বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

বীণা দাস
সশস্ত্র সংগ্রামের বিপ্লবী নেত্রী 

 

সুদেষ্ণা দে: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে বক্তৃতা দিতে উঠেছেন অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন রাজ্যপাল স্যার ফ্রান্সিস স্টানলি জ্যাকসন। সেই জ্যাকসন যিনি ক্রিকেটার হিসাবে কুড়িটা টেস্ট ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডকে অনেক জয়ের মুকুট পরিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সমাবর্তন উৎসবে বাংলার রাজ্যপাল তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে স্টানলি জ্যাকসন তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছেন। বক্তৃতার মাঝে জ্যাকসন ঘোষণা করেন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে চার লক্ষ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চুপ করে বসে থাকা এক কুড়ি বছরের ছাত্রী ডায়াসের দিকে এগিয়ে এসে গভর্নরের দিকে রিভলভার তাক করে পাঁচবার পরপর শট নিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হন এবং জ্যাকসন সময়মতো নিজেকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম উপাচার্য হাসান সুরাবর্দি ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রীটির হাত থেকে রিভলবার কেড়ে নেন। ব্রিটিশ পুলিস এসে অবিলম্বে তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসা এই চাঞ্চল্যকর 
ঘটনার নায়িকার নাম বীণা দাস। ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দুঃসাহসিক মহিলা বিপ্লবী।
কৃষ্ণনগরে ১৯১১ সালের ২৪ আগস্ট বীণা দাসের জন্ম। তাঁর পিতা বেণীমাধব দাস ও মাতা সরলা দেবী। ছোটবেলায় বাবার কাছে বিপ্লবীদের গল্প শুনতে শুনতেই  ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব তৈরি হয় তাঁর মধ্যে। পরে সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী হয়ে ওঠেন। একটা আদর্শের জন্য মানুষ যে কত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে সেসব কথা শুনে বিপ্লবী রাজনীতির দিকে আকৃষ্ট হন বীণা। 
শৈশব থেকেই বীণা দাস সমগ্র পরিবারের নিবিড় স্নেহমমতা এবং অগাধ শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বাইরের জগতের সঙ্গে যতই পরিচিত হতে লাগলেন, ততই অনুভব করলেন অসীম বেদনাভরা মানবজীবনের কথা। তাঁর মানসিক সুখ-শান্তিতে আলোড়ন দেখা দিল। দেশের দুঃখ, দুর্গতি ও পরাধীনতার গ্লানি তাঁর মনকে আকুল করে তোলে।
অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের একটা প্রবল তরঙ্গ যখন দেশের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে, তখন বীণা দাসের পরিবারেও এই তরঙ্গে ধাক্কা লাগে। তাঁর মেজদাদা আন্দোলনে যোগদান করে কারাবরণ করেন। ১৯৩০ সালে শুরু হয়েছিল গান্ধীজির লবণ আইন অমান্য আন্দোলন, পাশাপাশি বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ডের তৃতীয় অধ্যায় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। বীণা দাস কান পেতে শোনেন আর বিমুগ্ধ হৃদয়ে তাঁদের গৌরবগাথা নিয়ে মনে মনে ছবি আঁকতে শুরু করেন। 
১৯৪৭ সালে তাঁর বিবাহ হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একনিষ্ঠ সৈনিক যতীশ ভৌমিকের সঙ্গে। মাতৃভূমির শৃঙ্খলমোচনের আকুল আহ্বান এবং আদর্শবাদী পিতার আদর্শনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথকে নিজের জীবনে বেছে নিতে বীণার মনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। বীণা দাসের শেষজীবন বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি হরিদ্বার চলে যান। ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর হৃষীকেশে সহায়সম্বলহীন হয়ে পথপ্রান্তে মৃত্যুবরণ করেন।

13th     August,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ