বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

টিনটিনের
বঙ্গ যোগ
অভিনন্দন দত্ত

ছোট্ট বন্ধুরা, কমিক্স পড়তে তোমাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগে। আমি নিশ্চিত, জিজ্ঞাসা করলে নিশ্চয়ই তোমাদের অনেকেরই প্রিয় কমিক্স চরিত্র হিসেবে উঠে আসবে টিনটিনের নাম। তোমাদের জানিয়ে রাখি, গত ১০ জানুয়ারি ছিল টিনটিনের জন্মদিন। আর সেইসঙ্গে দেখতে দেখতে বেলজিয়ামের এই তরুণ সাংবাদিকের আবির্ভাবের ৯৩ বছর পূর্ণ হল। ১৯২৯ সালে এই দিনেই ‘লা ভাঁতিয়েম সিয়েক্যল’ সংবাদপত্রের ছোটদের সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্রে (লা পেতি ভাঁতিয়েম) স্রস্টা অ্যার্জে টিনটিনকে প্রথম হাজির করেন। ‘টিনটিন ইন দ্য ল্যান্ড অব দ্য সোভিয়েতস’ (সোভিয়েত দেশে টিনটিন) নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে অনেকেই পড়েছ। বাকিটা ইতিহাস।
সারা বিশ্বের মতো ভারতীয় পাঠকদের কাছেও টিনটিন খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন অভিযানের সূত্রে একাধিক বার ভারতেও পা রেখেছে টিনটিন। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে তোমাদের মতো টিনটিন ভক্তদের জন্য রয়েছে একটি অন্য তথ্য। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গেও টিনটিনের আত্মিক যোগ। বিভিন্ন সময়ে বাঙালি তার শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে টিনটিনকে বাঙালিয়ানায় দেখতে পছন্দ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় গল্পে টিনটিনকে আমরা কখনও কলকাতায় পা রাখতে দেখিনি। তবে সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে একটি তথ্য সামনে এসেছে। যার ফলে টিনটিনের সঙ্গে অল্প হলেও বাংলার সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে এখন বিস্তর আলোচনাও হচ্ছে। সেটা কী, চলো দেখা যাক। ‘দ্য পেপারক্লিপ’ নামে একটি সংস্থা বিষয়টি সকলের নজরে এনেছে। 
‘ফ্লাইট ৭১৪ টু সিডনি’ (ফ্লাইট ৭১৪)-এর প্রথম পৃষ্ঠাতেই আমরা দেখি সদলবলে টিনটিন জাকার্তায় হাজির হয়েছে। বিমান থেকে নামার সময় ক্যাপ্টেন হ্যাডক জাকার্তা বলছেন, এদিকে প্রফেসর ক্যালকুলাস বিভিন্ন নাম শুনছেন। একবার তিনি শুনলেন ‘রেঙ্গুন’। আসলে ইংরেজি অনুবাদে ক্যাপ্টেনের মুখে ‘টাইফুন’ শব্দটিকে ক্যালকুলাস ‘রেঙ্গুন’ শোনেন। তাই বাংলা অনুবাদেও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রেঙ্গুন শব্দটিকে অপরিবর্তিত রাখেন। কিন্তু মূল ফরাসিতে এইখানে ক্যালকুলাস বলছেন ‘চান্দেরনগর’ অর্থাৎ চন্দননগর! হ্যাঁ, আমাদের বাংলার তিনশো বছরের পুরনো ফরাসি উপনিবেশের কথাই অ্যার্জে এখানে লিখেছিলেন। অনুমান করা যেতে পারে যে সেই সময়ের চন্দননগরের ফরাসি সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন বলেই অ্যার্জে এই নামটাকে কমিক্সের প্যানেলে ব্যবহার করেছিলেন।     
বাংলার সঙ্গে যোগসূত্র না হয় স্থাপন করা গেল। টিনটিন প্রথম ভারতে পা রাখে ১৯৩২ সালে প্রকাশিত ‘সিগারস অব দ্য ফ্যারাও’ (ফারাওয়ের চুরুট) গল্পে। আমরা দেখি, জঙ্গলের মধ্যে টিনটিন ও কুট্টুসের বিমান ক্র্যাশ করছে। তারপর আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্রকে জব্দ করতে ভারতের গাইপাজামার মহারাজার সঙ্গে দেখা করে টিনটিন। অবশ্য গাইপাজামা নেহাতই অ্যার্জের কল্পিত রাজ্য। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, এই গাইপাজামা থেকেই টিনটিনের পরবর্তী ‘দ্য ব্লু লোটাস’ (নীলকমল) অভিযানের সূত্রপাত হয়। অর্থাৎ এখান থেকেই টিনটিন আন্তর্জাতিক আফিম চোরাকারবারিদের শায়েস্তা করতে সাংহাই পাড়ি দেয়। মনে করিয়ে দিই এই কমিক্সেরই মাঝে টিনটিনের সঙ্গে চ্যাংয়ের আলাপ। এরপর কয়েক বছর এগিয়ে যাওয়া যাক। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় টিনটিন সিরিজের অন্যতম সেরা কমিক্স— ‘টিনটিন ইন টিবেট’ (তিব্বতে টিনটিন)। এখানে অ্যার্জে পুনরায় টিনটিনের বন্ধু চ্যাংকে ফিরিয়ে আনেন। তুষারাবৃত হিমালয়ে ইয়েতির খপ্পর থেকে চ্যাংকে কীভাবে টিনটিন উদ্ধার করবে তা নিয়েই এই কমিক্স। এখানে আমরা দেখতে পাই কাঠমাণ্ডুর বিমান ধরার জন্য প্রথমে টিনটিন ও ক্যাপ্টেন দিল্লিতে আসে। হাতে কিছুটা সময় রয়েছে বলে তারা দিল্লি ঘুরে দেখবে বলেও স্থির করে। কুতুবমিনার ও লালকেল্লা দর্শনের পর হাতে সময় না থাকায় ওরা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধি আর দেখতে পায়নি। ইংরেজি অনুবাদ লক্ষ করলে দেখা যাবে     এখানে টিনটিন জামা মসজিদ   দর্শনেরও ইচ্ছাপ্রকাশ করে। কিন্তু কমিক্সের পরবর্তী কয়েকটি প্যানেল জুড়ে লেখক কিন্তু পাঠকের    প্রয়োজনীয় হাসির খোরাক মজুদ করেছিলেন। রাস্তায় যানজট সামলাতে ক্যাপ্টেনের গোরুর পিঠে ওঠার সেই বিখ্যাত দৃশ্য যে কোনও টিনটিন ভক্তর মনে থাকারই কথা। উল্লেখ্য, এই কমিক্সে কাঠমাণ্ডুতে পৌঁছনোর পর বাজারে একজন মালবাহকের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের তর্ক বাঁধে। অ্যার্জে এতটাই ডিটেলে গবেষণা করতেন যে, তোমরা লক্ষ করবে, কথোপকথনের সময় মালবাহকের উত্তর তিনি প্যানেলে হিন্দিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন।     আমাদের দেশে টিনটিনের উপস্থিতি এইটুকুই। তবে কে বলতে পারে   আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে টিনটিনের নতুন কোনও যোগসূত্র সামনে আসবে কি না।     
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

16th     January,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ