বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

লৌহপুরুষ
সমৃদ্ধ দত্ত

 মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রয়াণদিবস। ৭০ বছর হয়ে গেল তিনি আর নেই। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁর অবদান আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি সত্যিই এদেশের এক ও একমাত্র আয়রনম্যান।
 
জাভেরবা প্যাটেলের ইনটেস্টাইনে সংক্রমণ হয়েছে। নিরন্তর যন্ত্রণা আর মাঝেমধ্যেই রক্তক্ষরণ। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি ক্রমেই যেন জীবনীশক্তি হারাচ্ছেন। তাঁর আ‌ইনজীবী স্বামী বল্লভভাই গোধরায় প্র্যাকটিস করেন। সেখানে এই কঠিন রোগের চিকিৎসা নেই। স্ত্রী আর পুত্র-কন্যাকে নিয়ে তাই বম্বেতে এলেন। বল্লভভাই কিছুদিন অসুস্থ স্ত্রীর পাশে রইলেন। কিন্তু প্র্যাকটিস তো বন্ধ রাখা যায় না। তিনি বম্বে প্রেসিডেন্সির গুজরাতের আনন্দের একটি মার্ডার কেস হাতে নিয়েছেন ইতিম঩ধ্যে। তাঁর ক্লায়েন্টই খুনে অভিযুক্ত। চূড়ান্ত শুনানি এগিয়ে আসছে। যেতে হবে বল্লভভাইকে একবার আনন্দে। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। ডাক্তাররা চিন্তিত মুখে বললেন, ঠিক আছে যান। কিন্তু যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানা গেল, পরিস্থিতি খারাপ। এখনই সার্জারি করতে হবে। এদিকে ১১ জানুয়ারি, ১৯০৯  খুনের মামলার সাক্ষীকে ক্রস এগজামিনেশন করবেন বল্লভভাই। তিনি এতদিনে বুঝে গিয়েছেন সাক্ষী মিথ্যা কথা বলছে। বল্লভভাইয়ের মক্কেল নির্দোষ। সেদিন দুপুর দুটোয় উইটনেস বক্সে সাক্ষী ওঠার পর বল্লভভাই চোখা প্রশ্ন করে ক্রমেই তাকে কোণঠাসা করছেন। কোর্টরুমে সক঩লেই উদগ্রীব।  প্রশ্নোত্তর চলাকালীন আচমকা আর্দালি এগিয়ে এসে একটা টেলিগ্রাম দিল বল্লভভা‌঩ইয়ের হাতে। বিস্মিত বল্লভভাই বিচারকের অনুমতি নিয়ে টেলিগ্রাম খুললেন এবং কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে আবার ভাঁজ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। সমাপ্ত করলেন সাক্ষীকে জেরা। তাঁর তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসাবাদে সাক্ষী ভেঙে পড়ে জানাল সত্যিই সে মিথ্যা কথা বলেছে। বল্লভভাইয়ের মক্কেল নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্ত। তিনি আপ্লুত হয়ে  করজোড়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন। বল্লভভাই শুকনো হেসে বিদায় নিলেন।  তাঁর পকেটে যে টেলিগ্রাম, সেখানে লেখা ছিল, আজ সকালে স্ত্রী জাভেরবার মৃত্যু হয়েছে। গুজরাতের একজন সাধারণ আইনজীবী বল্লভভাই প্যাটেল তখনও জানেন না, আগামীদিনে তাঁকে ভারত আখ্যা দেবে ‘লৌহপুরুষ’। এরকম বহু কঠিন মুহূর্ত তিনি সামলাবেন। 
যাদের নির্দিষ্ট সরকারি দলিল আর জমির অধিকার কাগজে কলমে আছে তাদের বলা হয়েছে পতিদার। জাভেরভাই গালাভাই প্যাটেল এরকমই এক পতিদার সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। আনন্দ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরের গ্রাম কারামসাদের কৃষক লিউয়া প্যাটেল সম্প্রদায়ের জাভেরভাইয়ের পাঁচ পুত্রের মধ্যে দু’জনকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, এরা গ্রামে থাকবে না। পড়াশোনা করে কোনও বৃহৎ কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য এই দুই ভাই রীতিমতো উৎসুক। বিঠ্ঠলভাই এবং বল্লভভাই। বল্লভভাইয়ের মধ্যে আবার বেশ একটা বিদ্রোহ আর সাংগঠনিক নেতা হওয়ার চরিত্র আছে। ক্লাস সিক্সের ছাত্র হিসেবে সে যখন জানতে পারল ক্লাস টিচার স্কুলের টেক্সট বুক বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়ে ছাত্রদের বলে দোকান থেকে কিনে নিতে, ছাত্রদের নেতৃত্ব দিয়ে বল্লভভাই স্ট্রাইক ঘোষণা করল। ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্ররা ধর্মঘট করছে এটা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। সেই শিক্ষক কিন্তু সমস্ত বই বিক্রির টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন! 
আনন্দ নামের জনপদটি কিছুটা শহুরে হলেও উচ্চশিক্ষার প্রচুর ব্যবস্থা যে ছিল এমন নয়। বল্লভভাইয়ের খুব ইচ্ছা আইনজীবী হতে লন্ডন যাওয়ার। নিয়ম হল ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে প্লিডার্স পরীক্ষা দেওয়া যায়। কিন্তু অত টাকা কোথায়? তাই এক চেনা মানুষের সহায়তায় বল্লভভাই ম্যাট্রিকুলেটের পর নাদিয়াডে এক আইনজীবীর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করলেন। আর সেই আইনজীবীর লাই঩ব্রেরি থেকেই বই নিয়ে গিয়ে প্রস্তুতি নিলেন পরীক্ষার। ১৯০০ সালে ডিস্ট্রিক্ট প্লিডার এগজামিনেশন পাশ করলেন বল্লভভাই। আর প্র্যাকটিস শুরু করলেন গোধরায়। কিন্তু তাঁর লন্ডন যাওয়ার কী হল? তখনই হল না। কারণটা খুব অভিনব। তাঁর বাবা তাঁকে স্পষ্ট বলেছিলেন, তাঁর কাছে এমন টাকা নেই যে, তাঁকে লন্ডন পাঠিয়ে আইন পড়ানো সম্ভব। সুতরাং অন্তত ১০ হাজার টাকা নিজে থেকে রোজগার না করলে সম্ভব নয়। বল্লভভা‌ই পাগলের মতো পরিশ্রম করে সেই টাকা জমাতে পারলেন বটে। অ্যাপ্লাইও করলেন পাস ও টিকিটের জন্য। সেই টিকিট ও পাস এল। ছাড়পত্রের উপর লেখা ছিল ভি জে প্যাটেল। তিনিও ভি জে প্যাটেল। তাঁর দাদা বিঠ্ঠলভাইও ভি জে প্যাটেল। দাদা বললেন, আমার খুব যাওয়ার ইচ্ছে। বল্লভভাই তাঁর স্বপ্নকে আপাতত পিছিয়ে দিলেন। হাসিমুখে বললেন, তুমিই যাও। নিজের জমানো টাকা দাদাকেই দিলেন। লন্ডনে যাওয়া হল না তাঁর? হ্যাঁ হল। তবে ১০ বছর পর। ১৯১০ সালে ৩৬ বছর বয়সে বল্লভভাই প্যাটেল গিয়েছিলেন লন্ডনে মিডল টেম্পলে। মাতৃহীন পুত্র ও কন্যা মণি আর দাহিয়ার কী হল? তারা রইল বম্বের কুইনস মেরি স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল মিস উইলসনের কাছে। 
পুত্র-কন্যা একা থাকে। তাঁকে যেভাবে হোক সবথেকে কম টাকা ব্যয় করে এই অচেনা দেশে আইন পরীক্ষায় ভালো ফল করতেই হবে। তাই বল্লভভাই সাতসকালে সবার আগে সিঁড়িতে এসে বসতেন লাইব্রেরিতে। সবার আগে ঢোকার জন্য। এই সাধনার ফল মিলল। ১৯১২ সালের জুন মাসে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস এবং র‌্যাঙ্কেও প্রথম স্থান পেয়ে বল্লভভাই ৫০ পাউন্ড পুরস্কার অর্জন করলেন, যা সেই সময় ইনস অফ কোর্টের রীতিতে এক বিরল সম্মান। ১৯১৩ সালে ভারতে ফেরার পর বল্লভভাই প্যাটেল প্রথমেই গেলেন বম্বে হাইকোর্টের চিফ জাস্টিস স্যার বেসিল স্কটের কাছে। স্কট কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করার পর বল্লভভাইকে বললেন, ‘আপনি এখানেই বিচারকের পোস্টে জয়েন করুন।’ বল্লভভাই রাজি নয়। তাহলে অন্তত ল স্কুলের টিচার হন। আপনার মতো বাগ্মী শিক্ষক আমাদের প্রয়োজন। বল্লভভাই কী মনে করে যেন সেই প্রস্তাবও উড়িয়ে দিলেন। তিনি স্থির করলেন আমেদাবাদে যাবেন। নিজের শিকড়ে। 
যে কোনও আদালতে নতুন ব্যারিস্টার এলে বাকি আইনজীবীদের কাছে তিনি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। সকলেই তাঁর সম্পর্কে যতটা জানতে চায়, ঠিক ততটাই তাঁর প্রথম শুনানিও দেখতে চায়। অর্থাৎ লোকটা প্লিডিং এ দক্ষ কি না, কতটা তীক্ষ্ণ যুক্তি দেয়, কেমনভাবে স্মার্ট প্রেজেন্টেশন করে বিচারপতির সামনে ইত্যাদি। খেড়া জেলার এক হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দু঩টি ভাইয়ের জামিনের শুনানিতে পুলিস তাদের জামিনের বিরোধী। কারণ কী? কারণ অদ্ভুত। তাদের বাড়ি অপরাধপ্রবণ জেলা খেড়ায়। জামিন পেলে এরা প্রমাণ বিলোপ করবে। অতএব জামিন নয়। বিচারপতিও জামিন না দেওয়ার পক্ষে। এরকম সময় নতুন ব্যারিস্টার বল্লভভাই প্যাটেল শুনানিতে তির্যক ভঙ্গিতেই বললেন, এটা বেশ ভালো প্রবণতা তৈরি হল। একটি জেলা নাকি অপরাধপ্রবণ। তাই সে‌ই জেলার কেউই কোনওদিনই ভবিষ্যতেও জামিন পাবে না। এটাই আজ স্থির হল! সুন্দর আইন। বিচারপতি থমকে গেলেন। তিনি আদালত স্থগিত রেখে, আধঘণ্টা পর আবার এসে বললেন, জামিন দেওয়া হল! এই গোটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রীতিমতো চমৎকৃত হলেন সেই কোর্টের আর এক আইনজীবী। গণেশ বাসুদের মভলঙ্কার (ভারতের লোকসভার প্রথম স্পিকার হয়েছিলেন তিনি)। সকলের মন জয় করে নিলেন বল্লভভাই। আর দ্রুত হয়ে উঠলেন প্রথম সারির ব্যারিস্টার ও আমেদাবাদের এক পরিচিত মুখ। 
কিন্তু বল্লভভাইয়ের জীবনের সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে ১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারি সকাল ৯টায় বম্বে বন্দরে এস এস অ্যারাবিয়া নামের একটি জাহাজ এসে থামল। আর সেই জাহাজ থেকে বেরিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন আর এক গুজরাতি ব্যারিস্টার। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী!
...
গুজরাত ক্লাবের সেকেন্ড ফ্লোর সর্বদাই গমগম করছে। সেখানে সিগারেট-চুরুটের ধোঁয়া, রাজনীতির আলোচনা, পরনিন্দা পরচর্চা আর ব্রিজ খেলা। এখানেই বল্লভভাই ব্রিজ খেলেন বন্ধুদের সঙ্গে। গুজরাত ক্লাবের এলিট সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা নতুন ব্যারিস্টার গান্ধীর নাম শুনেছেন। তবে আশ্চর্যের কথা লোকটি প্র্যাকটিস করে না। তিনি কোচরাবা নামক স্থানে কয়েক একর জমি নিয়ে একটি আশ্রম খুলেছেন। ব্যারিস্টার নাকি সাধু? সকলেই হাসাহাসি করছে। সেখানে নাকি অহিংসা, সত্যবচন, স্বদেশিয়ানার শিক্ষা দেওয়া হয়। ১৯১৬ সালের মে মাসে গুজরাত ক্লাবে তাস খেলার মধ্যেই হঠাৎ একটা গুঞ্জন। মভলঙ্কার উঠতে যাচ্ছেন তাস খেলার মধ্যেই। বল্লভভাই জানতে চাইলেন, কোথায় যাচ্ছ? মভলঙ্কার বললেন, গান্ধীজি এসেছেন। যাবে না? বল্লভভাই হেসে বললেন, এখানে বোসো।  অনেক বেশি কিছু শিখতে পারবে। ওখানে গেলে তোমাকে হয়তো জিজ্ঞাসা করবে গম থেকে কাঁকর বাছাই করতে পার কি না। সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝলেন গান্ধী নামক লোকটির মধ্যে কিছু একটা আছে। কী সেটা? সকলেই কেন আকৃষ্ট হচ্ছে? আমেদাবাদে কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন গান্ধীজি। সেটি হল অ্যানি বেসান্তকে বম্বে প্রেসিডেন্সিতে প্রবেশ করতে দিতে হবে। এতদিন ধরে সেটা নিষিদ্ধ। কংগ্রেসের মধ্যে চরমপন্থী আর নরমপন্থীদের লড়াই তখন তুঙ্গে। আমেদাবাদে কংগ্রেসের সেই সেশন দেখতে গেলেন বল্লভভাই। সেই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন আর এক গুজরাতি। মহম্মদ আলি জিন্না। এরপর লখনউ। সেখানেও গেলেন বল্লভভাই। তিনি ক্রমেই বুঝতে পারছেন, মোহনদাস গান্ধীর রাজনীতি সম্পূর্ণ অন্যরকম। আর তিনি দেশটাকে ভালো চেনেন। বল্লভভাই আগ্রহী হচ্ছেন লোকটি সম্পর্কে।  
১৯১৭। বিহারের চম্পারনে নীল চাষিদের উপর চরম শোষণ চলছে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী গেলেন নীল চাষিদের পাশে দাঁড়াতে। তিনি প্রতিবাদ করছেন কৃষকদের নিয়ে। জেলাশাসক ডব্লু এইচ হেককের এটা পছন্দ নয়। লোকটি বাইরে থেকে এসে কেন প্ররোচনা দিচ্ছে? তিনি লিখিতভাবে নির্দেশ দিলেন গান্ধীজিকে, আপনাকে এখনই জেলা থেকে চলে যেতে হবে। গান্ধীজি উত্তরে বললেন, ‘আমি এই অর্ডার মানতে পারছি না। যে কোনও জরিমানা বা সাজার জন্য তৈরি আছি। আমার এই অপারগতার কারণ, আমার অন্তরাত্মা বলছে আমাকে এখানে থাকতে হবে।’এভাবে ব্রিটিশের মুখের উপর নির্দেশ অগ্রাহ্য করার খবরটি ছড়িয়ে পড়ল। এসে পৌঁছল গুজরাত ক্লাবে। আর সেই খবর শুনে মভলঙ্কারের সঙ্গে একযোগে বল্লভভাই উজ্জ্বল মুখে বললেন, ইয়েস, হিয়ার কামস আ হিরো...হি ইজ দ্য নিউ হিরো...। ক্রমে বল্লভভাই নিজেকে মনে মনে সমর্পণ করলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর কাছে। এরপর তিনি আমেদাবাদ পুরসভা বোর্ডে জয়ী হবেন, প্লেগের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াই করবেন, কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেবেন। হয়ে উঠবেন স্বাধীন ভারতের শক্তিশালী নির্মাতা। 
১৯১৯ সালের মার্চ মাসে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী রাওলাট বিলের বিরুদ্ধে একটি অভিনব আন্দোলন শুরু করতে চাইলেন। যা তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় করে সাফল্য পেয়েছেন। সেই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন এলাহাবাদের এক আইনজীবী। গান্ধীজি সেই আইনজীবীর বাড়িতে গেলেন। আইনজীবী মতিলাল নেহরু এই নতুন আন্দোলনটির কর্মসূচি নিয়ে সন্দিহান। এরকম মুভমেন্ট কি চলতে পারে? অসহযোগ। তিনি সংশয় প্রকাশ করলেও মতিলাল নেহরুর পুত্র গোটা পরিকল্পনায় মুগ্ধ। কেম্ব্রিজে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে আইন শিক্ষাও সমাপ্ত করা ওই যুবক এলাহাবাদে প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাড়িতে গান্ধীজির সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে তাঁর জীবনের অভিমুখ ঘুরে গেল। তিনি ঠিক করলেন জাতীয় আন্দোলনেই যুক্ত হতে হবে। থাকতে হবে গান্ধীজির সঙ্গে। ১৯১৯ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী আজীবনের জন্য পেলেন দু’জন ভক্ত, অনুগামী এবং পুত্রসম শিষ্যকে। ভবিষ্যতের ভারত পেল আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশ নির্মাণের সফলতম যুগলবন্দিকে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং জওহরলাল নেহরু। আজীবনের এক রাজনৈতিক জুটি! 
কতটা উদার ছিলেন প্যাটেল? নেহরুর সঙ্গে শত মতান্তর সত্ত্বেও ১৯৫০ সালের ২ অক্টোবর ইন্দোরে একটি সভায় প্যাটেল বলেছিলেন, ‘মনে রাখবেন, আমাদের নেতার নাম জওহরলাল নেহরু। বাপু স্থির করে গিয়েছেন সেটা। যারা বাপুর নির্দেশ অমান্য করবে তারা ঈশ্বরের কাছে পাপী। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, কোন পজিশনে আছি সেটা আমি চিন্তাই করি না। আমি শুধু জানি, বাপু আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।’ গান্ধীজির হত্যাকাণ্ডের পর  স্টেটসম্যান সংবাদপত্রে একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। সেখানে পত্রদাতা বলেন, গান্ধীকে রক্ষা করতে ব্যর্থ প্যাটেল। তিনি ইস্তফা দিন। প্যাটেল সেদিনই ইস্তফাপত্র লিখে রেডি করছেন। তাঁর সেই চিঠি যাওয়ার আগেই নেহরুর চিঠি এসে পৌঁছয়। যেখানে লেখা, ‘সর্দার, যে যাই বলুক। আমাদের এখন আরও একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। আপনার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া চলবে না।’ শারীরিক কারণে দিল্লি থেকে বম্বে চলে যেতে বাধ্য হওয়া প্যাটেল মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁকে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এন ভি গ্যাডগিলকে বলেছিলেন, ‘আমি আর থাকব না, বুঝতে পারছি। আমাকে কথা দাও। প্রতিজ্ঞা করো। যতই মতান্তর হোক, পণ্ডিতজিকে কখনও ছেড়ে যাবে না...।’  ঠিক কয়েকদিন পর ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে প্যাটেলের জীবনদীপ নির্বাপিত হল। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ভারতের এক ও একমাত্র আয়রনম্যান!

13th     December,   2020
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা