বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

প্রথম ফোনটা এল
ভোর চারটে পাঁচে
সায়ম ভদ্র
(বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাতি)

প্রথম ফোনটা এল ভোর চারটে পাঁচে। সালটা ১৯৭৬। তার পাঁচ মিনিট আগেই শুরু হয়েছে মহালয়া উপলক্ষে বেতারের প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘দুর্গা-দুর্গতিহারিণীম‌’। যেটি উত্তমকুমারের মহালয়া বলে পরিচিত। আমরা সকলে বাড়ির রেডিওটি চালিয়ে শুনতে বসেছি। সকলে বলতে দিদা, বড় পিসি, মা আর আমি। দাদু আছেন পাশের ঘরে। দাদু সব সময় বিশ্বাস করতেন যে, পুরনোকে কোনও না কোনওদিন জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে নতুনের জন্য। আমাদের পরিবারের মধ্যেও তাই এই মনোভাব ছিল না যে, নতুন এই অনুষ্ঠানটি আমরা শুনব না। ফোনের কথাতে ফিরে আসা যাক। আমাদের ছিল তখনকার দিনের সেই কালো টেলিফোন। এত সকালে আবার কে ফোন করছে? যতদূর মনে পড়ছে ফোনটা বাজতেই বড় পিসি রিসিভারটা উঠিয়ে কানে দিল। তারপরই পাশের ঘর থেকে দাদুকে আসতে বলল কথা বলার জন্যে। বুঝলাম, যিনি ফোন করেছেন তিনি দাদুর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। কথোপকথন শেষে ফোনটা নামিয়ে রাখতেই দাদুকে জিজ্ঞাসা করল দিদা,‘হ্যাঁ গা কে ফোন করল এই সাত সকালে?’ ‘নাট্যকার মন্মথ রায় জানতে চাইছিলেন— বীরেন, তুমি এটা কিভাবে হতে দিলে?’  উত্তর দিল দাদু। এইবার বুঝলাম উনি জানতে চাইছিলেন যে, দাদু কীভাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পাল্টে ফেলার অনুমতি দিলেন? দাদুর অনুমতির অপেক্ষায় অবশ্য আকাশবাণী বসে ছিল না। সেখানকার বড় কর্তারা ঠিক করে নেন যে, ১৯৭৬-এর মহালয়ার ভোরে আর সেই মান্ধাতা আমলের মাতৃ আরাধনা হবে না। তাই সময়ের সঙ্গে এবং অবশ্যই দিল্লির সাউথ ব্লকের আমলাদের সঙ্গে তাল রেখে পরিকল্পনা করা হয় এক যুগোপযোগী নতুন প্রভাতী অনুষ্ঠানের। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে মহিষাসুরমর্দিনীর তিন স্রষ্টা বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক এবং বীরেন ভদ্রকে এই কথাটি জানানোর সৌজন্যটুকুও আকাশবাণী দেখানোর প্রয়োজন মনে করেনি। ফোনের কথাতে আবার ফিরে আসা যাক। 
দাদু ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছেন, আর ঠিক তখনই কালো ফোনটা আবার বেজে উঠল। আবার দাদুকে তলব আর সেই একই প্রশ্ন— ‘বীরেনদা, এটা কীভাবে আপনি হতে দিলেন?’ এরপর শুরু হল একের পর এক ফোন। রিসিভার নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই আবার ফোন বেজে উঠছে। প্রত্যেকের গলাতেই সেই একই হতাশা আর বিস্ময়। দাদুর আর পাশের ঘরে যাওয়া হল না। রেডিও’র প্রোগ্রামটা যত এগল ফোন যেন আরও বেশি করে বাজতে লাগল। একটা সময় আমরা  বিরক্ত হয়ে রিসিভারটা নামিয়ে রেখে দিলাম। এরপরের ঘটনা আমাদের সকলেরই জানা। ১৯৭৬-এর মহাষষ্ঠীর শারদপ্রাতে জনসাধারণের চাপে নতি স্বীকার করে আকাশবাণীকে বাধ্য হয়ে সম্প্রচার করতে হয় সেই কালজয়ী ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। 

25th     September,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা