বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

নোবেল প্রাইজ
প্রদীপ আচার্য

মাধুরীও কিছুতেই বলবে না আর সজলও না শুনে ছাড়বে না। মাধুরী ভাবে, সে আবার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে। এখন তার নিস্তার নেই। কথা ছিল মনে, কেন যে বলতে গেল। না বলেও পারছিল না। হালে দুটো কাঁচা পয়সার মুখ দেখা বড়লোকি চাল মারা বউটার সাহসের কথা ভেবে তখন থেকে হাড়মাস জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কথাটা কী? তা অবশ্য বলেনি মাধুরী। শুধু বলেছে, ‘তুমি যা কাণ্ড করো, লোকে যা বলাবলি করে, শুনে আমি লজ্জায় মরে যাই। বড়রা যেমন তেমন, এখন ছোটরাও ঠাট্টা-তামাশা করতে ছাড়ছে না। একজন যা মন্তব্য করেছে, শুনে আমি এত লজ্জা পেয়েছি যে, মনে হয়েছে, ধরণী দ্বিধা হও।’ ব্যস, তাতেই ফাঁদে পড়ে গিয়েছে মাধুরী। সে এখন ভাবছে, কেন যে বলতে গেল।
মাধুরী অবশ্য এতদিন সজল সম্পর্কে যা শুনেছে, তা গায়ে মাখেনি। কিন্তু আজ তরুণের বউ যা বলেছে, শুনে ইস্তক মাথার ঠিক রাখতে পারছে না সে। পরকে দোষ দিয়ে, কথা শুনিয়ে কী লাভ? বরং ঘরের লোকটার ওপর ঝাল ঝাড়তে পারলে যেন গায়ের জ্বালা খানিক জুড়োত। কিন্তু বলার সময় মাধুরী গলার সুর নরম করেই বলেছে। বলেছে, তার কারণ, ঘরের মানুষকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে যদি ফেরানো যায়। মাধুরী  প্রথমে ভেবেছিল, তরুণের বউ যা বলেছে, তা সপাটে বলে দেবে। ভেবেছিল বলবে, ছিঃ ছিঃ শেষপর্যন্ত তোমার এই পরিচয় হল! লোককে সুযোগ দিলে লোক তো বলবেই। লোকের মুখ তুমি বন্ধ করবে কী করে? কিন্তু, বলতে গিয়ে ভয় পেল। সজল ওই কুচ্ছিত মন্তব্যটা শুনলে হয়তো এই রাতদুপুরেই তরুণের ফ্ল্যাটে গিয়ে হুজ্জোত করবে— ‘তরুণ, ডাক তোর বউকে। এই যে সুতপা, তুমি আমার নামে কী বলেছ? লোক চিনে কথা বলবে। তুমি যা বলেছ, তার জন্য তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ হ্যাঁ, সজল এ রকমই বলবে। সজল গলা ফাটাবে। যেমন ফাটায়। ওর গলাই শোনে পাড়ার লোক, ফ্ল্যাটের সবাই। এই নিয়েই ভয় মাধুরীর। লোকলজ্জার ভয়। পাশের ফ্ল্যাটের জানলা খোলা শুরু হয়। মাধুরী একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ায়। পাড়াভর্তি বাচ্চাকাচ্চা তার স্টুডেন্ট। তাই একটু প্রেস্টিজ বাঁচিয়ে চলতে হয় ওকে। সজল বোঝে না, এমনিতেই মাধুরীকে যারা হিংসে করে, সেই সব হাউসওয়াইফদের মধ্যে হাসি-মশকরা, ফোনাফুনি, হোয়াটসঅ্যাপ শুরু হয়ে যায়। মাধুরী তাই সব দিক বিচার বিবেচনা করেই মধুমাখা গলায় শুধু হাওড়ার ‘হা’টুকুই বলেছে।
ওই ‘হা’ এখন হাঁ করে গিলতে আসছে মাধুরীকে। তপ্ত তাওয়ায় জলের ছিটে পড়ার মতো ছ্যাঁক করে উঠল সজল। বলল, ‘কোন শালা আমার নামে কী বলেছে তোমাকে বলতে হবে।’
‘সে তোমার শুনে কাজ নেই।’
‘কাজ নেই মানে? আমার সম্পর্কে লোকে যা বলেছে, তা শুনে তোমার যখন সীতার মতো পাতালে সিঁধিয়ে যাওয়ার সাধ হয়েছে, তখন তো আমাকে জানতেই হবে বাবা। বলো, কে কী বলেছে আমার নামে?’
‘দেখ, এই রাতদুপুরে একগলা গিলে এসে আমাকে জ্বালিও না। সকালে আমার ইস্কুল আছে। সরো যাও, ঘুমতে দাও।’
‘শোনো, আমি বাথরুম যাচ্ছি। ফিরে এসে শুনব। তারপর সজল ভটচাজের নামে আনসান বলার সাহস হয় কী করে, দেখে নেব।’
মাধুরী ভাবে, তরুণের বউয়ের টিটকিরিটা এখন সজল যদি শোনে, তাহলে এই মাঝরাতেই আগুন জ্বলে যাবে। প্রথমে মাধুরী ভেবেছিল, জ্বলুক আগুন। এত অপমান সহ্য করার চেয়ে একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভিক্ষে চাই না, কুকুর ঠেকাও।
আগুনকে বড় ভয় মাধুরীর। এ তো যে সে আগুন নয়। অশান্তির আগুন। এই আগুনে জল ঢালার লোকগুলো সব নির্বাসনে গিয়েছে। এখন আগুন উস্কে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে চারপাশের লোকজন।
এমনি ঠান্ডাসুস্থির শান্তিপ্রিয় মানুষ সজল। কিন্তু রাগলে পুরো অন্য মানুষ। কোনও হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। যা মুখে আসে বলবে। চিৎকার করে তিন বাড়ি এক করবে। আর এখন তো শ্বশুরের ভিটেয় গণাগুষ্টির লোক। পাঁচতলার ফ্ল্যাট বাড়িতে প্রতি তলে চারটে করে কুড়িটা ফ্যামিলি। সজলের চিৎকার তিনতলা থেকে পাঁচতলাতে যেমন তুবড়ির মতো ঊর্ধ্বমুখী ছোটে, তেমনই দোতলা, একতলার জানালাগুলিতে গিয়েও ঝনঝনিয়ে বাজে। সজলের চিৎকারের দমকে সুরঙ্গমা অ্যাপার্টমেন্ট রীতিমতো কাঁপে। মাঝদুপুর বা মাঝরাত্তির বলে ক্ষমা নেই সজলের কাছে। রাগ হজম করার পাত্র সে নয়। মাধুরী যদি বলে চুপ করো, তো আরও একপর্দা গলা চড়িয়ে সজল বলবে, ‘কেন চুপ করব? আমি কাউকে পরোয়া করি না। আমাকে অভদ্র ভাবে ভাবুক। আমি অত ভেজা বেড়ালের মতো ভদ্দর হতে পারব না।’ এমনই একরোখা স্বভাবের মানুষ সজল। তবে বুদ্ধিসুদ্ধি নেহাত খারাপ নয়। বিএ ডিগ্রি আছে। চাকরির চেষ্টা করেনি কোনওদিনই। কনট্রাক্টরি করে। পার্টি করে। সজল ওদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছে। এলাকায় সজলের পপুলারিটিও আছে।  সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু রাগলে পুরো টাকার ওপিঠ। টাকার একপিঠের ছবির সঙ্গে যেমন অপর পিঠের ছবির মিল থাকে না। একই টাকা, কিন্তু দুপিঠে দু’রূপ। সজলও তেমনই একই লোক, ঠান্ডা মাথার মানুষ, মাথায় খুন চেপে গেলে তখন কে বলবে, এই লোকটাই সেই সজল।
রীতিমতো পাগল পাগল লাগছে এখন মাধুরীর। সজল বাথরুম থেকে বেরলেই ফের নাটক শুরু হবে।
বাথরুমে সজল শাওয়ার খুলে দিয়ে গলা ছেড়েছে, ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কহনা...’ যত রাতেই ফিরুক সজল, কী শীত, কী গ্রীষ্ম, শাওয়ার খুলে গান ধরাটা ওর ডেইলি রুটিন। সাবান মেখে নেয়ে ধুয়ে সাফসুতরো হতেই হয় সজলকে। কারণ আর কিছু নয়, হাজার হলেও ওরা রাস্তার কুকুর। ওদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সে কী আদরের ঘটা সজলের। দেখে অনেকেই অবাক হয়। কেউ মিটিমিটি হাসে। কেউ নাকে রুমাল চাপা দেয়। আবার কেউ ঠোঁট বাঁকিয়ে ‘আদিখ্যেতা’ শব্দটাকে দাঁতে পিষে গিলে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
দূর থেকেই সজলের পায়ের শব্দ পেয়ে যায় ওরা। সজল রাতে পার্টি অফিসে গুলতানি সেরে যে পথে বাড়ি ফেরে, সেদিকটা থানার মোড়। কিন্তু সজল সেই মোড়ে বাঁক নেওয়ার আগেই রে রে করে ছুটে যায় রেজিমেন্ট। একেবারে বাঘা বাঘা চারটে। সেই থানার মোড় থেকে বলতে গেলে সজলকে এসকর্ট করে নিয়ে আসে ওর পথপোষ্যরা। এমন লাফালাফি শুরু করে, দেখে সজলের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। বাবা অফিস থেকে ফিরলে সজলরা চার ভাইবোন এভাবেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত।
সজলের সঙ্গে এদিক ওদিক বেরলে মাধুরীরও নিস্তার নেই। কুকুরের পাল মাধুরীকেও ঘিরে ধরে। লেজ নেড়ে নেড়ে আদর চায়। সালোয়ারে, কামিজে পা তুলে দেয়, মুখ ঘষে। মাধুরী ঘেন্নায় মরে যায়। সজল বলে, ‘ওদের একটু ভালোবাসো মধু, মানুষের মতো মুখে মধু আর অন্তরে বিষ নেই ওদের।’
সজলের এই পোষ্যদের জন্য বাড়তি চাল নিতে হয় রাঁধুনিকে। সজলের ওয়ার্ডেই বাজার বসে। বাজার থেকে মাছের কানকো, ফুলকা পাঠিয়ে দেয় আলি। নঈম পাঠিয়ে দেয় মাংসের ছাঁট। কাউন্সিলরকে ভালোবেসেই দেয় ওরা। এই বাড়তি রান্নার জন্য রাঁধুনিকে শুধু বাড়তি টাকা দিতে হয়। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পর বড় একটা পাত্রে ভাত মেখে নিয়ে তিনতলা থেকে নামে সজল। দুপুরে ওর রেজিমেন্ট হয়তো সামনের পুকুর পাড়ে বালির ওপর দাপাদাপি করছে। সজল ‘আতু আয় আয়’ বলে চিৎকার করে ডাকে ওদের। তিরের বেগে ছুটে আসে ওরা। কুকুরদের ডাকতে সজলের ওই আদিখ্যেতার চিৎকার শুনলেও মাধুরী বিরক্ত হয়। বলে, ‘ফ্ল্যাটবাড়িতে এসব চলে না। যত সব গাঁইয়াপনা।’ সজল হাসে। বলে, ‘তুমি বুঝবে না মধু, এই আতু আয় ডাকটার সঙ্গে আমার মা জড়িয়ে আছে। আমি যেন কিছুক্ষণের জন্য মাকেই প্রাণ ভরে পাই। মাকে দেখেছি, পাড়ার মাসিমাদের দেখেছি, খাওয়ার পরে ফেলা ভাত, এঁটোকাঁটা নিয়ে রাস্তার কুকুরকে আতু আয় আয় বলে ডেকে ডেকে খাওয়াত। ল্যাম্পপোস্টের নীচে এঁটোকাঁটা কুকুরের নাম করেই ঢেলে দিয়ে যেত সবাই। সেই ল্যাম্পপোস্টগুলোই কোথায় হারিয়ে গেছে। আর এখন তো সব এঁটোকাঁটা পলিপ্যাকে মুড়ে পুরসভার ময়লা তোলার ভ্যানে তুলে দাও। সব চলে যায় ভাগাড়ে। তাহলে কুকুরগুলো কি আঙুল চুষবে?’ মাধুরী বলে, ‘ঢঙের কথা শুনলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়। এখনও যে অত মা মা করে মরো, বলি মা তোমাকে আর তোমার বউকে যেন একেবারে সোনায় মুড়ে দিয়ে গেছে। ভালো ভালো গয়না সব বড়বউ আর ছোটবউ। মেজবউ যেন বাণের জলে ভেসে এসেছে।’ এসব শুনলেই সজলের মটকা গরম হয়ে যায়। বলে, ‘এই যে তুমি এত বড় ফ্ল্যাটে রানির মতো আছো, সেও তো আমার মায়ের দৌলতেই। এই বাড়ি জমি আমার দাদুর ছিল। দাদু মায়ের নামে করে দিয়েছিল।’
সবই বোঝে, মনে মনে সবই স্বীকারও করে মাধুরী। কিন্তু ওর অশান্তির জায়গাটা অন্য। ওই কুকুরের পালই ওর সব শান্তি কেড়ে নিয়েছে। সজল বলে, ‘ভগবান আমাকে সন্তান দেয়নি বলে দুঃখ করিনা। ওরাই আমার সন্তান।’
বিয়েবাড়ি, অনুষ্ঠানবাড়িতে গিয়ে মাধুরীকে রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দেয় সজল। ভালো জামা-কাপড়ের সাজগোজ সবই মাটি হয়ে যায়। সজল চারটে পলিপ্যাক সঙ্গে নেবে। নেবেই। খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর শুরু হয় ওর অভিযান। টেবিলে টেবিলে গিয়ে বলবে, ‘দয়া করে আপনার এঁটোকাঁটা এই পলিপ্যাকে ফেলুন।’ মাছের কাঁটা আর মুরগির মাংস, খাসির মাংসের হাড়গোড়ই নেয়। বিরিয়ানির মাংস নৈব নৈব চ। কারণ, ওতে ঘি থাকে। পোষ্যরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এঁটো খাবার সংগ্রহ করার জন্যে সজলের হামলে পড়া দেখে চারপাশের নিমন্ত্রিত লোকজন সার্কাস দেখার মজা নিতে থাকে। মুখ লুকিয়ে হাসে মেয়েবউরা। বাড়ির লোকেরা মুখে বিরক্তি প্রকাশ করলেও লোকাল কাউন্সিলরকে সবাই সমঝে চলে, রেয়াত করে। দেখে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করে মাধুরীর। বাড়ি ফিরে ফাটাফাটি বিতণ্ডা শুরু হয় সজলের সঙ্গে। মাধুরী বলে, ‘তোমার সঙ্গে আর জীবনে যাব না কোথাও।’ কিন্তু প্রতিবারই শপথভঙ্গ করে সজলের সঙ্গী হয় মাধুরী। প্রতিবারই ওই একই নাটক। ঘেন্না ধরে গেছে মাধুরীর। সজল ওর যুক্তি দেখিয়ে বলে, ‘নেমন্তন্ন বাড়িতে আমরা ভালোমন্দ খাব। বাড়িতে রান্না হবে না, তাহলে বাদল, বাদশারা কি পেটে গামছা বেঁধে রাত কাটাবে? স্বার্থপরের মতো কথা বলো যে!’
গত পরশুও বিয়েবাড়িতে ওই একই কাণ্ড করেছে সজল। সে নিয়েই টিপ্পনি কেটেছে তরুণের বউ সুতপা। ভাবলেই গায়ের জ্বালা বেড়ে যাচ্ছে। সুতপার কানের গোড়ায় একটা বাহান্ন সিক্কার চড় কষিয়ে দিতে পারলে যেন স্বস্তি পেত সে।
বাথরুমে গলা ছেড়ে গান ধরেছে সজল। ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে’। মোটেই বেসুরো নয় সজল। গলায় বেশ সুর আছে। মাধুরীর মনে হল, সজলের মনে ফুর্তি এসেছে। সে বোধহয় এবারের মতো পার পেয়ে গেল।
সত্যি সত্যিই পার পেয়ে গেল মাধুরী। বাথরুম থেকে বেরল এক অন্য সজল। স্নান করে  মেজাজটা একটু ফুরফুরে হয়েছে। সজল তাই মাথার ঠাস বুনোট চুলে তোয়ালে ঘষতে ঘষতে বেরিয়ে মাধুরীর থুতনি ধরে গেয়ে ওঠে, ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে... মধু, লেট দেম সে। আই মিন ওদের বলতে দাও।’ সজলের এই অদ্ভুত রূপান্তরে অবাক হয় মাধুরী। সজল যে এত সহজে ওকে নিস্তার দেবে, ভাবতে পারছে না সে। ভাবে, ভবি তো ভোলার নয়! কিন্তু সজলের আজ কী হল?
মাধুরীকে আচমকাই জাপ্টে ধরে সজল। মাধুরী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘ছাড়ো, মাতলামি কোরো না।’ সজল বলে, ‘মধু, আজ আমি মদে নয়, খুশিতে মাতাল হয়ে আছি।’
‘খুশিতে মাতাল! কেন? কী ঘটল এমন?’
‘ঘটেছে, ঘটেছে মধু, ঘটেছে। আজ আমি নোবেল প্রাইজ পেয়েছি।’
‘তোমার যত মাতলামির কথা।’
‘মাতলামিরই কথা মধু। তবে শুধু মদে নয়, খুশিতেও মানুষ মাতাল হয়। আজ আমি সেই খুশিতেই মাতাল। নাও এবার খেতে দাও আমায়।’
খেয়ে দেয়ে পোষ্যদের খাইয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে সজল দেখল মাধুরী শুয়ে পড়েছে। সজল ফ্ল্যাটে তালা আটকে, কিচেনে গ্যাস চেক করে এসে মশারি উঁচিয়ে মাধুরীর পাশে শরীর গড়িয়ে দেয়। মাধুরীকে টেনে পাশ ফিরিয়ে নেয়। মাধুরী কপট বিরক্তি দেখায়। বলে, ‘ছাড়ো, ঘুমতে দাও।’ সজল বলে, ‘তুমি শুনবে না আমার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কথা?’
‘তোমার যত আজগুবি কথা। সুইডেনের লোকেদের আর খেয়ে কাজ নেই। ছাড়ো।’ সজল মাধুরীর মুখের খুব কাছে ঝুঁকে আসে। মশারির নীচে আধো আলো অন্ধকারে সজলের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। মাধুরী বলে, ‘কী হল? তোমার ঘাড়ে আবার কোন ভূত চাপল?’ 
সজল গাঢ়স্বরে বলে, ‘সুইডেন আমাকে কী নোবেল দেবে মধু? সুইডেনের সে ক্ষমতা আছে নাকি! আমাকে নোবেল প্রাইজ দিয়েছে তরুণের বউ সুতপা।’ শুনে আঁতকে উঠে বসে পড়ে মাধুরী। বলে, ‘তুমি জানো সুতপা কী বলেছে?’
‘অফকোর্স জানি। সেকথাই তো তুমি আমাকে শোনাতে চাইছিলে বাওয়া। তুমি অত ধানাইপানাই করলে কী হবে বাওয়া, আমি জানি। আমি সব শুনেছি। তোমার সঙ্গে আমি স্রেফ রাগী হিরোর অ্যাক্টিং করছিলাম।’
‘ওরকম একটা জঘন্য কথা শুনেও তোমার লজ্জা করছে না! আশ্চর্য!’
‘মধু, পুরস্কার পেলে কেউ লজ্জিত হয় নাকি?’
‘তুমি জানো? সুতপা তোমাকে কী বলেছে?’
সজল দু’হাতে মাধুরীকে জড়িয়ে নেয়। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে যায়। আরও গাঢ়স্বরে বলে, ‘জানি তো। সুতপা আমাকে কুকুরের বাবা বলেছে। ও আমাকে শুনিয়েই বলেছে। কিন্তু, ভুল কোরো না মধু। কুকুরের বাচ্চা কথাটা গালাগালি। কিন্তু, কুকুরের বাবা? তুমি যা-ই বলো না কেন, এটা কিন্তু নোবেল প্রাইজ।’
অঙ্কন: সুব্রত মাজী

12th     December,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ