বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

বাজার যা চলছে
চন্দন চক্রবর্তী

‘অজন্তা গেলে।’ নামটা শুনেই আমার অদৃশ্য কাঁধের ঝোলাটি কেমন ডাঙায় জ্যান্ত মাছের মতো নড়েচড়ে উঠল। মাঝবয়েসি বিধবা মহিলা। মাছ কাটছিল আর বকবক করছিল। মুচকি হেসে বলল, ‘কেন? গেলে কারও পদবি হয়নে বুঝি?’ একটু অবাক হলাম বইকি। অনেক ধরনের পদবি শুনেছি কিন্তু ‘গেলে।’ উঁহু কখনও না।
ছোট পরিসরের মাছ বাজার। ঠাকুরপুকুর বাজারের শেষ প্রান্তে। আসি গল্প কুড়োতে। ছোট ছোট সুখ দুঃখ আনন্দ ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন অনুভূতিকে ভরে রাখি আমার না দেখা ঝোলায়। এই বাজারে জনা কুড়ি মাছ বিক্রেতা আর জনা তিনেক মাছ কাটার মহিলা। সরকারি বাজার নয়। বিশেষ অর্থ দিয়ে এক টুকরো সিমেন্টের চাতাল ভাড়া নেওয়া।
জিজ্ঞেস করি, ‘কততে নিলে?’
‘এককালীন এক লাখ গো। আর ভাড়া মাসে দু’হাজার। তোমার কাজ হোক বা না হোক। অনেকে চালাতে পারেনে। ঝাঁপ বন্ধ করে দেচে।’ দেখলাম সত্যি কেমন ফাঁকা ফাঁকা। অনতিদূরে এক মাসি। কাজ নেই। হাই তুলছে। সামনে তার যন্ত্র বলতে বঁটি আর মাছের ঝুড়ি। হাতে এখনও ছাই লাগায়নি।
অজন্তা হাসল। ওকেও বোধহয় আজ গল্পে পেয়েছে। নাকি ওর কাছেও একটা অদৃশ্য ঝোলা আছে। জমে থাকা নালার জলের মতো গল্প কথা জমে ছিল। একটু মুখটা খুঁচিয়ে দিতেই ছর ছর করে জল বেরয়, গল্পের মতো।
একটা সিগারেট ধরালাম। বাইরে লপ ছপ বৃষ্টি। আমেজও গল্পের।
বাড়িতে সুনন্দা একা। অফিস নেই। তাড়া নেই। অবসরের অফুরন্ত হাঁপিয়ে ওঠা সময়। আজ ছোট্ট ছোট্ট টাটকা পার্শে মাছ কিনেছি। এটা অল্প ভেজে ডুমো ডুমো আলু দিয়ে ঝাল। বড্ড ভালো রাঁধে গিন্নি।
আসলে মাছগুলো এত ছোট্ট যে তেমন কেউ আমল দেয়নি। এদিকে ছোট মাছ, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। আর বাজার শুরু যেখানে, সেই বড় রাস্তার মুখেই ভালো ভালো বড় মাছের আমদানি।
অক্লেশে আমাকে দাদা আর তুমি বলে সম্বোধন করে বলল, ‘বুঝলে দাদা, সেবার কুম্ভমেলায় এলাহাবাদের নদীতে চান করতে নেবেছিলুম। পাড়ে নৌকা বাঁধা। উফফ। সে কী পরিষ্কার টলটলে জল আর আর কী ঠান্ডা। আমার ঢ্যাঙা লোকটা হাত ধরে নে যাচ্ছিল। হি হি করতে করতে দু’জনে কোমর জলে পড়লুম। আর তেমনি চোখে পড়ল এইরকম গুটি গুটি এক ঝাঁক মাছ খেলা করছে। কী সুন্দর লাগতেছিল। তা আমি কয়েছিলাম, হ্যাঁ গো, এটা কী মাছ? ও কয়েছেল, পুচকে পার্শের বাচ্চা। তেকন বয়স কম। কোমরে জড়ানো গামছা ওকে এক সাইটে ধরতে কইলুম। তারপর মাছগুলো গামছায় ধরা পড়ে ছরছর করতে ছেল। আমার ঢ্যাঙা কয়েছেল, ছেড়ে দে রে। একানে কেউ মাছ খায়নে। সাধুদের মেলা। সব নিরামিষ খায়। আজ তোমার এই মাছগুলো দেকে সেদিনকার কথা মনে পড়ল।’
‘বাব্বা। তোমার কুম্ভমেলাও দেখা সারা। আমি তো শুধু বইতেই পড়লাম।’
‘একবার নয়গো দাদা দু’বার। আমার ঢ্যাঙা এইসব তীর্থ করতে ভালোবাসত। আর একবার কোথায় যে নে গেচল নাম মনে নেই। তবে মনে আছে একটা বড় পুকুর ছেল। বড় বড় রুইমাছ আর কচ্ছপ ঘুরে বেড়াচ্ছিল। জলটা ছেল কাচের মতো। হাতে করে খাবার দিতে গুপ গুপ করে খে নেত। ওফ্‌। ঩সে কী দিন ছিল গো দাদা।’
অজন্তার পান খাওয়া দাঁতে ছোপ ছোপ লালচে দাগ বেরিয়ে পড়ল। ও হাসল। অনাবিল হাসি। বড় সুন্দর নির্মল পবিত্র সে হাসি। এরকম হাসি সুনন্দাকে কখনও হাসতে দেখেছি। হাতড়ে চলেছি। পুরী, দীঘা, দার্জিলিং বা শান্তিনিকেতন ছাড়া কোথাও কি বেড়াতে গেছি। অথচ সুনন্দা বেড়াতে ভালোবাসে। বলেছিল, একবার ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে যাবে। কাটাবার জন্য বলেছিলাম— ওখানে সব সময় গোলাগুলি চলে! একবার অবশ্য কবি বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে গিয়েছিলাম। ওকে নিয়ে যাইনি। আচ্ছা অজন্তা কি পুরী বা গঙ্গাসাগর মেলায় গেছে? জিজ্ঞেস করতে সাহস হল না। যদি বিশাল ঘাড় নেড়ে বলে বহুবার গেছি।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাড়িতে কে কে আছে?’ পানসে হয়ে গেল অজন্তার মুখ। একটা ছলবলে মুখ মুহূর্তে এভাবে থম মেরে যায়?
‘আছে তো অনেকে। ছেলে, বউমা, নাতিরা। কিন্তু আমি একা থাকি। রিকশ চালাত আমার ঢ্যাঙা। পয়সা জইমে দাস পাড়ার ভিতরে একটা জমি কিনে একতলা বাড়ি করেছেল। কোঠা বাড়ি নয়। ছিটা বেড়ার দু’কামরা ঘর। মাথায় টালির ছাউনি। তা সেকানে ঠাঁই হলুনি। বেধবার ঘরও এভাবে চলে যায় তা আগে জানতুম না। কত কষ্ট করে উকে মানুষ করছিলুম। এক বর্ষার রাতে বার করে দেল। শেষে পাড়ার লোকজন সবাই মিলে একপাশে একটু জমির ব্যবস্থা করে  দেল। একন সেখানেই ছোট্ট একটা বাঁশ বাখারি মাটি দিয়ে ঘর করলুম। সেখানেই আছি গো দাদা। তা সব করছি এই মাছ কাটার কাজ করে। কিন্তু একন একার পেটই চলতে চায়নে। বাজার আগুন। যেন সব গিলে খাচ্ছে।’
ভিতর ভিতর একটা শ্লাঘা অনুভব করলাম। অথচ ওর দুঃখে আমার দুখি হওয়ার কথা। মুহূর্তে বেশ ভালো লাগল। একটা সামান্য মাছওয়ালি এভাবে গোল দিয়ে যাবে। এইমাত্র গেম ড্র করলাম। রেজাল্ট এক-এক। কারণ আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। সে এখন আইটি ইঞ্জিনিয়ার। বিদেশে পোস্টিং ছিল। কিন্তু বুড়ো বাবা মাকে কে দেখবে? কাছে থাকা আর দূর থেকে ডলার পাঠিয়ে কর্তব্য করা তো এক নয়। সুতরাং অজন্তা তুমি এখানে বিগ জিরো। ধরে নিলাম এবারে আমার জেতা শুরু হবে।
‘তা তোমার স্বামীটি কোথায় রিকশ চালাত?’
‘কেন? ঠাকুরপুকুর বাজারের ইসস্ট্যান্ডে। সব্বাই উকে চিনত।’ ভাবি নিশ্চয়ই একটু বেশি রকমের পেঁচো মাতাল ছিল। সাধারণত মাতাল টাল খাওয়া রিকশচালককে সবাই চিনে থাকে।
‘বড় রাস্তার ধারে যে পুরনো মন্দির আছে, তা তো আমার মরদের চেষ্টায় হয়েছেল। কী খাটাটাই না খেটেছিল। নিজে টাকাও দেছল। সে কী আজকের কথা। একদিন ইইনে বিইনে কয়েছেল, ও বউ, মা কালীর মন্দিরের জন্য কিছু টাকা লাগবে রে। কাজ সব আটকে যাচ্ছে। কয়েছিলুম, তা আমি কী করব? বাপের দর থেকে টাকা নে আসব?’
‘তোর কানের মাকড়িটা দে না? পরে নয় গইড়ে দেব।’
‘মাথা খারাপ হছে। সোনার দাম কত জানো?’
‘আরে মা কালীর থেকে তো বেশি নয়। মা যে আমাকে স্বপ্নে বলে। ব্যস মায়ের কথা শুনে দিয়ে দিলুম।’
ওর মুখে গর্বের হাসি। ফোলা বেলুনে ফুটো থাকলে যেভাবে চুপসে যেতে থাকে। আমার তাই হল। আবার কেমন হেরে গেলাম। সামান্য অজন্তা গেলে আবার গোল করে এগিয়ে গেল।
আমার গ্রামের বাড়ির লাগোয়া মুচিপাড়া। সেই পাড়ার সব কারিগররা কাঁচা কালীমন্দির পাকা করার কাজে উদ্যোগ নিয়েছিল। একটু আবদার করে বেশিই চেয়েছিল। বয়স্ক হারু কারিগরের মুখ দিয়ে ভক ভক করে মদের গন্ধ বেরচ্ছিল। আমি টাকা না দিয়ে বলেছিলাম, ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে?’
‘নেই বাবু।’ বিলের কাউন্টার পার্ট দেখিয়ে বলে, ‘দেখুন বাবু সকলে বিশ্বাস করে দিছে। মায়ের পুজোতে ঢাক বাজাই। কম দামি মদও খাই সত্যি। কিন্তু মায়ের মন্দিরের জন্য তুলা টাকা নয়ছয় হবেনি। কলেজে পড়া ওই ছেলে আছে। সে সব হিসাব রাখে।’ ছেলেটি এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। আমি তারপরও ওদের ভাগিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘বামুন বাড়ির প্রতিষ্ঠা পুকুরে ঘট, ঠাকুর ডোবাবে তাই না কত!’
ভাবি, কেন সেদিন দিইনি। নিচু জাত বলে কি! অথচ ওরা আমার প্রতিবেশী। সেটা ছিল আমার জন্মভিটা।
অজন্তার মাছকাটা, ধোয়া সব শেষ। একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে ফেলল। তিরিশ টাকা হয়। পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললাম, ‘রাখো!’ মনে মনে একটু তৃপ্তি পেলাম কি? বোঝার আগেই অজন্তা হেসে প্রশ্ন করল, ‘কুম্ভমেলায় নিজের মানুষের হাত ধরে চান করলুম। পুণ্যি করলুম। লাভ কী হল? সেই তো সাদা সিঁথি নিয়ে একা দিন গুনছি। যার হাতে দে গেল সে তাইড়ে দেল!’
কী উত্তর দেব? ইতস্তত করে বললাম,  ‘ওই যে সুখস্মৃতি সব তোমাকে একা থাকতে দিতে চাইছে না। তার দাম তো কম নয়।’ও ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। মুখে হাল্কা হাসি। ঘাড় নেড়ে বলে, ‘তা ঠিক!’
বলতে বলতে আবার বৃষ্টি শুরু হল। বেরলে ভিজে যাব। সুনন্দাকে ফোন করলাম। ‘বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। ফিরতে দেরি হবে।’ ও বলল, ‘মনে করে প্রেশার, সুগার, ছাড়াও তোমার ঘুমের ওষুধ আনবে। ওটি না হলে তো আবার ঘুম আসে না।’ ‘ঠিক আছে।’ আবার হারতে শুরু করলাম। পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। ব্যাটা রিকশওয়ালা ওর বর হরি কারিগরের মতো মাতাল ছিল। অথচ এই অর্ক চ্যাটার্জি জীবনে মদ ছোঁয়নি। অনেকটা যাত্রার ঢঙে হা হা করে হাসলাম, মনে মনে।
ফিরে এলাম অজন্তার কাছে।
‘আচ্ছা তোমার ঢ্যাঙা বড় রাস্তার ঠিক কোন মন্দিরটা বানিয়েছে। ওখানে ছোট ছোট কয়েকটা মন্দির আছে।’
‘আরে বাপু রেকশা ইসস্ট্যান্ডের গায়ে। হাত কাটা ঢ্যাঙার মন্দির কুনটা বললে লোকে দেইখে দেবে।’
ভিতরে মন হাসল। পেয়েছি এবার জিতব! তার মানে ব্যাটা কোন এক সময় মাস্তানি করতে গিয়ে হাতটা কাটা পড়েছে। যত গুণ্ডার নাম হয়, কানকাটা, হাতকাটা। বোমাটোমা ছুড়তে বা বাঁধতে গিয়ে হাত উড়ে গেছে। নাকি পার্টির কাজ করতে গিয়ে। মোদ্দাকথা ওকে পাবলিক ভয় পেত। আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদা বা তোলা তুলত। ব্যাটা তোলাবাজ ছিল একসময়। অন্তত এই মওকায় আমাকে জিততে হবে।
‘হাত কাটা মানে? কীভাবে হাত কাটল?’ এর মধ্যে এক ভদ্রলোক কিছু মাঝারি সাইজের ট্যাংরা মাছ দিয়ে চলে গেল। অজন্তা সেগুলো কাটতে শুরু করল। হঠাৎ একটা কাঁটা ফুটল। টিপতেই টোপা টোপা রক্ত। ও অস্ফুট শব্দ করল। আহ্‌!
‘বুঝলে দাদা, সেদিন বেচারার রক্তমাখা হাতটা দেখেছিলুম। যন্তনা সহ্য করার চেষ্টা করতেছেল।’
‘নিশ্চয় বোমা টোমা বাঁধতে গিয়ে এমন হয়েছিল?’
‘কী যে বল দাদা। সে মানুষ ছিলুনি। বড্ড ভালোমানুষ ছেল।’
‘পাকেচক্রে পড়ে কেউ ফাঁসিয়েছিল?’
সবে জেতার দোরগোড়ায় পৌঁছেছিলাম আবার বেলুন ফুস।
‘উঁহু! গুল কারখানায় কাজ করত। একদিন চলন্ত মেশিনে হাত ঢুকে যায়। তারপর ঘরে খপর এল।  দৌড়ে গেলুম। দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ও থর থর করে কাঁপতে ছেল। ধরাধরি করে সবাই হাসপাতালে নে গেল। শেষে বাঁ হাত কাটা পড়ল। মিথ্যে বলবুনি, মালিক টাকাপয়সা দেছেল। ভাবলুম কপাল পুড়ল। তেখন বাজারে রাস্তার ধারে মাছকাটুনি হয়ে গেলুম। পরে একানে জাগা পেলুম।’
বিমর্ষ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর তোমার ঢ্যাঙা?’
‘সে কি দমবার লোক। একটা রেকশা ভাড়া নে খাটতে লেগে গেল।’
‘সে কী! এক হাতে?’
‘আমিও বিশ্বাস করিনি। ও কয়েছেল কিচ্ছু হবেনে। দেখ আমি ঠিক পারব।’
হ্যাগো ও পেরেছেল। একটা রেকশা ভাড়ায় নে বেইরে পড়ল। পেথম পেথম লোকে ভয় পেত, উঠতুনি। কি খাটনি খেটেছেল। 
ঠাকুর মুখ তুলে চাইল। সব সামলে উঠে আবার সংসার গড়র গড়র করে গড়াতে লাগল। ও টাকা জইমে আবার বেড়াতে নে গেছল। কয়েছেল তোর কুনও অভাব রাখবুনি। তোর নতুন মাকড়ি গড়ে দুব।’
এবারে একটা দীর্ঘশ্বাস! এই শ্বাসে শব্দ থাকে না তেমন। থাকে একটা বেদনা!
‘মানুষের কপালে বেশিদিন সুখ থাকেনে। ঠাকুর সব মেপে মেপে পাইঠে দেয়। আমারও সে সুখ শেষ হল। ক’দিনের জ্বরে বেঁহুশ। হাসপাতালে নে গেলুম। বাঁচলুনি। ছেড়ে একা একা চলে গেল। তবে সব রেকশওয়ালা মিলে মন্দিরের গায়ে একটা কালো বেদি বাইনে দেছেল। সেটা একনো আছে গো দাদা। আসলে ও মাকে খুব ভালোবাসত।’
মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ‘কোন মাকে? মা কালীকে?’
‘মা কালী তো বটেই। তবে নিজের মাকেও খুব ভালোবাসত। মায়েরও ছেলে অন্ত পেরাণ। ছেলের শোক নিতে পারলুনি। সে বুড়িও চলে গেল। আমি একন একা। তাই বলতেছিলুম, আমি কী পেলুম বল দিনি।’
‘বাহ! রে। এই যে এত ভালোবাসা পেলে। মন্দিরের পাশে কালো বেদিটা পেলে। যার মধ্যে তোমার লোকটা বেঁচে রইল। লোকে যখন জিজ্ঞেস করবে হ্যাঁগো এটা কার বেদি? লোকটা কে? তখন হয়তো কোনও বয়স্ক রিকশওয়ালা বলবে, আরে ও’তো আমাদের হাতকাটা ঢ্যাঙা গো। সেটাই বা কম কী?’
তখনও ছুপ ছুপ বৃষ্টি পড়ছিল। মাছের প্যাকেট নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। পায়ের গতি বাড়ল। সে কি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে! তাই বা কী করে হয়! এখনও বৃষ্টি হলে খোলা ব্যালকনিতে দাঁড়াই। হাত বাড়িয়ে আধভেজা ভিজি। হাতগুলো বৃষ্টিতে স্নান করে। এভাবে কখন যেন ভিজে যাই।
সুতরাং বৃষ্টির জন্য নয়। তাহলে কেন এত তাড়া? তবে কী দেরি হচ্ছে, গিন্নি খেপে যাবে, তাই। তাও নয়। ও জানে আমি বৃষ্টিতে আটকে গেছি। তবে কীসের এত তাড়া? ভিতর আমি বলে উঠল,
—তুমি পালাচ্ছ। তোমার নিজের থেকে।
—কেন? কেন আমি পালাতে যাব?
—একটা হেরো মন পালাচ্ছে। মন করে দেখো তোমার মা শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। তখন হাঁপানির এত ভালো ওষুধ বা চিকিৎসা হতো না। সারারাত হাঁফের টানে কষ্ট পেতেন বুকে কয়েকটা বালিশ দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় হাপর টানতেন। জেগে থাকতেন। কোনওদিন পাশে বসোনি। ঘুম ভাঙেনি তোমার। মনে পড়ছে কী? জীবনের শেষতম দুর্গাপুজোতে তোমার কাছে ঠাকুর দেখতে চেয়েছিলেন, তোমার মা। খোকা, রিকশ করে ক’টা ঠাকুর দেখাবি। কতদিন মা দুগ্গার মুখ দেখিনি। তুমি সেদিন মাকে সময় না দিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ারে আড্ডা মারতে বেরিয়ে গিয়েছিলে। তোমার মায়ের চোখে জল এসেছিল সেদিন।
সেই অন্যায় বোধ তোমাকে আজও যন্ত্রণা দিচ্ছে। তাই নিজের থেকে নিজেই পালাচ্ছ।
ক্ষেপে গিয়ে ভিতর ‘আমি’ কে বললাম, একদম চুপ ভ্যাজর ভ্যাজর করবে না! হাঁটছি আমি। বড্ড মায়ের কথা মনে পড়ছিল। মুখটা কেমন আবছা হয়ে গেছে। হঠাৎ গিন্নির ফোন।
‘ফেরার পথে এ মাসের ওষুধগুলো নিয়ে এসো। প্রেশার, সুগার আর ঘুমের ওষুধ একদম নেই।’
বললাম, ‘হুম!’
অলঙ্করণ : সোমনাথ পাল

27th     November,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ