বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

কেক কুকিজের 
কারিগর

শীত মানেই কেক, কুকিজ-এর মরশুম। কেক বানানোর নেশায় আজ বহু মহিলাই চাকরি ছেড়ে ব্যবসার পথ ধরেছেন। তেমনই কয়েকজন কেক শিল্পীর সঙ্গে কথা বললেন কমলিনী চক্রবর্তী।
 
বড়দিনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। কলকাতা এখন চুটিয়ে শীত উপভোগ করছে। ছাত্রছাত্রীরা ছুটির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, আর চাকরিরতরাও বৎসরান্তে টুকটাক ছুটি নিয়ে এদিক সেদিক বেড়িয়ে পড়ছেন। যে কোনও উৎসবকে আপন করে নেওয়ায় কলকাতার জুরি মেলা ভার। দুর্গাপুজোয় আনন্দের পাশাপাশি ক্রিসমাসে কেক খাওয়ায় বাঙালির বিরাম নেই। আজ তাই আমরা কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের এমনই কিছু মহিলার মুখোমুখি যাঁরা কেক ও বেকিংয়ে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন। তাঁরা সকলেই বিভিন্ন পেশা থেকে এসেছেন বেকিংয়ের দুনিয়ায়। অদম্য শখ তাঁদের পেশাদার করে তুলেছে কেক-মহলে। কলকাতায় তেমনই নাম শ্রেয়সী বন্দ্যোপাধ্যায়।      
শ্রেয়সীর কথা
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শ্রেয়সী হঠাৎ কেকের দোকান সাজিয়ে বসলেন কেন? প্রশ্ন শুনে নিজেই হেসে ফেললেন তিনি। বললেন তাঁর কেক বানানোর আগ্রহ নাকি পারিবারিক। অথচ পরিবারে তিনিই প্রথম ফুড আউটলেট খুলেছেন। তাঁর আগে সকলেই বিভিন্ন চাকরি করেছেন। শ্রেয়সী বললেন, ‘আমাদের পরিবারে সবাই পেশাদার চাকরিরত ছিলেন। আমার দাদু ডাক্তার ছিলেন, বাবা ইঞ্জিনিয়ার, কাকা খুবই বিখ্যাত স্ট্যাটিস্টিশিয়ান। কিন্তু একইসঙ্গে সকলে ভীষণ খাদ্যরসিকও ছিলেন। আর খাবারের প্রতি সেই আগ্রহ যে শুধুই খাওয়াদাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকত তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সেগুলো আবার বানানোতেও আমাদের বাড়ির বড়রা খুবই আগ্রহী হয়ে পড়তেন। দেশ তো বটেই, এমনকী বিদেশি খাবার নিয়েও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা চলত আমাদের বাড়িতে। আমি সেসব দেখতাম। ফলে খুব ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে একটা রান্নার পরিমণ্ডল দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। আর সেই রান্না যে শুধুই বাড়ির মহিলারাই করতেন তা কিন্তু নয়। বাড়ির পুরুষরাও সমানভাবেই রান্নামনস্ক ছিলেন। সত্যি বলতে কী, রান্নার এক্সপেরিমেন্ট তো ছেলেরাই করত বেশি। আর এই যে বাড়ি জুড়ে একটা রান্নার আবহাওয়া, এটাই আমাকেও রান্নার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।’ গ্লেস পেতিসারির অন্যতম কর্ণধার শ্রেয়সী বন্দ্যোপাধ্যায় কেক, পেস্ট্রি, কুকিজ, মাফিন সহ মিষ্টি ও নোনতা বেকিংকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন। বললেন, কলকাতার মানুষকে সারা বিশ্বের রসনার সঙ্গে পরিচিত করাই তাঁর সাধনা। সেই ইচ্ছের তাড়নাতেই তিনি প্রথম পেস্ট্রি শেফ হওয়ার জন্য পেশাদারি প্রশিক্ষণ নেন।
তাহলে আর কষ্ট করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়লেন কেন? শ্রেয়সী জানালেন, খাবার নিয়ে পড়াশোনা করে শেফ হওয়ার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই ছিল বটে, বাড়িতে সেই বিষয়ে বিশেষ অনুপ্রেরণাও পেয়েছেন। কিন্তু বারো ক্লাসের পরীক্ষার পর যখন হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়বেন বলে স্থির করলেন তখন বাবাই কিন্তু বাধ সাধলেন। বললেন রান্নায় আগ্রহ থাকা এক কথা, শখে রান্না করা এক রকম। কিন্তু তাকে পেশা হিসেবে নেওয়া যাবে না। বরং ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি ইত্যাদি তথাকথিত চেনা পথেই তাঁকে হাঁটতে হবে। অল্প বয়সে বাবার বিরোধিতা করার সাহস ছিল না শ্রেয়সীর। অগত্যা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এবং পড়ার শেষে এইচএসবিসি ব্যাঙ্কে চাকরিও পান। শখের রান্না সেই সময় খানিকটা চাপাও পড়েছিল হয়তো। তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে শ্রেয়সীর চল্লিশ বছর বয়সে। তখন তাঁকে বদলি করা হয় হায়দরাবাদে। কিন্তু পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে তখন বদলি নেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। কী করবেন ভাবছেন, এমন সময় ব্যাঙ্কের ভিপি-ই পেশাদারি পথে কেক বানানোর পরামর্শ দেন তাঁকে। সেই সূত্রপাত। ধুলো ঝেড়ে পুরনো নেশাটাকে আবারও ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য তাজ বেঙ্গল হোটেলের এককালীন শেফ চিরদীপ পালের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন শ্রেয়সী। এবং তাঁর সঙ্গেই পার্টনারশিপে গ্লেস পেতিসারি শুরু করেন। 
তবে এই যে অন্য ধরনের রান্নার প্রতি আগ্রহ, সেটা কিন্তু বাড়ি থেকেই এসেছে। শ্রেয়সী বললেন, ‘আমার ছোটবেলায় বাঙালির উৎসবের খাওয়া দাওয়ার মেনুতে যখন পোলাও, কালিয়া বা মাংসের ঘন ঝোলের রাজত্ব তখনও আমাদের বাড়িতে শীতে রোস্ট, ফ্রাই ইত্যাদি নানারকম রান্না হতো। বাবা বিদেশি রান্নার বই কিনতেন সেইসব বাড়িতে বানানোর জন্য। দাদুকে দেখতাম সারাদিন ডাক্তারি করার পর বাড়িতে ইটের উপর তারে জালি লাগানো আভেনে কেক বেক করতেন। এককথায় রান্নাকে রিল্যাক্সেশনের কাজে লাগাতেন আমাদের বাড়ির সবাই। সেই থেকেই রান্নার নেশাটা পেয়ে বসেছিল।’ এখন মূলত দু’টি উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবসাটা করছেন তিনি। প্রথমত কলকাতাবাসীকে সারা পৃথিবীর নতুনত্বে ভরা খাবারের স্বাদ দিতে চান তিনি। আর দ্বিতীয়ত সাধ্যের মধ্যে একটু অন্য স্বাদের খাবার মানুষকে খাওয়াতে চান। যেমন ব্লুবেরি চিজকেক। আগে তো কলকাতায় এমন খাবার সাধারণ দোকানে পাওয়াই যেত না। আর যেখানে তা পাওয়া যেত সেখানেও তার দাম এতই বেশি যে সাধ থাকলে মধ্যবিত্তের সাধ্যে কুলাত না। ফলে এই ধরনের পৃথিবীবিখ্যাত মিষ্টির স্বাদ বেশিরভাগ বাঙালির কাছেই অধরা থেকে যেত। সেই কনসেপ্টটই ভেঙে দিতে চেয়েছেন শ্রেয়সী। সেই কারণেই তাঁর পেতিসারির দোকানে মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে নানা ধরনের দেশি বিদেশি কেক পেস্ট্রি পাওয়া যায়। আর শুধুই যে কেক পেস্ট্রি তা-ও নয়, বিভিন্ন বিদেশি নোনতা পদও বানান শ্রেয়সী। তাঁর সম্ভারে বেকড, রোস্ট বা গ্রিলড পদও পাবেন নানারকম। আর এই যে নতুন ধরনের খাবার তা কলকাতাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। এই ইচ্ছে থেকেই গ্লোবাল খাবারের একট ব্র্যান্ডও সম্প্রতি চালু করেছেন শ্রেয়সী। নাম ‘বেব-ফ্লেক ডেলি’। এখানে বিদেশি খাবার তৈরি পাবেন, সেমি কুকড ফুড পাবেন আবার বিদেশি খাবার বানানোর সাজসরঞ্জামও পাবেন। আপাতত শুধুই রান্না করা খাবারই পরিবেশন করছেন তিনি। কিন্তু ক্রমশ অন্য দু’টি জিনিসও পাবেন। সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে চান শ্রেয়সী। এবং লোকের এই ব্যাপারে অসম্ভব আগ্রহ দেখলে অবাক হতে হয়, জানালেন তিনি। বললেন, সবাই রোজই নতুন কিছু চায়। আর সেই নতুনত্বে জোগান দেওয়ার নেশাতেই নিত্যনতুন খাবার বানান শ্রেয়সী।         
রুমণার কথা
পেশায় তিনি নিউট্রিশনিস্ট। আর নেশায় কেক বানান। তিনি রুমণা জসিল। বললেন, পেশার খুঁটিনাটি কাজে লাগিয়েই তিনি নেশায় মেতে উঠেছিলেন ২০০৮ সালে। বাড়ি ও বাচ্চা সামলাতে গিয়ে চাকরির চাপ বজায় রাখা যখন অসম্ভব হয়ে উঠল তখনই রুমণা ঠিক করলেন নিউট্রিশনের বিদ্যা কাজে লাগিয়ে খাবারের একটা ছোটখাট আউটলেট চালু করবেন নিজের বাড়ির রান্নাঘর থেকে। কেক বানানো, কেক সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহ ছিল ছোটবেলাতেই। টিভিতে বেকিংয়ের ওপর বিভিন্ন শো দেখে শিখতেন কেকের সাজ। সেইমতো বাড়িতে জিনিসপত্র আনিয়ে চলত নানারকম এক্সপেরিমেন্ট। কিন্তু তাকে যে পেশা করবেন তা তখন ভাবেননি। ক্রমশ নিজের ছোট্ট রান্নাঘরটাই হয়ে উঠল কেকের কারখানা। 
কোচিতে থাকেন রুমণা। তাঁর কমিউনিটির অনেকেই খ্রিস্টান। ফলে বড়দিন থেকে নিউ ইয়ার সেখানে উৎসবের মরশুম। আর সেই মরশুমটাকেই কাজে লাগিয়ে কেক বিক্রি শুরু করেন রুমণা। দোকানের সাধারণ ফ্রুট কেক, প্লাম কেকের পাশাপাশি রংবেরঙের সেলিব্রেশন কেক, টিয়ার বিশিষ্ট কেক ইত্যাদিও বানাতে শুরু করেন। এমনকী নানা আকারের কুকি, কাপকেক, মাফিন সবই বানাতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কাছে এমন সব অপূর্ব কেক দেখে অঞ্চলের অনেকেরই আগ্রহ জন্মায়। তাঁরাও এমন কেক-কুকিজ বানানো শিখতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। সবার আগ্রহ দেখে বেকিং ক্লাসও চালু করেন রুমণা। নাম দেন আর্ট আর্টিসান কেক বুটিক। এই বুটিকে কেকের সাত সতেরো শিখতে পারেন সবাই। হাতেকলমে মুখোমুখি ক্লাস তো হয়ই, পাশাপাশি আবার ভার্চুয়াল ক্লাসও হয়। রুমণার সঙ্গে কেকের নেশায় মেতে উঠতে পারেন আপনিও, ইচ্ছে হলে তাঁর ফেসবুক পেজে নজর রাখুন।
রাধিকার কথা
বেঙ্গালুরুতে থাকেন রাধিকা নাগরাজ। ২০১৩ সালে নিজের কেক হাউস খুলে বসলেন হঠাৎই। নিজের সময় মতো কাজ করার সুবিধের হাতছানি এড়াতে পারেননি রাধিকা। বললেন, ‘চাকরি করতে আমার ভালো লাগত না। মনে হতো আমার গুণগুলো অন্যের জন্য খরচ করে ফেলছি। তাই নিজের মতো ব্যবসা করব ভাবতাম সব সময়। কিন্তু ভাবলেই তো আর হল না, এমন কিছু করতে হবে যা আমার ভালো লাগে। সেই থেকেই নিজের শখ আর নেশাগুলো নাড়াচাড়া করতে শুরু করি। আর সেটা করতে করতেই বেকিংয়ের আগ্রহটা রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছিল।’ তবে শুধু তো আর কেক বানালেই হল না, তা সাজানোও দরকার। সেই কেকের সাজ নিয়েই শুরু হল রাধিকার পড়াশোনা। বাড়িতে ফনডেন্ট বানানো, তাতে বিভিন্ন ফুড কালার মিশিয়ে তা রঙিন করে তোলা, তারপর তা নানা শেপে কেটে মোটিফ বানানো ইত্যাদি শিখতে পেশাদারি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। তারপর কেকের স্পঞ্জটা বানাতে শিখেছেন। তাকে একই সঙ্গে নরম, মিষ্টি ও মসৃণ বানানোর কায়দা আয়ত্ত করেছেন। এইভাবেই তাঁর কেক বানানোর প্রশিক্ষণ ধাপে ধাপে এগিয়েছে। ক্রমশ একতলা থেকে দোতলা এবং দোতলা থেকে বহুতল বিশিষ্ট কেক তৈরি করায় সিদ্ধহস্ত হয়েছেন রাধিকা। পাশাপাশি চলেছে বিক্রিবাটাও। কেকের সাজ যত উন্নত হয়েছে ততই বেড়েছে তার চাহিদা। তারপর কেক ছেড়ে রুটি বানানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তিনি। প্রথমে আটা ও ময়দা মিশিয়ে রুটি বানাতেন। তারপর তাতেই আরও েফ্লভার মেশানো শুরু করলেন। রকমফের বৃদ্ধির ফলে রুটির জনপ্রিয়তাও বেড়ে উঠল।  এবং পুরোদমে শুরু হয়ে গেল ওয়ার্ম আভেন-এর ব্যবসা। রাধিকার ব্যবসা এখনও আঞ্চলিক। তবে ক্রমশ তা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে যেতে চান তিনি। ‘আর সুযোগ হলে বিদেশে পাড়ি জমাতেই বা ক্ষতি কী?’ বললেন রাধিকা নাগরাজ।
কামিনীর কথা
ইকলজি আর ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজি বিষয়ে গবেষণা করতেন কামিনী গোপাল। মুম্বই নিবাসী এই গবেষকটি কিন্তু স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি কেক বানানোকে পেশা করবেন। বিয়ের পর গবেষণার কাজ যেমনকার তেমনই চলছিল। কাজের মাঝে ব্রেকের কোনও ফুরসত পেতেন না। একটা সময় একটু একঘেয়ে হয়ে উঠল জীবন। এবার একটা ব্রেক চাই। অনেকটা স্ট্রেস কাটাতেই ময়দা, চিনি, মাখন আর ডিম নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছিলেন। তখনও আভেন থেকে সদ্যোজাত ধুমায়িত কেকটি ছিল নেহাতই স্ট্রেস বাস্টার। খানিকটা শখও বলা যেতে পারে। মিশিয়ে বানিয়ে খেয়েদেয়ে আবারও গবেষণার কাজে মনোযোগী হয়ে ওঠাই ছিল কামিনীর জীবনের ছন্দ। তারপর তাঁর কোল আলো করে একটি কন্যাসন্তান জন্মাল। বাচ্চার দেখভাল আর পুরোদমে গবেষণা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। বাচ্চাকে সময় দিতে না পারার অপরাধে ভুগতে শুরু করলেন কামিনী। সেই থেকে খানিকটা অবসাদও এসেছিল জীবনে। কিন্তু আবারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হল সেই বেকিংয়ের নেশা। এবার কিন্তু আর নিছক শখ নয়। বরং এটাকেই পেশা করার চেষ্টায় মেতে উঠলেন কামিনী। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে বাড়ি থেকেই বেকারির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। নিজের হাউসিংয়ে একটা মেলার আয়োজন করা হয়েছিল ওই সময়। কামিনী সেখানে নিজের বানানো কেকের স্টল দিলেন। দারুণ হিট করল তাঁর হোমমেড কেক। সকলেই খেয়ে ধন্য ধন্য করল। প্রচুর অর্ডার পেলেন তিনি। আর এই সব মিলে কামিনীর আগ্রহ আর উৎসাহ িদ্বগুণ করে দিল। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাননি। খুলে ফেললেন আস্ত একটা কেকের দোকান, ২২ বেকার স্ট্রিট। রোজ কিছু নতুন ধরনের জিনিস বানানোই এই কেক শপটির বিশেষত্ব, বললেন কামিনী। 
প্রিয়ার কথা
মাত্র ২৬ বছর বয়সেই নিজস্ব এক কেকসাম্রাজ্য তৈরি করে ফেলেছেন প্রিয়া ভজন গুপ্ত। রিটেল ম্যানেজমেন্টে উচ্চপদস্থ চাকুরে প্রিয়া হঠাৎই একদিন ঝোঁকের মাথায় কেক বানানো শিখতে শুরু করেছিলেন। দোকানে সেলিব্রেশন কেক দেখে প্রচণ্ড ক্রিয়েটিভ মনে হয়েছিল তাঁর। ভেবেছিলেন এমন ভাবনা যে জিনিসের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে তা শিখতে পারলে না জানি কত আনন্দ পাবেন! সেই ভাবনা থেকেই কেক বানানো শিখতে শুরু করেন প্রিয়া। শিখতে শিখতে যখন আগ্রহ খুব বেড়ে গেল তখন দেখলেন রিটেল দুনিয়ায় কাজ না করে বরং নিজের মতো কিছু করলে ভালো হয়। ব্যবসার সাতসতেরো তো তাঁর জানাই ছিল। এবার নিজের এক্সপার্টাইজ কাজে লাগিয়ে নিজের কেকের ব্যবসা শুরু করে দিলেন। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে কেকের ব্যবসার নামকরণ করলেন মেল্ট ইট ডাউন। কেক বানানো যখন শিখছিলেন তখন তা বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতেন। কখনও বন্ধুদের উপহারও দিতেন। সবাই খেয়ে প্রশংসা করলে উৎসাহও বেড়ে যেত। এইভাবেই নিজস্ব ব্যবসাটি দাঁড় করিয়ে ফেললেন প্রিয়া। তাঁর বিশেষত্ব পার্সোনাইলজড, কাস্টমাইজড কেক। আপনার পছন্দমতো কেক বানিয়ে দেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্লেভার নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করেন সারাক্ষণ। কখনও ফ্লেভারগুলো একে অপরের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে দেখেন কোনটা কার সঙ্গে মানানসই। এইভাবেই কেকে নতুনত্ব আনেন প্রতিনিয়ত। কেক ছাড়াও চকোলেট আর কুকিজ বানান প্রিয়া। বললেন, বাচ্চা বুড়ো সকলেই চকোলেট ভালোবাসেন তাই কেকের পর পেশাদারি প্রশিক্ষণ নিয়ে চকোলেট বানানো শিখেছিলেন তিনি।  আর কুকিজ বানানো শেখেন শীতে আর একটু ফেস্টিভ আমেজ আনতে। ক্রিসমাসের সময় ইউরোপ গিয়ে দেখেন সেখানে নানা ধরনের কুকিজ পাওয়া যায়। বাচ্চা বড় সকলেই সেই কুকিজের নেশায় মত্ত। ভারতে একটু বিদেশি স্বাদ আনতেই প্রথম কুকিজ বানানো শিখতে শুরু করেছিলেন ইউটিউব দেখে। ক্রমশ সেটাও যে রোজগারের উপায় হয়ে উঠবে তা-ই বা কে জানত?

18th     December,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ