বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

একলা ঘর আমার দেশ

পরিবার নয়, লিভ ইন-ও নয়। নিজের সঙ্গে থাকা আধুনিক যুগের ট্রেন্ড। কিন্তু একা থাকা মানে কি সবসময় ভালো থাকা? লিখছেন অন্বেষা দত্ত।

এযুগে একলা থাকা, তা সে নারী হোক বা পুরুষ— খুব একটা অবাক করা বিষয় আর নয়। কোনও কারণ ছাড়াই কেউ একা বেঁচে থাকার পথটি বেছে নিতে পারেন। অর্থাৎ এটা তাঁর চয়েস। এইভাবে একলা থাকার অভ্যেসের মধ্যে একটা আরাম আছে। যারা জানে, তারা জানে। কিন্তু একলা থাকা মানে কি সবসময় ভালো থাকা? বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখা যাক।
একা থাকলে যে চরম স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তার কাছে বাকি সব না পাওয়া বোধহয় ফিকে হয়ে যায়। এর সঙ্গে গলাগলি করে থাকে আত্মবিশ্বাস আর ক্ষমতা উপভোগ করার আনন্দ। ক্ষমতা উপভোগ অর্থাৎ নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করা। শুনতে খুব সহজ লাগলেও বিষয়টা অতটা সহজ নয়। কারণ একা থাকার পাশাপাশি সঙ্গে থাকে একরাশ দায়িত্ব। তা সে ঘরের বিদ্যুতের বিল দেওয়া হোক বা কিচেন সাফসুতরো রাখা। অর্থব্যয় করে পরিচারক-পরিচারিকার সাহায্য নেওয়ার রাস্তা এদেশে মজুত থাকলেও সে পথটা সবসময় মসৃণ নয়। বাড়িতে অন্য কারও ঘাড়ে কিছু কাজ গছিয়ে দিতে পারলেও এক্ষেত্রে আপনার হাতে সে সুযোগ কম। পরিচারক না এলে কী কী হয়, লকডাউন হাড়ে হাড়ে শিখিয়েছে আমাদের। কিন্তু সাহায্যের উপায় থাকলেও সেদিকে নজর আপনাকে দিতেই হবে অর্থাৎ কোনও কিছুরই পুরোটা আপনি কারও ঘাড়ে ফেলে দিয়ে জানলার ধারে বসে এক কাপ কফি হাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিলেন এবং লিখলেন, ‘এই বেশ ভালো আছি’— ওটি হবে না। 
একা থাকার সুবিধেগুলো আগে দেখা যাক। শুরুতেই যে বললাম স্বাধীনতা, ওটিই প্রথম ও শেষ কথা। যতক্ষণ আপনি আইন হাতে তুলে না নিচ্ছেন ততক্ষণ আপনার কোনও পদক্ষেপ নিয়ে কারও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। যতক্ষণ খুশি যেভাবে খুশি সময় কাটাতে পারেন, কারও মতামত নিয়ে না ভাবলেও চলবে আপনার। নিজের প্যাশন, স্বপ্ন বা লক্ষ্যপূরণ যা-ই বলুন, সেসব দিকে পূর্ণমাত্রায় মনোযোগী থাকতে পারবেন। নতুন জায়গা ঘুরে আসা, নতুন মানুষজনের সঙ্গে আলাপ সাক্ষাৎ এ সব কিছুই উপরি পাওনা হিসেবে যোগ হবে তালিকায়। 
একা থাকা মানে কিন্তু একাকী হয়ে যাওয়া নয়। এইটা অনেকেরই গুলিয়ে যায়। আর গুলিয়ে যায় বলেই হঠাৎ পাওয়া একাকিত্বের সঙ্গে যুঝতে তাঁদের বেশ বেগ পেতে হয়। অনেকে বলতে পারেন, একাকিত্ব তাঁর কাছে শ্রেয়। তা হলে কিছু বলার নেই। ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তি একাকিত্ব বা নির্জনতা পছন্দ করেন, উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু অনেকেই এমন আছেন, একা থাকা শুরু করেও থাকতে পারেননি বেশিদিন এই একটি কারণে। ফলে আগে থেকে নিজেকে বোঝা খুব জরুরি। আপনি একাকিত্বকে ভালোবেসে আপন করছেন তো? এই প্রশ্নটার উত্তর আপনার কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে। এখানে ধোঁয়াশা মানেই পরে জটিলতা তৈরি হবে। তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি দশা না হয়!
একা থাকার চ্যালেঞ্জগুলো এবার একটু বিশদে দেখে নেওয়া যাক। আমাদের সমাজ যতই এগিয়ে যাক, এখনও এইসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সামাজিক চাপ। বাড়িতে বাবা-মা চাইতে পারেন সন্তান একা না থেকে বিয়ে-থা করুক। বন্ধুবান্ধবরা পাগল করে দিতে পারে প্রশ্ন করে, কেন একা আছিস? তোর কিসের দুঃখ? প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ যন্ত্রণা, বিয়ে ভেঙে যাওয়া সংক্রান্ত দুঃখ কষ্ট ছাড়াও যে কেউ একা থাকা পছন্দ করতে পারে, তা এখনও সকলের হজম হয় না। ফলে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হতে হবে। এ ধরনের প্রশ্ন যখন আপনাকে এতটুকু টলাতে পারবে না, তখনই বুঝবেন একা থাকার ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আপনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন।
আশপাশে বন্ধুবান্ধব বিয়ে করে নিচ্ছে, তাদের পরিবার বাড়ছে, আড্ডা দেওয়ার সময় কমছে। নিজের বেশি একা একা লাগতে পারে এইরকম পরিস্থিতিতে। বন্ধুরা চারপাশে সবাই ব্যস্ত, আমি তাহলে কী নিয়ে থাকব? এমন যদি আপনার ভাবনার ধারা হয়, তাহলে একা থাকা আপনার পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ বন্ধুরা কেন আর আপনাকে সময় দিতে পারছে না, এ নিয়ে অভিমান বা অভিযোগ করে হালে পানি পাওয়া যাবে না। আপনার একাকী থাকার ‘পার্কস’ কি শুধু আড্ডা দেওয়া বা ফূর্তি করা? নিজের সঙ্গে নিজে কীভাবে সময় কাটাতে চান, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। বন্ধুদের পাওয়া গেলে তো ভালোই। না পেলে আপনাকেই বুঝতে হবে, সময়টা কীভাবে কাজে লাগাবেন। যতই হোক একা থাকার পথটা তো আপনি নিজে বেছে নিয়েছেন, তাহলে তার সঙ্গে জড়িত ভালো-মন্দের দিকে আপনাকেই নজর দিতে হবে। 
বন্ধুবান্ধদের সঙ্গে আড্ডা বা হইচই থেকে আসে আর একটা বিষয়। ওই বৃত্তটা না থাকলে আমার জীবন বৃথা বা জীবনে কিছুই পেলাম না, সবসময় যেন কিছু একটা মিসিং— এই বোধটা যাদের থাকে, একা থাকা আপনার জন্য একেবারেই নয়।   
অনেকে ভাবেন পাঁচজনের সঙ্গে এক পরিবারে মানিয়েগুছিয়ে থাকাটা বেশ কঠিন। হতেই পারে। কিন্তু মাথায় রাখুন, একা থাকার মধ্যে কোনও স্ট্রেস নেই, এটা মোটেই ভাবলে চলবে না। আপনার যে সমস্যাই হোক, দিনের শেষে সেটা নিয়ে আপনাকেই লড়তে হবে। হঠাৎ চাইলেও আপনি পাশে কাউকে পাবেন না। এটা মেনে নিতে পারলে কোনও সমস্যা নেই। অর্থাৎ ধরুন, আপনি একা থাকেন, কাজের জায়গায় কোনও একটা বড় মুশকিলে পড়লেন, তখন মনে হল বিষয়টা কারও সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো। এ সুযোগ তখন না-ই পেতে পারেন। বন্ধুদের ফোন করলেন, হয়তো কেউ সময় দিতে পারল না। আপনি মুষড়ে পড়লেন, বিষয়টাকে মনের মধ্যে চেপে রেখে গুমরে রইলেন। এই চাপটা নেওয়া কিন্তু সকলের পক্ষে সহজ নয়। পরিবারের সঙ্গে থাকলে হয়তো কাউকে একটা পেয়ে গেলেন যার সঙ্গে সমস্যাটা শেয়ার করা যায়। সমাধান না-ও পেতে পারেন, শেয়ার করার মধ্যেও একটা স্বস্তি কাজ করে। কিন্তু একার লড়াইটাও একক— এই সারসত্য বুঝলে স্ট্রেস কমে। নয়তো তা মনে বাড়তি চাপ বয়ে আনে। জীবনের ধারাপাত জটিলতর হয়।  

13th     May,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ