বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

জামাই  আদর
শ্যামল চক্রবর্তী

বর্ধমানের নিতাই সামন্তর কন্যা আরতির সঙ্গে ঢাকা বিক্রমপুরের তেজেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ছেলে রমণীমোহনের বিয়ে প্রায় পাকা। বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হল না। কারণটা শুনলে চমকে যাবেন। জামাইষষ্ঠী! বর্ধমানে জামাইষষ্ঠীর চল নেই! অন্তত সেকালে ছিল না।
বিয়ের দিন ঠিক করতে সামন্তমশাই অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বিক্রমপুর গিয়েছেন হবু বেয়াই তেজেন রায়ের বাড়ি। একটা জলচৌকিতে বসে গড়গড়ার নল টানছেন তেজেন্দ্রনারায়ণ। ঘর অম্বুরি তামাকের খুশবুতে ম ম করছে।
—সামন্তমশয় বুঝি তামুক খান না?
—না, না, কোনও নেশাই আমাদের দেশে চলে না ।
—তামুকরে ন্যাশা কন মশয়! শুনলে ঘুড়ায়ও হাসব। আপনাগো ন্যাশা হইল গিয়া টাকা জমাইয়া মাটির নীচে পুইতা রাখা! খান তো লাল চাইলের ভাত আর পুস্ত!
খেপে গিয়েছেন তেজেন রায়। বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন বুঝতে পেরে ইউ টার্ন মারলেন নিতাই সামন্ত।
—এসব কথা থাক। বিয়ের তারিখটা যদি...।
—হ বৈশাখমাসেই বিয়া হইব। বাইশ তারিখ স্থির করছি। জ্যৈষ্ঠমাসে জামাইরে লইয়া গিয়া জামাইষষ্ঠী করাইতে পারবেন অনে। রাগ পড়ছে তেজেন রায়ের।
—ইয়ে, মানে আমাদের জামাইষষ্ঠী নেই।
—আপনাগো ষষ্ঠী নাই? তাইলে এই বিয়া হইব না। রাগে কাঁপতে কাঁপতে গড়গড়ার নল ছুড়ে দিলেন তেজেন রায়।
—একটু ভেবে দেখুন তেজেনবাবু, সবাই জানে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে মেয়ের। এখন আপনি এই সামান্য ব্যাপারে বেঁকে বসলে আমার মান সম্মান ধুলোয় লুটোবে।
—আপনাগো আবার সম্মান! জামাই রে আম, কাঁঠাল, ঘি, ননী, ক্ষীর, মাছ, মাংস খাওয়াইয়া আপ্যায়ন করতে জানে না যে কঞ্জুসের দল, তাগো বাড়িতে বিয়া দিয়া পোলাডারে জলে ফালাইয়া দিতে পারুম না। বিয়া ক্যানসেল। কথার নড়চড় ঢাকার পোলায় করে না!
শুধু জামাইষষ্ঠী না-থাকার কারণে আরতি আর রমণীমোহনের বিয়ে ভেস্তে গেল। শোনা যায়, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর থেকেই বর্ধমানের একাংশে টিপে টিপে খরচ করে হলেও জামাইয়ের কল্যাণে জামাইষষ্ঠী চালু হয়ে যায়!
শ্রীরামপুরের লালমোহনবাবু বৈশাখ মাস শেষ হতেই গম্ভীর। জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথি মানেই জামাইষষ্ঠী। মা ষষ্ঠীর কৃপায় একটা দুটো নয়, পাঁচ-পাঁচটা জামাই লালমোহনবাবুর! পাঁচ-পাঁচজন জামাইকে আপ্যায়ন করতে গিয়ে লালমোহন নাজেহাল। বিশাল খরচের ধাক্কা। আম, কাঁঠাল, দুধ, ক্ষীর, কাতলা মাছ, মাংস, চিংড়ি, দই জলভরা সন্দেশ খাইয়ে খুশি রাখতে হয় জামাইদের। শুধু কি খাওয়া, প্রত্যেক জামাইকে দিতে হয় নানা উপহার। ন’ মাস আগে লালমোহন বিয়ে দিয়েছেন ছোট কন্যা সহেলির। ছোট জামাই দীপাঞ্জন ব্যাঙ্কের বড় চাকুরে। এটাই ওর প্রথম জামাইষষ্ঠী। প্রতাপবাবু নতুন জামাইটিকে নিয়ে যারপরনাই চিন্তিত। জামাই ব্র্যান্ডেড শার্ট-প্যান্ট ছাড়া সাধারণ জামাকাপড় পরে না। ইমপোর্টেড পারফিউম ছাড়া মাখে না। মেয়ের কাছ থেকে শুনে প্রতাপবাবুকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী গৌরী।
বাজার আগুন। তবু জামাই বলে কথা! বাজারটা ভালোভাবেই সারলেন লালমোহন, যদিও অনেক হিসেব করে। স্ত্রীকে না জানিয়ে একদিন জামাইদের জন্য জামাকাপড় কিনে আনলেন বড়বাজার থেকে। স্ত্রী দেখতে গিয়ে বুঝলেন, সব প্যাকেট সিল করা! শুধু প্যাকেটগুলোর ওপর জামাইদের নম্বর ও সাংকেতিক একটা করে শব্দ স্টিকারে ছোট্ট করে লেখা। বিমলের  ‘ঝালমুড়ি ’, কমলের  ‘ভেলপুরি’, নারায়ণের ‘কেক’, হারুর ‘ফিশফ্রাই’! সব প্যাকেটই ভারী। ছোট জামাইয়ের প্যাকেটটা অবশ্য সব চাইতে ভারী, ওপরে লেখা ‘পোস্ত’!
পাঁচ জামাইকে একসঙ্গে বসিয়ে মাথায় ধান দূর্বা করমচা বাঁধা আশীর্বাদী পাঁচবার করে ছোঁয়াচ্ছেন শাশুড়ি। বড় জামাই বিমলকৃষ্ণ শ্বশুর লালমোহনের চাইতে সামান্য ছোট! লোকে তাই বলে। মাথার টাকে ষষ্ঠীর যষ্টির টোকা খেতে খেতে ব্যথায় ঠোঁট টিপে বসে আছেন বিমলকৃষ্ণ।
এবার জামাইয়ের কব্জিতে হলুদ সুতো বেঁধে দিয়ে রেকাবি থেকে একটা ফল তুলে দিলেন বড় জামাইয়ের হাতে। ‘ঝালমুড়ি’ লেখা প্যাকেট শাশুড়ি দিলেন বড় জামাইয়ের ডানহাতে। প্যাকেটটা বেশ ভারী। জামাইবাবাজির ডানহাতে কলা, বাঁ হাতে ঝালমুড়ি! কলাটা সামনে নামিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট শাশুড়ির হাতে দিয়ে শাশুড়িকে প্রণাম করছেন  বড় জামাই।
‘জানতাম, একশোর  ওপর উঠবে না! ঠিক গিফটই এনেছি তোমার জন্য...’, দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে বিড়বিড় করছেন শ্বশুর লালমোহন সরখেল।
অনুষ্ঠান পর্ব মিটলে বড় জামাই সোজা বাথরুমে। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে ‘ঝালমুড়ি’র প্যাকেট খুলে উপহার হাতে নিয়ে কেঁদে ফেললেন ভদ্রলোক! গতবার তাও একটা তোয়ালে পেয়েছিলেন। এবার সত্যিই ফাটাকপাল! চোখ মুছে গিফট  প্যাকেটে পুরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন বড় জামাই। শ্বশুর ডাকছেন। ডাইনিং টেবিলে বসে শ্বশুর আর বড় জামাই। শাশুড়ি এসে দই-চিঁড়ে  নামিয়ে দিলেন দুটো বাটিতে।
‘বয়েস হয়েছে। আমাদের এমন সহজপাচ্য জলখাবারই ভালো, বুঝলে না বিমল!’ বললেন লালমোহন।
—হ্যাঁ, তা তো বটেই! চামচে করে দই-চিঁড়ে খেতে খেতে বললেন বড় জামাই। আপনার কেনা উপহারটি কিন্তু দারুণ। এমন গিফট দিয়েছেন, কাউকে দেখানো পর্যন্ত যাবে না!
—তবেএএ! অনেক খুঁজে কিনেছি। তুমি তো ধুতি পরো, কাজে লাগবে।
—হ্যাঁ, কিন্তু সঙ্গের দড়িটা পর্যন্ত নেই।
—ছিল। কিন্তু ষষ্ঠীতে দড়ি দেওয়া বারণ! পাঁজিতে নাকি লেখা আছে। তোমার শাশুড়ি বললেন।
দ্বিতীয় আর তৃতীয় জামাই কমল আর নারায়ণ খাচ্ছে পরোটা আর কুমড়োর ছক্কা। শেষপাতে দুটো করে দানাদার! ছোট আর চতুর্থ জামাই সাদা ফুলকো লুচি, মাখামাখা আলুর দম, সূর্য মোদকের জলভরা সন্দেশ আর অমরের সরপুরিয়া দিয়ে জলখাবার সারছেন। দূরে সোফায় বসে খাওয়া শেষ করা তিন জামাই জুলজুল চোখে দেখছেন।
ক্যুরিয়ারের মতো ব্যাপক প্যাকিং করা উপহারগুলো বাকি চার মেয়ের হাতে। বড়জামাই অবশ্য লজ্জায় গিফট কোলছাড়া করেননি!
‘বাড়ি গিয়ে খুলবে বাবাজীবনরা,’ বললেন লালমোহন।
ছোট জামাই দীপাঞ্জন পেয়েছে রেমন্ডসের দামি শার্ট আর প্যান্টের পিস। দ্বিতীয় জামাই কমল একটা ব্র্যান্ডেড টি শার্ট। তৃতীয় জামাই নারায়ণ পেয়েছে একটা ফিনফিনে পাঞ্জাবি। চতুর্থ জামাই হারু অর্থাৎ হরেন বাইক চালায়। ওকে দেওয়া হয়েছে একজোড়া হাতের দস্তানা। বড় জামাই বিমলকৃষ্ণ পেলেন ধুতি পরলে অপরিহার্য একটি বস্তু। আন্ডারপ্যান্ট!
 গিভ অ্যান্ড টেকের জমানা এখন। শাশুড়ি গৌরী দেবী পেলেন দুটো শাড়ি, একশো, পাঁচশো আর দু’হাজারের তিনটে নোট। ছোট জামাই শাড়ি ছাড়াও একটা খামে ভরে দু’হাজারের কড়কড়ে নোটগুলো দিয়েছে শাশুড়িকে। নিয়ম ভেঙে শ্বশুরকে একটা পাঁচ হাজারের চেক।
জামাইষষ্ঠীতে পাঁচ জামাইয়ের মধ্যাহ্নভোজ হচ্ছে তিন দফায়। শ্বশুরের সঙ্গে বসে পাতলা মুসুরডাল, আলুভাতে, পেঁপে কাঁচকলা দিয়ে চারাপোনার পাতলা ঝোল, পেঁপের চাটনি আর শেষপাতে দুটো গুজিয়া খেলেন বড়জামাই বিমলকৃষ্ণ। মেজো জামাইয়ের মেনুতে কাতলামাছ ছিল, শেষপাতে দুটো পান্তুয়া। সেজো আর ছোটজামাই খেলেন সোনামুগের ডাল, মুড়িঘণ্ট, ধোঁকার ডালনা, মিক্সড ভেজ, রুইপোস্ত, মাংস আর কাজু কিসমিস দেওয়া টম্যাটোর চাটনি। ছোট জামাইয়ের পাতে রেওয়াজি খাসির বাটি, সেজোর বাটিতে একবাটি ঝোলে তিনপিস মাংসবিহীন দুর্ভেদ্য হাড়!
জামাইষষ্ঠীতে হিসেব কষে জামাই ঠকানোর প্রতিক্রিয়া এমন ভয়ঙ্কর হবে ভাবতেই পারছেন না লালমোহন। আগামী কাল বাসে চেপে ব্যাঙ্কে বেয়ারার চেক জমা দিতে গিয়ে জানতে পারবেন, ওই অ্যাকাউন্টে সাতশো ঊনসত্তর টাকা পড়ে আছে। ভয়ে ভয়ে পরশু ছোট জামাইয়ের কড়কড়ে নোটটা নিয়ে বাজারে গিয়ে জানতে পারবেন, নোটটায় গোলমাল আছে! প্রবীণ বস্ত্রব্যবসায়ী পরেশ গিরি জানিয়ে দেবেন, নোটটা ছিঁড়ে ফেলাই ভালো। ওটা নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলে ব্যাঙ্ক পুলিস ডেকে ধরিয়ে দিতে পারে!
একটা অন্যরকম গল্প বলে ফেলি। শ্বশুরবাড়ির অবস্থা জুতের নয় জেনেই চম্পাকলিকে বিয়ে করেছিল নবীন। নবীন মাঝি তখন প্রাইমারি স্কুলে সামান্য বেতনে পড়ায়। চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়! হঠাৎ করে ভোটের টিকিট পেয়ে গেল নবীন। প্রথমে কাউন্সিলার, তিন বছরেই দোতলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি। পরের ভোটে দল বদলে আবার টিকিট। আবার কাউন্সিলার। শ্বশুরবাড়ির ভাঙাচোরা ঘরগুলোকে সারিয়ে দিতে চাইল জামাই। রাজি হননি রজনী সান্যাল। টাকা, গাড়ি, বাড়ির জৌলুস দিন দিন বাড়ছে। নবীনকে সবাই এখন নবীনবাবু বলে! হাইওয়ের ধারে নতুন ধাবা কাম হোটেল তৈরি করেছেন নবীনবাবু। হোটেলের নামটি বেশ সরস— ‘হোটেল ধানীলঙ্কা’! জামাইষষ্ঠীতে দুই ভায়রাভাই, শ্যালিকা, শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালকসহ সব্বাইকে সদ্য উদ্বোধন হওয়া ধানীলঙ্কা হোটেলে নিমন্ত্রণ করেছে নবীনের স্ত্রী চম্পাকলি। শ্বশুর ইতস্তত করছিলেন। চম্পাকলি বাবার হাতে হাজার বিশেক টাকা দিয়ে বলল, ‘আসলে তো তোমার আর মায়েরই আয়োজন।’
—জামাইদের ধানদুব্বো দিয়ে আশীর্বাদ করব কোথায়?
—হোটেলের দোতলায় এসি রুম আছে। ওখানে আশীর্বাদ করবে মা। একটা বড় গাড়ি পাঠিয়ে দেবে তোমার জামাই। ভাই, দিদিরা, তুমি, বাবা সবাই রেডি হয়ে থাকবে তোমাদের বাড়িতে।
এসি এসইউভি গাড়িতে চেপে সবাই পৌঁছে গেলেন ধানীলঙ্কা হোটেলে। সবাই চমকে উঠলেন দেখে। হোটেল তো নয়, যেন প্রাসাদ! দোতলার ঘরে জামাইষষ্ঠী করলেন শাশুড়ি। চম্পার বর নিষ্ঠাভরে প্রণাম করল শাশুড়িকে। সব গিফট আগেই কিনিয়ে রেখেছে জামাই । শ্যালক, শ্যালিকা, শাশুড়ি সবার জন্য দামি উপহার। জলখাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ। এলাহি আয়োজন। ফ্রায়েড রাইস, সাদা ভাত, পোস্তর বড়া, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার চিকেন, চিকেন রেজালা, তিন রকম স্যুপ, পুদিনার চাটনি, কচি  পাঁঠার ঝোল, হিমসাগর আম, পাঁচরকম মিষ্টি...।
সবাই এত খেল, যে আর নড়তে চড়তে পারে না। সামান্য ভাত আর ডাল খেয়ে উঠে পড়লেন চম্পার বাবা রজনীবাবু। নবীন একটা এসি ঘর খুলে দিল। খাওয়া শেষ করে চম্পা এল বাবার কাছে।
—কিছুই তো খেলে না বাবা?
—এটা জামাইষষ্ঠী হচ্ছে, না শ্বশুরষষ্ঠী? নবীনের পাশে সবসময় ঘুরঘুর করছে, ওই ষণ্ডা লোকটা কে?
—সলমন। তোমার জামাইয়ের বডিগার্ড বাবা।
—নবীনের বডিগার্ড! তোর বিয়ে দিয়েছিলাম এক দরিদ্র স্কুলমাস্টারের সঙ্গে। কয়েক বছরে ওর এত টাকা এল কোথা থেকে? ডাক নবীনকে।
—আমাকে ডাকছেন? মেয়ে ফোন করতেই চলে এল নবীন ।
—হ্যাঁ, ডেকেছি। তোমার বডিগার্ডটিকে আগে দরজা থেকে বিদায় করো।
—সলমন, নীচে যাও।
—এই নাও তোমার পাপের টাকা। বলে ব্যাগ খুলে জামাইয়ের দেওয়া কুড়ি হাজার টাকা ছুড়ে দিলেন নবীনের দিকে। নবীন হতভম্ব।
—আর আজকের সবার খাবারের বিলটা আনতে বলো।
—এ কী বলছেন আপনি! নতুন হোটেলটা দেখাতে নিয়ে এলাম আপনাদের...!
—জলদি বিল দাও। জামাইষষ্ঠীর দিনে শ্বশুরকে অপমান করতে এনেছ! আর কোনওদিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে না। আমি আজ থেকে তোমাকে ত্যাজ্যজামাই করলাম। আগুন ছুটছে রজনীবাবুর গলা দিয়ে।
খাবারের বিল মিটিয়ে সব উপহার ফেরত দিয়ে দুটো টোটো ভাড়া করে সিঙ্গুর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চেপে সদলবলে বাড়ি ফিরলেন রজনী সান্যাল। কয়েকদিন পরেই সরকারি টাকা চুরির মামলায় অ্যারেস্ট হল নবীন মাঝি। সিঙ্গুরের লোক আজও বলাবলি করে, নবীনের শ্বশুর রজনী সান্যালই ওপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ির জামাইকে জেলের জামাই বানিয়ে ছেড়েছেন!
আর এক হতভাগ্য জামাইয়ের গল্প। জামাই ডাক্তার। সরকারি চাকরি আর জমজমাট প্র্যাকটিস। দিব্যি ছিলেন, হঠাৎ ন্যাতা হবার শখ হল। ভোটে দাঁড়ালেন চাকরি ছেড়ে এবং হারলেন। আমও গেল, ছালাও গেল। চাকরি নেই, প্র্যাকটিস পড়ন্ত। অগত্যা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ঘরজামাই বনে গেলেন। আগে শ্বশুরবাড়িতে জামাইষষ্ঠীতে গিয়ে বিশাল খাতির পেতেন। লিখতে লিখতে খবর পেলাম, রোজকার বাজার তো বটেই, এবারের জামাইষষ্ঠীর বাজারও নাকি শ্বশুর ঘরজামাইকে দিয়ে করিয়েছেন! জামাইষষ্ঠীতে ঘরজামাইদের দুঃখের কোনও শেষ নেই! পরে সময় পেলে লেখা যাবে।
আমাদের পাড়ার সত্যবাবু ছিলেন রামকৃপণ। নানা ছুতোনাতায় জামাইষষ্ঠী ক্যানসেল করে দিতেন। একবার ষষ্ঠীর ক’দিন আগে জামাইদের জানিয়ে দিলেন, এক কাকিমা মারা গিয়েছেন। অশৌচে শুভ অনুষ্ঠান হয় না। এবারকার জামাইষষ্ঠী বাতিল। ছোট জামাই নন্দ ছিল অতি ধুরন্ধর। ষষ্ঠীর দিন চুপিচুপি বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখেন বাড়ির উঠোনে  বসে শ্বশুর দাড়ি কামাচ্ছেন!
—এ কী! অশৌচে দাড়ি কামাচ্ছেন বাবা? জামাইকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন শ্বশুর সত্য বল!
—না, মানে, ভুল করে দাড়িটা...
—চলুন চলুন , ভালো আতপ চাল আর ঘি এনেছি। আমার স্বর্গগত কাকিশাশুড়ির বাড়িতে দিয়ে আসি!
শ্বশুর পালিয়ে বাঁচলেন। শাশুড়ি বাসমতী চাল আর ঘি দিয়ে পোলাও রেঁধে খাওয়ালেন মেয়ে-জামাইকে! খাওয়ালেন বাড়ির পুকুরের মাছের কালিয়া, গাছের আম, জামরুল, কাঁঠাল।
শেষ গল্পটা উত্তরপাড়ার। একবার পাড়ার সুদর্শন যুবকরা জামাইষষ্ঠীর দিন একটা বেঞ্চ পেতে সেজেগুজে বসে পড়লেন সকাল সকাল। ওপরে একটা ফেস্টুন। তাতে লেখা, ‘এখানে  জামাই ভাড়া পাওয়া যায়!’ মধু উকিল এসে ফ্রেঞ্চকাট গুপীদাকে টানতে টানতে ভাড়া করে নিয়ে গেলেন বাড়িতে! প্রচুর খাইয়েদাইয়ে একটা কোর্টপেপারে সই করিয়ে নিলেন গুপীদাকে দিয়ে। উকিলবাবুর ছোটমেয়ে চামেলিদির সঙ্গে একদিন বিয়ে হয়ে গেল গুপীদার।
সুন্দরী ছিলেন চামেলিদি। শুধু জোরে হাসলে কাঁসা-পিতলের থালাবাসন ভাঙার মতো আওয়াজ শোনা যেত!
অঙ্কন : সুব্রত মাজী

5th     June,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা