি নয়, অফ সিজনে ছুটত বিভিন্ন মেলায়। কখনও কখনও শহরের সিনেমা হলগুলির সামনেও তাকে দেখা যেত। শৈশবে অর্থ উপার্জন করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। কারণ তার বাড়িতে যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। একাধিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল সে। সুযোগ পেলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফুটবল খেলার জন্য ছুটে যেত ওই কিশোর। ভালো খেললে পারিশ্রমিক হিসেবে জুটত সামান্য অর্থও। ক্রমশ এই নেশাই রূপ নেয় পেশায়। সেদিনের ছোট্ট ছেলেটাই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আই এম বিজয়ন। যাঁকে আজও ফুটবল অনুরাগীরা ভালোবেসে ডাকেন ‘কালো হরিণ’ নামে।
ত্রিচুরের এক হতদরিদ্র্র পরিবারে জন্ম আই এম বিজয়নের। স্থানীয় স্টেশনে জুতো সারানোর দোকান ছিল তাঁর বাবার। এলাকার চার্চ মিশন সোসাইটি স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনার দিকে তেমন মন ছিল না বিজুর। তার উপর অনটনের সংসারে বাবার উপার্জনে পাঁচজনের পেট চলত না। তাই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই উপার্জনের পথে নেমে পড়তে হয় বিজুকে। এই সময় কেরল রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের একটি ছোট্ট সিদ্ধান্ত তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
১৯৮৫ সালের মে মাসের ঘটনা। কেরল রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ এক কোচিং ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল ত্রিচুরে। কোচের দায়িত্বে টি কে চাটুনি। ত্রিচুরের ওই ক্যাম্পে গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ৫০০ খুদে ফুটবলার এসেছিল ট্রায়ালে। তিনদিন ব্যাপী ট্রায়ালে চাটুনির বিশেষ নজর কেড়েছিল আই এম বিজয়ন নামে অত্যন্ত রোগা-পাতলা এক কৃষ্ণকায় কিশোর।  ফুটবলের প্রাথমিক পাঠ খুব ভালো আয়ত্ত করেছে সে। ছেলেটির স্কিল দেখে অভিভূত হয়েছিলেন চাটুনি! ৫০০ জন খুদে ফুটবলারের থেকে ৫০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিতে খুব একটা অসুবিধাই হয়নি সেই কিশোরের। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় ফুটবলের সুপারস্টার। 
তবে, ক্যাম্পের শুরুর দিনগুলিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন বিজয়ন। অভাবের সংসারে ভালো খাবার না জোটায় অপুষ্টিতে ভুগতে হয় তাঁকে! অনেক সময়ে থাকতে হতো এক বেলা খেয়ে। ফলে এমন অবস্থায় ফুটবল খেলা তাঁর পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য চাটুনির তত্ত্বাবধানে কিছুটা পরিণত হন তিনি। ১৯৮৭ সালে কেরল পুলিসের ডিজি হন এম কে জোসেফ। ফুটবলার হিসেবেও তাঁর নামডাক ছিল। অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। শ্রীধরণকে কোচ করে তিনি কেরল পুলিস দলটিকে আরও শক্তিশালী করার  সিদ্ধান্ত নেন। ত্রিবান্দ্রমে হয়েছিল কেরল পুলিসের ট্রায়াল। এখানেই পূর্ব পরিচিত শ্রীধরণকে বলে ১৮ বছরের বিজয়নকে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন চাটুনি। কিন্তু ত্রিচুর থেকে ত্রিবান্দ্রমে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না তাঁর। তখন স্কুলের শিক্ষক অ্যান্টনি তাঁকে কিছু অর্থ সাহায্য করেন। এরপরেও যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারেননি বিজু। একদিন বিকেলে তিনি সোজা চাটুনির চালকুডির বাড়িতে চলে যান। যদিও বেল বাজিয়ে স্যারের মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাননি। শুকনো মুখে ঘোরাফেরা করতে থাকেন বাড়ির সামনে। চাটুনির বড় মেয়ে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বিজুকে দেখতে পান। ভিতরে ঢুকে বাবাকে জানান, বিজয়ন অপেক্ষা করছেন। চাটুনিই শেষ পর্যন্ত বাকি অর্থ দিয়ে তাঁকে ত্রিবান্দ্রমে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
প্রথম দিনের ট্রায়ালে বিজয়ন ছিলেন কিছুটা নার্ভাস। কোচ শ্রীধরণের নজর কাড়তে ব্যর্থ হন তিনি। চাটুনি অবশ্য কেরল পুলিসের ডিরেক্টর জেনারেল এম কে জোসেফকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন বিজয়নের প্রতিভার কথা। প্রথম দিন শ্রীধরণের পছন্দ না হলেও কেরল পুলিসের ডিজির কথায় দ্বিতীয় দিনের ট্রায়ালেও আইএমভিকে রেখে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সুযোগে নিজেকে প্রমাণ করেন বিজয়ন। তাঁর স্কিল প্রশংসিত হয়। দারুণ পারফরম্যান্স করার পরেও কেরল পুলিসে তাঁর চাকরি নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি টপকাতে না পারাটা বিজয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু বিজয়নকে এতটাই ভালো লেগে গিয়েছিল যে, তাঁকে চাকরি দেওয়ার জন্য কেরলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী করুণাকরণের দ্বারস্থ হন জোসেফ। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ অনুমোদনে কেরল পুলিসে যোগ দেন বিজু। ১৯৮৮ ফেডারেশন কাপে কেরল  পুলিসের জার্সি গায়ে প্রথমবার নজর কাড়েন তিনি। সেবার সন্তোষ ট্রফিতেও কেরলের হয়ে চোখ টেনেছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের ফেড কাপে ফেভারিট সালগাওকরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চাটুনির প্রশিক্ষণাধীন কেরল পুলিস। ওই বছরই ডিসিএম ট্রফির সেমিফাইনালে নেপাল এয়ারলা‌ইন্সের বিরুদ্ধে কেরল পুলিসের জয়ের নায়ক বিজয়ন। তবে ফাইনালে দুরন্ত লড়াই করে দক্ষিণ কোরিয়ার কুয়েন হি ইউনিভার্সিটির কাছে টাই-ব্রেকারে পরাজিত হয় কেরল পুলিস। যদিও সেই ম্যাচেও নজর কে঩ড়েছিলেন বিজু।  দু’টি ট্রফিতে দারুণ খেলায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯৯১ সালে মোহন বাগানে সই করার পরে খুলে যায় তাঁর জাতীয় সিনিয়র দলের দরজা। দুরন্ত গতিতে ড্রিবলিংয়ের জন্য কয়েক বছরের মধ্যে  পান ‘কালো হরিণ’ তকমা।

22nd     May,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ