হাত দু’টি যেন বিরাম পায় না তাঁর। বলা ভালো, তিনিই তাদের বিরাম দেন না। ঈশ্বরকে সাকার করেন অদিতি চক্রবর্তী, করেন আরও অসংখ্য কাজ। শারদোৎসবের আগে তাঁর সঙ্গে কথায় অন্বেষা দত্ত।
কোথাও মাতৃমুখ, কোথাও বা বৃক্ষ গুল্ম লতা ফুল। বেশ কয়েক বছর আগে অদিতি চক্রবর্তী-র ‘আঁকিবুকি অদিতি’ ব্র্যান্ডে চোখে পড়েছিল তাঁর নিজের হাতে তৈরি করা মাটির এমনই বড় বড় নেকপিস। প্রত্যেকটি নিজ গুণে স্বতন্ত্র। ফুল, লতা পাতার চেনা প্রতিচ্ছবি। কিন্তু তার মধ্যে কেউ যেন ঢেলে দিয়েছে অপার ভালোবাসা। ফুল, লতা পাতার নকশা তো অনেকেই করেন। অদিতির কাজে ছিল আদতে শিল্পীর ছাপ। চেষ্টা করলেও এক ফোঁটা খুঁত যেন খুঁজে বের করা যাবে না। এই ধরুন মাধবীলতা বা অপরাজিতা, নিদেনপক্ষে সাধারণ জবা...তাঁর হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ পেত সব কিছু, স্থান করে নিত অসংখ্য অনুরাগীদের গলায়। ক্রমশ তাঁর তুলির ছোঁয়া পেল পোশাকও। তিনি খুললেন নিজস্ব অ্যাপারেল সেকশন। মাটির গয়নার সঙ্গে এল ধাতব গয়নাও।
মায়ের ডাক
মাটির অনেক কাছাকাছি থাকা একটা মানুষ। আমরা অনেকেই গাছ ফুল বৃষ্টি ভালোবাসি। কিন্তু অদিতি হয়ে উঠেছেন প্রকৃতির কন্যা। আর সে প্রকৃতিই হয়তো একদিন তার অন্তরে ডাক পাঠিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা কোনও এক মুহূর্তে হয়তো ভেবেছিলেন মা দুর্গার মাতৃমূর্তিও এই মেয়ের হাতে রূপ পাক। সে মাতৃমূর্তি দেখে যেন শ্রদ্ধায় চোখ অবনত হয় এক নিমেষেই— অদিতির নিজের মনে ছিল শুধু সেই ভাবনা। সেই মন্ত্র যেন তাঁকে চালনা করেছে মায়ের এমন রূপ তৈরিতে, যাকে দেখে আঁখি না ফিরে। পাশাপাশি মায়ের মণ্ডপেও যে কারুশিল্পের ছোঁয়া থাকে, তাতেও অদিতির হাতযশ যোগ করেছে এক অন্য মাত্রা।
অথচ কখনও ভাবেননি মূর্তি গড়া বা মণ্ডপসজ্জার মতো কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন। টুকটাক হাতের কাজ করতেন অনেক দিনই। সময় আর পরিস্থিতি এই শিল্পীকে টেনে এনে দাঁড় করায় সৃষ্টির কাছে। তাঁর যেন স্রষ্টা হওয়া ছাড়া কোনও পথ ছিল না। কারণ সৃষ্টি ছাড়া তিনি বাঁচতেই পারেন না। সৃষ্টি করার অদম্য ইচ্ছা তাঁকে এক মুহূর্ত স্বস্তিতে বসে থাকতে দেয় না। বসে থাকা তাঁর কাছে শাস্তির মতো, বলেন অদিতি।
যখন নেকপিস তৈরি করতেন, তখন থেকেই তাঁর ঈশ্বরের সঙ্গে ওঠাবসা! দেবদেবীর মুখের নিখুঁত ডিটেলিং তিনি তুলে আনতেন নেকপিসে। অদিতি বলেন, ‘মাতৃমূর্তি গড়ার পিছনে একটা অসম্ভব ভালো লাগা রয়েছে।’ প্রথম দু’বছর মূর্তি গড়ার কাজ পুরোটা নিজে হাতে করেননি। পরে মনে হয়েছিল, তিনি তাঁর মতো করেই মূর্তি গড়তে চান। যদিও সাহায্য সবসময়ই লাগে। খড় বাঁধা, মাটি লেপা যথেষ্ট পরিশ্রম ও সময়সাপেক্ষ কাজ। দক্ষতা তো অবশ্য। অদিতির কথায়, ‘মাটির গঠন হয়ে যাওয়ার পরে মুখ ও তার পুরো অবয়বের যাবতীয় কিছু আমি নিজে হাতে করি। মা দুর্গাকে গড়ে তোলার যে আনন্দ, তা ভাষার প্রকাশ করা যায় না। এই অনুভূতিটা আমার কাছে ভীষণ লোভনীয় বলতে পারেন। প্রতি বছর নানা আঙ্গিকে মাকে রূপদান করা— এ যেন এখন নেশার মতো। কোনও বছর করতে না পারলে মনে হবে আমি আর ভালো নেই।’
কীভাবে কাজ
থিমপুজোয় অনেকরকম ভাবনা থাকে আজকাল। মায়ের মুখ নিয়ে নানাধরনের পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়। অদিতি বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন? শিল্পী বললেন, ‘অনেকে এমন কিছু করে ফেলেন বা করতে যান, যাতে মাকে আর মা বলে মনে হয় না। এই ধারণাটা অনেক মানুষের মধ্যে কাজ করে আজকাল। আমার ঐকান্তিক চেষ্টা থাকে যে আমার করা সাজসজ্জা সমৃদ্ধ মণ্ডপে ঢুকে বা আমার গড়া মাতৃমূর্তি দেখে দর্শক যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাতজোড় করে দাঁড়ায়। ভক্তি যেন উথলে পড়ে। মা যেন মা রূপেই থাকেন, কারণ এটাই আমরা সবাই দুর্গাপুজোয় দেখতে ভালোবাসি।’
২০১৩ থেকে দুর্গাপুজোর কাজে জড়িয়ে পড়া। হাতেকলমে কাজ করতে করতে শিখেছেন তিনি। প্রথম কাজের নানা ভুল ক্রমশ শুধরে নিয়েছেন। আর এই পথ চলার সঙ্গেই বেড়েছে তাঁর অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাস। কাজই তাঁকে শিখিয়েছে সবটা। শতরকম বাধা বিঘ্ন সামলে সহশিল্পীরাও পাশে থাকেন। কোনও সাহায্য দরকার হলে তাঁদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সহযোগিতা পান বলে জানালেন অদিতি। যে সব পুজো কমিটি বা ক্লাবের সঙ্গে কাজ করেন, তারাও যথেষ্ট সাহায্য করে। কম বাজেটে ভালো কাজ কীভাবে করা যায়, সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন তিনি। অদিতি বলেন, ‘মাটি খোঁড়া থেকে শুরু করে একটা জায়গায় পূর্ণ মণ্ডপ হয়ে ওঠা, পুরোটা তত্ত্বাবধান এবং সক্রিয়ভাবে করতে ভালোবাসি। এজন্য বেশি কাজ নিতে পারি না। বছরে একটা কাজই করি সাধারণত। এবার অবশ্য দুটো করছি। কাশী বোস লেন এবং বেহালা ক্লাব।’
মাটির কাজে হাতেখড়ি তাঁর সেভাবে হয়নি। ‘ক্লে জুয়েলারি করতে করতে যখন প্রথম মাটির ছোঁয়া পেলাম, তখনই যেন মনে হয়েছিল এ দিয়ে আমি পৃথিবীর সব কিছু বানিয়ে ফেলতে পারি। এত আনন্দ আর কিছুতে নেই। বিয়ের পরেই এই যাত্রার শুরু। আমার ছেলে স্পেশাল চাইল্ড। গোড়ায় ওর জন্য কোথাও বেরতে পারতাম না। একটু একটু করে নিজের কাজ আর ওর যত্ন মিলেমিশে গেল। নিজের সঙ্গেই শেখা শুরু হল আমার। ২০০৯ সাল থেকে ক্লে নিয়ে কাজ করছি। এক্ষেত্রেও একটার পর একটা করতে করতে শেখা। এরপর প্রতিমা গড়ার ভাবনা আসে। মূলত মায়ের মুখ তৈরিতে আগ্রহ জাগে। বাকি যত যা কাজ জুয়েলারির ছোট মূর্তিতে যেমন করতাম, সেটাই করতে করতে শিখলাম। প্রযুক্তি জানতাম না। হাতেকলমে করতে করতেই শেখা।’
চন্দননগর থেকে নিজের ছেলেকে নিয়ে যখন কলকাতা শহরে চলে আসেন চিকিৎসার জন্য, তখন বেশ কিছুটা সময় ঘরবন্দি হতে হয়েছিল অদিতিকে। কিছুটা উদ্বেগ কিছুটা হতাশা সব মিলে জীবন খানিক নেতির দিকে বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু তিনি কখনও মনের মধ্যে নেতিকে চেপে বসতে দেননি। পরিস্থিতি কঠিন, তাকে মেনে নিয়েই কীভাবে ভালো থাকা যায়, সে চিন্তা করতেন। নিজের যেসব শখ ছিল, সেগুলোকেই আবার নাড়াচাড়া করতে শুরু করেন। এইভাবেই একদিন মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ার সূত্রপাত। ক্র্যাফটওয়ার্ক বা ক্লে ওয়ার্ক— এগুলো তাঁকে বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়েছিল। সেই সময় এক পরিচিত বন্ধু তাঁকে জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ করার অফার দেন। ছোট পুজো, কিন্তু থিম ভাবনায় সাজাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। অদিতির সৃষ্টিশীলতা তাঁদের মুগ্ধ করেছিল।
দশভুজা নই
মৃত্তিকায় দশভুজার আদল যাঁর হাতে প্রাণ পায়, তিনি নিজেও তো দশভুজা। একা হাতে এত কিছু সামলান কীভাবে? অদিতি বলেন, ‘কেউ কীভাবে নিজের গণ্ডি স্থির করবে, সেটা তার উপরেই নির্ভর করে। আমার প্রধান প্রায়োরিটি আমার ছেলে, সংসার। আমি ওকে পাশে রেখে যে কাজটা করতে পারি, সেটাই করি। সেইজন্যই আমার ওয়ার্কশপ বাড়ির পাশে। যে সময়টুকু ছেলেকে রেখে যাই কাজ করতে, সেসময় আমার বাবা-মা পুরোটা দেখেন। ওঁরা না থাকলে কিছুই করতে পারতাম না। আমার দিদি জামাইবাবু ওদের মেয়ে সকলে আছে পাশে। আমার স্বামী আছেন। বছরে তিন মাস পুজোর কাজ করি। ওই সময়টা খুব চাপ যায়। তবে পরিবার পাশে আছে বলেই সেটা করতে পারি। কিন্তু নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রে লোকে এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি লাভ করে। আমি পুজোর কাজে মন দিই বলে জুয়েলারি বা অ্যাপারেল সেকশন-এর কাজটার সঙ্গে আপস করতে হয়। যতটা সময় দেওয়া উচিত, সেটা হয়ে ওঠে না। নিজে সবটা প্যাশন থেকে শুরু করেছিলাম তো। সবটা ব্যবসার চোখ দিয়ে দেখতে চাই না। তাই আমার কোনও আক্ষেপ হয় না।’
তবে তিনি নিজেকে দশভুজা বলতে নারাজ। কেন? তাঁর কথায়, ‘দশভুজার মতো ক্ষমতা আমার নেই। তাহলে খুব সুন্দর রেঁধেবেড়ে বরকে পাত পেড়ে খাওয়াতে পারতাম। খুব ভালো লাগত। কিন্তু এই খামতি পূরণ করতে পারিনি।’ সংসারকে গুরুত্ব দিতে গেলে কাজের ক্ষতি হয় না? ‘রান্না ছাড়া সব কিছু করি। বাকি সব কাজে ভীষণ খুঁতখুঁতে কি না! নিজে না করলে শান্তি পাই না। স্বামী অসম্ভব সহযোগিতা করেন। এত ফ্রি স্পেস দেন, ভাবা যায় না। নিজের মতো আরামে কাজ করতে পারি। কিন্তু প্রায়োরিটি আমার সংসার। কাজের জায়গার ইঁদুর দৌড়ে আমি নেই। ভালোলাগাটুকু থাকলেই আমি সন্তুষ্ট। সবাই তো জীবনে সব কিছু পায় না। আমি তো অনেক কিছু পেয়েছি, যেটা ভগবান স্বয়ং আমাকে দিয়েছেন। এ কি কম কথা! সেটা তো যত্নে রাখবই, তাকে অবহেলা করব কী করে? আর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও জীবনের সবদিক নিখুঁত হয় না, যেটুকু খুঁত রইল, তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করি না।’
সন্তান, গাছের টান
ভালো লাগা তো অনেক কিছু নিয়ে। গাছের যত্নও করেন খুব মন দিয়ে? ‘হ্যাঁ গাছ খুব ভালোবাসি। নানারকম এক্সক্লুসিভ গাছ সংগ্রহ করতে করতে এখন এত বড় হয়ে গিয়েছে সবটা, যে অনেকটা সময় দিতে হয়। কিন্তু নিজেই করি যত্ন। ভালো লাগে। বসে থাকতে পারি না। ধরুন কোনও রবিবার সারাদিন কাজের পরে বিকেলে কোনও কাজ নেই, তখন মনে হয় কিছু একটা করতে হবে। ওয়ার্কশপ থেকে কাজ সেরে ফিরে ছেলেকে সময় দিই। গান শুনতে শুনতে গাছের পরিচর্যা করি। ছেলেও গান শুনতে খুব ভালোবাসে। আমি আর আমার স্বামী যেভাবেই হোক, সময় বের করে ওকে দিই। ও তো কিছু চাইতে পারে না। তাই আমরা সবাই খুব সচেতন থাকি ওকে নিয়ে। ওর রুটিন যেন কোনওভাবে বিঘ্নিত না হয়। সেটার চেষ্টা করি আমরা সবাই। এইভাবেই ব্যালান্স করছি।’
নৃত্যের তাল, তুলির ছোঁয়া
শৈশব কেটেছে কাটোয়ায়। তারপর চন্দননগরে। এখন তিলোত্তমায়। অদিতির কথায়, ‘কলকাতা শিফট করার পর মাথায় ছিল একটাই ভাবনা। নিজেকে ভালো রাখলে তবেই আমি ছেলেকে ভালো রাখতে পারব। এই ভাবনাটা থেকেই কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখি। ভালোবাসি নাচও। ছোটবেলা থেকে কত্থক শিখতাম। তারপর ভরতনাট্যম। মফস্সলে আমার সময়ে ওড়িশি শেখানোর মতো কাউকে পাইনি। কলকাতায় এসে ক্লাসিকাল ওড়িশিতে ভর্তি হয়েছিলাম। চার বছর শিখেছি। স্বামী খুবই উৎসাহ দিতেন। ভালো এগচ্ছিল। কিন্তু কোমরে একটা সমস্যা দেখা দিল। ছেলেকে সবসময় কোলে তুলতে হয়, সেই থেকে নার্ভে জটিলতা। এই সমস্যার ফলে আর নাচতে পারি না। তবুও মন আমার নাচে। সর্বক্ষণ নাচতে ইচ্ছে করে। ক্লাসিকাল ফর্মে এখন নাচতে আমার সমস্যা আছে ঠিকই, তাই এক্সারসাইজ করছি। বাড়িতে রবীন্দ্রনৃত্যে আনন্দ খুঁজে নিই। অবকাশ পেলেই। এখনও আশা রাখি এক্সারসাইজ করে সুস্থ হয়ে আবার ওড়িশি নাচে ফিরতে পারব।’
আর আঁকিবুকি? ‘প্রশিক্ষণ বলতে সেভাবে কিছু ছিল না। একবারে ছোটবেলায় মাস্টারমশাইয়ের (বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়) কাছে ছবি আঁকা শিখেছি। সিক্স-সেভেন পর্যন্ত। তারপর পড়াশোনার চাপে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নিজে কখনও ছবি আঁকা ছেড়ে দিইনি। নাচ, আঁকা দুটোই খুব প্রিয় হবি আমার। নিজেকে ব্যক্ত করার এত ভালো মাধ্যম আর কিছু ছিল না।’
অদিতি নিজে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখতে ভালোবাসতেন। ছেলে তখন ছোট। তাকে কোলে করে যেতেন। বিভিন্ন জায়গার শিল্পশৈলী তাঁর চোখ টানত। সেই থেকে নিজে হাতে সেসব কাজ করার ইচ্ছে বাড়তে থাকে। প্রতিদিন কিছু না কিছু বানানো নেশা হয়ে দাঁড়াল। ওই মণ্ডপ ঘুরতে ঘুরতেই মনে হয়েছিল, এমন একটা গোটা মণ্ডপ যদি সাজাতে পারতাম! তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন ঈশ্বর। জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ করার প্রস্তাব পেতেই রাজি হয়ে যান অদিতি। যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁর পরিবার এই বিষয়টি নিয়ে ততটা নিশ্চিত ছিল না। স্বামী কিছুটা আশঙ্কায় ছিলেন, এসব ক্লাব ইত্যাদিতে জড়িয়ে উল্টে খারাপ কিছু না হয়। যতই হোক একলা মেয়ে কতটা পারবে? কোনও বড় শিল্পীর ছাতার তলায় থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতাও অদিতির নেই। আর্ট কলেজের ডিগ্রিও নেই। এসবই ভাবাত তাঁর স্বামীকে। তবু সুযোগটা সাহস করে নিয়েছিলেন অদিতি। ২০১০ সালে সেই কাজ শুরু। সকলের দারুণ লেগেছিল। সম্মানও পেয়েছিলেন। পরপর তিন বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ করেন। বেহালায় চলে আসার পরে আর এক শুভাকাঙ্ক্ষীর মাধ্যমে দুর্গাপুজোয় কাজ করার সুযোগ পেলেন। বেহালার বড়িশা তরুণ তীর্থ। সেখানেও ভয় কিছুটা ছিল মনে, তবে ভালোবাসার জোর ছিল অনেকটা বেশি। সেবার আরও বড় সম্মান আসে তাঁর হাতের মুঠোয়। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৭ সালে শুধু করতে পারেননি, ছেলের অসুস্থতার কারণে। তাছাড়া চাকা গড়িয়েছে শুধু সামনের দিকে।
অদিতির এই পথচলা অনেক মেয়ের কাছে নজির হতে পারে। কী বলবেন তাঁদের? শিল্পী বলেন, ‘আমি মনে করি নানা মহিলার মধ্যে নানারকম সম্ভাবনা। কেউ সাধারণ নয়, প্রত্যেকের মধ্যে কিছু আছে। প্রত্যেকে নিজের ক্ষমতা বুঝে সেটার যত্ন করুক। লেগে থাকাটা খুব দরকার। তাহলেই পায়ের তলার মাটিটা শক্ত হয়। নিজের পরিচিতি তৈরি হয়। হতে পারে সেটা ছোট মাপের। সামান্য কিছু লোকের মধ্যে দাগ কাটল। তাই বা কম কী?’