বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

তারকাদের কেনাকাটা

বাঙালির সুখে দুঃখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম সমানে বিরাজমান। আমাদের জীবনের ধ্রুবতারা তিনি। আর বঙ্গসমাজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের মায়াভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খোয়াইয়ের হাট, সুবর্ণরেখার বইপত্র, আমার কুটিরের হস্তশিল্প যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত! প্রকৃতির মাঝেই সেখানে চলে কেনাকাটার টুকিটাকি। ২৫ বৈশাখের প্রাক্কালে তারকাদের স্মৃতিতে উঠে এল শান্তিনিকেতনে কেনাকাটার কথা। টলিউডের কয়েকজন শিল্পী সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন কমলিনী চক্রবর্তীর সঙ্গে।

কেনাকাটার ভিড়ে আমার স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল সেই মিষ্টিওয়ালা: অম্বরীশ ভট্টাচার্য 

শান্তিনিকেতন নামটা শুনলেই এক অন্য ধরনের নস্টালজিয়া ঘিরে ধরে আমায়। সাধারণভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য সব বাঙালির কাছেই শান্তিনিকেতন নামটা এক ভিন্ন ধরনের স্মৃতি বহন করে। সেই স্মৃতিতে নস্টালজিয়া আছে, আবার সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বড় সঙ্কটের মুহূর্তও অনায়াসে পেরিয়ে যাই আমরা। কিন্তু আজ আমি যে স্মৃতির কথা বলব তা একান্তই ব্যক্তিগত। শান্তিনিকেতনের পিয়ারসন পল্লিতে আমার দাদুর বাড়ি ছিল। তাই ছোট থেকে ওখানে বহু সময় কাটিয়েছি। স্কুলের ছুটিছাটার ফুরসত পেলে তো বটেই, এমনকী বছরের অন্যান্য সময়েও নানা অছিলায় দাদুর বাড়ি চলে যেতাম। তাই কেনাকাটা বলতে আমার যে স্মৃতিটা মনে পড়ে তা একটু অন্যরকম। বাগান ঘেরা দাদুর বাড়িতেই আমার কেনাকাটার স্মৃতির সূত্রপাত। কবিগুরুর অনুকরণেই বোধহয় শান্তিনিকেতনে আজও বাড়ির নাম দেওয়ার চল রয়েছে। সেই রীতি মতোই আমার দাদুর বাড়ির নাম ছিল রিমঝিম। গ্রীষ্মের বিকেলে মনে আছে সেই রিমঝিম বাড়িটার সামনে একজন মিষ্টিওয়ালা আসতেন। সাইকেল রিকশার পিঠে বসানো কাচের ভ্যান। তাতে মিষ্টি ঠাসা। আর বিক্রেতা সেই মিষ্টি বিক্রি করেন ঘণ্টা নেড়ে। ঠিক বিকেল চারটের সময় বাড়ির সামনে যেই না ওই মিষ্টিওলার ঘণ্টা বেজে উঠত অমনি আমিও একছুটে চলে আসতাম বাড়ির সামনে। দাদুর সঙ্গে সলা করে নানারকম রসের মিষ্টি কেনা হতো। অতি সুস্বাদু সেই মিষ্টি। শান্তিনিকেতনে কেনাকাটার আর একটা স্মৃতি বলতে সুবর্ণরেখা বইয়ের দোকান থেকে বই আর ক্যাসেট কেনা। শান্তিনিকেতন পোস্ট অফিসের পাশেই সেই দোকান। আজও মনে আছে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা মলাটসমেত ‘আম আঁটির ভেঁপু’ বইটি আমায় দাদু ওই দোকান থেকেই কিনে দিয়েছিলেন। এছাড়া হাটের প্রচুর জিনিসও কিনেছি। হাটে বাউলের আখরা থেকে একতারা কিনেছি, রবীন্দ্রনাথের ছবি দেওয়া কাগজ, গ্রাম্য ধাঁচে গড়া লজেন্স— আরও কত কী যে কিনেছি তার শেষ নেই। তবু এত কেনাকাটার ভিড়েও আমার স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন সেই মিষ্টিওলা। 

শান্তিনিকেতনের লোকের সঙ্গে মিশে কেনাকাটার আনন্দই আলাদা: স্বস্তিকা দত্ত  

আমার কেরিয়ার শুরুই হয়েছিল বোলপুর থেকে। প্রথম সিরিয়াল ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’-র শ্যুটিং হতো বোলপুরে। ফলে শান্তিনিকেতন ঘিরে আমার স্মৃতির অভাব নেই। আজও প্রতি বছর নিয়ম করে একবার অন্তত শান্তিনিকেতন যাই। তবে কোভিড বলে গত বছর, আর এ বছরটা বাদ পড়েছে। যাই হোক, শান্তিনিকেতনের ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় কতবার যে আমার পায়ের চিহ্ন পড়েছে তার হিসেব আমার কাছেও নেই। 
ওখানে গেলে একটা বাঁধা দোকান আছে, যেখান থেকে আমি কেনাকাটা করি। আসলে ঠিক দোকানও বলা যাবে না। বরং বলা উচিত বুটিক। খুব পুরনো একটা বাড়ির ভেতর এই বুটিকের অবস্থান। বুটিকের নাম দরজি। ওখানে হাতে তৈরি ক্লে দিয়ে পটারি বানানো হয়। আমি ঘর সাজাতে ভালোবাসি। আর গৃহসজ্জায় অন্য ধরনের ছোঁয়া দিতে ক্লে পটারির জুরি মেলা ভার। ফলে প্রতিবারই আমি ওখান থেকে পটারি কিনে আনি। এছাড়া ওই বুটিক থেকেই আর একটা বিশেষ জিনিস কিনেছি, নীল ডাই দিয়ে তৈরি শাড়ি। এই শাড়িগুলো সম্পূর্ণই হাতে বোনা হয়। তাঁতে সুতো বুনে তারপর সেই সুতোয় নীল ডাই করে তারও পরে তা দিয়ে শাড়ি বোনা হয়। ওই একটা শাড়ি আমি শেষবার নিজের জন্য কিনে এনেছি। 
এছাড়াও শান্তিনিকেতনে খোয়াইয়ের খোলা হাট আমার দ্বিতীয় শপিং ডেস্টিনেশন। সেই হাটে হাতের কাজের প্রাচুর্য। কিন্তু তারও মধ্যে আমায় যেটা সব চেয়ে বেশি টানে তা হল চুলের কাঁটা। 
শান্তিনিকেতনী এই কাঁটা কিন্তু একেবারেই অন্য ধরনের। ফুলের নকশা করা এই কাঁটা দেখলে নিজেকে সংযত রাখতে পারি না। শহুরে জীবনে বনফুলের মালা হয়তো আমার গাঁথা হয়ে ওঠে না, তবে বনফুলের চুলের কাঁটা দিয়ে আজও সুযোগ পেলেই খোঁপা বাঁধি। এখানেও শেষ নয়, হাটে গিয়ে পায়ের মলও অনেক কিনেছি। আর সবচেয়ে মজার কথা হল, সেই তোড়া আমার পছন্দসই ডিজাইনে আমার সামনেই বানিয়ে দেওয়া হয়। হাতে বানানো তোড়া দেখার অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। শান্তিনিকেতনে গিয়ে সেখানকার লোকের সঙ্গে মিশে জিনিস কেনার আনন্দই আলাদা। এছাড়াও আছে মাদুর। আমার ঘর সাজানোর নেশাটা আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এই মাদুরের কালেকশনে। আর টুকরোটাকরা জিনিস তো প্রচুরই কেনা হয়। যেমন গয়না, বিশেষত কানের দুল, ব্যাগ ইত্যাদি। শান্তিনিকেতনী ব্যাগ আমার এতই প্রিয় যে তা আমার সিরিয়ালেও ব্যবহার করি। শহুরে শান্তিনিকেতন আমায় ততটা টানে না, কিন্তু গ্রাম্য শান্তিনিকেতনের সৌন্দর্য আমায় বরাবর মোহিত করে। আর সেই টানেই আমি বারবার ছুটে যাই প্রকৃতি ঘেরা অতি পরিচিত শান্তিনিকেতনে।     

সনাতনের মাঝে নতুনত্ব খোঁজার নেশাতেই কেনাকাটায় মেতে উঠি: সোনালি চৌধুরী 

আর পাঁচটা বাঙালির মতোই আমার সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগটা বড্ড বেশি। সেই কোন ছোটবেলা থেকে ‘আমার সকল ভালোবাসায়, সকল আঘাত সকল আশায়...’ কবিগুরু ফিরে ফিরে এসেছেন। তবু তাঁর শান্তিনিকেতনে আমার ছোটবেলায় যাওয়া হয়নি। তবে যখন গেলাম তখন একটা অন্যরকম কাজের সূত্র ধরে গিয়েছিলাম। 
একটা টিভি চ্যানেলে তখন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের ওপর কাজ হচ্ছিল। আমাকে তাতেই একটা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়। আর যখন শুনলাম গোটা শ্যুটিংটাই হবে কোপাই নদীর তীরে, তখন একটা বাঁধভাঙা আনন্দ পেয়ে বসেছিল আমায়। রবীন্দ্রনাথের ‘ইচ্ছাপূরণ’ গল্পটার শ্যুটিং হবে। আর তাতে অভিনয় করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এখানেও শেষ নয়, সিরিয়ালটার পরিচালনায় ছিলেন রমাপ্রসাদ বণিক। শান্তিনিকেতনে পৌঁছনোর রোমাঞ্চ এতই বেশি ছিল যে মে মাসের গরমটাকেও তা ছাপিয়ে গিয়েছিল। আমরা সারাদিন কাজ করতাম আর বিকেল হলেই হাটেবাজারে বেরোতাম কেনাকাটার নেশায়। ডোকরা আমার খুবই পছন্দ। তাই শান্তিনিকেতনে এসে ডোকরার গয়না কেনার সুযোগ তো ছাড়তে পারি না। আমাদের মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে গিয়েছিলাম ডোকরার গয়না কিনতে। মনে আছে ডোকরার গয়না আর শান্তিনিকেতনের স্টাইলে মুগ্ধ হয়ে আমি যা কিনেছিলাম তা আমার শ্যুটিংয়ের পারিশ্রমিকের চেয়েও ঢের বেশি হয়ে গিয়েছিল। তখন কলকাতায় এত সুতির ফ্যাব্রিকের প্রাচুর্য ছিল না। ফলে সুতির কাপড়ে কাঁথার কাজ, বাটিকের চাদর ইত্যাদি দেখে আমি আহ্লাদে আত্মহারা হয়ে যাই। এরপর একটা সময় এমন এল যখন আমি শান্তিনিকেতনে ডেলি প্যাসেঞ্জারিও করেছি। সোনার হরিণ সিরিয়ালটার শ্যুট চলছিল। আর তাতে আমি শান্তিনিকেতনের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ফলে রোজ শান্তিনিকেতন যেতাম আর রাতের ট্রেনে ফিরতাম। শান্তিনিকেতনের ব্যাগ আমার তো বটেই, আমার আত্মীয়দেরও আছে! ফাইল আছে, শান্তিনিকেতনী সুতির শাড়ির তো শেষ নেই। ছোট ছোট প্যাঁচা আছে নানা মাপের, নানা রঙের, ঝুমঝুমি লাগানো চুলের কাঁটা আছে। বাটিক, কাঁথাস্টিচ বা খেসের শাড়ি অনেক আছে। খেস আর বাটিকের কথা একটু আলাদা করেই বলব, খেসের একটা অন্যরকমের সৌন্দর্য আছে। একটা আভিজাত্য আছে। এছাড়া বাটিকও আমার ভীষণ ভালো লাগে। এখন তো শান্তিনিকেতন গেলে কাঁথা কাজের ব্লাউজ পিস, টি শার্ট ইত্যাদিও প্রচুর কিনি। সনাতনের মধ্যে নতুনত্ব খোঁজার নেশাতেই আমি শান্তিনিকেতনের বিকিকিনির হাটে মেতে উঠি।

খেস, বাটিক, ডোকরার সঙ্গেই চলে আমার কেনাকাটার পালা: বাসদত্তা চট্টোপাধ্যায়  

শান্তিনিকেতনে আমি গিয়েছি মাত্র দু’বার। যদিও প্রথম দর্শনেই শান্তিনিকেতন আমায় মুগ্ধ করেছিল, তবুও বেড়াতে সেখানে কখনওই গিয়ে উঠতে পারিনি। বরং দু’বার গিয়েছি কাজের সূত্রে। ফলে সারাদিনই জ্যামপ্যাক্ট শ্যুটিং থেকেছে। সেইসব শেষ হলে বিকেলে হয়তো বা টুকটাক কেনাকাটার করার সুযোগ পেয়েছি। তবু শান্তিনিকেতনে চুটিয়ে কেনাকাটার সুযোগ আমার হয়নি বললেই চলে। তাই বলে শান্তিনিকেতনী জিনিসের সঙ্গে আমি যে অপরিচিত, তা নয়। বিভিন্ন মেলায় এখন শান্তিনিকেতনের স্টল থাকে। সেইসব স্টল ঘুরে যখনই শান্তিনিকেতনের আঁকা ছবি দেখেছি, সংগ্রহ করেছি। এছাড়া শান্তিনিকেতনের ব্যাগ আমার ভীষণ প্রিয়। কখনও তাতে আঁকা থাকে, কখনও সেলাই থাকে, কখনও বা বাটিকের কাজ করা থাকে, আবার কখনও শুধুই খেসের কাপড়ে তৈরি হয় সেই ব্যাগ। একটা অন্য ধরনের মাধুর্য আছে এই ব্যাগে। যেমন চামড়ার ওপর বাটিক করা পার্স, মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ লেদারের তৈরি ব্যাগ এগুলো আমার বিশেষ পছন্দের। 
দেখলে আর ছাড়তে পারি না, কিনে ফেলি। আর এই ছাড়তে না পারার নেশায় কত যে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ জমেছে, তা একহাতে গুনে শেষ হবে না। তবে আমি খুব একটা সাইডব্যাগ ভালোবাসি না। মনে হয় আমি বুঝি ওগুলো ঠিক ক্যারি করতে পারি না। খেস জিনিসটাই আমার দারুণ পছন্দ। তাই খেসের ব্যাগ ছাড়াও জ্যাকেট, শাড়ি ইত্যাদি অনেক কিনেছি। খেসের, এমনকী বাটিকেরও এক ধরনের রিভার্সেবল জ্যাকেট পাওয়া যায়। ওগুলোও আমার খুব প্রিয়। একই জ্যাকেট কিন্তু তারই মধ্যে রূপ বদল! এই ধরনের জ্যা঩কেট আমি সবরকম আউটফিটের সঙ্গে পরতে পারি। স্কার্ট, জিন্স, লেগিংস সবের সঙ্গেই এই জ্যাকেট মানানসই। আমাদের স্টুডিওতে এক দিদি আসেন এইসব জিনিস নিয়ে আর আমি টপাটপ কিনে ফেলি। শান্তিনিকেতনে কেনাকাটার স্মৃতি বলতে একবারের কথা আলাদা করে বলতে হয়, আমাদেরই সহ অভিনেতা বাদশা মৈত্রর একটা দোকান আছে শান্তিনিকেতনে। সেখানে গিয়ে ঘর সাজানোর নানারকম জিনিস কিনেছিলাম। ঘর সাজানো আমার অন্যতম প্রিয় শখ, নেশা বললেও ভুল হবে না। তাই ডোকরার নিক-ন্যাক দিয়ে ঘর সাজালে একটা ভিন্ন চিত্র তৈরি হয়। তাতে আমার অতি চেনা ঘরটাও যেন নতুন হয়ে ওঠে। আমি সেটা দেখার জন্যই নব নব রূপে ঘর সাজাই। এছাড়াও ডোকরার গয়না, বালা, দুল ইত্যাদিও ভালো লাগে। শাড়ি বলতে গেলে কাঁথা স্টিচের শাড়ি পছন্দ, কিন্তু আমার শুধু দেখতেই ভালো লাগে। পরতে ততটা নয়। একটু ভারী লাগে বলে কিনিনি কখনও।      

8th     May,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ