বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

নিজেকে প্রমাণ 
করার লড়াই 

নতুন কিছু করার চেষ্টা মেয়েদের চিরকালের। সমাজের অনেক কটাক্ষ সত্ত্বেও মহিলারা পিছপা হন না। এমনই এক লেখিকা ও কর্পোরেট প্রোগ্রাম ম্যানেজার আশিসা চক্রবর্তী। তাঁর সাক্ষাৎকারে কমলিনী চক্রবর্তী।

মহিলাদের প্রথা ভাঙার লড়াই আজ নতুন নয়। রাজিয়া সুলতানার কথা ভাবুন। সেই সময় একজন মহিলার রাজপাট সামলানো তো মুখের কথা ছিল না, কিন্তু রাজিয়া তা করে দেখিয়েছিলেন। কথাগুলো বলছিলেন কর্পোরেট প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও লেখিকা আশিসা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘আমরা মেয়েরা সবসময় নতুন কিছু করতে চাই। নিজেদের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে মেয়েরা কখনও ভয় পায় না। তবু সমাজে তাদের জন্য বিভিন্ন বাধা উপস্থিত। যুগ যত এগিয়েছে মেয়েরাও নিজেদের ততই পারদর্শী করে তুলেছে। অথচ সমাজের চোখে এখনও তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক!’ এই ধারণা যতদিন না ভেঙে দেওয়া যাচ্ছে ততদিন নারী উন্নয়ন কঠিন। ভিন্ন পেশায় মহিলাদের অনায়াস বিচরণ কতটা সম্ভব? কোথায় তাঁরা বাধাগ্রস্ত হন বারবার? এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বললেন  আশিসা। 

কর্পোরেট জগতে একজন মহিলার সুনাম অর্জন করা, নিজের দক্ষতা প্রমাণ করা কতটা কঠিন? 
কর্পোরেট জগতে মেয়েদের বিচরণ খুব বেশিদিনের ব্যাপার নয়। পুরুষের আধিপত্ব ছিল এই বিভাগে। ফলে মেয়েরা যখন থেকে এখানে আসতে শুরু করে, পুরুষদের মধ্যে একটা হারাই হারাই ভাব জেগে ওঠে। শহরে এই চিত্র যত না প্রকট, গ্রামাঞ্চলে তার চেয়ে অনেক বেশি। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কর্পোরেট অফিসগুলো মহিলাদের কাজ করার যোগ্যই ছিল না। লীনা মালহোত্রা নামে এক মহিলা প্রত্যন্ত গ্রামে একটি ফ্যাক্টরি ভিজিটে গিয়ে আবিষ্কার করেন মহিলাদের ব্যবহার্য শৌচালয়ের ব্যবস্থাই নেই সেখানে। অফিসের বাকি কর্মীরা সকলেই পুরুষ। ফলে নিজের অসুবিধের কথা কাকে বলবেন লীনা? তবু একজনকে জানালেন বাধ্য হয়ে। তিনি তখন গ্রামের প্রধানের বাড়ি নিয়ে গেলেন লীনাকে। সেবার এইভাবেই শেষরক্ষা হয়েছিল।

সময়ের সঙ্গে মার্কেটিং দুনিয়ায় মেয়েদের গতিবিধি কতটা স্বচ্ছন্দ  হয়েছে? 
মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন স্তর থাকে। তার মধ্যে সেলস গার্ল যত বেশি, একটু উচ্চপদে মহিলাদের অনায়াস বিচরণ ততটা নয়। পরিস্থিতি যে একেবারে বদলায়নি তা নয়। তবে প্রতিবন্ধকতা থেকেই গিয়েছে। যেমন ‘কর্পোরেট ল্যাডার’ বেয়ে যেসব মহিলা একটু উচ্চতায় ওঠেন, তাঁদের মেনে নিতে পুরুষ সহকর্মীদের ভীষণ অসুবিধে হয়। আর কোনও মহিলাকে দপ্তরের প্রধান হিসেবে বসানো হলে তো কথাই নেই। অসহযোগিতার স্রোত বয়ে যায়। তার অধস্তন পুরুষকর্মীরাও তাকে বিপাকে ফেলার জন্য ফন্দিফিকির খুঁজতে থাকে। ফলে কর্মস্থলের অনায়াস পরিবেশ মেয়েরা এইসব ক্ষেত্রে কখনওই পায় না। এবং এই পরিবেশটা কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে খুব একটা বদলায়নি।

পঞ্চাশ বছর আগে কি মেয়েদের দপ্তরের প্রধান হিসেবে আদৌ ভাবা হতো?
না, ওইটুকুই যা বদলেছে। তবে তার জন্য মেয়েদের লড়াইও তো কম করতে হয়নি।

কীরকম?
পড়াশোনার দিকে নিজেদের তুখড় করে তুলতে হয়েছে। ডিগ্রির পর ডিগ্রি বাড়াতে হয়েছে। স্রেফ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মহিলারা আজও কিন্তু কর্পোরেট ল্যাডারের মাথায় উঠতে পারে না। তার জন্য এমবিএ ডিগ্রি লাগে, বিদেশি তকমা লাগে, ফিরিস্তি শুরু করলে শেষ হবে না। আর এই যে অ্যাকাডেমিক ট্রেনিংয়ের উপর এত জোর দেওয়া হয় তাতে আখেরে ক্ষতিও মেয়েদের কম হয় না। বই পড়া বিদ্যা অর্জনে এতটাই মগ্ন থাকে তারা যে অভিজ্ঞতায় ভাটা পড়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। 

কিন্তু পড়াশোনাটা তো খুবই জরুরি।
একশোবার। এই যে মেয়েদের প্রথা ভাঙার প্রচণ্ড লড়াই তা সম্ভবই হতো না পড়াশোনা ছাড়া। তবে পরিসংখ্যান বলে মহিলাদের বই পড়া বিদ্যা যত বেশি, হাতেকলমে কাজের সাফল্য ততটা নয়। এটা কিন্তু আমাদের সমাজেরই গলদ। মেয়েদের যদি নিজ যোগ্যতায় কাজ করার অধিকার থাকত তাহলে তাদের হাতেকলমে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার পাল্লাও ভারীই হতো। প্রতি পদে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে হয় বলেই মেয়েদের হাতেকলমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জায়গাগুলো শ্লথ হয়ে যায়। ‘টেকনিকালি কারেক্ট’ থাকার জন্য বই পড়ে, ডিগ্রি বাড়িয়ে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা করে মেয়েরা।

পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কোথায় আলাদা?
পুরোটাই আলাদা। একজন পুরুষ একেবারে নীচের স্তর থেকে কাজ শুরু করলেও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতে অনেকটা উপরে উঠতে পারে। তারপর তার ডিগ্রি আর পড়াশোনা দিয়ে সে বাকিটা সামলে নেয়। কিন্তু একজন মহিলাকে প্রথমেই ডিগ্রি আর পড়াশোনার বহর দেখাতে হয়। একেবারে নিচু পদে যেসব মহিলা সেলসের কাজ শুরু করে, তারা বহু বছর বাদেও একই পর্যায়ে থেকে যায়। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পুরুষের সমকক্ষ আর হওয়া হয় না। তফাত এখানেই।

ফেমিনিজম বা নারীবাদের গুরুত্ব আজকের সমাজে কতটা?
এই ধারণা সংক্রান্ত প্রভাব সর্বত্র পড়েছে, তা তো নয়। চিত্রটা শহরে ও গ্রামে ভিন্ন। গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের নারীবাদ বিষয়ে তেমন স্পষ্ট ধারণা আজও তৈরি হয়নি। তারা মনে করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ের নামই নারীবাদ। শহুরে শিক্ষিত মহিলারা নারীবাদ বিষয়ে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। নারী দিবস বিষয়টা নিয়ে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করেন রীতিমতো। কত সাহিত্য তৈরি হয় এর ভিত্তিতে। কিন্তু নারীবাদ যে একটা চেতনা, নিজের কাছে নিজেকে স্বাধীন করে তোলার অঙ্গীকার— এই বোধ মেয়েদের মধ্যে কতটা প্রবল তা আলোচনার বিষয়। 

পুরুষদের মনে নারীবাদের গুরুত্ব...?
খুব অদ্ভুত একটা পর্যায়ে আটকে আছে। সমাজের খুব অল্প সংখ্যক পুরুষ হয়তো বিষয়টার গুরুত্ব সত্যিই বোঝেন। বাকিদের মধ্যে দুটো ভাগ। এক ভাগের কাছে নারীবাদ একটা উগ্রতার নাম। মেয়েদের নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে গলা ফাটানোর নাম। আর অন্য ভাগটি এই গোটা বিষয় সম্বন্ধে প্রচণ্ড উদাসীন। নারী দিবস বা নারীবাদের কথা উঠলে তারা তাচ্ছিল্যের চোখে তাকায় আর মুচকি হাসে। নারীকে তার সঠিক মর্যাদা দেওয়ার মধ্যেই যে আসল পৌরুষ লুকিয়ে রয়েছে, তা আমাদের সমাজের অধিকাংশ পুরুষই বোঝে না। 

আবারও মেয়েদের পেশাগত দিক বিচার করা যাক। কর্পোরেট দুনিয়ায় মহিলাদের বিচরণ কতটা অনায়াস হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে করার উপর আসলে কিছুই নির্ভর করে না। তবে পরিসংখ্যান বিচার করলে চিত্রটা শিউরে ওঠার মতো। মার্কেটিংয়ে মহিলাদের অস্তিত্ব ৩০ শতাংশ। উচ্চপদে  আসীন মহিলা মোটামুটি ২৭ শতাংশ। আর অন্ত্রপ্রনর হিসেবে মহিলা আমাদের দেশে খুবই কম। যারা ব্যবসা করে তারাও ‘স্টার্ট আপ’ স্তরেই সীমাবদ্ধ। ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য চালানো বা ‘বিজনেস মোগল’ হয়ে ওঠা এখনও মেয়েদের স্বপ্নেরও অতীত। ফলে মহিলাদের লড়াই এখনও কঠিন।

4th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ