বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

যাক যা গেছে তা যাক
কলহার মুখোপাধ্যায়

দূর নয় বেশি দূর ওই সাজানো গোছানো বড় রাস্তার ধারে। স্কুলবাড়ির ওপারে।/ যেথা অবহেলা সয়ে সয়ে কিছু তাস ন্যাতানো ন্যাতানো হয়ে/ পড়ে পড়ে আছে, তার কিছু দূরে গাড়ি বারান্দা ছাড়িয়ে/ ওখানে আমার এক-দু’টাকা রোজই যেত হারিয়ে। 
যাক যা গেছে তা যাক। (ক্ষমা করবেন সলিল চৌধুরী।)
রাস্তায় বসে তাসের ম্যাজিক দেখাত আর ছোটদের ধরে ধরে বোকা বানিয়ে রোজ এক-দু’ টাকা নিয়ে নিত লোকটা। বড় হয়ে বুঝেছি, এই সামান্য টাকাতেই সংসার চলত ওর। লোকটা হারিয়ে গেল একদিন। এখন কিছু টাকা ওর হাতে দিতে পারলে মনটা শান্তি পেত। কিন্তু খুঁজেই পাই না লোকটাকে। 
যাক যা গেছে তা যাক।
 টিভি খারাপ হলে তার অপারেশন করতে আসতেন স্বপনবাবু। সারা দুপুর ধরে খুটখাট। টিভি দিব্যি চলতে শুরু করত একসময়। স্বপনবাবু আর আসেন না। টিভিতে নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণার সময় কান পেতে থাকতাম, যদি স্বপনবাবুর নাম বলে। 
কালো কুচকুচে লোকটাকে প্রথম দিন দেখে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। ওর নাম শ্যামসুন্দর। বাড়ি থেকে ময়লা তুলে নিয়ে যেত। ও নাকি ধাঙড়। একটু গুড় দিয়ে চারটে রুটি দিলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে এক গাল হাসি ফুটত মুখে। বড় হয়ে বুঝেছি, পেটে ভয়ানক খিদে কিলবিল করলে তবেই খাবার পেয়ে ওরকম হাসি হাসতে পারে মানুষ। এক পেট খিদে আর দু’ঝুড়ি ময়লা নিয়ে সেই শ্যামসুন্দরও চলে গেল। পরে পড়েছিলাম, ‘কে বলে তোমাকে অস্পৃশ্য অশুচি...’। এখন হয়তো সবথেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গা, নন্দনকাননেই থাকছে শ্যামসুন্দর।
বড় দালানঘরের মাথায় নকশা কাটা একটা কাপড় ঝুলত। সেটা নাকি পাখা। টানার লোক আসত বাড়িতে, পাঙ্খাবরদার। তাকে দেখতে চেয়েছিলাম। দাদু বলে, পাখার হাওয়ায় উড়ে উপরে চলে গিয়েছে সে।  
ছোট মাসির বাড়িতে বসে থাকতেন মদনমোহন দাদু। চশমার ডাঁটিতে সুতো বাঁধা। বটুয়া ভর্তি টাকা ঝনঝন করত। কিন্তু চশমাটা সারাতো না। ঢুকেই প্রণাম করতে হতো। হাতে বাদাম মিষ্টি দিতেন। বাচ্চারা এসেছে, রুইয়ের সঙ্গে চিংড়ি ও কইও আনতে হবে। সঙ্গে চার-পাঁচরকম মিষ্টি। তিনি নাকি বাড়ির বাজার সরকার। একদিন গিয়ে দেখলাম, দাদু নেই। সুতো বাঁধা চশমাটা ক্যাশবাক্সের উপর রাখা থাকতে দেখেছি তারপর বহুদিন।
রাস্তায় সিনেমা দেখাতে আসত একটা লোক। ‘রাজা-রানি আসছে, আসছে, আসছে’, বলে সুর করে চিৎকার করত। সে আর আসে না। বাঁশি বাজানো লোকটার কাছ থেকে বাঁশি কিনে দিয়েছিল মা। বাঁশিটা হারিয়ে গিয়েছে। লোকটাও হারিয়ে গিয়েছে। মিষ্টি দিয়ে ঘড়ি-পাখি-পাখা বানিয়ে দিত যে, সেও আসে না। মাথার ঝুড়িতে তিলের নাড়ু-মোয়া-ছানার মুড়কি-মেওয়া সন্দেশ নিয়ে আসত যে দাদু, সেও আসে না। কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই। নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণাতেও তাঁদের নাম উঠে আসে না। 
যাক যা গেছে তা যাক।
 গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল 
 সহযোগিতায় : স্বাগত মুখোপাধ্যায়

6th     August,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা