বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

নির্জনতার খোঁজে বাঘমুণ্ডি

বসন্তের পলাশ হোক বা বর্ষার প্লাবন, মাটাবুরুর জঙ্গল সবসময়ই সুন্দর। শীতের পাতাঝরা দিনেও জঙ্গলের সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। মাটাবুরু, বাঘমুণ্ডি ঘুরে এসে বর্ণনায় সোমনাথ মজুমদার।

বরাভূম ছাড়িয়ে দু’কিলোমিটার গেলেই শুরু হয়ে যায় মাটাবুরুর জঙ্গল। বাঁ দিকে-ডান দিকে অরণ্য। কোথাও হাল্কা কোথাও গভীর। ডান দিক বরাবর পাহাড়ের সারি। এই পথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। এই সৌন্দর্য সিক্ত হয়ে নিসর্গকে উপলব্ধি করতে করতে উপস্থিত হলাম বাঘমুণ্ডিতে। আর সেখান থেকেই শুরু হল সফর। বাঘমুণ্ডির ডান দিকে অযোধ্যা গ্রাম। সেখান থেকে শুরু হয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ে ওঠার রাস্তা, বাঁ দিকে লোয়ার ড্যাম। পাকদণ্ডী রাস্তা ঘুরে ঘুরে উপরে উঠেছে, ওঠার মুখে টুর্গা ফলস। ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে ঝরনাধারা। জলের তল পেতে একটু নীচে নামতে হয়। 
প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচু গজাবুরু পাহাড়ই পুরুলিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। সামনে উপত্যকার মতো নিচু অঞ্চল ঘন সবুজ জঙ্গলে ঢাকা। একটু দূরেই ময়ূর পাহাড়। উন্মুক্ত নীল আকাশের মাঝে ঘন সবুজ অরণ্য, পাহাড়, ঝরনা আর অরণ্যের মাঝে আলো-আঁধারির অপরূপ দৃশ্য। নেমে আসি বাঘমুণ্ডিতে। নয়নাভিরাম জঙ্গলে ফুটে আছে অজস্র পলাশ। পলাশের রক্তিম আভায় সারা জঙ্গলে যেন আগুন ধরে গিয়েছে। পত্রশূন্য গাছগুলির ছড়ায় ছড়ায় ফুল। উপজাতি রমণী এই ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথছেন, পলাশের গয়না তৈরি করছেন। কিন্তু তেমন ক্রেতা নেই। জনশূন্য প্রান্তর। একাই চলি জঙ্গলের পথে। দীর্ঘকায় শাল, কুসুম, মহুয়া গাছেও সাদা রঙের অজস্র মহুয়া ফুল। জঙ্গলময় গাছে গাছে নব বসন্তের কচি পাতা গজিয়েছে। মধ্যাহ্নে দমকা বাতাসে ঝিলমিল করে ওঠে পাতা। ধুলোয় ওড়ে শুকনো পাতা। চারদিক এত নির্জন। পাতা মাড়িয়ে চলার শব্দ নিস্তব্ধতাকে বিদীর্ণ করে। পায়ে চলার পথে কোথাও এক চিলতে চাষের জমি, কিছু আদিবাসী, আর ছবির মতো ছোট আদিবাসী গ্রাম পেরিয়ে আবার ঘন জঙ্গল। ড্রাইভার স্থানীয় লোক। ওঁর কথায় জানতে পারি ফসল খেতে এখানে নাকি হাতির দলও আসে। হাতি তাড়ানোর মাচায় রাতভর ক্যানেস্তারা বাজান আদিবাসী যুবক। আগে এই অঞ্চলে জল ছিল না। রুক্ষ মাটিতে জলাভাবে চাষ হতো না। এখন ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পে নিয়মিত জল পাচ্ছে এই উপজাতি অঞ্চল। শবর, খেড়িয়া, মাহাতো-সহ নানা উপজাতিকূলের মূল জীবিকা শালপাতা কুড়িয়ে থালা, বাটি তৈরি করা। বেশ কিছু কুটিরশিল্প হয়েছে। সরকারি সাহায্যে সেসব সামগ্রী যায় শহরে। রাতে হোম স্টে-তে কাটিয়ে রওনা হই পারাডি ড্যাম ও পাখি পাহাড় দেখতে। প্রায় ষোলো কিলোমিটার যাত্রার পর বাঁ দিকে গভীর জঙ্গলের বুক চিরে চলে গাড়ি। কিছু দূর গিয়ে খানিকটা খোলা জায়গা। ডান দিকে ভূচণ্ডী পাহাড়। গায়ে আঁকা আছে অজস্র পাখি। সামনে ছোট একটা চায়ের দোকান। চায়ে চুমুক দিয়ে নিসর্গকে উপলব্ধি করি। ধুলো উড়িয়ে গাড়ি নিয়ে যায় পারাডি ড্যামে। চারিদিক পাহাড় ঘেরা ড্যামের নীল জলের অনাবিল সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। অপরাহ্নের আলো ম্লান হয়ে আসছে। গাছের ছায়া দীর্ঘ হয়েছে, সন্ধ্যা নামবে শীঘ্রই। এত সুন্দর নির্জন পরিবেশ সপ্তান্তের ছুটিতে অনায়াসে বেরিয়ে পড়া যায়। সঙ্গে ব্যাগ, টিফিনবক্স জলের বোতল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। ক্যামেরা না থাকলে মনের ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখুন।
যাবেন কীভাবে: চক্রধরপুর এক্সপ্রেসে রাত ১২টা ৫-এ উঠে বরাভূম আসুন। ওখান থেকে অটো, ভাড়াগাড়ি বা বাস পাবেন বাঘমুণ্ডি যাওয়ার। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাস এসপ্ল্যানেড থেকে সকালে ছেড়ে সন্ধ্যায় বাঘমুণ্ডি যায়। 
থাকা ও খাওয়া: বাঘমুণ্ডি ও তার আশপাশে কিছু হোম স্টে আছে। থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা ওখানেই। বিশদ জানতে দেখে নিন wbtourism.gov.in। বাঘমুণ্ডি এলে মুখোশ তৈরির গ্রাম চড়িধা যেতে ভুলবেন না।                                    
ছবি: লেখক

3rd     June,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ