শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বেই মৌলবাদীদের হুঙ্কার বড় কদর্য। যখনই তাদের প্রতাপ বেড়েছে তখনই তাদের দাপাদাপিতে বহুত্ববাদী স্বর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে। শুধু ধর্মীয় মৌলবাদই নয়, জাতি, সংস্কৃতি, বর্ণ সব ক্ষেত্রই মৌলবাদীরা গ্রাস করতে চায়। আর কে না জানে মৌলবাদ থেকেই সৃষ্টি হয় বিচ্ছিন্নতাবাদের। আমাদের এই বিশ্ব প্রায়ই নানা মৌলবাদী সমস্যায় জর্জরিত হয়। এমন সময়েই হাতে এল ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’ বইটি। এই বইয়ে বাংলার বুদ্ধিজীবীর একাংশ কলম তুলে নিয়েছেন বাঙালির বিপন্ন অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে তোলার তাগিদ থেকে। সেই বুদ্ধিজীবীর তালিকায় কবি থেকে সাংবাদিক কে নেই! সমস্যা হল, প্রায় সবাই ঘুরিয়েফিরিয়ে একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছেন। তা হল, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের কাছে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি পরাভূত এবং বাঙালিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার একটা চক্রান্ত চলছে। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যে নয়। কিন্তু লেখকরা কেউই এর কারণ অনুধাবন করা বা ব্যাখ্যা করার দিকে যাননি। শুধুই বাঙালি অস্মিতার কথা বলেছেন। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ জাতীয় কিছু প্রচলিত কথাই বলেছেন। বাংলা সিনেমা, সাহিত্য, কাব্য, নাটক, খাওয়াদাওয়া এসবের মধ্যেই তো বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলির বেঁচে থাকার কথা ছিল। কেন তা নেই, কেউ তার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেন না, এটাই আফসোসের। করলে হয়তো বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম সত্যিই শুরু হতে পারত। নইলে এক মৌলবাদ ঠেকাতে গিয়ে আর এক মৌলবাদের অবতারণা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে। লেখক তালিকায় রয়েছেন, সুবোধ সরকার, সাহানা নাগ চৌধুরী, বাণী বসু, বারিদবরণ ঘোষ, সফিউন্নিসা, তপোধীর ভট্টাচার্য, খাজিম আহমেদ, মইনুল হাসান, অশোক মজুমদার, জয়ন্ত সিংহ, সুমন ভট্টাচার্য, জয়ন্ত ঘোষাল, মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, মোশারফ হোসেন, মোহাম্মদ শামসুল আলম, একরামুল হক শেখ, গোলাম রশিদ, দীপক সাহা, প্রবীর ঘোষ রায়, সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অঙ্গনা চট্টোপাধ্যায়, কুমারেশ চক্রবর্তী, ঐশ্বর্য আহমেদ ও ফারুক আহমেদ। বইটি সম্পাদনা করেছেন ফারুক আহমেদ।
বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম/ উদার আকাশ/ ২৫০ টাকা
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী