বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

শীতল রোদের
চড়ুইভাতি

স্কুল পিকনিকে চুটিয়ে মজা
বহুবার পিকনিকে গিয়েছি। তবে, সবচেয়ে বেশি মজা হয়েছিল ক্লাস ফোরে পড়ার সময় স্কুল পিকনিকে গিয়ে। প্রথমবার মা-বাবাকে ছেড়ে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া! বন্ধু আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে হইহই, হাসি, মজা, গান, গল্প করতে করতে পৌঁছে গিয়েছিলাম বর্ধমান জুলজিক্যাল পার্কে। ওখানে সাক্ষাৎ হল ঘুমন্ত কুমির, নর্তক শিম্পাঞ্জি আর চঞ্চল হরিণদের সঙ্গে। ওখান থেকে বেরিয়ে রওনা দিলাম প্ল্যানেটোরিয়ামের উদ্দেশে। সারা ঘর অন্ধকার। আরামদায়ক চেয়ার পেয়ে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তো সেখানে ঘুমিয়ে পড়ল। খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই এক লাইনে কেমন হাঁসের মতো রাস্তা পেরিয়েছিলাম, সেই দৃশ্যটা ভুলবার নয়। গেলাম বর্ধমান সায়েন্স সিটিতে। সেখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটল  থ্রিডি সিনেমা দেখার সময়। চোখে লাল-নীল চশমা পরে সিনেমা দেখার সময় আমরা রীতিমতো চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলাম। কীভাবে যে দশ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছিল সেদিন, তা এখনও বুঝে উঠতে পারি না।
—রোদসী চক্রবর্তী, অষ্টম শ্রেণি,
সরোজিনী দেবী সরস্বতী শিশু মন্দির
মাংস রাঁধতেই ভুলে গেল
দেখতে দেখতে শীতকাল চলেই এল। করোনার জন্য এ বছর সম্ভব না হলেও মনে পড়ে যাচ্ছে পিকনিকের অনেক স্মৃতি। সালটা ২০১২। আমরা সবাই মিলে শুশুনিয়া পাহাড়ে পিকনিকে গিয়েছিলাম। সেবারে ঠিক হল বাবা, জেঠু, কাকুরা রাঁধবেন আর মা-কাকিমারা বিশ্রাম নেবেন। টিফিন শেষ করার পর কেউ কেউ পাহাড়ে উঠতে গেলেন। আমি তখন ছোট। তাই পাহাড়ে ওঠার অনুমতি পেলাম না। কিন্তু পার্কে দেদার দোলনা চাপলাম। পিসতুতো দিদির সঙ্গে টয়ট্রেনেও চাপলাম। ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে একজন নতুন বন্ধুও জোটালাম। শুশুনিয়ায় গরম জলের ঝরনাতে স্নান করলাম। এরপর খাওয়াদাওয়া, কিন্তু সে এক কাণ্ড! জেঠু মাংস বসাতেই ভুলে গিয়েছিলেন।  তারপর বাবা ও জেঠু মিলে খুব তাড়াতাড়ি মাংস রান্না করলেন। প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে ফেলেছিলেন। খাওয়ার পর আমরা সবাই মিলে অন্ত্যাক্ষরী খেলেছিলাম। আর ফেরার পথে কাকু শুনিয়েছিল ভূতের গল্প। সেই পিকনিকের স্মৃতি আজও অমলিন। 
—প্রদীপ্তা নন্দী, একাদশ শ্রেণি,
বাঁকুড়া মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
বাসে খিদে পেয়ে গিয়েছিল
করোনা মহামারীর আগে শীতের মরশুমে দু’-একটা করে পিকনিক থাকতই থাকত। যেবারের গল্প বলব, সেই পিকনিক আয়োজন করেছিল, আমি যে ক্লাবে সাঁতার শিখি সেখান থেকে। নির্দিষ্ট দিনে আমরা কচিকাঁচারা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে বাসে উঠলাম। আমাদের গন্তব্য মধ্যমগ্রামে ঘোষদের বাগানবাড়ি। প্রাতরাশের ব্যবস্থা ছিল পিকনিক স্পটে। কিন্তু বাসে উঠেই আমার খুব খিদে পেয়ে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন আমার বন্ধু দেবদাসের মা। কাকিমা সঙ্গে করে নিয়ে আসা পাউরুটি, কলা আর কমলালেবু খেতে দিলেন আমাকে। বাস থেকে নেমে আমাদের বন্ধুদের খেলার ধুম পড়ে গেল। 
ব্রেকফাস্টের লুচি, ছোলার ডান আর রাজভোগ পড়ে। মধ্যাহ্নভোজের যখন ডাক পড়ল, তখন ঘেমে নেয়ে একসা। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের এক ডানপিটে ছেলে পুকুরপাড়ে গাছে উঠতে গিয়ে ডাল ভেঙে সোজা জলে। জল থেকে উঠে সে বাবা-মায়ের কাছে খুব বোকা খেল। বিকেলের দিকে এক কাকু আমাদের সকলকে নিয়ে ক্যুইজের আসর বসিয়েছিলেন। আর সেবার প্রথম পুরস্কারটি আমিই পেয়েছিলাম।
—সংলাপ রায়চৌধুরী, নবম শ্রেণি,
দমদম কিশোর ভারতী উচ্চ বিদ্যালয়
পিকনিক স্পটটা পুরনো হয় না
শীতে কাঁপতে কাঁপতে সকালে স্নান করাটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সকাল সাড়ে ৭টায় সময় স্কুলগেটের সামনে পৌঁছতেই  সব কষ্ট দূর হয়ে যেত। হাফ-পিরিয়ডের পর আমাদের বনভোজনে যাওয়া। পিরিয়ড শেষের ঘণ্টা  পড়তেই বাসে ওঠার জন্য দুদ্দাড় করে দৌড়। মাত্র দু’কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে। তার মধ্যেই বাসে গান-বাজনা। চোখের  নিমিষে পৌঁছে যেতাম  আমবাগানে— আমাদের প্রতি বছরের প্রিয় স্কুল পিকনিক স্পট। একই জায়গা, কিন্তু যতবারই যাই, জায়গাটা পুরনো হয় না।
টিফিনে চলে আসত মুড়ির সঙ্গে চপ, শিঙাড়া ও জিলিপি। কোনও মতে টিফিন শেষ করে নিজেদের নিজেদের দল তৈরি করে হুল্লোড় আর খেলাধুলো। তবে, খেলার জন্য ভালো জায়গাটা পাওয়া নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটিও কম হতো না। ব্যাডমিন্টন, ফ্লাইং ডিক্সের সঙ্গে লুডো, গানের লড়াইও থাকত। এরপর পেটপুরে দুপুরের খাওয়া। ফেরার সময় সকলকে দেওয়া হতো কমলালেবু। বন্ধুদের মুখে কমলালেবুর খোসা টিপে দেওয়া নিয়েও চলত একপ্রস্থ ঝগড়া। করোনার জন্য বন্ধ স্কুল পিকনিক। আবার যে কবে পিকনিকে যাব!
—শ্রীজিতা মণ্ডল, সপ্তম শ্রেণি, পাঠভবন, বিশ্বভারতী
মনটা খারাপ হয়ে গেল
দু’বছর আগের বনভোজনের কথা। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে একটি পার্কে পিকনিক স্পটটা বাবা-ই ঠিক করেছিলেন। শাল-পিয়ালের জঙ্গল, নদী, সেতু পেরিয়ে পৌঁছলাম সেই মনোরম পার্কে। কিন্তু চড়ুইভাতির জন্য নির্দিষ্ট জায়গাটাতে পৌঁছতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। চারদিকে থার্মোকল আর শালপাতার এঁটো থালা-বাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা না ফেলে সুন্দর পার্কের পরিবেশ নষ্ট করছেন দলে দলে পিকনিক করতে আসা লোকজন। পাশেই একটা দল বনভোজনে এসেছে। তাঁরা এমন তারস্বরে মাইক বাজাচ্ছেন যে, শান্ত পরিবেশটা আর উপভোগ করা যাচ্ছে না। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বাবার সঙ্গে সুবর্ণরেখার পাড়ে এলাম। নদীর জলে তখন রোদ পড়েছে। নদীর চড়ের বালি চিকচিক করছে। দূরে একটা ডিঙি নৌকা নিয়ে কয়েকজন জেলে মাছ ধরছেন। ওই জায়গাটাই এসে মন জুড়িয়ে গেল। কথাটা বাবাকে বলতেই, বাবা বললেন, ‘ভালো-মন্দ মিশিয়ে এই পৃথিবী। জীবনে সব সময় ভালোটাকেই বেছে নেবে।’
—কৌস্তভ সরেন, ষষ্ঠ শ্রেণি,
ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশন
পিকনিক স্পটে মৌমাছির তাড়া
গত বছর শীতে করোনার প্রকোপটা একটু কমেছে। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই। ঘরবন্দি থেকে মনটা খুব খারাপ। তাই ফোনে ফোনে ঠিক হল কয়েকজন বন্ধুর পরিবার নিয়ে পিকনিক করা হবে। ফলতায় এক বাগানবাড়িকে পিকনিক স্পট হিসেবে বেছে নেওয়া হল। কী করে যাওয়া হবে, তাই নিয়েও চলল বিস্তর পরিকল্পনা। বাস বুক করে আমরা ফলতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাসে হইচই, গান-বাজনা করে দারুণ মজা করলাম। রান্নার ব্যবস্থা ওখান থেকেই করা ছিল। পৌঁছতেই গরম গরম লুচি, আলুর দম আর নলেনগুড়ের রসগোল্লার প্লেট আমাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। একটু দূরে বাগানে আমরা বন্ধুরা ব্যাডমিন্টন খেলছি। এর মধ্যে একটা বিপত্তি হল। কাঁঠাল গাছে একটা মৌমাছির চাক ছিল। দেবযানী নামে আমার এক বন্ধু কৌতূহল বশত একটা লাঠি দিয়ে সেই চাকে আঘাত করতে দেখে কে! আমরা তো বাপরে-মারে বলে দৌড় দিলাম। তবে, ভাগ্য ভালো আমাদের কাউকেই মৌমাছির হুলের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি। দেবযানী ওর বাবা-মায়ের কাছে খানিকটা বকা খেল। অবশ্য, দুপুরে কষা মাংস আর পোলাওয়ের স্বাদে মৌমাছির আতঙ্ক কেটে গিয়েছে। নদীর ধারে এসে রাই আর অমৃতা নৌকা চড়ার বায়না ধরল। অগত্যা, আমাদের অভিভাবকরা নৌকা ভাড়া করলেন। মাঝ নদীতে নৌকায় বসে অস্তগামী সূর্যের যে রূপ দেখলাম, তা ভোলার নয়।
—জিতমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, অষ্টম শ্রেণি, 
সেন্ট টেরিজা সেকেন্ডারি স্কুল
ইকো পার্কে চড়ুইভাতি
একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তির জন্যই মানুষ বেড়াতে যায়, পিকনিকের আয়োজন করে। কিন্তু কলকাতা শহরের বুকে রেঁধে-বেড়ে চড়ুইভাতির জায়গা নেহাতই কম। তবে, বাড়ি থেকে রান্নাবান্না করে নিয়ে গিয়ে পিকনিক করার জায়গা অনেক আছে। তেমনই নিউটাউনের ইকো পার্কে একটি ফ্যামিলি পিকনিকে গিয়েছিলাম আমি। বাবা-মা ছাড়াও  জেঠু-জেঠিমা, কাকু-কাকিমা আর আমার ভাইবোনেরা সেই পিকনিকে ছিল। ইকো পার্ক  পৌঁছে কাকিমার হাতে তৈরি লুচি-আলুদম দিয়ে জলখাবার সারা হল। এরপর আমরা ছোটরা নিজেদের ইচ্ছা মতো ছোটাছুটি করে খেললাম। ইকো পার্কে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। ওখানে সাইকেল চড়ে খুব মজা পেলাম। আর পার্কের মধ্যে থাকা সপ্তম আশ্চর্যের রেপ্লিকা দেখে তো আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন টো টো করার পর কখন সন্ধে হয়ে গেল। আর আমরা বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।
—দেবার্পণ ঘোষ, সপ্তম শ্রেণি,
বিডিএম ইন্টারন্যাশনাল

19th     December,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ