বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

ফেলার নয় চা পাতা

চা ছেঁকে পাতাটুকু ফেলে দেওয়াই অভ্যেস। তবে চা পাতার গুণ জানলে এই স্বভাবে রাশ টানবেন আপনিও। চা পাতার হরেক উপকারিতা জানাচ্ছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

চা      প্রেমে চীনেদের থেকে মোটেই পিছিয়ে নেই বাঙালি। চা নিয়ে তার বায়নাক্কারও শেষ নেই। কারও দুধ-চিনি ছাড়া কড়া লিকার, কারও আবার লিকার তবে চিনি অ্যালাউড। কেউ আবার দুধের সর আর চিনি মিশিয়ে মালাই চা ছাড়া অন্য চা-কে পাশ নম্বরটুকুও দেন না। চা-বিলাসীর তালিকায় বাদ যান না খোদ রবি ঠাকুরও। প্রিয় এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে অখাদ্য চা পেয়ে মনমরা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বন্ধু যখন চায়ের প্রসঙ্গ তুললেন, তখন নিজেরই লেখাকে রসিকতা করে রবীন্দ্রনাথ বলে উঠলেন, ‘এখানে তো দেখছি, ‘যাহা ‘চা’-ই, তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই, তাহা ‘চা’-ই না’!’
বাঙালির আজীবনের আইকন যেখানে চায়ের জন্য এমন তৃষিত, গোটা জাতি যে সে জিনিসকেই সকালের মুক্তি ও আড্ডার চুক্তি হিসেবে ধরবে এ তো বড্ড সরল 
সাদা কথা! 
প্রতিবার চা বানিয়ে চা পাতা ফেলে দেওয়াই দস্তুর। আপনিও নিশ্চয় তা-ই করেন? কিন্তু এই চা পাতার গুণাগুণ ও ব্যবহার জানলে আজ থেকে রান্নাঘরে চা-পাতার কদর বাড়তে বাধ্য।
ক্ষতের প্রলেপ: চা যেমন আপনার সব মনখারাপ বা বিরক্তির প্রলেপ, চায়ের পাতাও তেমন আপনার ক্ষতে ওষুধের পরিষেবা দিতে পারে। চায়ের পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই যে কোনও ক্ষতে একে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন। হাতের কাছে ওষুধ নেই, এদিকে রান্নাঘরে কিছু একটা কাটাকুটি করতে গিয়ে হাত কেটেছেন। তখনকার মতো কেটে যাওয়া জায়গায় চেপে ধরুন চায়ের লিকার তৈরি করা চা পাতা বা টি ব্যাগ। ক্ষত দ্রুত শুকোবে। 
সার কথা: ছোট্ট ফ্ল্যাটে কিচেন গার্ডেন হোক বা বড় বাড়ি অথবা ফ্ল্যাটে বাগান করার জায়গা, গাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত চায়ের পাতা খুব উপযোগী। তবে একে ব্যবহারের আগে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর তা ব্যবহার করুন গাছের গোড়ায়। গাছের সারের রেডিমেড প্যাকেটের সঙ্গেও মিশিয়ে নিতে পারেন রোদে শুকোনো চা-পাতা। গাছের বৃদ্ধি এতে ভালো হয়।
সাধের স্নান: বাথটব বা বালতির জলে কয়েকটা টি ব্যাগ ফেলে দিন। জলের সঙ্গে চায়ের ক্যাফিন মিশবে। শরীরের গ্লানি ও ক্লান্তি দূর করতে এমন টি-বাথের জুড়ি নেই। কয়েক মাস এই জলে স্নান করলে ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যও অনেক বৃদ্ধি পায়। 
কন্ডিশনারের বিকল্প: শ্যাম্পু করার পর রাসায়নিক ঠাসা কন্ডিশনার ব্যবহার করতে না চাইলে ব্যবহার করুন চা পাতা। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। এক চামচ চা-পাতা জলে ফুটিয়ে নিন। শ্যাম্পুর পর সেই লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। আলাদা করে আর কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। চুল নরম ও রেশমের মতো করার ক্ষমতা রাখে চায়ের লিকার।
বইপোকাদের দূরে রাখুন: বই পড়তে ভালোবাসেন, পরিচিতদের মধ্যে ‘বইপোকা’ নামেই হয়তো চেনা যায় আপনাকে। কিন্তু বইয়ের পাতা কেটে দেয় এমন পোকাদের উৎপাতে রাতের ঘুম উড়েছে? এছাড়া কাঠের আলমারিতে অনেক সময় উই ধরে। একটু আর্দ্র ঘরবাড়ি হলেও উইয়ের উপদ্রব বাড়ে। এসব ক্ষেত্রে বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে ও বুক 
শেলফ-এর নানা দিকে চায়ের পাতা ছড়িয়ে দিন। চায়ে থাকা ক্যাফিনের গন্ধে পোকারা বইয়ের ধারেকাছে আসবে না।
গন্ধবিচার: গরমে অনেকেরই পা খুব ঘামে। আবার শীতে মোজা-ঢাকা পায়ের ঘাম থেকেও জুতোয় দুর্গন্ধ বাড়ে। বাড়ি ফিরে একটি পুঁটুলিতে চা-পাতা ভরে তা রেখে দিন জুতোর ভিতর। পরের দিন ফের সেই জুতো পায়ে গলালে সারা দিনের ঘামেও জুতোয় কোনও দুর্গন্ধ পাবেন না। শুধু তা-ই নয়, চায়ের সাধারণ সুগন্ধকে কাজে লাগাতে পারেন এয়ার ফ্রেশনার হিসেবেও। অনেকদিন ধরে যদি গাড়ি বা ফ্রিজ পরিষ্কার করার ফুরসত না পান, সেক্ষেত্রে ফ্রিজে বা গাড়ির নানা কোণে রোদে শুকনো করে রাখা এক মুঠো চা-পাতার সঙ্গে একটা গোটা পাতিলেবুর রস মেশান। লেবুতে ভেজানো এই চা-পাতা একটি কাপড়ের থলেতে ভরে রেখে দিন ফ্রিজের বা গাড়ির কোনায়। দুর্গন্ধ রুখতে এই দুই উপাদানই যথেষ্ট। 
চোখের বন্ধু: রাত জেগে কাজ বা কম ঘুম, চোখের তলায় কালির জন্য এসব কারণই যথেষ্ট। কারও আবার লিভারের সমস্যা থেকেও চোখের তলায় কালো ভাব আসে। সব 
ক্ষেত্রেই আপনার কাজে আসবে টি-ব্যাগ। চোখের ফোলা ভাব কমাতে, চোখের নীচের কালি সরাতে প্রতি রাতে শোওয়ার সময় ঠান্ডা জলে বা ঠান্ডা দুধে ভেজানো টি-ব্যাগ হালকা করে চোখের নীচে রাখুন। মিনিট দশেক রাখলেই চোখের ফোলাভাব বা লালচে চোখের সমস্যা থেকে 
মুক্তি পাবেন। নিয়মিত এই নিয়ম মানলে চোখের তলার কালিও দূর হবে। 
বর্ষার ভরসা: বর্ষাকালে আলমারিতে অনেক সময় স্যাঁতসেতে গন্ধ হয়। সেই সময়ও কাজে আসতে পারে চায়ের পাতা। রোদে শুকিয়ে নিন কয়েক 
মুঠো চা-পাতা। আলমারিতে রেখে দিন। স্যাঁতসেঁতে গন্ধ দূর হবে। এমনকী, হাওয়ার আর্দ্রতাও কিছুটা শুষে নেবে চায়ের পাতা। তাই আলমারিতে রাখা জামাকাপড়েও খুব একটা ভেজা ভাব আসবে না।
চায়ের আদর বাঙালি ঘরে বরাবরই ছিল, এবার থেকে চা-পাতার প্রতিও বেশ সমীহ-চোখে তাকাবে কি তারা? 

26th     November,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ