বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

অস্কারের দৌড়ে 
বাঙালি কন্যে

অস্কারের মনোনয়ন তালিকায় থাকা অ্যানিমেশন ছবি ‘পাজ ইন বুটস দ্য লাস্ট উইশ’-এ প্রমিতা মুখোপাধ্যায় কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

ছোট থেকেই আঁকতে ভালোবাসত মেয়েটি। রং-তুলির ক্যানভাসে ধরা থাকত রাগ, অভিমান, আনন্দ। সেই ক্যানভাসই যে তাকে অস্কারের মঞ্চে পৌঁছে দেবে তা ভাবেননি প্রমিতা মুখোপাধ্যায়। অস্কারের ঘোষণা আসন্ন। চলতি বছরে মনোনয়ন তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অ্যানিমেশন ছবি ‘পাজ ইন বুটস দ্য লাস্ট উইশ’। সেই ছবিতে অ্যানিমেশনের কাজ করেছেন প্রমিতা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর 
স্বামী, আরও এক বঙ্গসন্তান 
প্রদীপ্ত সেনগুপ্ত। 
‘আমি ছোট থেকেই ছবি আঁকতাম। কার্টুনে খুব আগ্রহ ছিল। সেটা আমার বাবা, মা লক্ষ্য করেছিল। পরবর্তীকালে এই দিকে কেরিয়ার তৈরি করতে, কাজে উৎসাহ দেন ওঁরা। ছাত্রী হিসেবেও ভালো ছিলাম। বাবা ভেবেছিলেন, নতুন জিনিস করতে চাইছে করুক। কেন করবে না? বাবা খুবই উৎসাহ দিয়েছিলেন। সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ’, বলছিলেন প্রমিতা। যদিও তাঁর এই সাফল্য বাবা দেখে যেতে পারেননি। সে আক্ষেপ রয়েছে। তবে নিজের মতো করে মন ভালো রাখার রসদও জোগাড় করেছেন। ‘আমার বাবা ২০২০-তে মারা গিয়েছেন। ক্যান্সার হয়েছিল। এখন শুধু মা আছেন। আমি এক মেয়ে। বাবা এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু এই ছবিটার স্ক্রিন ক্রেডিটে আমি বাবার নাম শেয়ার করতে পেরেছি— ‘প্রমিতা প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়’। সেটা ভেবে অন্তত ভালো লাগে। সে কারণেই এটা আরও স্পেশাল’, অনুভূতি ভাগ করে নিলেন প্রমিতা। 
আদিত্য অ্যাকাডেমি স্কুলের এই প্রাক্তনী অ্যানিমেশন নিয়ে ডিপ্লোমা করার পর কাজ শুরু করেন। ২০০৭-এ ১১ মাসের ইন্টার্নশিপ পেয়েছিলেন অ্যানিমেশন স্টুডিও মুম্বইতে। পেশাদার জীবনের সেই শুরু। এখনও এই পেশায় মহিলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। ‘আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন সংখ্যা আরও কম ছিল। এখন একটু ভালো পরিস্থিতি। তাও অনেকটা পথ যেতে হবে। ৫০-৫০ হতেও অনেক দেরি আছে’, স্পষ্ট বললেন শিল্পী। পুরুষ আধিপত্যের পেশায় মহিলা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কখনও সমস্যায় পড়েছেন? প্রমিতার কথায়, ‘মেয়ে হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেক অসুবিধের সম্মুখীন হয়েছি। ধরুন, দলে আমি একা মেয়ে। বাকি ১৫ জন ছেলে। অ্যাডজাস্ট করতে অসুবিধে হয়। কোনও কথা জোর দিয়ে বলতে সমস্যা হয়। কোনও লিডারশিপ বা ম্যানেজারের স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করলে লোকে ভাবে, ও মেয়ে, ওকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরতেই হবে। মেয়েটিকে আগে ছেড়ে দিতে হবে। কাজে বেশি সময় দিতে পারবে না। এটা সত্যি নয়। কিন্তু লোকে এরকম ভাবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি খুব কঠিন। এটা ‘হোয়াইট কলার জব’ নয়। সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, কাজের সময়ের কোনও ঠিক থাকে না।’
শুধু মহিলা হিসেবে নয়। অ্যানিমেশনকে পেশা করে যে এগিয়ে যাওয়া যায়, ভারতে এখনও এই ধারণা ততটা প্রচলিত নয় বলেই মনে করেন প্রমিতা। তিনি অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, ‘আমাদের দেশে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। কিন্তু সুযোগ কম। এখানে ভিএফএক্স ইন্ডাস্ট্রি এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই ছবিটার মতো অ্যানিমেশনে কাজের সুযোগ এখনও ভারতে অনেক কম। স্টুডিও অনেক কম রয়েছে। আমরা সিনেমাহলে গিয়ে অ্যানিমেশন ছবি দেখি না। কারণ তাতে আর্থিক লাভ হয় না। সে কারণেই এক্সপোজার কম বললাম। তাও বলব, আমি যখন শুরু করেছিলাম এটা যে পেশা হতে পারে সেটাই লোকে বুঝত না। এখন তবুও কিছুটা বুঝতে পারে।’ 
পেশাদার প্রমিতার আরও একটা অনুষঙ্গ রয়েছে। তা হল পারিবারিক অনুষঙ্গ। স্বামীও এক পেশায় রয়েছেন। কখনও ইগো ক্ল্যাশ হয়নি? এবার হেসে ফেললেন। বললেন, ‘আমি আর প্রদীপ্ত পড়াশোনা করেছি একসঙ্গে। একে অপরের স্ট্রাগল দেখে বড় হয়েছি। কখনও ইগো-র সমস্যা হয়নি। তবে আমরা সাধারণত একই প্রজেক্টে কাজ করি না। এই ছবিটার কথা আলাদা।’ 
অস্কার জয় হবে কি না, তা এখনও অজানা। কিন্তু দৌড়ের ওই মঞ্চে যে পৌঁছনো গিয়েছে, এই বা কম কী? প্রমিতাকে দেখে, তাঁর লড়াইয়ের কথা পড়ে যাঁরা এই কাজে উৎসাহী হবেন, তাঁদের জন্য কোনও পরামর্শ? ‘আমি যদি ১৫ বছর আগে অত স্ট্রাগল পেরিয়ে অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করতে পারি, এখন যদি কেউ এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চায় নিশ্চয়ই পারবে। ধৈর্য থাকতে হবে, কাজটা ভালোবাসতে হবে। চাকরি করছি মাইনে পাওয়ার জন্য, এটা ভাবলে মুশকিল। এটা তো ক্রিয়েটিভ জগৎ। সেখানে দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে চার, পাঁচ, ছয়, সাত— যা খুশি হতে পারে’, আত্মবিশ্বাসী শোনাল প্রমিতার গলা। 

 

11th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ