বাঙালির কাছে বর্ষা মানেই জমিয়ে ইলিশ ভোজ। সেই কথা মাথায় রেখেই রেস্তরাঁর এগজিকিউটিভ শেফ আজাদ আরিফ দু’টি ইলিশের রেসিপি সাজিয়ে দিলেন আপনাদের জন্য।
ইলিশ মাছের কদর বাঙালির প্রায় সব ঘরেই পাবেন। ইলিশে অরুচি এমন বাঙালি পাওয়া ভার। বর্ষার শুরুতে ইলিশ ওঠে বাঙালির হেঁশেলে আর সেই পর্ব চলে পুজো পর্যন্ত। বাঙালরা তো সরস্বতী পুজোতে জোড়া ইলিশ খেয়ে ইতি টানে। তারপর আবারও সেই বর্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা। ইলিশের নানারকম পদের মধ্যে বাঙালি রান্নারই বাহুল্য লক্ষ করা যায়, জানালেন অ্যাস্টর হোটেলের এগজিকিউটিভ শেফ আজাদ আরিফ। কিন্তু তেমন পদ তো বহুবার বিভিন্নভাবে রাঁধা হয়ে গিয়েছে। তাই চেনার পাশাপাশি ইলিশের অচেনা কিছু পদ নিয়েও হাজির হয়েছেন তিনি। তেমনই একটি পদ হল ইলিশ মাছের কেক। কাঁটা ছাড়িয়ে ইলিশ মাছ রান্নার ঝক্কি নেহাত কম নয়। তবু খাদ্যরসিক বাঙালিদের কথা ভেবে সেই ঝক্কিও তিনি নিতে রাজি। শুধু তাই নয়, রান্নার রেসিপিটিও শিখিয়ে দিয়েছেন গৃহিণীদের। এছাড়া আর একটি অভিনব পদ হল ইলিশের মুড়ি ঘণ্ট। এই পদটি সাধারণত রুই বা কাতলা মাছের মাথা দিয়েই রাঁধার চল বাঙালি হেঁশেলে। কিন্তু শেফ এখানে ইলিশের মাথা ব্যবহার করেছেন। আঁশটে গন্ধ এড়াতে তিনি মাছের মাথাটা প্রথমে রসুন ও পেঁয়াজ সহযোগে ভাপিয়ে নিচ্ছেন। তারপর সেই জল ফেলে দিয়ে তা শুকনো করে মুছে নিয়ে ছাঁকা তেলে কড়া করে ভেজে নিচ্ছেন। ভাজার সময় আবার সামান্য লেবুর রসও মেশাচ্ছেন তাতে। সব মিলিয়ে আঁশটে গন্ধ একেবারেই গায়েব। এরপর মুড়িঘণ্টর রেসিপি অনুযায়ী রান্না করছেন তিনি ইলিশের মুড়ি ঘণ্ট। এমনই চেনা অচেনা ইলিশের স্বাদ নিতে চাইলে চলুন অ্যাস্টর হোটেলের কাবাব এ কিউ রেস্তরাঁয়। অন্যথায় বাড়িতেই রেঁধে ফেলুন ইলিশের রেসিপি দু’টি।
ঠাকুরমার ভাপা ইলিশ
উপকরণ: ইলিশ মাছের গাদা পেটি মিলিয়ে ১টি টুকরো, সরষে র তেল ২৫ মিলি, কালো ও সাদা সরষে ১৫ গ্রাম করে, হলুদ গুঁড়ো ৫ গ্রাম, কাঁচালঙ্কা ৩টে, পোস্ত ৫ গ্রাম, নুন।
পদ্ধতি: মাছ ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। তারপর তাতে পরিমাণ মতো নুন ও হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে রাখুন। এরপর কালো ও সাদা সরষে একটু গরম জলে ভিজিয়ে রেখে দিন অন্তত দশ মিনিট। তারপর তা ছেঁকে নিন। পোস্তও ভিজিয়ে ছেঁকে নিন। সরষে ও পোস্ত আলাদা করে ছাঁকা হয়ে গেলে তা অল্প নুন ও একটা কাঁচালঙ্কা সহ একসঙ্গে বেটে নিন। সরষে পোস্তবাটার সঙ্গে অল্প তেল আর হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। তারপর একটা স্টিলের টিফিন বক্সে খানিকটা কাঁচা সরষে র তেল মাখিয়ে নিন। এবার এতে মাছটা রাখুন। তারপর মাছে সরষে বাটার মিশ্রণটা মাখান। সঙ্গে কাঁচা সরষের তেলও মাখাবেন। উপর থেকে কিছুটা সরষের তেল ছড়িয়ে দিন ও দুটো কাঁচা লঙ্কা চিরে দিন। তারপর টিফিন বক্সের মুখটা বন্ধ করে দিন। এবার প্রেশার কুকারে জল দিন। তারপর মুখবন্ধ টিফিন বক্স প্রেশারে বসিয়ে ১টা সিটি তুলুন। তারপর ভাপে রেখে দিন আরও দশ মিনিট। মিনিট দশেক বাদে প্রেশার কুকারের ঢাকা খুলে টিফিন বক্স বের করে নিন। এবং তারও খানিকক্ষণ বাদে টিফিন বক্সের মুখ খুলে ভাপা ইলিশ পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।
ইলিশ মাছের কেক
উপকরণ: আলু ৭০০ গ্রাম (খোসা ছাড়িয়ে বড় টুকরো করে কাটা), সরষে বাটা ১ টেবিল চামচ, ডিল পাতা কুচি আঁটি, ফ্রেশ ক্রিম ৫ টেবিল চামচ, ১টা লেবুর খোসা কুরিয়ে নেওয়া, ইলিশ মাছ ৮০০ গ্রাম, জল ৬০০ মিলি, অর্ধেক করে কাটা পেঁয়াজ ১টা, রসুন ২কোয়া, তেজপাতা ১টা, গোলমরিচ ১ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, সাদা তেল ভাজার জন্য।
মাখার জন্য: ময়দা ১০০ গ্রাম, ফেটানো ডিম ২টো, ব্রেড ক্রাম্বস ২০০ গ্রাম।
পদ্ধতি: একটা বড় পাত্রে আলু সেদ্ধ করে নিন। তারপর জল ঝরিয়ে রাখুন। আলু গরম অবস্থাতেই চটকে মেখে নিন। এই মাখা আলুতে সরষে বাটা, নুন, ফেটানো ক্রিম ও লেমন জেস্ট ও ডিল পাতা মিশিয়ে আবারও সবটা ভালো করে মেখে নিন। এবার একটা বড় পাত্রে ৬০০ মিলি জল নিন। তাতে পেঁয়াজ, রসুন, গোলমরিচ ও তেজপাতা দিয়ে ফুটতে দিন। ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে মাঝারি করে নিন। তারপর ইলিশ মাছ তাতে দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। মাছ সেদ্ধ হয়ে যখন কাঁটা থেকে ছেড়ে আসবে তখন আঁচ বন্ধ করে দিন। এবার এই মাছ থেকে আস্তে আস্তে কাঁটা বেছে বাদ দিয়ে দিন। কাঁটা বাদ দেওয়া মাছ হাত দিয়ে মেখে তার সঙ্গে আলুর মাখা মিশ্রণ মিশিয়ে নিন। নুন ও মরিচ গুঁড়ো যোগ করুন স্বাদ মতো। এবার এর থেকে আট বা দশটা বল তৈরি করুন। সেগুলো চ্যাপ্টা করে প্যাটির মতো গড়ে নিন। এবার একটা বড় থালায় ময়দা ছড়িয়ে দিন, মাঝে বাটিতে ফেটানো ডিম রাখুন আর তার পাশে আর একটা বড় থালায় ব্রেড ক্রাম্বস ছড়িয়ে দিন। মাছের প্যাটি প্রথমে ময়দায় এপিঠ ওপিঠ করে নিন। তারপর তা ডিমের গোলায় ডুবিয়ে নিন এবং সব শেষে ব্রেড ক্রাম্বসে গড়িয়ে নিন। তারপর ছাঁকা তেলে ভেজে তুলুন। ইলিশ খুবই নরম মাছ। ফলে তা গড়ার সময় এবং ভাজার সময় খুবই সাবধান থাকবেন। খেয়াল রাখবেন মাছ যাতে ভেঙে না যায়।