বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

এসি ছাড়াই ঠান্ডা!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের উপর নানা কারণে ভরসা করতে চান না অনেকে। কোথাও শরীর বালাই, কোথাও আবার পকেটসই খরচ বাধ সাধে। গরমকালের দস্যি তাপমাত্রার হাত থেকে নিস্তার কেমনে? ঘরোয়া উপায় জানালেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

গ্রীষ্মের দাবদাহ টের পেতে শুরু করেছে রাজ্য। সন্ধেবেলাও গরম হাওয়ার দামালপনা সামলাতে হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাকে। রাতেও ঘাম ঝরছে নিয়ত। মাঝে নিম্নচাপ ও কালবৈশাখীর জেরে আবহাওয়ার কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটলেও বৈশাখের আরও কয়েকটা দিন ও গোটা জৈষ্ঠ্য পড়ে আছে ক্যালেন্ডারে। ফলে গরমের দাপট আর লু-এর প্রভাব থেকে এখনই মুক্তি মিলছে না। তীব্র এই গরম সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন প্রায় সকলেই। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দোকানে দোকানে এসি বিক্রি বেড়েছে। তবে বাড়িতে শিশু ও বয়স্করা থাকলে সবসময় এসি চালিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে। আবার এসি থেকে বাইরের তাপমাত্রায় বেরলেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারও ক্ষেত্রে ঠান্ডার ধাত বা অ্যাজমার কষ্ট এতটাই লাগামছাড়া হয় যে গরমে কষ্ট হলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সুরাহা নিতে পারেন না। কেউ আবার ভাবেন পকেটের কথা। এসি কেনার খরচের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সেখানে যোগ হয় প্রতি মাসের বাড়তি বিদ্যুতের বিল। তাই এই গরমে এমন কিছু পন্থার প্রয়োজন হয়, যেখানে গরম কম লাগবে অথচ শরীর ও পকেট দুই-ই আয়ত্তে থাকবে।
পরিবেশবিদদের দাবি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ছাড়াই ঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব। বরং প্রাকৃতিক উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখায় পরিবশের সঙ্গে শরীরেরও উপকার। যদিও বর্তমানে নতুন তৈরি এসি মডেলগুলিতে আর ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (সিএফসি) নিঃসৃত হয় না। তবু শরীর ও খরচের সঙ্গে আপস করতে না চাইলে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করতে পারেন আপনিও। কেমন সেসব উপায়? রইল টিপস। 
ফিরে যান খসখসের যুগে: আগেকার দিনে আবহাওয়ার এমন দামাল খামখেয়াল ছিল না, তা ঠিক। তবে গরম তখনও পড়ত। গ্রীষ্মের কষ্ট থেকে বাঁচতে লোকে শরীর শীতল রাখার নানা উপায় বের করত। তারই একটি খসখস। গ্রামের দিকে বিষয়টা সহজ হলেও ইদানীং খসখস খুঁজে পাওয়া শহরাঞ্চলে একটু সমস্যার বইকি! তাই এর কাছাকাছি একটি উপায়ের আশ্রয় নিতে পারেন। মোটা চাদর বা কাপড় ভালো করে ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে স্যাঁতসেঁতে ভাব বজায় রেখে শুকিয়ে নিন। এবার ওই স্যাঁতসেঁতে চাদর বা কাপড়টি জানলায় টাঙিয়ে রাখুন। গরম হাওয়া সেই খসখসের সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হবে। ঘরও থাকবে সুশীতল।
ভারী পরদার শরণ: বেলা বাড়তেই রোদের তেজ বাড়ে চড়চড়িয়ে। তাই সকাল ১১টা বাজতে না বাজতেই ঘরের জানলা বন্ধ করে দিন। বাইরের রোদের দাপট জানলার কাচ বা কাঠে প্রতিফলিত হয়ে ঘরে ঢুকেও ঘরের তাপ বাড়াতে পারে। তাই জানলা ঢেকে দিন ভারী পরদা দিয়ে। সাদা রঙের পরদা তাপশোষণে বেশি কার্যকর। তাই একটু মোটা ও সাদা পরদা জানলায় টাঙালে ঘর অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকবে।
লিনেনে ভরসা: সাদা, ভারী পরদা ঘরের অন্দরসাজের জন্য না পেলে ভরসা করতে পারেন হালফ্যাশনের লিনেনে। লিনেনের চাদর ও হালকা রঙের পরদাও হতে পারে বিকল্প উপায়। তাপ প্রতিফলনের অন্যতম সেরা উপায় এটি। ঘরে প্রবেশ করা সূর্যালোক ও তাপ এই চাদর ও পরদা অনেকটাই শোষণ করতে সক্ষম। এক্ষেত্রেও সাদা রঙের চাদর ও পরদা হলে উপকার বেশি পাবেন।
আবছায়াটাই লাগছে বেশ: গরমকালে ঘর অন্ধকার রাখলে ঠান্ডাভাব বেশি থাকে। বিশেষ করে টিউবলাইটের আলো বেশি তাপ বিকিরণ করে ফলে ঘর গরম হয় দ্রুত। প্রয়োজন না হলে ঘরের বড় আলো জ্বালাবেন না, কম্পিউটারে বসে কাজ করলে বা মোবাইল ঘাঁটলে ঘরের টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে রেখে তা করুন। টিউবলাইটের বদলে ব্যবহার করুন সিএফসি আলো। এতে তাপ বিকিরণ অনেক কম হয়। ঘর ঠান্ডা থাকে। 
পাখার কেরামতি: গরমে পাখা চালাতে হবে, এ আর নতুন কী! তবে এই পাখা সিলিং ফ্যান নয়। জানলার সামনে কোনাকুনি করে একটি চওড়া ব্লেডের পেডেস্টাল ফ্যান রাখুন। বাইরের বাতাস সরাসরি সেই পাখায় এসে লাগবে। ঘরের নানা দিক ঘুরে সেই হাওয়া ঘরের কোনায় কোনায় পৌঁছে দেবে পেডেস্টাল ফ্যান। এই প্রক্রিয়ায় খুব দ্রুত ঘর ঠান্ডা হয়। কলকাতা শহরে গাছ বেশি আছে, এমন জায়গায় এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখতে অনেকেই এই উপায় অবলম্বন করেন। গ্রামাঞ্চলেও এই উপায়ে ঘর শীতল রাখার প্রচলন রয়েছে। ঘরকে আরও ঠান্ডা রাখতে চাইলে পেডেস্টাল পাখার সামনে একটি বাটি ভর্তি বরফ রাখুন। এতে এসির মতোই ঠান্ডা হাওয়ায় ভরে যাবে ঘর। 
এগজস্ট ফ্যান চাই: রান্নাঘর ও বাথরুম এই দুই জায়গায় এগজস্ট পাখা লাগান। ঘরের গুমোট হাওয়াকে বাইকে বের করে ঘরে ঠান্ডা হাওয়ার আমদানি করে এই ফ্যান। তাই ঘরের গুমোট ভাব দূর করতে ও রান্নাঘরে আগুনে আঁচ কমাতে এগজস্ট ফ্যান খুব কার্যকর। 
ঘুলঘুলির বিজ্ঞান: আগেকার দিনের ঘরবাড়িতে ঘুলঘুলির ব্যবস্থা করা হতো। তা শুধু হালকা আলো আসার জন্যই নয়। বরং ৪৫ ডিগ্রি কোণে বা মুখোমুখি দু’টি ঘুলঘুলি থাকলে ক্রস ভেন্টিলেশনের কারণে (দু’দিক থেকে বয়ে আসা হাওয়া মুখোমুখি এসে মিশে যাওয়া) বায়ুর তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। সম্ভব হলে ঘরে ঘুলঘুলির ব্যবস্থা করতে পারেন।
ইনডোর প্ল্যান্ট: আজকাল শহর ও মফস্সলে বাগান বা ছাদে জায়গা না থাকায় অনেকেই ঘরে গাছ রাখেন। এই ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট তাপ শোষণে খুব কার্যকর। ইদানীং এমন অনেক গাছ পাওয়া যায়, যারা ঘরের তাপ শোষণ করতে পারে। যেমন অ্যালোভেরা, স্নেক প্ল্যান্ট, এরিকা পাম, চাইনিজ এভারগ্রিনের মতো গাছ রাখতে পারেন ঘরে। এতে ঘরের তাপমাত্রার অনেকটাই এই গাছগুলো শোষণ করে নেয়। বাগান থাকলে সেখানেও পাম গাছ কলম করে লাগাতে পারেন। এতে বাড়ির চারপাশের আবহাওয়া অনেকটা ঠান্ডা থাকে।
শোওয়ার আগে: গরমকালে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে জল ঢালুন গায়ে। সর্দিকাশির সমস্যা থাকলে গায়ে জল ঢালতে শঙ্কা হয় অনেকের। সেক্ষেত্রে নিদেন পা ভেজান। পায়ে জল পড়লে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে। জানলা খুলে ঘুমতে পারলে সারা ঘরেই হাওয়া চলাচল করতে পারবে, ফলে গরমকে অনেকটা জব্দ করতে পারবেন। 

6th     May,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ