বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

ভালোবাসায় মোড়া রোজগারের পথ

স্বপ্ন আর স্মৃতি দিয়ে তৈরি ‘পিকল এন আম্মা’। এই ব্র্যান্ডের দুই কর্ণধার রেখা ও সোনালি লাখোটিয়া-র সঙ্গে তাঁদের ব্যবসা ও তার মাধ্যমে নারীর উন্নতি প্রসঙ্গে কথায় কমলিনী চক্রবর্তী।

আজ ১ জানুয়ারি, ২০২২। নতুন বছরের এই প্রথম দিনটায় অনেকেই নতুন সংকল্প গড়েন। একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন গোটা বছরের জন্য। নতুন আশা তৈরি হয়। তবু বছরের পর বছর কেটে যায়। নারী স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়নের মতো কিছু শব্দ লোকের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু নারীর সামাজিক অবস্থানের সত্যিই তেমন উন্নতি হয় কি? এই প্রসঙ্গে কথা হল দু’জন মহিলার সঙ্গে। ‘পিকল এন আম্মা’ নামে নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড শুরু করেছেন তাঁরা। অনেক নস্ট্যালজিয়া আর স্মৃতি দিয়ে তৈরি এই ব্র্যান্ড। তাঁরা জানালেন, ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপই নারী স্বাধীনতার ভিত শক্ত করতে পারে। আচার আর নানাধরনের মুখরোচক খাবার দিয়ে পথ চলা শুরু করেছেন ‘পিকল এন আম্মা’-র দুই কর্ণধার রেখা ও সোনালি লাখোটিয়া। রাজস্থানের এক গ্রামের দুই মহিলা। কলকাতায় এসেছিলেন স্বামীদের সূত্রে। ঘরোয়া জীবনযাপনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ এই ঘরোয়া জীবন যেন আর ভালো লাগছিল না। একটু কিছু করার আশায় অধীর হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে হঠাৎ করোনার প্রকোপ। বাড়ির একঘেয়ে জীবন যেন আরও অসহ্য হয়ে উঠল। অন্য ধরনের কিছু করতে মরিয়া হয়ে পড়লেন রেখা। দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি কাটানোর জন্য তখন তাঁর নেশাই তাঁর সঙ্গী হয়ে উঠল। 
রাজস্থানে তো বটেই, এমনকী কলকাতাতে এসেও রান্নাবান্নায় প্রচণ্ড মন ছিল তাঁর। যে কোনও রান্না নয়, মুখরোচক টুকিটাকি রাঁধায় তিনি দারুণ পারদর্শী। বাড়িতে তাই রেখাকে ডাকা হয় ‘আচার মাস্টার’ নামে। এবার নিজের সেই পদবি নিয়েই বাজারে নেমে পড়লেন রেখা। সঙ্গী করলেন সোনালিকে। শুরু হল ‘পিকল এন আম্মা’। এতদিন যে আচার শুধুই বাড়ির লোকের স্বাদরঞ্জনের কাজে লাগাতেন এখন সেই আচারই হয়ে উঠল তাঁদের রোজগারের উপায়।
রেখা বলেন, ‘পরনির্ভরশীলতা নারীজীবনে অভিশাপের মতো। সুদূর রাজস্থানের গ্রামে অভ্যস্ত জীবন পেরিয়ে কলকাতার শহুরে জীবনে না এলে এই ভাবনাটা হয়তো কোনওদিন বুঝতেই পারতাম না।’ এখানে মহিলাদের রোজগার ও স্বাধীন জীবনযাত্রার ধরন দেখেই তাঁর রোজগারের চিন্তা মাথায় এসেছিল। কিন্তু তেমন পারদর্শিতা না থাকায় স্বপ্নটা মনেই রয়ে যায়। এরপর লকডাউনে সকলের জীবনেই নানাবিধ বদল আসে। রেখা এবং সোনালির হাতে অফুরন্ত সময় এনে দিয়েছিল এই লকডাউন। সকালের পর বাড়িতে তেমন কোনও কাজ নেই। আর সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে আচারের ছোটখাট ব্যবসা চালু করলেন তাঁরা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব রোজগারের এই যে উপায় বেরল, এতে জীবনের ধরন তো বটেই, এমনকী ভাবনাও বদলে গেল আমূল। 
কিন্তু আচার বা টুকটাক মুখরোচক খাবারই বা কেন? রোজকার খাবার বানিয়ে বিক্রি করলে তো রোজগারের পথ আরও সুগম হতে পারত? সোনালি বললেন, ‘আচার বা ফল মাখা চাট ইত্যাদি বানানোর পিছনে একটা নস্ট্যালজিয়া কাজ করেছে। এ যেন স্মৃতির পথ বেয়ে ক্রেতাকে তাঁদের ছোটবেলায় নিয়ে যাওয়া। তাই আচার বা ফল মাখা চাট শুধুই যে ব্যবসা, তা কিন্তু নয়। একটা স্মৃতি, একটা ভালোবাসা।’ 
রেখা মনে করেন, শুধুই ব্যবসায়িক দিক দিয়ে কোনও জিনিস চিন্তা করলে তাতে সাফল্য হয়তো আসে, কিন্তু প্রাণের আরাম মেলে না। রোজগারের পথটা যদি ১০০ শতাংশ ভালোবাসা দিয়ে মোড়া থাকে তাহলে তৃপ্তি আর উপার্জন— দুটোই সম্ভব। কলকাতায় ঘুরে রেখা ও সোনালি দেখেছিলেন স্কুলের সামনের চিত্রটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বাচ্চারা আর এখন আলু চাট, চালতা মাখা, আমশি মাখা, কুলের আচার ইত্যাদির দিকে হাত বাড়ায় না! বরং আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংকের মতো খাবারই তাদের মুখে রোচে বেশি। অভিভাবকরাও তাতেই যেন খুশি। অনেকের ধারণা, আইসক্রিম খুব পুষ্টিকর খাবার! অভিভাবকদের এই কথাটাই মনে ধরেছিল রেখার। তিনি বুঝতে পারলেন ব্যবসায়িকভাবে আচার বিক্রি করতে চাইলে স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতেই হবে। তাই রেখা বা সোনালি কোনও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করেন না তাঁদের আচারে। এই আচার একেবারে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। নিজেদের বাগানে যে আম, চালতা, লেবু ইত্যাদি ফলে তাই দিয়েই আচার বানান তাঁরা। সুস্বাদু ও উপাদেয় এই আচার খেয়ে বাচ্চাদের শরীর খারাপের ভয় নেই। এঁদের আচার তাই মরশুমি। গরমে মিঠা আম, বসন্তে ম্যাংগো গার্লিক, বর্ষায় লেবুর আচার, বাতাবি মাখা ইত্যাদি নানা কিছু পাবেন রেখা আর সোনালির ভাঁড়ারে। এঁদের আচারের বিশেষত্ব নাকি মশলার মিশ্রণে, জানালেন রেখা। ঩কেমন সেই মিশ্রণ? কী-ই বা তার নতুনত্ব? রেখার সলাজ হাসির ফাঁকে একটু আত্মবিশ্বাসও ঝরে পড়ল উত্তরে। বললেন, ‘মিশ্রণের কম্বিনেশনটা তো বলা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি খেলেই জিভে জল আসবে। আর একবার আমাদের আচার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে হবে। আর একটা কথা ৮ থেকে ৮০, যে-ই আমাদের আচার খাবেন ভক্ত হয়ে যাবেন।’  নারীর ক্ষমতায়ন দিয়ে কথা শুরু হয়েছিল রেখার সঙ্গে। তিনি বোঝালেন, এই আচারের ব্যবসার মাধ্যমে তাঁরা কীভাবে মেয়েদের রোজগারেও সাহায্য করছেন। তাঁদের আচারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। ‌তাই আর দু’জনের পক্ষে প্রচার, প্যাকেজিং, মার্কেটিং ও আচার তৈরি সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আচার তৈরির কাজে সহায়তা করতে আপাতত আটজন মহিলাকে নিয়োগ করেছেন রেখা। ক্রমশ চাহিদা বাড়লে আরও মহিলা নিয়োগ করবেন বলেই জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমরা মেয়েদের দিয়েই এই কাজটা করাতে চাই। ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে প্রচার বা মার্কেটিংয়ের কাজেও যদি বাইরের সাহায্য লাগে তাহলে সে কাজেও মহিলাই নিয়োগ করব। আপাতত শুধু‌ই রান্নাঘরে মশলা বাটা, ফল কোটার কাজে তাঁদের রাখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁদের সাহায্যের পরিধি প্রয়োজনমতো বাড়ানো হবে। আর শুধুই মেয়েদের সুযোগ দেওয়া দেওয়ার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের পথে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করতে চাই।’ মেয়েরা তাঁদের এই নারী ক্ষমতায়নকে কীভাবে নিচ্ছেন? এমন প্রশ্ন শুনে সোনালি বললেন, ‘এঁদের অনেকেই সেই অর্থে শিক্ষিত নন। একেবারেই ঘরোয়া জীবনে অভ্যস্ত। ফলে বাড়ির পুরুষশাসিত ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে কাজে আসা যে সবার পক্ষে খুব সহজ হয়েছিল, তা নয়। তবে দিনের শেষে সংসারে বাড়তি টাকার জোগান হলে কার না ভালো লাগে? এদেরও অনেকেরই তেমনটা হয়েছে। তাছাড়া কাজের একটা টান তো আছেই। ওই যে নস্ট্যালজিয়া। নিজের ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে পাওয়া— এগুলোও আমাদের ব্যবসার ইউএসপি।’           

1st     January,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ