বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

জাগুয়ার, লেপার্ড ও চিতার ডেরায়
অনির্বাণ রক্ষিত

দেখতে প্রায় একইরকম হলেও জাগুয়ার, লেপার্ড এবং চিতার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। তিনটি প্রাণীকে চিনতে তোমাদের অনেক সময় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।  শরীরের গঠনগত বিন্যাস দেখে এদের আলাদাভাবে চেনা যায়।  তিনটি প্রাণীরই গায়ের লোমে রয়েছে কালো ছাপ। এই ছোপ দেখেই এদের আলাদা করা যায় খুব সহজেই। এছাড়াও শরীরের আকৃতি ওমুখমণ্ডল দেখেও এই তিনটি বন্যপ্রাণীকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। আজ তোমাদের জাগুয়ার, লেপার্ড ও চিতার তফাতগুলি বলব।
মাথা ও মুখমণ্ডল :  জাগুয়ারের মাথা বেশ বড় ও প্রশস্ত। অধিকাংশ জাগুয়ারেরই নাকের ডগায় অস্পষ্ট সাদা অর্ধ-বৃত্তের মতো দাগ দেখা যায়। লেপার্ড অর্থাৎ চিতাবাঘের মাথা মধ্যম আকৃতির ও স্লিম। অন্যদিকে চিতার মাথা ছোটখাট। নাকের দুই পাশে চোখের নীচে কালো চিহ্ন রয়েছে যা লেপার্ড কিংবা জাগুয়ারের নেই।
লোমের কালো ছোপ : জাগুয়ার ও লেপার্ড উভয়ের গায়ের কালো ছোপ গুলো দেখতে গোলাপের পাপড়ির মতো। এদের তাই ‘রোজেট’ও বলা হয়। কিন্তু লেপার্ডের রোজেটের পাপড়িগুলো গোল রিংয়ের মতো হয়ে থাকে। অপরদিকে জাগুয়ারের রোজেটের পাপড়িগুলো একটু ফাঁকা ফাঁকা। যদিও এটি সুনির্দিষ্ট কোনও পার্থক্য নয়। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে জাগুয়ারের রোজেটে কিছু কালো ডট বা বিন্দু রয়েছে যাকে সেন্ট্রাল স্পট বা ইন্টার্নাল ডটও বলা যায়। লেপার্ডের শরীরে এই বিন্দুগুলি থাকে না। চিতার গায়ে এমন রোজেট থাকে না। যা থাকে তা হল সবই কালো ডট বা কালো বিন্দু।
দেহের আকৃতি : জাগুয়ার, লেপার্ড ও চিতা এই তিনটি প্রাণীরই দেহের গঠন ও আকৃতির ফারাক রয়েছে। জাগুয়ারের দেহ বিশাল ও ভারী। পাগুলো হয় ছোট। লেজ ও অপেক্ষাকৃত খাটো। চোয়াল ও মাথা আকারে বড়। অন্যদিকে লেপার্ডের দেহ লম্বাকৃতির ও পাতলা। পাগুলো লম্বা লম্বা। মাথা ও চোয়াল মধ্যম আকৃতির। লেজ লম্বা— যা এদের গাছে চড়ার সময় ব্যালেন্স রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে চিতার দেহ লম্বা ও বেশ পেশিবহুল। পাগুলোও অনেক পেশিবহুল। যার ফলে এরা উচ্চগতিতে দৌড়াতে পারে। মাথা হয় ছোটখাট। 
বৈজ্ঞানিক নাম : ‌‌‌জাগুয়ারের বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা ওঙ্কা।  অন্যদিকে লেপার্ড ও চিতার বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে প্যান্থেরা পারদুস ও অ্যাসিনোনিক্স জুবাটাস। 
বাসস্থান: মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই জাগুয়ার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে জাগুয়ারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে মধ্য আমেরিকা পর্যন্ত এদের দেখা মেলে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা, পানামা, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, বেলিজ, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্তিনায় দেখা যায়। 
চিতা দেখা যায় মূলত পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকার উভয় অঞ্চলে। এছাড়াও এশিয়ার মধ্যে ইরানেও এদের দেখা মেলে। পাশাপাশি, চিতা উত্তর তানজানিয়া ও দক্ষিণ কেনিয়াতেও রয়েছে। দক্ষিণ ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, উত্তর কেনিয়া ও উগান্ডায় রেকর্ড সংখ্যায় চিতা রয়েছে।
অন্যদিকে লেপার্ড অর্থাৎ চিতাবাঘ দেখা যায়      আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে। হংকং, জর্ডন, কোরিয়া, কুয়েত, লেবানন,  মরক্কো, সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন, উজবেকিস্তানে লেপার্ডের দেখা মেলে। ভারতে প্রায় ১৩ হাজারের কাছাকাছি লেপার্ড রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশেই বেশি লেপার্ড দেখা যায়। চিতাবাঘ রয়েছে উত্তরবঙ্গেও। ভারতে স্নো লেপার্ডও দেখতে পাওয়া যায়। দেশের হিমালয়ের উঁচু এলাকায় এদের দেখা যায়। দেশে মোট পাঁচটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে, যেখানে গেলে এই বিস্ময়কর প্রাণীটির দেখা মেলে। হিমাচল প্রদেশের গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক আকারে বিশাল। চারটি উপত্যকা— জিওয়া নাল উপত্যকা, সৈঞ্জ উপত্যকা, তীর্থন উপত্যকা ও পার্বতী উপত্যকা জুড়ে বিস্তৃত। কুল্লু জেলায় তুষার চিতাবাঘ দেখার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। 
শিকার ধরার বৈশিষ্ট্য : লেপার্ডের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল শিকার ধরার পর ঘাড় কামড়ে ধরে প্রাণীটিকে নিয়ে সরাসরি গাছে উঠে পড়া। এই বৈশিষ্ট্য কখনও কখনও জাগুয়ারের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তবে চিতার ক্ষেত্রে তা পরিলক্ষিত হয় না। এই বৈশিষ্ট্যটি লেপার্ডের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
আমরা সকলেই জানি যে, লেপার্ড একাকী বিচরণ করে আর একাকী শিকার ধরে থাকে। কিন্তু লেপার্ড যে সকল অঞ্চলে বসবাস করে সে সকল অঞ্চলে বাঘ-সিংহ-হায়নার মতো অন্যান্য শিকারি প্রাণীরাও জঙ্গলে বিচরণ করে। এর ফলে অন্যান্য শিকারি প্রাণী বিশেষত যেসব প্রাণী গাছে চড়তে জানে না, সেইসব শিকারি প্রাণীর কবল থেকে লেপার্ডের কষ্টার্জিত শিকার রক্ষা পায় আর লেপার্ড একা পেট-পুরে খেতে পায়। লেপার্ড আর জাগুয়ার সাধারণত রাতে শিকার ধরে থাকে। কিন্তু চিতা মূলত দিনের বেলায় শিকার ধরে। 
জাগুয়ার ও লেপার্ড সবচেয়ে কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ দুটি প্রাণী। সেই কারণেই এই দুটি প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করাটা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, সে ক্ষেত্রে চিতার বৈশিষ্ট্য একেবারেই ভিন্ন।

28th     November,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ