বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

কলকাতায় স্বাধীনতার প্রথম সকাল
সন্দীপন বিশ্বাস

ভোর হওয়ার আগে থেকেই চঞ্চল হয়ে উঠেছেন বাংলার শেষ ব্রিটিশ গভর্নর স্যর ফ্রেডরিক জন বারোজ। ঘনঘন ঘড়ি দেখছেন। তাঁর স্ত্রীও আতঙ্কিত। নয়াদিল্লিতে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। শহরজুড়ে বেজে উঠেছে শাঁখ, কাঁসরঘণ্টা। শহরের চারপাশ থেকে তার আওয়াজ ভেসে আসছে রাজভবনেও। বাইরের দিকে তাকালেন বারোজ। দূরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে আতসবাজির আলো। গঙ্গার ওপারের আকাশেও দেখতে পেলেন বাজির রোশনাই। সেই সঙ্গে ভেসে আসছে বাজি ফাটানোর আওয়াজ। রক্ষীরা খবর দিলেন, সারা শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। ওরা রাজভবনের দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেলেন বারোজ। ভাবলেন, কোনও রকমে বিমানবন্দরে পৌঁছে বিমানটা ধরতে পারলে হয়। এতদিনের পুঞ্জীভূত রাগ শহরের মানুষের! কয়েক বছর আগেও কলকাতা পুলিসের কমিশনার চার্লস টেগার্টের অত্যাচারে ‘ক্যালকাটা’র মানুষের দিশাহারা অবস্থা হয়েছিল। সে কথা কি আজ শহরের মানুষ ভুলে গিয়েছে? তার যদি নির্মম বহিঃপ্রকাশ ঘটে! বারোজ কিন্তু ছিলেন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের রাতে সেই বাঁধনছেঁড়া আনন্দ যেন জেগে উঠেছিল কলকাতার প্রতিটি মানুষের প্রাণের ভিতরে। ইংরেজ শাসনের অত্যাচারের দিন শেষ হওয়ার আনন্দে সেদিন ভেসে গিয়েছিল শহরের রাত। আর ফ্রেডরিক বারোজ এবং তাঁর স্ত্রী ডোরা প্রহর গুনছিলেন, কতক্ষণে সকাল হবে এবং তাঁরা দমদম বিমানবন্দরের পথে রওনা হবেন। সকাল আটটার মধ্যে রাজভবনে আসার কথা বাংলার নতুন রাজ্যপাল সি রাজাগোপালাচারীর। তিনিই পতাকা উত্তোলন করবেন। তেরঙ্গা পতাকা পতপত করে উড়বে চারদিকে। স্বাধীনতার শ্বাস নেবে মানুষ।   
স্বাধীনতার ঘোষণা যে শুধু সময়ের অপেক্ষা, তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। সেইজন্য শুরু হয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা উদযাপনের প্রস্তুতি। আগের দিন থেকে চলেছে প্রস্তুতি। তাও যেন শেষ হয় না। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ছিল প্রতীক্ষা আর প্রস্তুতি। কিন্তু কখন যে ঠিক স্বাধীনতার সরকারি ঘোষণা হবে, কেউ জানতেন না। সকলেই রেডিওয় সেই খবর শোনার জন্য উদগ্রীব। তখন তো আর সব বাড়িতে রেডিও ছিল না, তাই যেখানে রেডিও সেখানেই ভিড়। কলকাতার বিশেষ বিশেষ ভবনগুলি আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আলোয় সেজেছিল রাজভবন, রাইটার্স বিল্ডিং, এসপ্ল্যানেড। মানুষের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে বাগবাজার, চিৎপুর, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ, বউবাজার, পার্ক সার্কাস, ভবানীপুর, কালীঘাট সর্বত্র। ঘোষণার আগেই শুরু হয়েছিল কলকাতা জুড়ে উৎসবের আবেগঘন প্রস্তুতি। অনেকেই বাড়ি সাজিয়েছেন আলো দিয়ে। প্রদীপের আলোয় যেন অকাল দীপাবলি। ঘরে ঘরে পতাকা তোলার প্রতীক্ষা। 
ওদিকে বিভিন্ন ওস্তাগর পাড়ায় দর্জিদের দম ফেলার ফুরসত নেই। একের পর এক পতাকা বানিয়ে চলেছেন তাঁরা। ভাঁড়ারে একটাও পতাকা নেই। পাইকারি বিক্রেতারা ওস্তাগরের দরজায় ঠায় বসে আছে। রাতে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ভিয়েনের ব্যস্ততা। কারিগররা মিষ্টি বানিয়েই চলেছেন।
পাড়ায় পাড়ায়, মোড়ে মোড়ে চলছে তোরণ বানানো। ডেকরেটর কর্মীদেরও দম ফেলার সময় নেই। ডাক আসছে বিভিন্ন পাড়া থেকে। বাঁশ আর কাপড়ের কুঁচি দিয়ে তোরণ বানাচ্ছেন তাঁরা। তোরণে নেতাজি ও গান্ধীজির মূর্তিতে মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে।    
পাড়ার যুবকরা বাঁশের আগায় কাপড় মুড়ে তাতে কেরোসিন তেল ঢেলে অপেক্ষা করছেন, কখন ঘোষণা হবে। তারপরই পতাকা, মশাল জ্বালিয়ে শহর পরিক্রমা করা হবে। সবার হাতে হাতে বাতাসা বিলি করা হবে।  অবশেষে ঘোষণা হল। কলকাতার ঘড়িতে তখন রাত একটা ৫৫ মিনিট। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যেন উল্লাসে মেতে উঠল কলকাতা। ‘বন্দেমাতরম’ আর ‘জয়হিন্দ’ ধ্বনিতে মনে হল যেন শহরজুড়ে আনন্দের ভূকম্পন। দুশো বছরের শৃঙ্খল মোচনের আনন্দধারা সেই মধ্যরাতে গঙ্গার জোয়ারের মতো কলকাতাকে উত্তাল করে দিল। ‘জয়তু নেতাজি’ বলে মানুষ চিৎকার করে নাচছেন। কেউ কেউ আনন্দে চোখের জলে ভাসলেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভেসে গেলেন আবেগে। মধ্যরাতের কলকাতা মানুষের মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠল। চিৎপুর থেকে একটা জনস্রোত এগিয়ে আসছে। ওদের গন্তব্য রাজভবন। মাঝখানে নাখোদা মসজিদের সামনে এসে সেটা একবার থমকে দাঁড়াল। আবার কোনও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে দুই সম্প্রদায় এই শুভক্ষণে মেতে উঠবে না তো? টাটকা সেই রক্তের দাগ তখনও বোধহয় মুছে যায়নি শহরের রাজপথ, গলিঘুঁজি থেকে। রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, কলাবাগান, লিচুবাগান, বউবাজারে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বিচ্ছিন্নতার আগুনে, হিংসার আগুনে দগ্ধে পরস্পরের প্রাণ নিতে ছুটে গিয়েছে। আর তাতে ইন্ধন জুগিয়েছিল ইংরেজ বাহাদুর। নোয়াখালিতে তখনও মৃত্যুমিছিল চলছে। তাহলে?
কিন্তু না, স্বাধীনতার আন্দোলনের জোয়ারে একই অনুভূতিতে ভেসে গেল দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। একে অন্যকে বুকে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করলেন। পরস্পরকে সরবত আর পান খাওয়ালেন। তারপর সেই মিছিল এগিয়ে গেল রাজভবনের দিকে। মিছিল থেকে আওয়াজ উঠল, ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই।’   
স্বাধীনতার সেই মুহূর্তে ক্ষমতা হস্তান্তরের মঞ্চ রাজধানী দিল্লি থেকে অনেক দূরে মহাত্মা গান্ধী। বেলেঘাটের হায়দারি মঞ্জিলে তখন ক্ষুব্ধ, অভিমানাহত গান্ধীজি অবস্থান করছেন। সাম্প্রদায়িক হত্যা বন্ধে তিনি ছুটে এসেছেন কলকাতায়। বেলেঘাটার সেই বাড়ির সামনেও তখন পতাকা হাতে মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে। রেডিওতে ভেসে আসছে দিল্লি থেকে জওহরলাল নেহরুর ভাষণ। যেটাকে বলা হয়, ‘ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি’। জওহরলাল বললেন, যখন সারা বিশ্ব ঘুমোচ্ছে, তখন ভারত জেগে রয়েছে। কেননা আকাশে আজ এক নতুন তারার জন্ম হল, সেটা হল প্রাচ্যের স্বাধীনতার তারা। তবে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা আমরা পেলাম না, মাতৃভূমি দ্বিখণ্ডিত হল। কিন্তু আশা প্রকাশ করি, হয়তো আবার ঐক্য ফিরে আসবে। 
ডাঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ বললেন, আমাদের কাজ কিন্তু শুরু হল। নতুন ভারতকে গড়ে তোলার কাজ। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বললেন, নতুন পাওয়া এই স্বাধীনতাকে আমরা যেন যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারি। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বললেন, স্বাধীনতার এই পুণ্যলগ্নে মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক দেশবাসী যেন সমান মর্যাদা পায়। 
রেডিওয় সেইসব বক্তৃতা শুনতে শুনতে শহরে মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন। ওদিকে তখন ভিড় জমতে শুরু করেছে বেলেঘাটায় হায়দারি মঞ্জিলে সামনে। চিৎকার আর উল্লাস। সবাই শুধু একটি বার গান্ধীজিকে দেখতে চান।  
১৫ আগস্টের সকাল। নতুন সূর্যের আলো এসে ধুয়ে দিল শহরের পথ। সব পঙ্কিলতা, ক্লেদ, হিংসা, বর্বরতা যেন মুছে গেল। ভোর থেকেই শুরু হল খবরের কাগজ কেনার ভিড়। কাড়াকাড়ি পড়ে গেল। কে কেমন হেডিং করেছে, তাই দেখার উৎসাহ পাঠকদের মধ্যে। কেউ লিখেছে, ‘ভারতের শৃঙ্খল মুক্তি’, কেউ লিখেছে, ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট টুডে’, কেউ লিখেছে, ‘নতুন যুগ সূর্য উঠিল, ছুটিল তিমির রাত্রি’, কেউ আবার লিখল, ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট : ব্রিটিশ রুল এন্ডস’। একটি সংবাদপত্র লিখল, ‘ইন্ডিয়া সেলিব্রেটস ফ্রিডম’। কেউ কেউ আবার স্বাধীনতার মধ্যেও খণ্ডিত হওয়ার যন্ত্রণাকে প্রকাশ করে লিখল, ‘টু ডোমিনিয়নস আর বর্ন’ এবং ‘ইন্ডিয়া ইজ নাউ টু ডোমিনিয়নস’।  
ওদিকে সকাল হতেই রাজভবন থেকে বিদায় নেওয়ার পালা গভর্নর ফ্রেডরিক বারোজের। রক্ষীরা জানালেন, তাঁকে বিদায় জানানোর জন্য একটু পরেই সরকারি এবং বিশেষ অতিথিরা চলে আসবেন। কিন্তু তিনি আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি নন। ততক্ষণে শত শত মানুষ রাজভবন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছেন। তাঁরা উল্লাস করছেন। অপেক্ষা করছেন, তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন দেখার জন্য। একটু পরেই নতুন রাজ্যপাল রাজাগোপালাচারী এসে পতাকা উত্তোলন করবেন। কিন্তু অপেক্ষা করতে রাজি নন বারোজ। অগত্যা সস্ত্রীক গভর্নরকে নিয়ে পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল গাড়ি, বিমানবন্দরের দিকে। 
আটটায় রাজভবনে ঢুকলেন রাজাগোপালাচারী। গার্ড অব অনার দিল ভারতীয় সেনা, ইউটিসি আরবান ইনফ্যান্ট্রি, কলকাতা ও বেঙ্গল পুলিস। উৎসাহী জনতার তীব্র গর্জনের মধ্য দিয়ে পতাকা উড়ল বাতাসে। গর্বে মানুষের বুক ভরে উঠল। সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ উঠল, ‘জয় হিন্দ’। ওদিকে শুরু হল ফোর্ট উইলিয়ামে তোপধ্বনি। রক্ষীদের বাধা মানল না কেউ। অনেকে ঢুকে পড়ল রাজভবনের অন্দরে। রাজভবনে পতাকা উত্তোলন করে রাজ্যপাল গেলেন বিধানসভায়। সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। বিধানসভা চত্বরে পতাকা উত্তোলন করলেন তিনি। হাইকোর্টে পতাকা উত্তোলন করলেন প্রধান বিচারপতি স্যর আর্থার ট্রেভর হ্যারিস। ব্যাঙ্কশালে পতাকা উত্তোলন করেন চিফ প্রেসিডেন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ আলি রেজা। লালবাজারে পতাকা উত্তোলন করলেন ডেপুটি পুলিস কমিশনার হরিমাধব ঘোষ চৌধুরী।  
ডঃ আর্থার আর রায়ের লেখা থেকে জানা যায়,  ‘নাখোদা মসজিদ এবং পার্ক সার্কাস এলাকায় হিন্দুরা যেতে ভয় পেত। সেইভাবে মুসলিমরাও হিন্দু এলাকায় ঢোকার সাহস পেত না। কিন্তু সেদিন যেন অন্য দৃশ্য। হিন্দুরা মসজিদে ঢুকে মিষ্টিমুখ করছে, আবার মুসলিমরা হিন্দু মহল্লায় এসে মিষ্টি খাচ্ছে, কোলাকুলি করছে। পান ও সিগারেটের আদানপ্রদান চলছে। যে কলকাতার বুকে এক বছর ধরে দাঙ্গা চলে আসছে, সেখানে এই মিলনের কথা সত্যি‌ই ভাবা যায় না।’ আসলে মানুষ বুঝেছিল এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পিছনে ছিল রাজনৈতিক উস্কানি। 
কলকাতার কয়েকটি এলাকায় সেদিন সকালে পাকিস্তানি পতাকা উড়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়। আসলে অনেকেই সেই সময় জানত না, ভাগাভাগিতে কোন জায়গাটা কোনদিকে গেল। অনেকে আশা করেছিলেন, কলকাতা শহরটা পাকিস্তানেই পড়বে। তা অবশ্য হয়নি।  সকালেও বেলেঘাটায় ভিড়। মহাত্মা গান্ধী আয়োজন করেছেন নামাজ পাঠ ও প্রার্থনা সভার। সেখানে ফিরে আসে দাঙ্গা প্রসঙ্গ। মনু গান্ধীর লেখা থেকে জানা যায়, সভায় প্রচুর ভিড় হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী সোহরাবর্দি। একজন তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘কলকাতায় যে দাঙ্গা চলছে, তার জন্য কি আপনি দায়ী নন?’ সেকথার উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। যা হয়েছে, তা আমরা সবাই ভুলে যেতে চাই। আমরা দেখাতে চাই হিন্দু ও মুসলিমরা পাশাপাশি শান্তিতে বাস করতে পারে। গান্ধীজি শহরে আছেন। তাঁর উপস্থিতি শান্তির পক্ষে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। এখন সবাই দেখছেন, হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে আনন্দে মিছিল করছেন, পরস্পরকে আলিঙ্গন করছেন। আওয়াজ উঠেছে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। এই সম্প্রীতিই বজায় থাকবে।’ দাঙ্গার উস্কানিদাতা সোহরাবর্দি সেদিন পুরোপুরি ভোল বদলে ফেলেছিলেন।    
১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ সাল। সেদিনটা ছিল শুক্রবার। অনেকগুলি বাংলা ও হিন্দি ছবি সেদিন মুক্তি পেয়েছিল শহরের বিভিন্ন সিনেমা হলে। নতুন ছবি রিলিজ করলেও অনেকগুলি সিনেমা হলে স্বাধীনতা সংক্রান্ত ছবির পুনঃপ্রদর্শন হয়েছিল। ছবির শুরুতে দেখানো হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলন কেন্দ্রিক তথ্যচিত্র। সেটি তৈরি করেছিল রাধা ফিল্মস। সেদিন মুক্তি পেয়েছিল এবং হলে চলছিল পথের দাবি, স্বয়ংসিদ্ধা, নার্স সিসি, নৌকাডুবি, পূর্বরাগ, মুক্তির বন্ধন, রামের সুমতি প্রভৃতি ছবি। হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে ছিল জুগনু, দো ভাই, দর্দ, মির্জা সাহিবান, এলান, শেহনাই, পরওয়ানা, সাজন, নীল কমল প্রভৃতি।
উত্তরা, উজ্জ্বলা ও পূরবী হলের মালিকরা ঘোষণা করেছিলেন, ১৪ আগস্ট মাঝরাতে দেখানো হবে ‘জয়তু নেতাজি’ নামে একটি তথ্যচিত্র। এটি প্রযোজনা করেছিল অরোরা প্রোডাকশন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা না হওয়ায় সেই শো বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিস। যদিও হল মালিকরা কলকাতা কর্পোরেনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন। তবে পরদিন সেই তথ্যচিত্রটি বেশ কয়েকটি হলে দেখানো হয়েছিল। 
সেদিন রঙ্গমঞ্চেও ছিল স্বাধীনতা উদযাপনের প্রস্তুতি। স্টার থিয়েটারে হয়েছিল ‘শতবর্ষ আগে’ নামে একটি নাটক। শ্রীরঙ্গমে বক্তৃতা দিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল, ‘জাতীয় সঙ্গীত, স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বাংলা রঙ্গমঞ্চ’।  বক্তৃতার পর মঞ্চে অভিনীত হয় ‘দুঃখীর ইমান’ নাটকটি। রংমহলে অহীন্দ্র চৌধুরী অভিনয় করেছিলেন ‘বাংলার প্রতাপ’ নাটকটি। মিনার্ভা থিয়েটারে সেদিন অভিনীত হয়েছিল ‘ঝাঁসির রানি’। সেদিন ওই মঞ্চে স্বাধীনতার উদযাপন করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।  
কিন্তু আনন্দটুকুই সব ছিল না। কলকাতা যখন আনন্দে ভাসছে, তখনই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাতারাতি সবকিছু ফেলে প্রাণের তাগিদে কলকাতামুখী হাজার হাজার বাঙালি। প্রাণ বাঁচাতে ছিন্নমূল মানুষের দল তখন এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শিয়ালদহ স্টেশনে। স্বাধীনতার আনন্দ ক্রমেই জীবনযুদ্ধ আর জীবন যন্ত্রণার ভিতরে ডুবে যেতে লাগল। রাজনীতির পথ ধরে বিচ্ছিন্নতা সবসময় ঐক্যের পথকে, সম্প্রীতির পথকে নষ্ট করেছে। সেই পরম্পরা থেকে যেন মুক্ত হতে পারল না আজকের রাজনীতিও।

20th     August,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ