বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

পর্ব ১৬: অপারেশন ’ ৭১
স্ট্র্যাপিং টাঙ্গাইল
সমৃদ্ধ দত্ত

নাহ! আর আসবে না কোনও সাহায্য! এবার নিশ্চিত বুঝে গিয়েছেন জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি। আমেরিকা আর চীন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে। আর সেই মিথ্যা কথাকে বিশ্বাস করে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত করে রেখে ইন্ডিয়ান আর্মি নামক একটি বাঘের মুখে ছেড়ে দিয়েছেন। নিজে নিশ্চিন্তে বসে আছেন করাচি মিলিটারি হেড কোয়ার্টার্সের ঘেরাটোপে। পাকিস্তানি আর্মির ইস্টার্ন কমান্ডার জেনারেল নিয়াজির রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই খবর আসছে সিলেটের বাধা ভেঙে পড়বে। টাঙ্গাইলে ঢুকে পড়ার সব তোড়জোড় শেষ করে ফেলেছে ভারতীয় এয়ারফোর্স। জামালপুরের গ্যারিসন যে কোনও সময় যুদ্ধে হেরে যাবে। এখন উপায়? মাথার চুল ছিঁড়ছেন তিনি। এখন একমাত্র চিন্তা ঢাকা রক্ষা করা। ঢাকা থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরত যাওয়াই মনে হচ্ছে অসম্ভব! যত কাছে এগিয়ে আসবে ভারতীয় সেনা, ততই ঢাকায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তান আর্মিকে ছিঁড়েখুঁড়ে মুণ্ডু নিয়ে খেলা করতে নামবে মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের রাগ প্রবল। কারণ এই ঢাকার বুকে ২৫ মার্চ পাক বাহিনী যা অত্যাচার করেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে লেখা হয়ে গিয়েছে। এবার বদলা চা‌ই। কিন্তু পরাজয়ের আগেই পরাস্ত হলে চলবে না। তাই জেনারেল নিয়াজি ভাবলেন আগে চারদিক থেকে ঢাকাকে দুর্গ করে ফেলতে হবে। কিছুতেই যেন ভারতীয় সেনা প্রবেশ করতে না পারে। সেই কারণে তিনি নিজের যাবতীয় কমান্ডার আর লেফটেন্যান্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করলেন। সকলকে ডেকে পাঠানো হল ঢাকায়। পাকিস্তানের নাইনটি থ্রি অ্যাড হক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার কাদিরকে নিয়াজি বললেন, কাদির ঢাকায় আরও ফোর্স লাগবে। তুমি কিছু ফোর্স পাঠাতে পারো?
ব্রিগেডিয়ার কাদির সেই মেসেজ পেয়ে সোজা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান আহমেদকে বললেন, সুলতান, ঢাকায় আসতে পারবে? যদিও রাস্তার কিছুটা ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপচার করেছে। তাদের সেই ব্যারিকেড ভেঙে আসতে হবে। পারবে? 
সুলতান আহমেদ বললেন, স্যার, আমার সামনেই জামালপুর বর্ডারের কাছে ইন্ডিয়ান আর্মির মারাঠা ব্রিগেড দাঁড়িয়ে। যে কোনও সময় ঢুকবে। কী করব? এদের প্রতিরোধ করাই আমার প্রাথমিক ডিউটি। কাদির বললেন, জেনারেল নিয়াজি ইমিডিয়েট ঢাকায় যেতে বলেছেন। তুমি যাও। 
রাত সাড়ে ১১টায় হঠাৎ ভারতীয় সেনার ব্রিগেডিয়ার ক্লের লেফটেন্যান্ট ব্রার ওরফে বুলবুল দেখলেন ওয়াই কোম্পানি পাকিস্তান বর্ডার ক্রস করে ঢোকার সময় আচমকা গুলিগোলা। অর্থাৎ তার আগেই পাকিস্তান ফোর্স এগিয়ে এসেছে। নিমেষেই তাঁরা বুঝে গেলেন যে লেফটেন্যান্ট সুলতান আহমেদ আর দেরি করতে চান না। তিনি সরাসরি নিজেই অ্যাটাক করেছেন ইন্ডিয়ান ফোর্সকে। ওয়াই কোম্পানিকে সামনে রেখে এবার একসঙ্গে নাইনটি ফাইভ আর মারাঠা রেজিমেন্ট একসঙ্গে অগ্রসর হল। তিনটি ফোর্সের মিলিত আক্রমণ। পাকিস্তানের জামালপুর গ্যারিসন অনেক শক্তিশালী ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার ক্লের দেখতে পাচ্ছেন, মুড়িমুড়কির মতো সেনা মারা যাচ্ছে ভারতের সামনে। কী ব্যাপার? এই ফোর্স নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছিলেন সুলতান আহমেদ? সে নিজে কোথায়? 
মাত্র আড়াই ঘণ্টার লড়াইয়ে গোটা পাক বাহিনী সম্পূর্ণ খতম। রাত আড়াইটে। ব্রিগেডিয়ার ক্লের কাছে দুই মুক্তিযোদ্ধা এসে খবর দিলেন, সুলতান আহমেদ আসলে কয়েকশো ফোর্সকে বর্ডারের দিকে পাঠিয়ে নিজে গোপনে চলে গিয়েছেন ঢাকার রাস্তায়। কেন এই পশ্চাদপসরণ? সেটা বোঝা গেল না। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার ক্লের আর লেফটেন্যান্ট ব্রার দেখলেন আর বাধা নেই। জামালপুর দখল হয়ে গিয়েছে। রক্তস্নাত জামালপুরের রাস্তায় অসংখ্য পাক সেনার মৃতদেহ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে সেই খবর কীভাবে যেন পৌঁছে গিয়েছে বর্ডারের অন্য প্রান্তে। দলে দলে সাধারণ মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ জয় বাংলা জয় বাংলা ধ্বনিতে উদ্বেল মানুষ। উৎসব শুরু হয়ে গেল। যেন যুদ্ধজয় সম্পূর্ণ। জামালপুর যে এত সহজে দখল করে নেবে ভারতের বাহিনী, এটা কল্পনাই করেনি কেউ। এতদিন পর আবার নিজেদের মাটিতে আনন্দ করতে পারছে গ্রামবাসী,  এ যেন এক স্বপ্ন। সেই তুমুল আনন্দের মধ্যেই সীমান্তের এক প্রান্তে একটি আমবাগানে জড়ো হয়েছিল কিছু গ্রামবাসী। তারা ভয়ে বুঝতে পারছে না যে, এখন কী করা উচিত! তারা কি ঢুকবে? সেই দলে এক মা আর তার দুই মেয়ে। তারা আকুল হয়ে অপেক্ষা করছে লেফটেন্যান্ট বুলবুলের। কারণ স্যার কথা দিয়ে গিয়েছে, হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে নিয়ে আসবেন। বোনেরা ফিরে পাবে ভাইকে। মা পাবেন সন্তানকে। সেকথা মনে আছে বুলবুলের। কিন্তু পাকিস্তানের বালুচ রেজিমেন্টের একটা বড় অংশই পালিয়েছে। আর বাকিদের সিংহভাগ প্রাণ হারিয়েছে। কীভাবে খুঁজে বের করবেন তিনি ওই বাচ্চা ছেলেটিকে? কোথায় পাবেন তার সন্ধান? বুলবুলের মুখ এই যুদ্ধজয়ের পরও তাই ম্লান। 
কিন্তু কোথায় পালাবেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান আহমেদ? ভারতীয় বাহিনীকে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে নিজের সেনাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে পালাচ্ছিলেন বেশ। যদিও তাঁর ইচ্ছে ছিল না এভাবে পালানোর। তিনি তো চেয়েছিলেন লড়াই করতে। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার কাদিরের কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান বাহিনীর কর্তারা সম্ভবত ক্রমেই হার মানতে শুরু করেছেন। কারণ, অন্তত ৪৮ ঘণ্টা হয়ে গেল কোনও কমান্ডার অ্যাটাকের কথা বলেনি। সকলেই নির্দেশ দিচ্ছে ঢাকা রক্ষার জন্য। অর্থাৎ নির্ঘাত দিকে দিকে পতন ঘটছে পাক বাহিনীর অধীনে থাকা দুর্গের। এসব ভাবতে ভাবতে ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন সুলতান আহমেদ। হঠাৎ ছিটকে এল একের পর এক গুলি। রাস্তায়। আশপাশে কিছু জঙ্গল। এখানে কারা গুলি করছে? 
সবেমাত্র ঘাটাইলের উত্তরে বানিয়াপাড়া ব্রিজ ক্রস করছে সুলতান আহমেদের বাহিনী। সামনে ওই গুলিগোলার মধ্যেই দেখতে পেলেন সামনে কনভয়। একঝাঁক জিপ। একটি জিপের উপর পতাকা উড়ছে। সেটায় কিছু লেখা। সুলতান আহমেদ বুঝতে পারলেন না। করাচির এক জওয়ান এগিয়ে এল পিছনে। সে বলল, পতাকায় লেখা আছে জয় বাংলা। চমকে উঠলেন সুলতান আহমেদ। সর্বনাশ! তার মানে এরা মুক্তিযোদ্ধা? এরা এভাবে রাস্তায় প্রকাশ্যে কেন? অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য? এটা কোন বাহিনী? সেই করাচির জওয়ানের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। সে দূর থেকে বাইনোকুলার লাগিয়ে ওই মুক্তিবাহিনীর কনভয় দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছে। ম্লান হয়ে যাওয়া মুখে সে বলল, সার, ওটা মনে হচ্ছে কাদের সিদ্দিকির বাহিনী। সুলতান আহমেদের মতো দুঃসাহসী অফিসারের মেরুদণ্ডেও যেন ঠান্ডা স্রোত। নামটা শুনে। কাদের বাহিনী? এই লোকটা তো একটাই যে ফোর্স তৈরি করেছে, সেটা ভয়ঙ্কর! অসংখ্য পাক বাহিনী এই বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে পরাস্ত হয়েছে। বাহিনীর নেতার নাম কাদের সিদ্দিকি! ডাক নাম বাঘা সিদ্দিকি! কিছুদিন আগেই মধুপুর ব্রিজ দখল করে নিয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর থেকে পালিয়ে এখন পাকিস্তানের বালুচ রেজিমেন্ট মুখোমুখি সেই কাদের বাহিনীর সামনে! কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হল মর্টার শেলের যুদ্ধ! কিন্তু আধঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিবাহিনী হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে। আশপাশের জঙ্গলে ঢুকে গেল তারা জিপ নিয়েই। সুলতান আহমেদ ভাবলেন এটা কী হল? ওরা ভয় পেয়ে পালাল? নাকি এটা কোনও ট্র্যাপ? তারা ওই জঙ্গলে ঢুকে পড়ে মুক্তিবাহিনীর পিছনে তাড়া করুক এটাই কি চাইছে ওই মুক্তিযোদ্ধারা? তার মানে ভিতরে আরও কোনও গভীর ফাঁদ পেতে রেখেছে? এসব ভেবে সুলতান আহমেদ আর এগনোর সাহস পেলেন না। তিনি টাঙ্গাইল রোড ধরে এগলেন ঢাকার দিকে। ঠিক তখন ওই জঙ্গলের পিছনের গ্রামের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা কাদের সিদ্দিকি প্ল্যান করছেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি প্যারাট্রুপার বাহিনীকে ঠিক কোন কোন স্থানে গোপনে অবতরণ করানো হবে। তৈরি হচ্ছে তার রুটপ্ল্যান!
....
ধলেশ্বরী নদীর মালঞ্চচরে দাঁড়িয়ে থাকা কাদের সিদ্দিকির কাছে এক তরুণ ছুটে আসছে। কাছে এসে সে বলল, আসসালাম আলিকুম কাদের সাহেব! জোগারচরে ইন্ডিয়ার অতিথিকে রাখা হয়েছে। আপনি চলেন!
কাদের সিদ্দিকি হাসলেন। তার মানে এসে গিয়েছেন ওই অতিথি। ধলেশ্বরীর মোহনায় জোগারচরে দু’টি নৌকা বাঁধা। কাদের সিদ্দিকি সেদিকে এগিয়ে গেলেন। নেমে এলেন এক সুঠাম চেহারার মানুষ। ঝকঝকে হাসি। কাদের সিদ্দিকির দিকে তাকিয়ে বললেন, আপ঩নিই সেই বিখ্যাত মানুষ! আপনার কথা আমাদের ফোর্সেও অনেক আলোচনা হয়। কাদের সিদ্দিকি হাসলেন। বললেন, আপনার কোনও অসুবিধা হয়নি তো! ভদ্রলোক বললেন একদমই না। কাদের জানেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোপন ইনটেলিজেন্সের হয়ে এই মানুষটি এসেছেন একটা প্ল্যান নিয়ে। ছত্রীবাহিনীর প্ল্যান। অর্থাৎ প্যারাট্রুপার। একদিকে সমতলের যুদ্ধে যখন চারদিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করে ক্রমেই ঢাকার দিকে ঠেলে দেওয়ার নিখুঁত পরিকল্পনা চলছে, ঠিক তেমনই এবার আকাশ থেকে নেমে আসবে ভারতের এয়ারফোর্স বাহিনী। যেমন সিলেটে হয়েছে। এবার অপারেশন টাঙ্গাইলে। এই ভদ্রলোকের নাম পিটার। ক্যাপ্টেন পিটার। আসলে মোটেই পিটার তাঁর আসল নাম নয়। তিনি কলকাতার এক বাঙালি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। আপাতত ছদ্মনামেই এসেছেন এবং সম্পূর্ণ সাধারণ পোশাকে। ছদ্মবেশে। 
ধলেশ্বরী নদীর বুকে নৌকায় রাত কাটানো হচ্ছে। চারদিকে নিঝুম এক স্তব্ধতা। শুধুই ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। কিন্তু পূর্ববঙ্গের নদীতীরের সেই আবহমানের শান্তির সঙ্গে পার্থক্য আছে। কারণ দূর থেকে ভেসে আসছে গুলির শব্দ। বাতাসে যুদ্ধের গন্ধ। এ এক অন্য পূর্ববঙ্গ। যে অপেক্ষা করছে কোনও এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের। কী হবে এই যুদ্ধশেষে? একদিন তো এই যুদ্ধ শেষ হবেই? নাকি কোনওদিনই হবে না? 
একটা ম্যাপ বের করা হল। সারারাত আলোচনার পর ঠিক হল তিনটি লোকেশন। যেখানে ভারতীয় সেনার প্যারাট্রুপার বাহিনী এয়ার ড্রপিং করবে। 
১) ব্রাহ্মণ শাসন আর মোগলপাড়ার পশ্চিমে   গৌরাঙ্গী চক ২) কালিহাতির কাছে বাংলা ও শোলকুড়ার উত্তরে ৩) ইছাপুর-সহদেবপুরের দক্ষিণে পাঠন চক। এর মধ্যে সবথেকে বেশি চেষ্টা করতে হবে যাতে গৌরাঙ্গী চককেই ইন্ডিয়ান প্যারাট্রুপার বাহিনী বেছে নেয়। কারণ, যে কোনও প্যারাট্রুপিংয়ে সবথেকে বড় ঝুঁকি হল, ল্যান্ডিং ট্র্যাপ। অর্থাৎ আকাশ থেকে নিরাপদ ভেবে কোথাও নামা হল, কিন্তু ল্যা঩ন্ডিং-এর পরই দেখা গেল চারদিক থেকে শত্রুপক্ষ ঘিরে ধরে গুলি করছে। সুতরাং আগাম  ক্লিয়ারেন্স দরকার। আর সেই সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা ওই গৌরাঙ্গী চকেই বেশি। কারণ ওখানে মুক্তিবাহিনী থাকবে প্রহরায়। সবথেকে শক্তিশালী বেস। এই তিনটি স্থানে নামুক ভারতীয় প্যারাট্রুপার। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে তিনটি ম্যাপ দিয়ে পাঠানো হল বাদশা মিয়াঁকে। সীমান্ত পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে বাদশা যাবেন ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে। তারপর কোনও এক সময় রেডিওর সঙ্কেত বাজবে। সেই সঙ্কেত পেয়েই একদিকে যেমন দমদম থেকে উড়বে ভারতের বাহিনী, তেমনই এখানে কাদের সিদ্দিকির মুক্তিবাহিনী রেডি হয়ে যাবে। 
....
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা মেঘালয়ের তুরায় বসে আছেন। তাঁর চোখেমুখে টেনশন। কারণ এবার একটা বড়সড় ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। এই প্রথম সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর একক প্ল্যানে একটি অপারেশন। কারণ লোকেশন আর টপোগ্রাফি একমাত্র ওদেরই জানা। একটাই বড় ঝুঁকি। খবরটা গোপন রাখা। একটাও রেডিও ট্রান্সমিটার মেসেজ করা যাবে না। সামান্য ইন্টারসেপশন হলেই পাকিস্তান জেনে যাবে এই প্ল্যান। আর সেক্ষেত্রে বিরাট বিপদ। ভারতের বাহিনীকে নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু একদিকে ভারতীয় বাহিনী, তেমনই সীমান্তের ওপারে মুক্তিবাহিনীও তো জানছে গোটা প্ল্যান। সেখানে তাদের গ্রুপে কোনও স্পাই ঢুকে বসে থাকলে সব ফাঁস হয়ে যাবে। 
লেফটেন্যান্ট জেনারেল নির্ভয় শর্মার বাহিনী টু প্যারাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জগজিৎ সিং আরোরা বললেন, লেফটেন্যান্ট শর্মা, এটা আমাদের সবথেকে ইম্পর্টান্ট অভিযান। নিখুঁতভাবে অবতরণ করতে হবে প্রথমে। আর সেটা একবার হয়ে গেলে, আপনার বাহিনীর কাজ হল পুঙ্গি ব্রিজ দখল করা। এই ম্যাপ দেখুন। পুঙ্গি থেকে সোজা যে রাস্তা চলে গিয়েছে, সেটা ধরে এগলেই  টাঙ্গাইলের লোহাজঙ্গ নদীর ফেরিঘাট। এই ফেরিঘাটে আমাদের দুটো করে কোম্পানি ডেপ্লয় করা দরকার। কারণ আমাদের ঢোকার খবর পেয়ে পাকিস্তান ফোর্স নদীপথে পাল্টা আক্রমণ করবে। সেই সুযোগ যেন তারা না পায়। আবার একইসঙ্গে কেউ জলপথে পালাতেও যেন না পারে। সমস্ত এন্ট্রি আর এসকেপ রুট বন্ধ করবেন। 
জামালপুর আর ময়মনসিং থেকে আসা পাক ফোর্সের মধ্যে যে সংযোগ, সেটা ছিন্ন করে দিতে হবে। তারপর আমরা একে একে প্রতিটি ফোর্সকে পরাস্ত করব। ওদের কোনও একটি ফোর্স অন্য বাহিনীকে হেল্প করতে পারবে না। আটকে থাকবে আমাদের কাছে। এটাই প্ল্যান। এনি কোয়েশ্চেন? ক্যাপ্টেন নির্ভয় শর্মা বললেন, নো স্যার! ফলোয়িং দ্য অর্ডার!  
আপাতত তারিখ ঠিক হয়েছে ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১। দমদম ও কলাইকুণ্ডা।  দু’টি এয়ারফিল্ডে চরম কর্মব্যস্ততা। কারণ এখান থেকেই টেক অফ করবে সি ১১৯ ট্রান্সপোর্টার এয়ারক্র্যাফট। এর সঙ্গেই থাকবে এ এন টুয়েলভ আর সিডি থ্রি। প্যারা টু ফোর্সের প্যারাট্রুপার। কিন্তু তার আগে পাকিস্তানকে  ব্যস্ত রাখতে হবে। আর কাদের সিদ্দিকিকে হেল্প করা দরকার অন্য অভিযানের জন্য। যাতে এই প্যারাট্রুপিং প্রতিরোধ করার জন্য পাকিস্তান তৈরিই না হতে পারে। তাই ১০ ডিসেম্বর ভারতের তিনটে মিগ টোয়েন্টি ওয়ান পূর্ব পাকিস্তানের আকাশে ঢুকে ঘাটাইল আর গোপালপুর থানার উপর একের পর এক স্ট্র্যাপিং শুরু করল। 
একবার করে নীচের দিকে নেমে আসছে ইন্ডিয়ান মিগ আর একবার করে গোটা জনপদ কেঁপে উঠছে মেশিনগান আর বোমার শব্দে! তিনটি ক্যাম্প ফাঁকা করে দিয়ে দিশাহারা পাকিস্তান ফোর্স পালাতে শুরু করল। কিন্তু পালাবে কোথায়? হাইওয়েতে উঠেই দেখল, কাদের সিদ্দিকির বাহিনী দাঁড়িয়ে। মাথার উপরে ভারতীয় বিমান। সামনে মুক্তিবাহিনী! কী করবে পাক বাহিনী?
(চলবে)

16th     January,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ