উদার আকাশ
‘উদার আকাশ’ পত্রিকার কুড়ি বছর পূর্তি সংখ্যার প্রচ্ছদটি এতই সুন্দর যে দেখলেই পত্রিকাটি নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে করে। অর্থাৎ যাকে বলে একেবারে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করা, এ হল তাই। কিন্তু শুধু প্রথম বলে ছক্কা হাঁকালেই তো হবে না। শেষ অবধি চার, ছয়, খুচরো রান নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হবে। উদার আকাশের এই সংখ্যাটি সেই যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। প্রচ্ছদ দেখে শিল্পীর পরিচয় পেতে কৌতূহল জাগে। শিল্পীর নাম সারফুদ্দিন আহমেদ। শিল্পীর একটি নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকারও ছাপা হয়েছে পত্রিকাটিতে, যেটি অত্যন্ত সুপাঠ্য ও রোমাঞ্চকর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সারফুদ্দিন। বাবা ছিলেন দক্ষ দর্জি। তিনি চেয়েছিলেন ছেলেও তাঁর মতোই দক্ষ দর্জি হোক। কিন্তু সারফুদ্দিন জনমজুর খেটে, সাইনবোর্ড এঁকে শিল্পের প্রতি নিজের প্রেমকে রক্ষা করে গিয়েছেন। আজ তিনি দেশের অত্যন্ত নামী শিল্পী। সারফুদ্দিনের যাত্রা বেশ গল্পের মতো। মন টেনে নেয়। পত্রিকার শুরুতেই প্রয়াত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের একটি লেখা ‘ক্ষমতার রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করছে...’ আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল লিখেছেন এক বাঙালি হিন্দুর ইসলামচর্চার কথা। সদ্যপ্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষকে স্মরণ করেছেন মইনুল হাসান ও সমীর ঘোষ। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে রয়েছে একাধিক লেখা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিবন্ধ। ওটিটির নৈরাজ্য ও সিনেমার সঙ্কট বিষয়ে অমিতাভ সিরাজের লেখাটি শিরোনামেই বিতর্কের ইন্ধন জোগায়। রয়েছে ১৯টি ছোট গল্প, একটি অণু নাটিকা, একটি অণু উপন্যাস ও প্রচুর কবিতা। সাংবাদিক হারাধন চৌধুরী ও বাসব চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ। শেষ পাতে ছড়া ও গ্রন্থ সমালোচনা। সব মিলিয়ে সম্পাদক ফারুক আহমেদ অত্যন্ত ভালোমানের পত্রিকা পেশ করেছেন পাঠকের দরবারে।
তবে ইনিংসে ছুটকো ত্রুটিও আছে। ঠিক অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলকে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ তোলার মতোই গল্পগুলির সঙ্গে ইলাস্ট্রেশন মোটেই পত্রিকার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যে পত্রিকার প্রচ্ছদ এত সুন্দর, তার ইলাস্ট্রেশন কিন্তু মন ভরাতে পারল না।