বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

পর্ব ১২: অপারেশন’৭১ 
হান্টার সাকসেস
সমৃদ্ধ দত্ত

দৌড়চ্ছেন গীতাঞ্জলি। সুধার কোয়ার্টার থেকে চোখের নিমেষে বেরিয়ে এসেছেন। একটু জোরে জোরে হাঁটার প্রাথমিক চেষ্টার পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। শুরু করেছেন দৌড়।  এখন এয়ারফোর্স ক্যাম্পাসের পার্কের দিকে ছুটছেন তিনি। আর ঠিক তখনই আবার তীব্র এক শব্দ। পাঠানকোট এয়ারবেসে পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। আকাশ থেকে পড়ছে একের পর বোমা। গীতাঞ্জলি দেখতে পেল অদূরেই পলায়নরত মানুষগুলি হঠাৎ রাস্তার উপরেই মাটিতে শুয়ে পড়েছে। শব্দ এবার আরও বেশি। যেন মাথার মধ্যেই ঢুকে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটা ঝোড়ো বাতাসের মতো কিছু। তীব্র শব্দ আর গতির বিদ্যুৎ যেন গীতাঞ্জলির মাথা ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। পাকিস্তানের ফাইটার জেট! এত নিচু দিয়ে যাচ্ছে? তাহলে কি সিভিলিয়ানদের লক্ষ্য করে বোমা মারছে ওরা? এখনও সঠিক জানে না গীতাঞ্জলি যে সত্যিই পাকিস্তান অ্যাটাক করেছে কি না। কিন্তু এয়ারফোর্স অফিসারের স্ত্রী, পরিবারও অভিজ্ঞতার ইনস্টিংকটে বুঝে গিয়েছে নিশ্চয়ই এনিমি অ্যাটাক!  
ম্যাডাম...গো টু ট্রেঞ্চ...রাইট টার্ন...। চিৎকার ভেসে আসছে। আশপাশের কেউ  ট্রেঞ্চে যেতে বলছে। না হলে যে কোনও সময় বোমা কিংবা স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে গীতাঞ্জলি।  কিন্তু গীতাঞ্জলি দৌড়নো থামাচ্ছেন না। ২ মাসের ছেলেটা রয়েছে পার্কে। গীতা কোথায়? কী করছে ছেলেকে নিয়ে? কিছু হয়নি তো! গীতা বাচ্চাটার দেখভাল করে বটে।  কিন্তু সে নিজেও তো অল্পবয়সি একটা মেয়ে। সে নিশ্চয়ই টেনশনে পড়ে বুঝতে পারছে না কী করবে!
একদিকে এই প্রবল ফাইটার জেটের আক্রমণ। বোমাবর্ষণ। আর সাইরেনের অবিরত প্রবল শব্দে এতক্ষণ তো নিশ্চয়ই কাঁদছে সে! অবিনাশ কোথায়? সে কি এতক্ষণে কোয়ার্টারে এসে গীতাঞ্জলিকে না পেয়ে ফিরে গিয়েছে আবার? অজস্র চিন্তার ভিড় মাথায়। গীতাঞ্জলি অবশেষে পার্কের সামনে হাজির। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে তার চোখ। একটা গাছের পিছনে ক্যানোপি। তার পাশেই ট্রান্সফর্মার রুম। সেখানে একটা শেডের নীচে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে কয়েকজন বাগানের মালি, সিকিউরিটি গার্ড। শেডের থেকে বেরতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চারা কোথায়? এই সময় তো প্রচুর বাচ্চা পার্কে খেলতে আসে। তাদের মায়েরাও থাকে। অথবা আয়া কিংবা গভর্নেস। পার্ক প্রায় শূন্য! কেউ নেই। মাথা ঘুরে গেল গীতাঞ্জলির। কোথায় তাঁর ছেলে? 
প্রায় মাটিতে বসে পড়তে যাচ্ছেন তিনি। হঠাৎ একটা হাত টেনে ধরল গীতাঞ্জলিকে। একটা স্কুটার। আর একটু হলেই স্কুটারের ধাক্কা লাগছিল। কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা ঘুরিয়েই গীতাঞ্জলি দেখল স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি। চোখেমুখে তার টেনশন। কিন্তু জাল একজন স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, মিশুকে মানুষ। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা। হালকা একটা গোঁফ। চোখ দুটো যেন কুঁচকে থাকে। কিন্তু মনে হয় সর্বক্ষণ তিনি হাসছেন। 
জাল মিস্ত্রিকে দেখেই এক ঝলকে গীতাঞ্জলি বুঝে গেল জাল নির্ঘাত এয়ারফিল্ডে রিপোর্ট করতে যাচ্ছে। কারণ যা হচ্ছে এখন সকলকেই অফিসে রিপোর্ট করতে হবে। স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি বললেন, গীতাঞ্জলি, ডোন্ট ওরি। আমি পার্ক থেকে সব বাচ্চাকে আমার কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়েছি। তোমার ছেলেও আছে। সঙ্গে ওই তোমাদের আয়া মেয়েটি। চিন্তা নেই। আমি ফিল্ড অফিসে যাচ্ছি। আর্জেন্ট রিপোর্টিং। অবি কোথায়?  অর্থাৎ অবিনাশ। 
গীতাঞ্জলির বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেল। যাক! বাচ্চাটা তাহলে নিরাপদে। ওহ! এই কারণেই এই ক্যাম্পাসে আর অফিসে সকলের কাছেই জাল মিস্ত্রি এত পপুলার। স্কোয়াড্রন লিডার হওয়া সত্ত্বেও সে সর্বদা জুনিয়র আর সাবর্নিডেটের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশে। অবিনাশ এখন ফ্লাইং অফিসার। কিন্তু জালকে সে নাম ধরে ডাকে। আর জাল তাকে ভাইয়ের মতোই ভাবে। গীতাঞ্জলিকে জাল মিস্ত্রি বললেন, আমার বাড়িতে চলে যাও। পিছনের ট্রেঞ্চে সবাই আছে। তুমিও সোজা ট্রেঞ্চে যাও। এখনই কিন্তু আবার বেরিয়ে এসো না। একটু কমে যাক ওদের অ্যাটাক। 
গীতাঞ্জলি হাঁফাচ্ছে। কোনওমতে বলল, ভা‌ইয়া, যুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেল? আপনাদের কি যেতে হবে? 
মৃদু হেসে স্কুটার আবার স্টার্ট করে জাল মিস্ত্রি বললেন, ভালোই তো হল! অনেক দিন ধরেই আমরা এই দিনের জন্য ওয়েট করছিলাম। আমরা তো ওয়ার প্রিপেয়ার্ড ছিলামই। আরে গীতাঞ্জলি, পাকিস্তান আজ এই যে কাণ্ডটা করছে, ওরা জানেই না যে, এরপর ওদের ভাগ্যে কী পরিণতি অপেক্ষা করে আছে।  একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আসব ওদের। ইস্ট পাকিস্তানে নতুন একটা দেশের জন্ম হবে। আর এদিকে পাকিস্তানের অহংকার ধ্বংস কবে দেব। মজা আ গয়া! 
গীতাঞ্জলি বিস্ময়ে হতবাক। এরকমই এই মানুষটা। যুদ্ধটা যেন ছেলেখেলা। বুক কাঁপছে গীতাঞ্জলির। তাঁর বাবা মা দু’জনেই লেখক আর শিক্ষক। এই আর্মি, এয়ার ফোর্সের জীবনের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই ছিল না। কিন্তু অবিনাশের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তিনি বুঝেছেন, সত্যিকারের টেনশনের জীবন কাকে বলে। জীবন মৃত্যু হাতে করে চলা। এতদিন তিনি বিবাহিত জীবনে যুদ্ধ দেখেননি। এই কি সেই যুদ্ধ? ভাবতেই যেন বুকের মধ্যে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত! অবিকেও যেতে হবে? কিন্তু এই জাল মিস্ত্রি সত্যিকারের হিরো। সিক্সটি ফাইভের পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে নাকি ওয়েস্টার্ন সেক্টরে তিনি বোমা নিক্ষেপ করে এসেছেন দিনের পর দিন। গীতাঞ্জলির দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে চলে যাচ্ছেন স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি। স্কুটার থেকে চিৎকার করে বললেন, জলদি যুদ্ধটা শেষ করে তোমার হাতের পনির খেতে যাচ্ছি কিন্তু....। জাল মিস্ত্রির স্কুটারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল গীতাঞ্জলি। তারপর আবার দৌড়।
....
সেদিন সারারাত ধরেই পাকিস্তানের বোমাবর্ষণ চলল। এয়ার ফোর্স অফিসার, ট্রেনার সকলেই অফিসে। আর তাদের পরিবার সারারাত ধরে ট্রেঞ্চের মধ্যে আতঙ্কে। 
সবার আগে ঠিক হয়ে গেল পাল্টা প্রত্যাঘাত করা হবে পাঠানকোট থেকেই। বাকি এয়ারবেসও রেডি। 
সমস্যা একটাই। পাঠানকোটে কোনও এয়ারক্র্যাফট নেই। সব জেট আর এয়ারক্র্যাফটই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হিন্দন আর আম্বালায়। কারণ পাকিস্তান যে অ্যাটাক করবে সেই খবর আগে থেকেই পেয়ে যায় ইন্ডিয়া। কিন্তু এখন এভাবে ছটফট করা যায় নাকি? পাকিস্তান আমাদের ঘরে ঢুকে বোমা ফেলছে। আর আমরা বসে থাকব ট্রেঞ্চের মধ্যে? ক্রোধে ফুঁসছে গোটা টোয়েন্টি স্কোয়াড্রন। কিন্তু উপায় কী? উপায় আছে। 
উইং কমান্ডার সিসিল পার্কার বললেন, আমরা টোয়েন্টি সেভেন স্কোয়াড্রন থেকে ওদের এয়ারক্র্যাফট ধার নেব। এখনই পারস্যু করছি। এভাবে আমি বসে থাকতে পারব না। বাট স্যার..এখনও তো আমরা ওয়ার ডিক্লেয়ার করিনি! বললেন, পার্কারের নাম্বার টু ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট চরণ সিং ধিলোঁ।  পার্কার বললেন, ওয়েট! যে কোনও মোমেন্টেই হবে অ্যানাউন্সমেন্ট। পার্কার অশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি আগে থেকেই বুঝেছেন যে, পাকিস্তানের এই অ্যাটাকের জন্যই মিসেস গান্ধী ওয়েট করছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ভারতকে দেখাতে হবে যে, আসলে পাকিস্তান যেমন ইস্ট পাকিস্তানে চরম অত্যাচার করছে, একইভাবে ইন্ডিয়াকেও পাকিস্তান আগে অ্যাটাক করেছে।  আর তাই ভারত শুধু ডিফেন্ড করছে নিজেকে। 
উইং কমান্ডার পার্কারের নির্ভুল অনুমান। মধ্যরাতেই ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। বললেন, পাকিস্তান আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিল। এবার আমরা জবাব দেব। ব্যস! রেডিওতে এই ঘোষণা হতেই পার্কারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ভারতের আর্মি, নেভি আর এয়ারফোর্স চোখের পলক ফেলার আগেই তিনদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে দিল।  
সবার আগে উইং কমান্ডার পার্কারের সামনে এলেন স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি। তিনি প্রথম অপারেশনে যেতে চান। পার্কার মাথা নাড়লেন। বললেন, একদম নয়। আমি প্রথমে যাচ্ছি। আমাদের এখন স্পেশাল ফর্মেশন তৈরি করতে হবে। মিস্ত্রি ক্ষুণ্ণ হলেন। তিনি প্রথম অ্যাটাকের সুযোগ কেন পাচ্ছেন না। পার্কার জানেন এই স্কোয়াড্রন লিডারকে। বললেন, ওয়েট মিস্ত্রি। ইউ উইল গেট দ্য জব! আগে তোমার টিমকে নিয়ে মিটিং করে একটা ফর্মেশন করে ফেলো। মিস্ত্রি এরপর অবিনাশসহ আরও ১৫ জনকে ডেকে নিয়ে চলে গেলেন ট্রেনিং রুমে। 
আর পার্কার ও ধিলোঁ রওনা হচ্ছেন। প্রথম টার্গেট পাকিস্তানের পেশোয়ার।  কেন? কারণ, পার্কারের মনে আছে, ১৯৬৫ সালের লড়াইয়ে পাকিস্তান এই পেশোয়ারকেই সবথেকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেছিল। এবার সেই নিরাপত্তাকেই সবার আগে ধ্বংস করতে হবে। উইং কমান্ডার সিসিল পার্কার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট চরণ সিং ধিলোঁ অসম সাহসী এক সিদ্ধান্ত নিলেন। পূর্ব পাকিস্তানকে তারা চেনেনই না, ওখানে বাঙালিদের উপর পাকিস্তান যে অত্যাচার করছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে গোপন কোনও স্থানে বন্দি করে রাখা হয়েছে অথবা গুপ্তহত্যা করা হয়েছে, সেসব কিছুই জানা যাচ্ছে না। কিন্তু এই দুই ভারতীয় এয়ারফোর্স অফিসার জানেন যে, ভারত সর্বাগ্রে যখন পাকিস্তানকে ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই স্বীকৃতির সম্মান ভারতীয় সেনাবাহিনীকে রাখতেই হবে। কারণ, ওই স্বীকৃতি পাওয়া নতুন নির্বাসিত বাংলাদেশ নামক সরকারের ভবিষ্যতের নাগরিকরা অনেক আশা, অনেক বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ভারতের দিকে। তাদের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ। সেটা ভারতই দেবে। ভাবলেন পার্কার! 
দুটো সিঙ্গল সিটার, সিঙ্গল ইঞ্জিন এয়ারক্র্যাফট নিয়ে রওনা হলেন দুই অকুতোভয়। এই এয়ারক্র্যাফটের নাম হান্টার। পাকিস্তানের ধারণা ছিল ভারত পাল্টা আক্রমণ করবে নিশ্চয়ই ইস্টে। অর্থাৎ ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে। কিন্তু ভারত যে ভোর হওয়ার আগে সরাসরি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের ওপর আঘাত হানতে আকাশসীমায় ঢুকে পড়তে পারে, এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। 
সুতরাং ভারতের দুই যোদ্ধা পুরনো এয়ারক্র্যাফট নিয়েই বাতাসের গতিতে উড়ে গিয়ে পেশোয়ারে বোমা নিক্ষেপ করলেন। একের পর এক। রানওয়েতে সাবার জেট লক্ষ্য করে ছোড়া হল গুলি। পেশোয়ারের ফুয়েল স্টোরেজ জ্বলছে। দাউদাউ করে। হঠাৎ বোঝা গেল তাড়া করতে শুরু করেছে পাকিস্তানের সাবার জেট। এবার পালানোর পালা। সাবার থেকে বাঁচতে হবে। উইং কমান্ডার পার্কার ম্যাজিক জানেন নাকি? সাবার জেট গুলি ছুড়ছে। পার্কারের বিমানকে স্পর্শই করতে পারছে না। কারণ পার্কার এমনভাবে টার্ন করাচ্ছেন তাঁর জি কাউন্টার যে, পিছনে থাকা পাক এয়ারফোর্সের সাবার জেট যেন ভারসাম্যই রাখতে পারছে না। সেই অবস্থায় চারটি সাবার জেট বনাম দুই ইন্ডিয়ান এয়ারক্র্যাফটের মধ্যে আকাশে শুরু হল লড়াই। তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছেন ধিলোঁ ও পার্কার। আর তার মধ্যেও দুটো সাবারকে গুলি করে মাটিতে নামাতে সক্ষম হলেন পার্কার। 
কিন্তু পেশোয়ারের আকাশসীমা থেকে বেরিয়ে এসে পাঠানকোটে আসা কঠিন কাজ। আর ঠিক এরকম মরিয়া এক মুহূর্তে সর্বনাশ! একদিকে যেমন অস্ত্র সম্ভার শেষ, আবার টের পাওয়া যাচ্ছে জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে! তাহলে? এখনই তো মারা পড়তে হবে! স্পিড কমিয়ে ফর্মেশন চেঞ্জ কর঩লেই মৃত্যু অনিবার্য। 
পিছনে তাড়া করছে সাবার। এবার এসপার ওসপার। শেষ মরি‌য়া চেষ্টা। আচমকা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ধিলোঁ গতি কমিয়ে সাবার জেটকে যেন পাশেই আসতে দিলেন। আর এই আচমকা গতি কমানোর সিদ্ধান্ত দেখে পাকিস্তানের সাবার জেট পাইলট ভয় পেয়ে গেলেন। তাঁরা ভাবলেন নির্ঘাত এবার কাউন্টার অফেন্সিভ ট্যাকটিক্স নিয়েছে ইন্ডিয়া। বর্ডারের কাছেই পৌঁছে গিয়েছে। এখন গুলি করে তাদের নামানো হবে। আর তারপর পিওডব্লু। প্রিজনার অব ওয়ার। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দি। যুদ্ধের সবথেকে বড় লজ্জাই হল যুদ্ধবন্দিত্ব। তার থেকে মৃত্যু হওয়া ভালো। সুতরাং ইন্ডিয়ান ওই  ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের এই কাণ্ডে হতচকিত হয়ে পাকিস্তানের দুই সাবার ফাইটার জেট আর চেজিং করতে সাহস করল না। পিছিয়ে গেল। 
আর উইং কমান্ডার পার্কার ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ধিলোঁ শেষ জ্বালানির বিন্দুটা পর্যন্ত খরচ করে কোনওমতে ল্যান্ডিং করলেন পাঠানকোটে। ঠিক তারপরই জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিপুল এক শব্দ হল। অর্থাৎ এটাই আর একটু আগে ঘটলে হয়তো ক্র্যাশ করত হান্টার। পেশোয়ারের প্রথম মিশন সফলভাবে শেষ হল। 
এবার পরের মিশন যাচ্ছে সাকেসার। পাকিস্তান এয়ারফোর্সের অপারেশন সেন্টার। সেই অপারেশনের প্রধান ফ্লাইট কমান্ডার আর কেউ নন, দুরন্ত যোদ্ধা আর নেতা স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি! 
পাঠানকোটের বেস থেকে খবর জানা যাচ্ছে, ফ্লাইং অফিসার মুরলীধরন আর স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রির সম্মিলিত আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের এয়ারফোর্স অপারেশন সেন্টার। তিনটি রানওয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এমনকী সাকেসারের পাশাপাশি পাঠানকোট টোয়েন্টি স্কোয়াড্রন টিম রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা এয়ারফিল্ড ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এমন দু’টি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফট ধ্বংস হয়েছে, যা শুধু পাকিস্তানকে নয়, আতঙ্কিত করে তুলেছে আমেরিকাকে। কারণ, ওই দুই ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফট আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চার্লস ইয়েগারের। তিনি অবসর নেওয়ার পর পাকিস্তানের আমেরিকান এমব্যাসির মিলিটারি অ্যাডভাইসর। খোদ আমেরিকার এয়ারক্র্যাফটই ধ্বংস হয়ে গেল। সুতরাং একের পর এক আক্রমণ। একের পর এক ধাক্কা। 
শুধু এই সফল মিশনগুলি সম্পূর্ণ করার পর পাঠানকোট এয়ারবেস স্টেশনে নেমে এসেছিল আনন্দের পরিবর্তে বুকভাঙা এক কান্নাও। কেন? পাকিস্তানের মিরাজ ফাইটার জেট থেকে শেষ মুহূর্তে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল।  সেই মিসাইল এসে সোজা লাগল টোয়েন্টি স্কোয়াড্রনের একটি জেটে। যা নিমেষেই ক্র্যাশ করে মাটিতে আছড়ে পড়ল। পাকিস্তানের একের পর এক এয়ারফোর্স বেসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার পর নিজেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারলেন না ভারতের এক অসীম সাহসী যোদ্ধা! কে তিনি? স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি! 
ঠিক তখন পাঠানকোট থেকে দিল্লিগামী ট্রেনে বসে ছিলেন জাল মিস্ত্রির স্ত্রী আর তিন সন্তান। সঙ্গে ছিলেন গীতাঞ্জলি ও সুধা তাদের সন্তানদের নিয়ে। পাঠানকোট বেসকে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছিল। যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত পরিবারবর্গকে চলে যেতে বলা হয়েছে নিরাপদ স্থানে। গীতাঞ্জলিরা তাই একসঙ্গে ফিরছেন যে যার পিতৃগৃহে। আবার যুদ্ধ থামলে পরস্পরের সঙ্গে দেখা হবে। এরকমই কথা হচ্ছিল। শুধু তখনও কেউ জানতে পারলেন না যে, স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রির স্ত্রী ও সন্তানদের জীবনটা ততক্ষণে বদলে গিয়েছে! গীতাঞ্জলি জানেই না যে, স্কোয়াড্রন লিডার জাল মিস্ত্রি আর কোনওদিনই তার কাছে পনির খাওয়ার আবদার করবেন না।
(চলবে)

19th     December,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ