বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

শিশু দি‘বস’

আগামী ১৪ নভেম্বর জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিন তথা শিশুদিবস। এই দিনটি নিয়ে শিশুরা কী ভাবে? চার শিশু অভিনেতার মতামত শুনলেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

রায়ান গুহ নিয়োগী
‘হ্যালো, আমার নাম বোধিসত্ত্ব মুখোপাধ্যায়’। স্পষ্ট উচ্চারণে আলাপ করল খুদে। যাঁকে আপনি প্রতিদিন জি বাংলার পর্দায় দেখছেন। সৌজন্যে ধারাবাহিক ‘বোধিসত্ত্বর বোধবুদ্ধি’। সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলের পড়ুয়া প্রাথমিক আলাপে চরিত্রের নামেই দিল নিজের পরিচয়। বাস্তবে সে রায়ান গুহ নিয়োগী, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৪ নভেম্বরের যে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, সে বিষয়ে সচেতন রায়ান। ‘ওই দিন চিলন্ড্রেন্স ডে। আমি সোশ্যাল স্টাডিতে পড়েছি’, বলল সে। শ্যুটিং সামলে চলছে রায়ানের পড়াশোনা। শিশুদিবসে স্কুলে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। সেই গল্প বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত রায়ান বলল, ‘এই দিনটাতে আমাদের স্কুলে কেউ আবৃত্তি করে, কেউ নাচ করে। যেটা আমরা জানি সেটাই করি। আমি আবৃত্তি করেছি। আমার ভালো লাগে। অবশ্য আমার নাচ করতেও ভালো লাগে।’ এছাড়া এই দিনটার আরও আকর্ষণ রয়েছে। তা হল উপহার। ‘চিলন্ড্রেন্স ডে তে গিফট পাই আমি। বাবা, মা কিনে দেয়। সায়েন্স কিট, ড্রইং বুক, কালার ভালো লাগে’, বলল খুদে শিল্পী। ওই দিন বোধিসত্ত্বকে উপহার দিতে চাইলে এগুলোই তালিকায় রাখলে ভালো হয়, সেটাও জানাতে ভোলেনি সে। এই ধারাবাহিকেই প্রথম অভিনয় করছে রায়ান। ইতিমধ্যেই সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে নিজ গুণেই। শট না থাকলে কীভাবে সময় কাটে? রায়ানের কথায়, ‘শট না থাকলে খেলি। গল্প করি। ড্রইং করি। গল্পের বই পড়ি। টুনটুনি আর রাজার গল্প পড়লাম তো কিছুদিন আগেই। এখানে সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।’ শেষবেলায় জানতে চাইলাম, ছোট হওয়ার কি কোনও সুবিধে আছে? বোধবুদ্ধি খাটিয়ে ‘বোধিসত্ত্ব’ জবাব দিল, ‘আমাকে বড়রা অনেক যত্ন করে। ইচ্ছে মতো খেলতে পারি, ঘুমোতে পারি। আমি যখন কিছু চাই সেটাও তো বড়রাই কিনে দেয়। এটাই ছোট হওয়ার মজা।’ 
আরাধ্যা বিশ্বাস
‘আমি তো শ্যুটিং করছি। প্যাকআপ হয়নি’, নভেম্বরের সন্ধেয় ‘তুমি যে আমার মা’ ধারাবাহিকের ফ্লোর থেকে কচি গলায় আড্ডা জমাল আরাধ্যা বিশ্বাস। গত পাঁচ-ছ’ মাস ধরে কালার্স বাংলার পর্দায় চলছে এই ধারাবাহিক। সেখানে ছ’বছরের কন্যার অভিনয় ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে দর্শকের। শ্যুটিং নিয়ে যে কোনও কথায় ভারি উৎসাহ তার। নিজেই বলল, ‘শ্যুটিং করতে খুব ভালো লাগে আমার। আর টিভিতে আমাকে দেখে বাড়িতেও সবাই ভালো বলে। সেটাও ভালো লাগে।’ আগরপাড়ার বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রথম শ্রেণির ছাত্রীটি যদিও লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের জগতে পা ফেলেছে আরও কয়েক বছর আগেই। সাড়ে চার বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু। ‘প্রথমা কাদম্বিনী’ ধারাবাহিকে কাদম্বিনীর নাতনির চরিত্রে প্রথম অভিনয়। তারপর কেজি ওয়ানে পড়তে পড়তে ‘কাঞ্চি’ ধারাবাহিকে কাজ করেছে সে। এরপরই করোনা, লকডাউনে ব্যাহত হয়েছিল দৈনন্দিন। ফলে তেমনভাবে মেয়ের স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি বলে জানালেন আরাধ্যার মা পূজা দত্ত বিশ্বাস। তাই শিশুদিবসের কথা সে স্কুলে শোনেনি। তবে তা যে একেবারেই জানে না, তাও নয়। ১৪ নভেম্বর কী? প্রশ্নের উত্তরে সটান জবাব, ‘জানি তো। চিলন্ড্রেন্স ডে। মা বলেছে। আমাকে গিফটও কিনে দেয়।’ কখনও পেন্সিল বক্স, কখনও বা রং পেন্সিল উপহারে পেয়েছে সে। মেয়ের পছন্দমতোই কিছু কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেন মা। তবে আরাধ্যা নাকি সবথেকে খুশি হয় বিরিয়ানি পেলে। পূজা বললেন, ‘তুতুন (ডাকনাম) বিরিয়ানি খেতে ভীষণ ভালোবাসে। শুধু চিলন্ড্রেন্স ডে নয়, প্রতিদিনই বিরিয়ানি হলে ওর ভালো হয়।’
অ্যাডোলিনা চক্রবর্তী
ডি পি এস রুবি পার্কের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া অ্যাডোলিনা চক্রবর্তী শিশু দিবস ঘিরে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরিকল্পনা করে ফেলেছে। আগামী ২০ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে তার ছবি ‘কাবেরী অন্তর্ধান’। আপাতত শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা নেই। তাই স্কুল চলছে নিয়মিত। আগামী ১৪ নভেম্বর স্কুলে রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। অ্যাডোলিনা বলল, ‘১৪ নভেম্বর চিলন্ড্রেন্স ডে। স্কুলে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। কেউ কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারে আবার কেউ গান গাইতে পারে। আমি সিন্থেসাইজার বাজিয়ে গান গাই। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তো লকডাউন ছিল। স্কুল বন্ধ ছিল। প্রোগ্রাম হয়নি। সিনিয়র বিল্ডিংয়ে এই বছর প্রথম প্রোগ্রাম আমার। আর জুনিয়র বিল্ডিংয়ে যখন ছিলাম ক্লাস ওয়ানে, গান গেয়েছিলাম।’ এই বিশেষ দিনে বাবা, মায়ের থেকে উপহার পেতে অভ্যস্ত সে। শুধু উপহার পেয়েই থেমে থাকে না। উপহার দেওয়ারও পরিকল্পনা করে ফেলেছে। অ্যাডোলিনার কথায়, ‘যাদের কেউ যত্ন করে না, যারা গরিব তাদের আমি গিফট দিই। পেন, খাতা, চকোলেট দেব এবার। কখনও ড্রেসও দিই।’ নিঃসন্দেহে এই অভ্যেস তাকে  বড় হওয়ার পথে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করছে। যদিও সে নিজেকে এখনই বড় বলে মনে করে। তাই ছোট হওয়ার সুবিধে জানতে চাইলে একটু ভেবে উত্তর দিল, ‘আমি দুষ্টুমি করতে পারি। ছোট বলেই পড়া শেষ করে দুষ্টুমি করলে মাম্মা অ্যালাও করে। আর যখন কুকুরদের সঙ্গে খেলি, তখনও মাম্মা কিছু বলে না।’
সাফল্য দেবনাথ
সিমলেপাড়ার সেই দস্যি বিলেকে মনে পড়ে নিশ্চয়ই। তার স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার গল্প বহুবার পর্দায় দেখেছেন দর্শক। আপাতত আকাশ আট চ্যানেলের ধারাবাহিক ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’-য় সে গল্প দেখছেন বাঙালি। সেখানেই ছোট্ট বিলে অর্থাৎ সাফল্য দেবনাথ সোনারপুর শিশু বিদ্যাপীঠের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। শিশুদিবস সম্পর্কে তার বিশেষ ধারণা নেই। প্রশ্ন করতে বলল, ‘চিলন্ড্রেন্স ডে কী? আমি তো জানি না।’ এই না জানায় তার কোনও ভণিতা নেই। পর্দার বিলের মতোই সোজা কথা স্পষ্টভাবে বলতে জানে সাফল্য। তবে ক্যালেন্ডার মেনে ছোটদের জন্য নির্দিষ্ট এই দিনে যদি তাকে কোনও উপহার দেওয়া হয়, তাতে কোনও আপত্তি নেই খুদের। অভিনয় করতে তার দারুণ লাগে। নিজেই গল্প করল, ‘শ্যুটিং করতে খুবই ভালো লাগে আমার। আমরা ওখানে (শ্যুটিং সেটে) সবাই খুব মজা করি। খেলি আর শ্যুটিং করি। বাড়ি থেকে খেলনা নিয়ে যাই। তারপর গল্পও করি। সবাই বলছে অ্যাক্টিং খুব ভালো হচ্ছে। আমি আগে থিয়েটার করতাম তো। আমাদের গ্রুপের নাম স্টেজ অন।’ ধারাবাহিকে প্রথমবার কাজ করছে সাফল্য। তবে এর আগে দুটো বিজ্ঞাপনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কাজের খতিয়ান দিয়েই সাফল্যের মনে পড়ল প্রিয় বন্ধু অরিত্রর কথা। শ্যুটিং সামলে স্কুলে যেতে পারলে তবে তার সঙ্গে দেখা হয়, গল্প হয়। করোনার পর থেকে টিফিন ভাগ করে খেতে বারণ করেছেন গুরুজনরা। তা নিয়ে একটু দুঃখও হয় বইকি তার! সেই দুঃখ ভুলে থাকার অন্যতম উপায় নাকি গল্পের বই। ‘আমি ইংলিশ স্টোরি বুক পড়ি। আলিবাবা চল্লিশ চোর পড়লাম সবে। আলিবাবাকে ভালো লেগেছে। আমাকে যদি বলো আলিবাবার চরিত্রে অভিনয়ও করতে পারব’, আত্মবিশ্বাসী শোনাল সাফল্যের গলা। 

12th     November,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ