বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

সৃজনীশক্তি নিয়ে
কল্যাণে ব্রতী দুই কন্যা

মানুষের পাশে থাকাই মূল মন্ত্র। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন কুন্তী দে ও সুস্মিতা নন্দী শেঠিয়া। তাঁদের কথায় অতনু মজুমদার।

প্রেক্ষাগৃহের আলো স্তিমিত হয়ে এল। মন্থর গতিতে দু’পাশে সরে গেল পর্দা। মঞ্চ জুড়ে খেলা করতে লাগল রংবেরঙের আলোর স্রোত। সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দু’টি বাহু আন্দোলিত করছে এক দোহারা কিশোর। মুখে তার স্মিত মধুর হাসি। সহসা তার সঙ্গিনী হল এক কিশোরী। শরীরটাকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে কেমন তালে তালে, ছন্দে ছন্দে যেন সাঁতার দিতে থাকল সে কিশোরটির চারপাশে। নেপথ্যে  শিল্পীর কণ্ঠে ধ্বনিত হল, ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে...’। ততক্ষণে মঞ্চে প্রবেশ ঘটেছে তরুণী নৃত্যরত আরও শিল্পীর। এই ছেলে আর মেয়েটি অটিস্টিক। ওদের নাচ এতটাই সাবলীল যে দেখে কারও মনে হবে না ওরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। এতই সুন্দর ওদের ভঙ্গি, অসাধারণ ওদের ছন্দ ও তালের জ্ঞান।
স্তব্ধ বিস্ময়ে অনুভব করেছিলাম ওদের নাচের ভঙ্গি। এরপরেই ওই মেয়েটি অর্থাৎ বিদিশা নেচেছিল একা ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে...’ গানটির সঙ্গে। গান গাইছিল নবীন নামে আর একটি ছেলে। সেও অটিস্টিক। কারাওকের সঙ্গে তাল ও  ছন্দ বজায় রেখে তার সপ্রতিভ উপস্থাপনা মনে তুলেছিল আলোড়ন।
কথা হচ্ছিল এদের মেন্টর এবং সৃজন সভা সংস্থার কর্ণধার কুন্তী দে ও কলাপী সংস্থার স্রষ্টা সুস্মিতা নন্দী শেঠিয়ার সঙ্গে। পেশায় শিক্ষিকা সুস্মিতা নাচ শিখেছেন মমতাশঙ্কর ও ড. মঞ্জুশ্রী চাকী সরকারের কাছে। কিন্তু শুধুমাত্র পারফরম্যান্স এবং শেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর কিশোরীদের প্রধান স্রোতে টেনে আনতে চেয়েছেন তিনি বরাবর। ঠিক সেই কারণেই তিনি এই ধরনের ছেলেমেয়েদের আলাদাভাবে তালিম দেন। আর সেই কাজটি করেন বেশ অন্যভাবে।   সুস্মিতা বলেন, ‘সৃজন সভায় গিয়ে ওদের শেখাই ঠিকই কিন্তু অন্যসময় আর পাঁচজন ছেলেমেয়ের সঙ্গেও শেখাই। এভাবেই সৃজন সভার আভাস আর কুন্তল  এখন কলাপীর প্রায় প্রতি শো-তেই পারফর্ম করে। এখন আর ওদের ওষুধ খেতে হয় না। ওরা প্রায় স্বাভাবিকভাবেই নাচতে পারে। আসলে নাচটা ওদেরকে এমনভাবে আন্দোলিত করেছে যে, ওদের চোখ মুখে একটা আনন্দের ঝিলিক এসেছে।’ 
কুন্তী দে-ও মনে করেন, নাচ, গান ও নাটক এই ধরনের ছেলেমেয়েকে ভালো রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে। ঠিক সেই কারণেই এরা যেখানে থাকে সেখানে সর্বদা চালিয়ে রাখা হয় শান্ত মেজাজের গান বা রাগ সঙ্গীত। এমনকী এও দেখা গিয়েছে যে, হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা কোনও ছেলেমেয়েকে জোর করে মোবাইল কানে চেপে ধরে সঙ্গীত শ্রবণে বাধ্য করার পর ধীরে ধীরে  সে শান্ত হয়ে গিয়েছে। আসলে যারা সুস্থ ও স্বাভাবিক, তাদের মধ্যে এনার্জিকে বের করার বিবিধ বৈচিত্র্যময় পন্থা আছে, যেটা ওদের মধ্যে তেমন ভাবে নেই। তাই নাচ, গান ও অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে যদি সেই শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায় তাহলে ওদের মানসিক অবস্থা অনেকাংশে প্রশমিত হয়। নৃত্যশৈলীর সৃজনশক্তি প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছে শহরের এক বৃদ্ধাশ্রমের গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়দের মধ্যেও। সুস্মিতার হাত ধরে এই বৃদ্ধবাসের বাসিন্দারা ছন্দে ছন্দে পা ফেলেছেন ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’-র সঙ্গে। অন্যতম বাসিন্দা গৌতমবাবু লিখে সুর দিয়েছেন বেশ কিছু গানে। তার সঙ্গে কোরিওগ্রাফি  করে মঞ্চস্থ হয়েছে কলাপীর একাধিক অনুষ্ঠানে। তেমনই পাশাপাশি রয়েছে একটি অনাথ আশ্রমের বেশ কিছু ছেলেমেয়ের পড়াশোনার পুরো খরচ বহন করার উদ্যোগ। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে ৬টি টয়লেট করে দেওয়া ও যশ বিধ্বস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যাওয়া। নাচ শিখিয়ে ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্জিত অর্থকে এভাবে কাজে লাগিয়ে চলেছেন তিনি। এভাবেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন কুন্তী ও সুস্মিতা। বাড়িয়ে রেখেছেন তাঁদের হাত। বহু অসহায় হাতকে শক্ত করে ধরার জন্য।

24th     July,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ