বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

বেড়াতে গিয়ে ভুরিভোজ
নৈব নৈব চ

বেড়াতে পারলে মন আর কিছু চায় না। কিন্তু সুস্থ শরীরে বেড়ানোটা খুব জরুরি। বেড়াতে বেরিয়ে খাওয়াদাওয়ার ভুলে অসুস্থ হন অনেকেই। কী কী খেয়াল রাখবেন জানালেন বিশেষজ্ঞরা। লিখছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

বেড়ানোর মরশুম ক্যালেন্ডার থেকে নেমে যেন আপনার দোরগোড়ায় হাজির! রবীন্দ্রনাথ ভাইঝি ইন্দিরাদেবীকে লিখছেন, ‘শীত শুধু গাজর, বিন মটরশুঁটির ঋতুই নয়, বাঙ্গালার ঘরে ঘরে পশ্চিমে বেড়াতে যাওয়ার দিনক্ষণও বটে।’ এখন যদিও বেড়াতে যাওয়ার সীমানা শুধু পশ্চিমে আটকে নেই, বরং দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও বেশ গুছিয়ে বসেছে বাঙালির ভ্রামণিক মন। আর  ভ্রমণপথে বাঙালির রসনা খুব একটা বিশ্রাম চায় না। বরং যেখানে বেড়াতে গিয়েছে সেখানকার স্থানীয় খাবার থেকে শুরু করে চিরচেনা বাঙালি রান্না— সবেতেই সে অক্লান্ত! ভোজনরসিকতা যে জাতির রক্তে, তার মনে কিছু সতর্কতাও রাখতে হয় বইকি! বেড়াতে গিয়ে আলবাত খাবেন। নিত্যনতুন স্থানীয় খাবারে আশ মেটাবেন এ আর নতুন কি? কিন্তু খাদ্যগ্রহণের মূল নীতি থেকে সরে গেলে বিপদ ওঁত পেতে আছে। তাই খাওয়ার মধ্যেও মিশিয়ে দিতে হবে সতর্কতার কড়া ডোজ। 

ডাক্তারবাবু বলছেন
কথা হচ্ছিল আর এন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘বেড়াতে গিয়ে অন্যরকম কিছু খাওয়াদাওয়া তো হবেই। খুব স্বাভাবিকভাবেই ভ্রমণ একরকমের বিনোদন, খাওয়াদাওয়া তারই একটি অংশ। কিন্তু বেড়াতে যাওয়া মানেই ঘর থেকে অনেকটা দূরে, অচেনা পরিবেশ। হাতের কাছে চেনা ক্লিনিক, জানাশোনা ডাক্তারবাবু কেউ নেই। তাই সাবধান না হলেই বিপদ।’ সহমত পোষণ করলেন জেরিয়াট্রিশিয়ান (বয়স্কদের চিকিৎসক) ডাঃ কৃষ্ণাঞ্জন চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ‘বয়স্করা যেহেতু এখন প্রচুর পরিমাণে বেড়াতে যান, আমরাও মাঝেমধ্যেই তাঁদের বেড়াতে যাওয়ার পরামর্শ দিই, তাই বেড়াতে গিয়ে কে কেমন খাওয়াদাওয়া করবেন এই প্রশ্ন নিয়েও অনেক রোগী আসেন। যে যতই বলুক, বেড়াতে বেরিয়ে সামান্য অনিয়মও হয় না বা হবে না, এ কথা ঠিক নয়। তবে কিছু কৌশল জেনে রাখলে সেইসব অনিয়ম সত্ত্বেও শরীর ফিট থাকে।’

বেহিসেব নয়
বেড়ানো মানেই চেনা রুটিনের দফারফা করে এক ঝলক টাটকা ছুটি। সেখানে নিয়মের শিকল ভেঙে রোজনামচাকে দুরমুশ করাই দস্তুর। তবে একসঙ্গে অনেক অনিয়ম করতে গেলে মূল কিছু নিয়মের সুতোকে আলগা করলে চলবে না। জানালেন দুই চিকিৎসকই।
• যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার খাওয়াদাওয়া সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজ নিয়ে যান। শিশু বা বয়স্ক মানুষ সঙ্গে থাকলে এই সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা কিন্তু দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি কোনও ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে যান, তাহলেও এই খোঁজ নিতে ভুলবেন না।
• হতেই পারে, ট্যুর এজেন্সি যে খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা দিতে পারলেন না। বরং যা দেওয়া হল, তাতে বয়স্ক বা ছোটদের সমস্যা হতে পারে। তাই সবসময় সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার রাখুন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য চিকিৎসকরা যে হেলথ ড্রিঙ্কের পরামর্শ দেন, সেটিও সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিলেন কৃষ্ণাঞ্জন।
• অনেক হোটেলে আজকাল বুফে সিস্টেমে খাওয়াদাওয়া করানো হয়। বহু ট্যুর পাকেজের অন্যতম আকর্ষণই থাকে এমন আনলিমিটেড মেনু। অরিন্দম জানালেন, লাঞ্চ বা ডিনার বুফেতে হলে অনেকেই সকালের খাওয়া বা সন্ধের টিফিন বাদ দেন। বেড়াতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেও সুস্থ থাকতে হলে এই অভ্যাসে রাশ টানতে হবে। বুফে খাওয়ার আগে তিন ঘণ্টার বেশি যেন পেট খালি না থাকে। অনেকক্ষণ খাবার পড়েনি এমন পেটে বুফে খেলে বেশি খেয়ে ফেলার শঙ্কা থাকবে। তার সঙ্গে পেট খালি থাকার পর ভারী খাবারে বদহজমও হবে। সবসময়ই পেটে একটু খিদে রেখে খাবার খান। পরিমাণে কম খাওয়ার বিষয়টি বেড়াতে যাওয়ার সময়ও খেয়াল রাখতে হবে। 
• বেড়াতে গিয়ে রুটিনের হেরফের হয়। ঘুম ভাঙা থেকে ঘুমোতে যাওয়া— সবটাই এলোমেলো হয়ে যায়, তাই সারাদিনে প্রচুর জল খেতে হবে। বাড়িতে ডিটক্স ওয়াটারের অভ্যাস থাকলে চেষ্টা করুন বাইরেও সেটুকু মেনে চলতে। কিছু না থাকলে একটু চিয়া সিড বা ফ্ল্যাক্স সিড সঙ্গে রাখুন। রাস্তায় লেবু পাওয়া গেলে জলে লেবু মিশিয়ে চিয়া বা ফ্ল্যাক্স মিশিয়ে খেতে থাকুন অল্প অল্প করে। লেবু না মিললেও ক্ষতি নেই। শরীরে এনার্জি প্রদানের সঙ্গে এই ডিটক্স আপনার হজমশক্তিকে তুঙ্গে রাখবে। 
• বেড়াতে গিয়ে যে খাবারই খান না কেন, তা যেন গরম অবস্থায় খাওয়া হয়, জানালেন ডাঃ কৃষ্ণাঞ্জন চক্রবর্তী। তাঁর মতে, যে খাবার শরীরের জন্য খুব ভালো হবে না, তাও যদি অল্প পরিমাণে খেয়ে পেট ভরাতে হয়, সেক্ষেত্রে গরম অবস্থায় খাওয়াই ভালো। তাতে অন্তত সংক্রমণের ভয় অনেকটা কম থাকে। বাইরে বেরলে সবসময় খাবারের মানও ভালো পাওয়া যায় না। তাই পেটের সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে ধোঁয়া ওঠা গরম খাবার খান।
• অনেকে সকাল সকাল খালি পেটে একটা করে প্যান্টোপ্রাজল বা ওমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খেয়ে নেন। মনে করেন, এতে সারাদিন গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ থেকে বাঁচা যাবে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এতে পেটের অ্যাসিড যা খাবারকে হজম করবে, তা ওষুধের দ্বারা জারিত হয়ে যায় আর খাবার হজম হতে চায় না। আগে থেকেই অ্যাসিড হয়ে আছে এমন পরিস্থিতি ছাড়া এইসব ওষুধের কোনও দরকার নেই। বরং ভারী খাবারের পর এনজাইম সাপ্লিমেন্ট জাতীয় ওষুধ খেলে কাজ অনেক ভালো হয়, জানালেন কৃষ্ণাঞ্জন। 
• যত প্রিয় পদই হোক না কেন, কোনও খাবারে সহ্যাতীত ঝাল বা মশলা আছে মনে করলে তা জোর করে না খাওয়াই ভালো। বরং হালকা কিছু খেয়ে বা অন্য কোনও খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিন। 
• অরিন্দম জানালেন, যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে তা ছোঁয়াও যাবে না। অনেকের প্রবণতা থাকে অ্যালার্জি আছে জানার পরেও সেই খাবার খেয়ে উঠে একটা অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ খেয়ে নেওয়া। অ্যালার্জির ধরন মৃদু হলে তা করা চলে। তবে তা এক-আধবারই। কিন্তু অ্যালার্জির প্রকোপ মাঝারি বা উচ্চমানের হলে সেই ঝুঁকি একেবারেই নেবেন না। বিশেষ করে কাঁকড়া, চিংড়ি, সামুদ্রিক নানা মাছ, দুধজাতীয় খাবার, ডিম, বেগুন এগুলোয় অনেকের অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে। তাই সতর্ক হোন। প্রয়োজনে অন্য খাবার খান বা বিকল্প খাবার সঙ্গে রাখুন।
• হয়তো বেড়াতে গিয়ে একেবারে নতুন খাবার খাচ্ছেন। জানেনই না এতে অ্যালার্জি হতে পারে কি না। বিশেষ করে চিংড়ি, কাঁকড়া বা নতুন কোনও প্রাণীর মাংস যা আগে কখনও খাননি, সেই সব পদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। তখন একসঙ্গে অনেক অর্ডার না করে প্রথম দিন অন্য খাবাররে সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণে খান। যদি শরীরে সয়, তাহলে পরে একদিন মন ভরে অর্ডার করুন।
বেড়াতে গিয়ে সুস্থ থাকা কিন্তু খুব দরকার। নইলে গোটা ট্যুরটাই মাটি! তাই বিশেষজ্ঞদের কথা শুনেই সাজান সব ট্যুরের ফুড মেনু! 
 

5th     November,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ