বিপ্লবী ছেলেদের আগলে রেখেছিলেন মা সারদা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লিখছেন পূর্বা সেনগুপ্ত।
১৯১৭-এর ঝিমঝিম এক সন্ধ্যার কাল, গরাদে মাথা রেখে জেলের মধ্যেই অনশন করেছেন ননীবালা দেবী, বিপ্লবী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিধবা পিসিমা। চারদিকে আন্দোলন আর বিপ্লব। ভারত ছাড়তে হবে ইংরেজকে। স্বামী বিবেকানন্দের জ্বালাময়ী বাণীতে উদ্দীপ্ত বাংলার মানুষ। স্বাধীনতা চাই। কেমন করে জেলে বন্দি হলেন ননীবালা? শ্রীমা সারদা দেবীর শিষ্য রামচন্দ্র মজুমদার সক্রিয় বিপ্লবী ছিলেন। ১৯১৫ সালে তাঁকে বন্দি করে ব্রিটিশ সরকার। বিপ্লবীগণ মুশকিলে পড়েন, কারণ তাঁর কাছে একটি মাউজার রাইফেল আছে। এই রাইফেলটি কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন রামচন্দ্র, সে সংবাদ জানা অন্যান্য বিপ্লবীদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাঁদের আগে ব্রিটিশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ যদি রাইফেলের সন্ধান পেয়ে যায় তবে রামচন্দ্রের ফাঁসি কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু কে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে যাবে, যাকে পুলিশ একেবারে সন্দেহ করবে না! কোনও পুরুষ সদস্যের পক্ষে এই বিপদ কাঁধে নেওয়া সম্ভব নয়। আর মেয়েদের মধ্যে বিপ্লবীদের গুপ্ত ভাষা জানার মতো কেউ নেই। এই দোদুল্যমান অবস্থায় বিধবা ননীবালা এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিলেন। বিধবা হয়েও রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে শাঁখা সিঁদুর পরে উপস্থিত হলেন জেলে। কিন্তু রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করার সময়ই পুলিশের কড়া নজরে ধরা পড়েন ননীবালা। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। চলে অকথ্য অত্যাচার, কিন্তু একটি কথাও তার মুখ থেকে বের করতে পারেনি পুলিশ। উপরন্তু বিনা কারণে তাঁকে বন্দি করা হয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে ননীবালা কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে অনশন শুরু করেন। এই সংবাদে চারদিক উত্তাল হয়ে উঠল। জনমত গেল ননীবালার দিকে। গোয়েন্দা পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি একটু পিছু হটলেন। তিনি ননীবালাকে ডেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন ‘আমরা চাই আপনি আহার গ্রহণ করুন, তার জন্য আপনার যে কোনও ইচ্ছাপূরণ করব।’ বারংবার বলার পর ননীবালাদেবী জানান, ‘আমাকে বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রীর কাছে রেখে দিন। তাহলেই খাব।’ এই কথা শোনার পর গোল্ডি তাকে বলেন এই আবেদনটি কাগজে লিখে দিতে হবে। ননীবালা দেবী তা লিখে দিলেন। কিন্তু গোল্ডি ব্যাপারটা না বুঝে দরখাস্তটি দলা করে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে যা ঘটল তার জন্য ব্রিটিশ গোয়েন্দা পুলিশ গোল্ডি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না! কাগজের দলা ছুঁড়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ননীবালা তাঁর গালে সপাটে চড় কষিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় চড়টি মারতে উদ্যত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীরা তার হাত চেপে ধরে বলে উঠলেন, ‘আরে পিসিমা করেন কী?’ পিসিমা ননীবালা দৃপ্তকণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘ছিঁড়ে ফেলবি তো লিখতে বলেছিলি কেন?’ এই অতুলনীয় তেজের উত্সধারা যে বাগবাজারে অবস্থিত রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রীর তা বোঝার আর অবকাশ থাকে না। এই নারীর কাছে সারদাদেবী কেবল গৃহী বা ভক্ত আদর্শ নন, তিনি বিপ্লবের অগ্নিশিখা। ছাই চাপা আগুন। অবগুণ্ঠনবতী, কিন্তু প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ছিল সেই অবগুণ্ঠনের আড়ালে। সেই দীপশিখা থেকে যে আগুন বিচ্ছুরিত হতো তাতে জ্বলে উঠেছেন অনেক নারী, অনেক পুরুষ।
প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির ছিল তত্কালের বিপ্লবীদের প্রেরণার উত্সভূমি সেখানে বিরাজ করেছেন একজন মৃন্ময়ী, আরেকজন চিন্ময়ী। এক ভবতারিণী, অপর শ্রীমা সারদাদেবী। এ তথ্য প্রমাণে কার কার নাম উল্লেখ করব? শ্রীঅরবিন্দ, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, বাঘাযতীন, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ— আরও অনেকে! আর মেয়েদের মধ্যে সবথেকে বড় উদাহরণ ভগিনী নিবেদিতা। যিনি ভারতের নবজাগরণ তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
সঙ্ঘ গঠনের সময় স্বামী বিবেকানন্দ স্পষ্ট করেই বলেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখি যে সব বিপ্লবীগণ স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে পরে রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ন্যাসী হিসেবে যোগদান করেন, ব্রিটিশ সরকারের কুনজর থাকা সত্ত্বেও শ্রীমা তাঁদের আশ্রয় দান করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেননি। ১৯১৪-এর ২২ এপ্রিল সি.এ চার্লস টেগার্টের একচল্লিশ পৃষ্ঠার নোটের মধ্যে লেখা আছে রাজনীতির সঙ্গে মিশনের কোনও যোগাযোগ নেই, একথা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেননি। স্বামী বিবেকানন্দের অবর্তমানে শ্রীমাই ছিলেন বহু দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অনুপ্রেরণার উত্স, তাঁদের জীবনে শান্ত স্নিগ্ধ মরূদ্যান।
স্বদেশী ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় (১৯০৫-১৯১১) বহু তরুণ বিপ্লবী মঠে যোগদান করেন। অনুশীলন সমিতির যে সব সদস্য শ্রীমায়ের কাছে মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে যোগদান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে দেবব্রত বসু (স্বামী প্রজ্ঞানন্দ), শচীন্দ্র নাথ সেন (স্বামী চিন্ময়ানন্দ), নগেন্দ্রনাথ সরকার (স্বামী সহজানন্দ), প্রিয়নাথ দাশগুপ্ত (স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ), রাধিকামোহন গোস্বামী (স্বামী সুন্দরানন্দ) সতীশ দাশগুপ্ত (স্বামী সত্যানন্দ) ধীরেন দাশগুপ্ত (স্বামী সম্বুদ্ধানন্দ), অতুল গুহ (স্বামী অভয়ানন্দ বা ভরত মহারাজ) উল্লেখযোগ্য। পুলিশের অত্যাচারে যখন প্রিয়নাথ দাশগুপ্তকে স্থানত্যাগ করতে হয়, শ্রীমা তাঁকে বলেছিলেন, ‘ভয় করো না, ঠাকুর সব ঠিক করে দেবেন।’
এই সময় শ্রীমায়ের কাছে বেশ কয়েকজন বিপ্লবী দীক্ষাগ্রহণও করেছিলেন। বিভূতিভূষণ ঘোষ, বিজয়কৃষ্ণ বসু, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, রজনীকান্ত প্রামাণিক প্রমুখর পাশাপাশি ছিলেন যোগেন্দ্র নাথ গুহঠাকুরতার মেয়ে প্রফুল্লমুখী দেবী। বিয়ের আঠাশ দিনের মধ্যে তিনি বিধবা হন। শ্রীমায়ের কাছে গিয়ে জীবনের ধারাই পরিবর্তিত হয় তাঁর। অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লায় তিনি সারদাদেবী মহিলা সমিতি তৈরি করেন। তাঁর উত্সাহে কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালার এক অংশে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা এখনও বর্তমান। এছাড়া ঢাকার আউটশাহি গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শ্রীমায়ের অনুরাগী রাজেন্দ্রভূষণ গুপ্তের কন্যা গিরিজা গুপ্ত শ্রীমায়ের কাছে দীক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি পরে নারী সংগঠন তৈরি করেন।
শ্রীমায়ের সন্তান জ্ঞানানন্দকে নজরবন্দি করে রাখার সংবাদ পেয়ে শ্রীমা ইংরেজ শাসনের উচ্ছেদ কামনা করেছিলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, ‘আহা কীসব চাঁদের ছেলে, দেশের জন্য কতই না দুঃখলাঞ্ছনা ভোগ কচ্ছে।’ ১৯১৭ সালে সাবাজপুর গ্রামের দুই সিন্ধুবালাকে গ্রেপ্তার করে হাঁটিয়ে বাঁকুড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সন্তানসম্ভবা। এই সংবাদ শুনে শ্রীমা শিউরে উঠে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলেন, ‘বল কী ! এটা কী কোম্পানির আদেশ না পুলিশ সাহেবের কেরামতি? নিরাপরাধ স্ত্রীলোকের উপর এত অত্যাচার মহারানি ভিক্টোরিয়ার সময় কই শুনিনি! এ যদি কোম্পানির আদেশ হয় তবে আর বেশিদিন নয় আচ্ছা, এমন কোন ব্যাটাছেলে কি সেখানে ছিল না, যে দুই চড় দিয়ে মেয়ে দুটিকে ছাড়িয়ে আনতে পারত?’ কিছুক্ষণের মধ্যে সংবাদ এল দু’জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই সংবাদ শুনে স্বস্তি পেয়ে শ্রীমা বলেছিলেন, ‘এ খবর যদি না পেতাম তবে আজ রাত্রে ঘুমুতে পারতাম না।’
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণাদাত্রীরূপে শ্রীমায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গভীর। যদিও এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতেই হবে, স্বদেশীর নামে ডাকাতি শ্রীমা পছন্দ করতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘরে-বাইরে উপন্যাসে স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের যে বিচ্যুতি দেখিয়েছেন সে সম্বন্ধে শ্রীমা সারদাদেবী সচেতন ছিলেন। জয়রামবাটীর কিছু দূরেই কোয়ালপাড়া গ্রাম। সেইগ্রামে ভক্ত ছেলেরা স্বদেশী করে, শ্রীমা তাদের বললেন, ‘এবার ওখানে ঠাকুরকে বসিয়ে দিয়ে যাব, শুধু স্বদেশী করে কী হবে? আমাদের যা কিছু সবার মূল ঠাকুর, তিনিই আদর্শ।’
কোয়ালপাড়া আশ্রমে সত্যই ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করে একটি মঠের জন্ম দেন শ্রীমা। এটি ছিল তাঁর বৈঠকখানা, যেখানে তিনি মাঝে মাঝেই এসে বাস করতেন। এই মঠটির দিকে পুলিশের কড়া নজর ছিল। তবু শ্রীমা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন অন্ত্যজ গ্রামবাসীদের নিয়ে, বিধর্মী বাস্তুচ্যূত অসহায় গ্রামবাসীদের নিয়ে। তিনি তাঁদের সমাজ সচেতন করতে চেয়েছেন। চেয়েছেন আবার চরকায় সুতো বুনে বস্ত্র উত্পাদন হোক, লোকে বস্ত্রের কষ্ট না পাক! তিনি এ কথা প্রসঙ্গে বলেছেন ,‘রাজার পাপে রাজ্য নষ্ট হয়। হিংসা, খলতা, ব্রহ্মহত্যা—এই সব পাপ।...’
একান্তে থেকেও শ্রীমা সমাজ পরিবর্তনের যে ইচ্ছা আর পথনির্দেশ দান করেছেন, তা এককথায় অসাধারণ। বিপ্লবী ছেলে লুকিয়ে এসেছে তাঁর কাছে দীক্ষা নিতে, তাকে ঘরে রাখতে পারেননি, রাস্তার এক আঁটি খড়ের উপর বসিয়ে মন্ত্র দিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মন্ত্র নিয়ে আবার আত্মগোপন করেছেন। স্বামী সারদানন্দজিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, মঠের যেসব সদস্য যোগদানের আগে বিপ্লবী ছিলেন তাদের পুলিশ উত্পাত করুক, তবু তিনি তাঁদের ত্যাগ করতে পারবেন না। কারণ, তাঁরা এখন সত্যস্বরূপ শ্রীরামকৃষ্ণকে আশ্রয় করেছেন। শ্রীঅরবিন্দ যথার্থই বলেছিলেন, ‘জাতীয়তাবাদ কেবলমাত্র নিছক একটি রাজনৈতিক কার্যক্রম নয়। জাতীয়তাবাদ হল ঈশ্বরপ্রদত্ত একটি ধর্ম।’
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে খাদ্যাভাব ও বস্ত্রাভাব চরমে ওঠে। শ্রীমা একদিন মেয়েরা বস্ত্রাভাবে বাইরে বের হতে পারছে না ও কোনও স্থানে আত্মহত্যাও করছে এই সংবাদ পেয়ে উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠেন, ‘পরনের কাপড় না পেলে মেয়েরা কী করবে গো ! … ওরা কবে যাবে গো , কবে যাবে গো!’ তারপর কিছু শান্ত হয়ে বলেন, ‘তখন ঘরে ঘরে চরকা ছিল, ক্ষেতে কাপাস চাষ হত, সকলেই সুতো কাটত, নিজেদের কাপড় নিজেরাই করিয়ে নিত, কাপড়ের অভাব ছিল না। কোম্পানি এসে সব নষ্ট করে দিলে। কোম্পানি সুখ দেখিয়ে দিলে – টাকায় চারখানা কাপড়, একখানা ফাও। সব বাবু হয়ে গেল – চরকা উঠে গেল। এখন বাবু সব কাবু হয়েছে।... আমাকেও একখানা চরকা এনে দাও, আমিও সুতো কাটব।’ কোয়ালপাড়া আশ্রমের ছেলেদের বলতেন, ‘বাবা, তোমরা বন্দেমাতরম্ করে হুজুগ করে বেড়িও না ... তাঁত কর, চরকা কর, আগে তো তাঁতের কাপড়ই সবাই পড়ত, চরকা পেলে আমিও সুতো কাটি।’ মনে রাখবেন এ ছিল গান্ধীজির চরকা আন্দোলনের আগের ঘটনা।
আরেকটি বিষয়ে শ্রীমা অর্থনীতিবিদের মতো বক্তব্য রেখেছেন। আগে যজমানী ব্যবস্থার মাধ্যমে ধান বণ্টিত হতো, কিন্তু ধান যখন বিক্রয়ের দ্রব্য হয়ে গেল তখন কৃষকের হাতে টাকা এল কিন্তু জীবনধারণের স্বাচ্ছন্দ্য অনিশ্চিত হয়ে গেল। মা চাইতেন কৃষকরা বীজ ধান বিক্রি না করে শান্তিতে বাস করুক। কিন্তু পরিস্থিতি বিরূপ! বদনগঞ্জ স্কুলের হেডমাস্টার প্রবোধবাবু ,‘ইংরেজ সরকার আমাদের দেশের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বাড়িয়েছে’ একথা বললে মা তার উত্তরে বলেছেন, কিন্তু বাবা, ঐসব সুবিধা হলেও আমাদের দেশের অন্নবস্ত্রের অভাব বড় বেড়েছে। আগে এত অন্নকষ্ট ছিল না। ‘বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স’, ‘অনুশীলন সমিতি’ আলিপুর বোমার মামলা— স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল স্তম্ভগুলিতে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীগণ শ্রীমায়ের কাছে আসতেন শক্তিময়ীর কাছ থেকে প্রাণশক্তি লাভ করার জন্য।
তবে সর্বশেষে একথাও বলতেই হয় যে, তিনি ইংরেজ শাসনের প্রতি বিরক্ত ছিলেন, দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী ছিলেন কিন্তু তাঁর বিরক্তি ইংরেজ জাতির উপর ছিল না। এখানেই তাঁর যে চারিত্রিক উর্ধ্বায়ন আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা এই প্রকাশ যখন দেখি তখন তাঁকে দেবী রূপেই বন্দনা করি। কারণ তিনি শত বিরক্তি সত্ত্বেও বলতে পেরেছিলেন, ‘ওরাও তো আমার সন্তান!’ আসলে মাতৃরূপেই তাঁর বিশেষ অধিষ্ঠান ও বিস্তৃতি। সমাজের নানাবিধ বিষয়ের আঙিনায় বিচরণ করলেও তিনি আদতে ছিলেন বিশ্বজননী। তাই সেই স্বাধীনতা-পরাধীনতার প্রবল দ্বন্দ্ব মধ্যেও তিনি উচ্চারণ করতে পারেন, ‘যদি শান্তি চাও তবে কারো দোষ দেখ না, দোষ দেখবে নিজের।’