বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

সমমনের সহকর্মী

সহকর্মীর সঙ্গে ভাবনাতরঙ্গ মিলে গেলে তা কি কাজ সহজ করে? নাকি উন্নতির পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে লিখলেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।  

‘সোম মঙ্গল বুধ এরা সব/ আসে তাড়াতাড়ি,/ এদের ঘরে আছে বুঝি/ মস্ত হাওয়াগাড়ি?’ 
সাপ্তাহিক কাজের দিনগুলো সত্যিই তো বড় তাড়াতাড়ি এসে পড়ে। ‘রবিবার’-এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। কাজের দিনগুলোকে তখনই তো ভালো লাগবে, যদি আপনি কাজটা ভালোবাসেন। নেশা আর পেশা অনেকের ক্ষেত্রে এক। অনেকে আবার ভিন্ন পথের পথিক। কেউ কাজের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পান। কেউ বা দিনভর কাজ করেও প্রশান্তির হদিশ জানেন না। তবে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নেবেন। সহকর্মী সমমনস্ক হলে কাজের আনন্দ কি বেড়ে যায়? নাকি সমমনস্ক হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকলে তার উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, যা আখেরে কাজের ক্ষতিই করে, উন্নতির পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়?   
প্রশ্নটি রেখেছিলাম মিডিয়া কনসালটেন্ট অরিত্র দত্ত বণিকের সামনে। তিনি সহকর্মীদের মধ্যে বৈচিত্র্য পছন্দ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, ‘আমার কাজের জায়গা ম্যানেজমেন্ট এবং টিম লিডারশিপ। মিডিয়া রিলেটেড প্রজেক্টেই কাজ করি। আমি দেখেছি টিমে বৈচিত্র্য থাকা জরুরি। সবদিক থেকে সব সহকর্মী যদি একই আদর্শে বিশ্বাসী হয় তাহলে বৈচিত্র্য চলে যাবে। কাজে পক্ষপাত চলে আসবে।’ সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন। ধরা যাক, এমন একটা এজন্সিতে কেউ কাজ করছেন যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ভিডিও তৈরি করেন। সকলে যদি রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করেন, তাহলে সকলেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভিডিও তৈরি করতে শুরু করবে। তার মধ্যে কাউকে তো সিংঘমের ভিডিও বানাতে জানতে হবে। ‘আমি বিশ্বাস করি সহকর্মীদের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। তার মধ্যে যেন অন্তর্ভুক্তিকরণের দিকটাও থাকে,’ মত তাঁর।
কর্মক্ষেত্র পেশাদার জায়গা। এ তো আর পরিবার নয়। পরিবারের মধ্যেও সমমনস্ক প্রিয়জন সবসময় থাকেন না। পেশাদার ক্ষেত্রও ব্যতিক্রম নয়। সহকর্মী সমমনস্ক হলে পরিবেশগত দিক থেকে আরাম পাওয়া যায় বলে মনে করেন মনোবিদ শতভিষা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এর উল্টোপিঠও সত্যি। তিনি ব্যাখ্যা করলেন, দিনের অনেকটা সময় আমরা কাজের জায়গায় কাটাই। সেখানে মনের মিল থাকলে সারাদিন অনেকটাই সরল হয়ে যায়। আগ্রহের দিক থেকে দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে যায়। তবে সমমনস্ক ভাবতে গেলে সহজেই সব স্তরে মনের বা মননের মিল হবে, তার সম্ভাবনা কিন্তু বিরল। সাধারণত কিছু স্তরে সাদৃশ্য থাকলেও কিছু মিল আবার না-ই থাকতে পারে। ‘যে কোনও সম্পর্কে আমরা কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করি তা নির্ভর করে আমরা তার সাহচর্যের মধ্যে কতটা নিরাপত্তা অনুভব করি তার উপর। সমমনস্ক অথচ কাজের সূত্রে প্রতিযোগিতামূলক কোনও স্বার্থ থেকে যাচ্ছে বা কোনও ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ থাকতেই পারে। সুতরাং সমমনস্ক মানুষ পাওয়া যেতেই পারে কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিসত্তা এবং কাজের গণ্ডি মাথায় রাখার প্রয়োজন আছে’, বললেন শতভিষা। 
সমমনস্ক সাহচর্য এমন একটা আরাম দেয় যে তাতে কখনও মানুষ বিপরীত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ভুলে যান বা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অরিত্র মনে করেন, ‘দীর্ঘদিন এক জায়গায় কাজ করলে একটা কমফর্ট জোন তৈরি হয়ে যায়। তার বাইরে মানুষ সহজে বেরতে চায় না। নতুন কিছু করতে চায় না। ফলে ওই কমফর্ট জোন কোথাও নতুন কাজের, নতুন আবিষ্কারের ঘাটতি তৈরি করে।’ তবে সমমনস্ক কোন কোন অর্থে, সেটাও ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি থেকে অরিত্র দেখেছেন, কার্যক্ষেত্রে মানুষ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার পার্থক্য করতে পারেন না বলেই সমমনস্ক ভাবনার ক্ষেত্রে বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর কথায়, ‘সহকর্মীর সঙ্গে আমার সৃষ্টিশীল, রাজনৈতিক বা সামাজিক চিন্তা মিলবে কি না সেটাই প্রশ্নসাপেক্ষ। তার সঙ্গে আবার বয়সটাও মূল বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেমন অনেকেই বয়স দিয়ে কাজ বিচার করে। ধরুন, একজন সিনিয়র ভুল করছেন, আমি জানি অন্যভাবে করলে কাজটা ভালো হতে পারে। আমি বললে তিনি বলবেন, ‘আমার ৪০ বছর বয়স। তুমি একটা ২২ বছরের ছেলে হয়ে আমাকে শেখাবে?’ অন্তত কলকাতায় বয়স আর অভিজ্ঞতাকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে এখানে আলাদা করে সবসময় দেখা হয় না।’
সমভাবনার সহকর্মী সত্যিই যদি পাশে থাকেন, তাহলে নিজের কাজের সঙ্গে কখনও কি আপস করতে হয়? বিপন্ন হয় ব্যক্তিসত্তা? নাকি তা উত্তরণেই সাহায্য করে? শতভিষা মনে করেন, ‘সমমনস্ক যে কোনও সম্পর্কে আমাদের একটা নিরাপত্তাবোধ কাজ করে। সেটা থেকে একটা অতিরিক্ত আস্থার জায়গা তৈরি হয়ে যেতে পারে। তবে এটা তৈরি হবে কি না, আমাদের প্রাথমিক পারিবারিক সম্পর্কগুলোর মাধ্যমে শৈশবেই তা নির্ধারিত হয়। ‘সিকিওরড অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’ অর্থাৎ সম্পর্কে কতটা নিজেকে জড়াব, তার রাশটা নিজের হাতে থাকলে আমরা নতুন কোনও সম্পর্কে যেতে বা তার উপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারি। সেখানে মতপার্থক্য বা নির্ভরশীলতা থেকে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। আবার ‘ইনসিকিওরড অ্যাটাচমেন্ট প্যাটার্ন’ থাকতেই পারে। থাকলে সমমনস্ক মানুষ পেলেও দূরত্ব বজায় রাখাটাই নিরাপদ মনে হতে পারে। ফলে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখলে কাজ বা বন্ধুত্ব দুটোই সহজ হয়ে যায় এবং ব্যক্তিসত্তা অতর্কিতে বিপন্ন হয়ে পড়ে না।’  
পেশার ক্ষেত্রে সহকর্মী আপনার মতো করে ভাবলে কিছুটা কাজ সহজ হয় বটে। তবে সমমনস্ক সহকর্মী না থাকলেও যাতে আপনার পারফরম্যান্সে কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তার দায় একান্তই আপনার। সহকর্মী কেমন হবেন, তা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। বরং দিনের শেষে ভালো মানের কাজ করার জন্য কিছু সাধারণ জিনিস মনে রাখবেন।
কথা বলার সুযোগ
কখনও আমরা নিজেরাই ধরে নিই যে আমাদের বক্তব্য বা ভাবনা সহকর্মী বুঝতে পারছেন না। সমমনস্ক হিসেবে আপনার আস্থাভাজন সহকর্মী না বুঝলে তা আরও জটিলতা তৈরি করে। তাই সবক্ষেত্রেই কথা বলার দরজা খোলা রাখুন। কোনও ইগো না তৈরি করে সরাসরি কথা বলুন। এতে আপনার ধারণা ভুল হলে তা স্পষ্ট হবে অচিরেই। আবার সহকর্মী কাজের ক্ষেত্রে আপনার কাছ থেকে কী আশা করছেন, তাও বুঝতে পারবেন। 
পেশাদার বন্ধু
কর্মক্ষেত্রেও বন্ধু তৈরি হয়। কিন্তু সেই বন্ধুত্বটা পেশাদার মনন, প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কি? ভেবে দেখুন। সমমনস্ক সহকর্মীর কাছ থেকে ‘অতিরিক্ত প্রত্যাশা’ কখনও করবেন না। এতে বন্ধুত্ব তো বটেই, এমনকী কাজের পরিবেশও নষ্ট হতে পারে। 
ইতিবাচক ভাবনা
যে কোনও পরিস্থিতিতে সদর্থক ভাবনা ভাবতে হবে। তবেই পাশের সহকর্মীর দক্ষতা দিনের শেষে কাজে লাগাতে পারবেন দল হিসেবে। 
দূরত্ব এবং ভারসাম্য
সমমনস্ক সহকর্মীর প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা যেমন কাম্য নয়, তেমনই পেশাদার জগতে সমমনস্কতার অভাব যদি আপনাকে আরও সঙ্কুচিত করে ফেলে, সেটাও আপনার কাজে প্রভাব ফেলবে। তাই প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখুন। তবে যে কোনও সম্পর্কেই ভারসাম্য জরুরি। কতটা প্রয়োজন, আর কোন জায়গায় থেমে যেতে হবে, এই লক্ষ্মণরেখা টানতে পারলে কাজ তো ভালো হবেই, জীবনও সহজ হবে।
মডেল: সঙ্ঘমিতা রায়চৌধুরী ও 
প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী।  

3rd     June,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ