বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

অভ্যাসের আঁকিবুকি 

বিভিন্ন লেখকের লেখা জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁরই তুলির টানে। বইয়ের সেই ছবি নিয়ে দিনরাত আঁকিবুকিতে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন সিঙ্গাপুর নিবাসী দেবস্মিতা দাশগুপ্ত। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অন্বেষা দত্ত।

বলতে গেলে গ্রাফিক নভেল নিয়েই তাঁর দিনযাপন। আর এই কাজে দেবস্মিতা দাশগুপ্ত নিজেকে যুক্ত রেখেছেন বেশ কিছু বছর। গ্রাফিক নভেল কী? বোঝাতে গিয়ে দেবস্মিতা বললেন, ‘গ্রাফিক নভেলের পরিসর অনেক বড়। কয়েকটি নির্দিষ্ট ধারণার মধ্যে বিষয়টিকে বেঁধে ফেলা যাবে না।’ তাঁর ব্যাখ্যা, এমন কোনও ছোট আখ্যান যেটিকে ‘গ্রাফিক ফর্ম’ (অর্থাৎ ছবির মাধ্যমে)-এ তুলে ধরা যায়, তাই-ই হল গ্রাফিক নভেল। সেটা কল্পনার ভিত্তিতেও হতে পারে, কল্পনা-বাস্তব মিশিয়ে হতে পারে বা শুধু বাস্তব ঘটনার ওপরেই ভিত্তি করে হতে পারে।
বছর দুই আগে ছবির পাশাপাশি শব্দ জুড়ে সৃষ্টি করেছিলেন নিজের গ্রাফিক নভেল ‘নাদিয়া’। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হলে একটি বয়ঃসন্ধির মেয়েকে কতটা সংকট ও যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাঁর ছোট্ট আখ্যানে ফুটে উঠেছিল সেই ছবি। তবে এত দিন ইংরেজি লেখার সঙ্গেই নিজের রেখাচিত্র তুলে ধরতেন দেবস্মিতা। বাঙালি হয়েও বাংলা ভাষায় কাজ করার আনুষ্ঠানিক সুযোগ সেভাবে হয়ে ওঠেনি তাঁর।
এবার সেই সুযোগ পেয়ে মাতৃভাষায় কাজ করেছেন দেবস্মিতা। তবে নভেল নয়, বুকলেটে। কিছুদিন আগে বঙ্গের ছেলেমেয়েদের জন্য ছবি এঁকেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে শিশুদের যৌন হেনস্থা রুখতে নানা সচেতনতামূলক প্রচারকাজ চলে। জাতীয় স্তরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লেহর ইন্ডিয়া’ এবং ভারতে কর্মরত একটি ফরাসি সংস্থা (Terres des Hommes) দেবস্মিতাকে এমনই প্রচারের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। শিশুদের জন্য তুলি ধরতে দেরি করেননি শিল্পী। তাঁর আঁকা চরিত্ররা জ্যান্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বুকলেটে। নিজের রাজ্য ছাড়া প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডেও হিন্দিতে বিভিন্ন বুকলেটে এই কাজ করেছেন তিনি। দুই রাজ্যেই বুকলেট পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। সংস্থাগুলি বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়ে এবং শিশুদের কাছে গিয়ে সেই বুকলেটের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর কাজটি করবে।
দেবস্মিতা জানালেন, এই বুকলেটে আছে চারটি কবিতা আর তিনটি চরিত্র— বৈশাখী, মণিমালা আর সাকিনা। পুরো ভাবনাটাই ছবি-কথায় তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সমাজ কীভাবে এই ধরনের হেনস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং শিশুরাই বা কীভাবে সরাসরি মোকাবিলা করবে এই সমস্যার, তারই হদিশ রয়েছে বুকলেটগুলোয়। বৈশাখী একটু ছোট বাচ্চাদের জন্য। মণিমালা তুলনায় একটু বড়। আর সাকিনা পুরোপুরি কিশোরী। তিনটি কবিতার ছবি তাই তিন রকম। বৈশাখী বুঝছে ইভটিজিং কী, মণিমালা দেখছে পরিচিতদের মধ্যে থেকেও কীভাবে বিপদ ঘটতে পারে আর সাকিনা জানছে ভুল লোকের পাল্লায় পড়লে কী করা উচিত।
কীভাবে ওদের ছবি নিয়ে ভাবনাচিন্তা এগয়? দেবস্মিতা বললেন, ‘আমায় বলা হয়েছিল এই গল্পগুলো মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকে ঘিরে। তাই বৈশাখীর কাজটা করতে গিয়ে ছবির আশপাশে লাল মাটি প্রাধান্য পেয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম মাথায় রেখেই ওটা করা। বাড়িঘর, ল্যাম্পপোস্ট, জামাকাপড় সবই সেভাবে এসেছে। আর রাজ্যটা নিজের। তাকে তো সেভাবেই চিনি। তাই কোনও অসুবিধেই হয়নি।’ তবে তার পাশাপাশি অনলাইনে ভিস্যুয়াল রিসার্চও করেছেন তিনি।
এই মুহূর্তে আরও দু’টি নভেলের জন্য কাজ করছেন দেবস্মিতা। সেগুলিতে মহিলা চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথম উপন্যাসটি মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে। দ্বিতীয় নভেলটি নিয়ে এখনই বিশদে বলতে চাইছেন না তিনি। নিজের গ্রাফিক নভেল ‘নাদিয়া’-র জন্য সম্প্রতি টাটা পরাগ অনার লিস্টে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন নানা ধরনের পুরস্কার।
ছবি আঁকাটা তাঁর কাছে অনেকটা অভ্যাসের মতো। ছোটবেলা থেকে আর পাঁচজনের মতোই টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স পড়তেন পাঠভবনের প্রাক্তন এই ছাত্রী। তবে পড়াতেই শেষ হয়ে যায়নি তাঁর অভিজ্ঞতা। ছবিগুলো তাঁকে ভাবাত। নিজেকে দেবস্মিতা বলেন, ‘ভিস্যুয়াল থিঙ্কার।’ গ্রাফিক নভেলের সঙ্গে মিলে যাওয়া সেই থেকেই। কারণ সেখানে শব্দ কম, বাঙ্ময় হয় ছবিমালা। তাই তাঁর গ্রাফিক নভেলের পাতায় পাতায় সজীব সব ছবি। চরিত্রের প্রয়োজনে কিছু কিছু শব্দ শুধু সঙ্গ দেয় তাদের। তাই ছোটদের জন্য সে গ্রাফিক নভেল দেখে মুগ্ধ হন বড়রাও।  

20th     February,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ