বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

‘কত দিনে হবে 
সে প্রেম সঞ্চার...’

সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চের একক অনুষ্ঠানে দেখা গেল পার্বতী বাউলকে। যা গাইছেন দর্শক যেন তা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। সে এক অন্য অনুভূতি। বর্ণনায় স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

মে মাসের কলকাতা। দিনের আলো নিভে আসা বিকেল। জ্ঞানমঞ্চের বাইরে আগ্রহী শ্রোতা হলে ঢুকছেন ধীরে ধীরে। ছ’টায় সব আসন প্রায় পূর্ণ। ছ’টা বেজে তিন মিনিট। পর্দা সরে গেল। মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন ছোটখাট চেহারার সাধিকা। তিনবার শাঁখে ফুঁ দিয়ে সূচনা করলেন অনুষ্ঠানের। 
তুঁতে পাড়ের হালকা রঙের শাড়ি। মাথার জটা পা ছাড়িয়ে স্টেজে লুটিয়ে পড়েছে। গলায় রুদ্রাক্ষের পাশাপাশি নজর কেড়ে নিল শুভ্র জুঁইয়ের মালা। পাশে রাখা একতারা হাতে নিয়ে প্রস্তুত পার্বতী বাউল। আগামী দু’ঘণ্টার রাশ তাঁরই হাতে। 
লাল পাড় সাদা শাড়ি ঝুলিয়ে সাজানো মঞ্চ। পার্বতী গেয়ে উঠলেন, ‘কত দিনে হবে সে প্রেম সঞ্চার...’। যা গাইছেন, তা যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। এতটাই একাত্ম তিনি। সেই একাত্মতা ছড়িয়ে পড়েছিল দর্শক আসনেও। পার্বতী বললেন, ‘বাউলের আদিধারা একতারা, ডুগি আর একক ভাবে গাওয়া। তার মধ্যে একটা গভীর আধ্যাত্মিক ধ্যানের সন্ধান রয়েছে। বাউল যখন তার মহাজন পদগুলো গায়, তার যে বিষয়বস্তু সেটা সে চোখের সামনে দেখতে শুরু করে। যখন আমরা কিছু দেখি, সেখানে আমাদের মন যায়। তখন তার আত্মিক বিকাশ হয়। কিন্তু এই প্রেম তখনই সম্ভব যখন সব কিছু ছাড়া যায়।’ গান ধরলেন, ‘রাখিলে কূল গৌড় মেলে কই, ও প্রাণ সজনী।’
পার্বতী বাউল আদ্যন্ত এক পারফর্মার। তিনি গায়িকা। তিনিই বাজনদার। আবার স্টেজ জুড়ে নাচছেনও। বদলে যাওয়া আলোর খেলায় যেন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আনন্দসভা ও একতারা কালারীর যৌথ আয়োজন সার্থক। প্রতিটি গানের আগে তার মানে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সহজ করে। ‘সবাই যে প্রেমিক এমন বলা কঠিন। কোটিতে গুটি। মীরাবাঈ বলেছেন, আমি রাম রতন ধন পেয়েছি। এই প্রেম এমন যে কোনও চোর তাকে লুণ্ঠন করতে পারে না। তাকে খরচ করলেও দ্বিগুণ বেড়ে যায়’ বললেন তিনি। ঠিক এরপরই গেয়ে উঠলেন চণ্ডীদাসের পদ, ‘রসিক রসিক সবাই কহে, কেহ তো রসিকও নয়। জানিয়া বুঝিয়া গুনিয়া দেখিলে, কোটিতে গুটিক হয়।’ 
শ্রোতাদের তাঁর সঙ্গেই গাইয়ে নিলেন পার্বতী। একসঙ্গে নামগান হল। শ্রোতাদের আবদারে গাইলেন, ‘কিছুদিন মনে মনে, শ্যামের পিরিত রাখ গোপনে’। উপস্থিত ছিলেন পার্বতীর কত্থক নাচের গুরু শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান এই শিল্পীকে অনুষ্ঠানের শেষে সংবর্দ্ধনা জানানো হল। পার্বতী বললেন, ‘আমার এখন ৪৫ বছর বয়স। বয়স বলতে নেই, তবু বলে ফেললাম। আমি যখন প্রথম দিদির অনুষ্ঠান দেখি, তখন ওঁর ৪৫। বাবা বলেছিল, তুই ওঁকে গুরু হিসেবে চাস? গ্রিনরুমে নিয়ে গিয়েছিল। উনি আমাকে গ্রহণ করেছিলেন। আমার যতটুকু তালবোধ সবই দিদির থেকে পাওয়া।’ শ্রীলেখা প্রথমেই উপস্থিত দর্শকের উদ্দেশে বললেন, ‘সবাই বলুন জয় পার্বতী বাউলের জয়। ও যখন আমার কাছে এসছিল, তখন ও মৌসুমি পারিয়াল। এখন তুই অনেক ভালো করেছিস...।’ হাসির রোল উঠল হল জুড়ে। 
গানের মধ্যেই পার্বতী বলছিলেন, ‘যখন সাধকের পরিপূর্ণতা আসে, তখন তার দেহে দিব্যভাব প্রকাশ পায়। তখন সে অধরচাঁদকে দেখতে পায়। বাউল বলছেন, যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে এই ভাণ্ডে। যা ব্রহ্মাণ্ডে দেখছি, তা দেহে আছে। সুতরাং দেহ জানলেই আসল বস্তু, তাকে জানা হয়।’ এই প্রতিটি কথাই তাঁর গানে পূর্ণ মাত্রা পেয়েছে। মঞ্চে পার্বতী বাউলকে দেখা তাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।  

14th     May,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ