বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

লোটাকম্বলের কিসসা

ঢাউস ব্যাগটার দিকে কাঁচুমাঁচু চেয়ে আছেন মনোসিজ। ট্রেন সন্ধে ৭টায়। বিকেল ৫টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়তে হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যে স্মৃতি এমন বাগড়া দেবে কে জানত! বুড়ো বয়সে গিন্নির প্রশংসার প্রতি লোভ বেড়ে যায়। তাই নিজের হাতে বেড়াতে যাওয়ার লাগেজ গুছিয়েছেন মনোসিজ। গোল বেঁধেছে গিন্নির নেশার পানের বাটা নিয়ে। তিনটে লাগেজের কোন কোনায় ওই বিষম বস্তু পুরেছেন, তা মনে করতেই পারছেন না। এদিকে গিন্নির গোঁ, ও জিনিস খুঁজে না পাওয়া অবধি বাড়ি ছাড়বেন না। খেয়াল পড়ছে না মশার ধূপ, টর্চ আর নিজের ঘরে পরার জুতোই বা কোথায় গেল! ঘরে নেই। তার মানে কি লাগেজে? নাকি ঘরেই আছে, খুঁজে পাচ্ছেন না? এখন সব লাগেজ ঢুঁড়ে ওসব খুঁজতে যাওয়া মানে অবধারিত ট্রেন মিস! 
এ গল্প একা মনোসিজের নয়। ঘরে ঘরেই। জেরম ক্লাপকা জেরমের ‘প্যাকিং’ গল্পটা মনে আছে? খুব মনে করে, মাথা খাটিয়ে দরকারি বিভিন্ন জিনিসে ব্যাগ ভরার পর অতি সামান্য ক’টা জিনিসের জন্য ব্যাগ যে কতবার আনপ্যাক করতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই!
বেড়ানোর ফুরফুরে মেজাজে পৌঁছনোর আগে প্যাকিংয়ের একঘেয়েমি কেউই প্রায় ভালোবাসেন না। তার উপর যোগ হয় এই বুঝি কিছু বাদ পড়ে গেল-র টেনশন! 
কুলিযুগ
একটা সময় বাঙালির গোছগাছ মানে ছিল জিনিস বাঁধাছাঁদা। ব্রিটিশ আমলে একটু অবস্থাপন্ন পরিবারে ছিল চামড়ার সুটকেস। নয়তো পেল্লাই ট্রাঙ্ক। দিন আনি দিন খাই পরিবারে মোটা কাপড়ে পুঁটলি বেঁধে জিনিসপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। কোনও কোনও বাড়িতে হয়তো দামি জিনিস হিসেবে কদর পেত টিনের বড় ট্রাঙ্ক। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কুলি ডেকে তার মাথায় কাঁধে হাতে ঝোলা ঝুলিয়ে দেওয়ার চল ছিল। ততদিনে বাজারে এসেছে বেসিক ডাফলস। বড় আকারের ডাফল ব্যাগে মোটামুটি ৮০-১০০ লিটার জিনিস ধরে যেত। 
ফিরে এসো চাকা
দিন বদলেছে। প্যাকিং সম্পর্কে বাঙালি আরও যত্নবান হয়েছে। দু’-একদিনের আউটিংয়ে ডাফল ব্যাগের ঝঞ্ঝাট কমাতে মানুষ আপন করে নিয়েছে মেসেঞ্জার ব্যাগকে। সুন্দর নকশা ও ওয়াটারপ্রুফ কাপড়ে তৈরি এই ধরনের ব্যাগ নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে পারেন। ওজনে হালকা, সহজে কাঁধে ঝুলিয়ে সফর করতে পারেন। তবে ডাফল ব্যাগ কিন্তু সহজে জায়গা ছেড়ে দেয়নি। বরং শরীরে চাকা লাগিয়ে, ওজন আরও ঝরিয়ে হয়ে উঠেছে ‘হুইলড ডাফলস’। গেট আপও গিয়েছে বদলে। স্যুটকেসের তুলনায় ওজন কম। বয়স্কদের পক্ষে ব্যবহার করা সুবিধের। একাধিক চেন ও খাপ থাকে। হুইলড ডাফলসে ট্রলির মতো হাতল থাকে।  বেড়াতে যাওয়ার পথে কুলির প্রয়োজন খানিক কমিয়ে দিয়েছিল এই ব্যাগ। তবে এই ধরনের ব্যাগ থেকে জিনিস বের করার সময় বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে ব্যাগ আবার আনপ্যাক করে ফের গোছানোর সমস্যা আছে। ডাফলসের এই অসুবিধা ঝেড়ে ফেলতে পরবর্তীকালে ট্রলি ও ব্যাকপ্যাক আপন হয়েছে। আধুনিক ট্রলির শরীর মজবুত পলিকার্বোনেটে তৈরি। থেফট অ্যালার্ম, চেন লক, আলাদা আলাদা খাপ, মজবুত হাতল, চাকা মিলিয়ে পুরোটাই প্যাকেজ! আজকাল বেশিরভাগ ট্রলিই চার চাকাওয়ালা। তবে দু’চাকায় ভর করেও পথ পাড়ি দিতে পারে এই ব্যাগ। 
ট্রলিবোঝাই বাবুমশাই
ট্রলির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আর একটি বস্তুর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তিনি ব্যাকপ্যাক। ট্রলির মতো সারা পথ গড়িয়ে যেতে মোটে রাজি নন। বরং পিঠে চড়েই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াতে পারেন। ভিন্ন আকার ও নকশায় বাজারে মেলে। বেশিরভাগ ব্যাকপ্যাকই প্যারাশ্যুট কাপড়ে তৈরি। তাই তা টেকসই ও ভার বহন করতে পারে। কিছু রুকস্যাক থার্মোপ্লাস্টিক ইউরেথিন দিয়ে তৈরি। এগুলো ওয়াটারপ্রুফ এবং স্থায়িত্বও বেশি। এই ধরনের ব্যাগের ভিতরেই নানা অর্গানাইজার, বিল্ট-ইন সিকিউরিটি, হিপবেল্ট, লকেবল জিপার্স, শোল্ডার স্ট্র্যাপ থাকে। পিঠে করে সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। ওজনদার হলেও এর ভার পিঠে এমনভাবে ছড়িয়ে থাকে যে বোঝা মনে হয় না। তাই ট্রেকিং হোক বা দীর্ঘ পথ হাঁটায় ব্যাকপ্যাক হতে পরে আপনার বন্ধু। 
প্যাকিংয়ের ব্যকরণ
ব্যাগ যা-ই হোক না কেন প্যাকিং পর্ব সরল ও উদ্বেগহীন না করতে পারলে বেড়ানোর মেজাজে প্রথমেই চিড় ধরে। তাছাড়া বিমানে যেমন নির্দিষ্ট ওজনের বেশি লাগেজ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে, তেমনই ভারতীয় রেলও ফরমান জারি করেছে, অতিরিক্ত লাগেজের জন্য অতিরিক্ত টাকা গচ্চা দিতে হবে। তাই সহজে প্যাকিং করার কয়েকটি টিপস রইল।
• নানা মাপের অর্গানাইজার পাওয়া যায়। একজাতীয় পোশাকদের এক একটি অর্গানাইজারে রেখে তা পর পর সাজিয়ে নিন। এতে জিনিস খুঁজে পাওয়া সহজ, জায়গাও কম লাগে। 
• প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকিং কিউব ব্যবহার করুন। প্যাকিং কিউব অল্প জায়গা নেয়, অনেক জিনিস ধরে।
• অর্গানাইজারে বা সরাসরি ট্রলিতে পোশাক প্যাক করার সময় রোল করে নিন। তাতে পোশাকের ইস্ত্রি ও ভাঁজ নষ্ট হয় না। জায়গাও কম লাগে।
• টয়লেট্রিজ পাউচ ও গ্রুমিং কিট নিন ছোট খাপওয়ালা আলাদা ব্যাগে। 
• জুতো প্যাক করার জন্য আলাদা খাপযুক্ত পাউচ বা কভার পাওয়া যায়।  সেগুলো ব্যবহার করুন।
• বেড়াতে গেলে কেনাকাটা করবেন। তাই সঙ্গে রাখুন অতিরিক্ত হ্যান্ডব্যাগ। বাজেট: ভালো ট্রলি বা ব্যাকপ্যাক কত লিটার ওজনের কিনছেন, তার উপর নির্ভর করবে দাম। ৩০ লিটার ওজনের জন্য বাজেট রাখুন ১২০০-১৫০০ টাকা। ৪৫ লিটারের খরচ ২৫০০ টাকার কাছাকাছি। তার চেয়ে বেশি ওজনের হলে দাম পড়বে ৩৫০০-৫০০০ টাকা। অনলাইন ও ট্রাভেল ব্যাগের দোকানে এগুলো পাবেন।
আপাতত ব্যাগ গোছানোর পালা তাহলে সাঙ্গ। এবার ছুটি হিসেব করে টিকিটখানা কেটে ফেলুন দেখি!

11th     June,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ