বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

মার্কশিট 

তোমাদের জন্য চলছে জনপ্রিয় বিভাগ মার্কশিট। এই বিভাগে থাকছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর সুলুক সন্ধান। এবারের বিষয় বাংলা।

এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি খুঁটিয়ে পড়ো। পরামর্শে পুরুলিয়া জিলা স্কুলের বাংলার শিক্ষক সুনীতিপ্রিয় গুরু। 

আমার ছোট্ট বন্ধুরা, করোনা ভাইরাসের জন্য প্রায় এক বছর তোমরা গৃহবন্দি। যদিও আমি জানি যে, তোমরা তোমাদের বইপত্রকে বাক্সবন্দি করে রেখে দাওনি। নিয়মিত স্কুলের অনলাইন পাঠদান অনুসরণ করছ এবং অ্যাক্টিভিটি টাস্ক যথাসময়ে শেষ করে স্কুলে তোমাদের জমাও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। যাইহোক, যারা আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তাদের চিন্তার বিশেষ  কারণ নেই। কেননা, আমাদের শিক্ষাদপ্তর তোমাদের কথা ভেবে সিলেবাস অনেকটাই কাটছাঁট করেছে। পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের প্রিয় ‘হ-য-ব-র-ল’ তে এর আগে আমি আগামী  মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ তাই একটি কবিতা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সেই কবিতাটি হল, পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’। কবিতাটির মূল ভাববস্তু নিয়ে সংক্ষেপে একটা ধারণা দেওয়ার পর আমি আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেগুলিও তোমাদের জানিয়ে দেব।
চিলির মহান কবি পাবলো নেরুদা স্প্যানিশ ভাষায় লেখেন ‘La Desdichada’ নামক একটি কবিতা। সেই কবিতাটি বাংলায় ভাবানুবাদ করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য। তিনি নাম দেন ‘অসুখী একজন’। এই কবিতাটি তাঁর ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ নামক কাব্যগ্রন্থে  ঠাঁই পেয়েছে। এই কবিতাটি মোট সাতটি স্তবকে বিন্যস্ত। ঘটনার পরম্পরায় কবিতাটি নিছক কবিতা না থেকে একটি সমাজ ইতিহাসের দলিল হয়ে উঠেছে। মাতৃভূমির মুক্তি সংগ্রামের জন্য বা গৃহযুদ্ধ জনিত কারণে ব্যক্তিগত জীবন, ঘরবাড়ি, শহর, ঈশ্বর বিশ্বাস— সব ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রেম কীভাবে চিরঞ্জীবী, শাশ্বত, চিরন্তন হয়ে থাকে —এই কবিতাতে তাই বিবৃত হয়েছে। কবিতার কথক তাঁর প্রেয়সীকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে অনেক দূরে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গিয়েছেন। সেই যোদ্ধার প্রেমিকা এই আশা নিয়ে প্রতীক্ষায় ছিল যে তার প্রিয়তম মানুষটি অক্ষত অবস্থায় যুদ্ধজয়ী হয়ে বাড়ি ফিরবেন। নির্লিপ্তি নিয়ে একটি কুকুরের চলে যাওয়া বা আপন লক্ষ্যে অটল গির্জার সন্ন্যাসিনীর হেঁটে যাওয়ার  মতো এক এক করে দিন-সপ্তাহ- বছর ক্রমশ এগিয়ে  চলে  ভবিষ্যতের দিকে। আস্তে আস্তে কথকের স্মৃতি মুছে যায় সকলের স্মৃতিপট থেকে। তাঁর চলার পথে ঘাস জন্মায় আর বৃষ্টি ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় তাঁর পায়ের দাগ। শুধু বিরহযন্ত্রণায় ক্লিষ্ট  বছরগুলো একটার পর একটা পাথরের মতো গুরুভার নিয়ে নেমে আসে কথকের প্রেয়সীর মাথার ওপর। প্রেমিকের সাথে সুদীর্ঘ বিচ্ছেদ বেদনায় সেই মেয়েটি হয়ে পড়ে অসুখী। রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো যুদ্ধ তার আগ্রাসী লাভাস্রোত ছড়িয়ে দেয় সমতলে। সুখী গৃহকোণ থেকে শুরু করে অবোধ শিশু কেউ রক্ষা পায় না যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা থেকে। সমস্ত সমতলে ধরে যায় সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগুন। হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন শান্ত হলুদ দেবতারা স্বপ্নহীন অবস্থায় উল্টে পড়ে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে। অলৌকিক ক্ষমতাহীন  ঈশ্বরের মাহাত্ম্য যুদ্ধের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করল না। যারা নিজেদের মাহাত্ম্য দিয়ে মানুষকে প্রশান্তি ও অহিংসার ধর্মে দীক্ষিত করতে পারেনি সেই দেবতারা যুদ্ধের তাণ্ডব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে না পেরে দেবালয় থেকে উল্টে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। বিধ্বংসী যুদ্ধ মানুষ, সভ্যতা, ঈশ্বর —কোনও কিছুকেই বাদ দেয় না। সবকিছু  ধ্বংস করে। কথকের মিষ্টি বাড়ি, যে বারান্দায় তিনি ঝুলন্ত বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়তেন সেই বারান্দা, ছড়ানো করতলের মতো পাতাযুক্ত গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ — সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলিসাৎ হয়ে গেল যুদ্ধের ধ্বংসলীলায়। যেখানে ছিল সমৃদ্ধ শহর সেখানে ছড়িয়ে রইল শুধু কাঠ কয়লা, দোমড়ানো  লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের কালো দাগ। সমৃদ্ধ জনপদ , ব্যক্তিগত জীবন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মজীবন যুদ্ধের ভয়াবহ তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে গেল। যুদ্ধবাজ নৃশংস মানুষদের পৈশাচিক বর্বরতায় সবকিছু বিনষ্ট হল। কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও কথকের প্রেয়সী তাঁর প্রিয়তমের ফেরার আশায় অনন্ত প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষমানা হয়ে রইল। অবিনশ্বর প্রেম বিরহের মাঝেও প্রতীক্ষা করতে জানে। প্রেম অজর-অমর-অক্ষয়। হৃদয়ে ব্যথা নিয়ে, অন্তরে বিরহের অ-সুখ নিয়ে জেগে থাকে তাই অসুখী একজন।
এই গেল ‘অসুখী একজন’ কবিতার মূল ভাববস্তু। এবার আমরা এই কবিতাটি থেকে যে প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি উল্লেখ করব। তোমরা  ভালো করে কবিতাটি পাঠের পর সম্পূর্ণ নিজের ভাষায়  বাড়ির কাজের খাতায় সেগুলোর উত্তর লিখে স্কুল খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখিয়ে নিও।
১. ব্যাখ্যামূলক সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান তিন। 
(এগুলোর উত্তর তোমরা কমবেশি ৬০টি শব্দের মধ্যে লিখবে)
১:১ ‘সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন’— কোথায়, কীভাবে আগুন ধরে গিয়েছিল লেখ। 
১:২ ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’— কারা, কেন স্বপ্ন দেখতে পারেনি লেখ।
১:৩ ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।’— কী কী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল? এই ধ্বংসের কারণ কী?
১:৪ ‘নেমে এল তার মাথার ওপর।’— কী নেমে এল? তা কীভাবে নেমে এল লেখ?  
১:৫ ‘সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।’— এখানে ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কথক একথা বলেছেন কেন? 
২. রচনাধর্মী প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান পাঁচ (এগুলির উত্তর তোমরা কমবেশি ১৫০টি শব্দে লিখবে)
২:১ ‘তারপর যুদ্ধ এল।’— যুদ্ধটি কেমন ছিল? যুদ্ধের ফলাফল কবিতা অনুসারে লেখ।
২:২ ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।’— কোন মেয়েটির কথা বলা হয়েছে? মেয়েটি কোন অবস্থায় রয়ে গেল তা কবিতা অনুসরণে লেখ? 
২:৩ ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’— এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তারা স্বপ্ন দেখতে পারেনি কেন?
২:৪ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কাকে, কেন অসুখী বলা হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখ।
২:৫ ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
৩.) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান এক। (প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কমবেশি ২০টি শব্দের মধ্যে লিখতে হবে।)
৩:১ ‘শিশু আর বাড়িরা খুন হল।’— শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল কেন?
৩:২ ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।’—মেয়েটি কে?
৩:৩ ‘বছরগুলো নেমে এল তার মাথার ওপর।’— বছরগুলো কীরকম ছিল?
৩:৪ ‘রক্তের একটা কালো দাগ।’—দাগটিকে কালো বলা হয়েছে কেন?
৩:৫ ‘যেখানে ছিল শহর।’— সেখানে কী দেখা দিল?

7th     February,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ