পাঞ্জাবের আঞ্চলিক রান্নার ঘরোয়া পদ নিয়ে তাজ নিউটাউনে চলছে ‘সাদা কসবা’ ফুড ফেস্ট। দায়িত্বে রয়েছেন শেফ সঞ্জীব চোপড়া। সেখান থেকেই একটি রান্নার রেসিপি জানালেন শেফ।
পাঞ্জাবি রান্না বললেই শুধু বাটার মশলা আর টিক্কা কাবাবের কথা মনে হয় আমাদের। কিন্তু এই ঘরানার রান্না অনেক বিস্তৃত। এখানে আমিষ ও নিরামিষের বিভিন্ন বাহারি স্বাদ পাবেন। সেই স্বাদ চেনাতেই কলকাতার তাজ নিউটাউনে এসেছেন শেফ সঞ্জীব চোপড়া। হোটেলের শামিয়ানা রেস্তরাঁয় চলছে সাদা কসবা ফুড ফেস্ট। পাঞ্জাবের আঞ্চলিক পদের ঘরোয়া রান্না পাবেন এখানে। গতানুগতিক বাটার চিকেন, ডাল মাখানি, মটর পনিরের মতো খাবার এখানে পাবেন না। বরং অবিভক্ত পাঞ্জাবের খাবার পাবেন। রুটির মধ্যে তন্দুরি রাখা হয়নি। বাড়িতে সাধারণত তন্দুরি আভেন থাকে না। ফলে সেই ধরনের রুটি বাড়িতে বানানো সম্ভব নয়। তাই হাতে গড়া, তাওয়ায় সেঁকা রুটির বিভিন্ন রকম রাখা হয়েছে মেনুতে। একইভাবে পাঞ্জাবের জনপ্রিয় মিষ্টি সোহন হালুয়া মেনুতে রাখা হয়নি। তার বদলে আটার একরকম হালুয়া রাখা হয়েছে যা গুরুদ্বারে প্রসাদ হিসেবে পাওয়া যায়। শেফ বললেন, পাঞ্জাবের এক এক জেলায় খাবারের ধরন এক এক রকম। মশলার ব্যবহার, মশলা কষিয়ে নেওয়ার ধরন ইত্যাদির উপর রান্নার স্বাদ সম্পূর্ণ বদলে যায়। পাঞ্জাবিরা মিষ্টিরও ভীষণ ভক্ত। সেক্ষেত্রে দুধ জিলিপি একটা বিশেষ খাবার যা পাঞ্জাবের সব মিষ্টির দোকানেই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একটু মোটা করে জিলিপি ভাজা হয়। সেটাকে গরম দুধে ফেলে খাওয়া হয়। পাঞ্জাবের আর একটা রান্না আছে, মাংসের পদ, কিন্তু একেবারেই ভিন্ন ধাঁচে তৈরি। এই পদটিতে শালগম দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মাংস সব ধরনের শাহি মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করা হয়। তার মধ্যে টুকরো করে কাটা শালগম মেশানো হয়। মাংসের সঙ্গে আলু খেয়ে বাঙালিরা যেমন অভ্যস্ত তেমনই পাঞ্জাবিদের মাংসের ঝোলে শালগম মেশানো হয়। রান্নার পদগুলোর মধ্যে পাঞ্জাবের একটা ঘরানা ধরা হয়েছে। অবিভক্ত পাঞ্জাব থেকে ওয়াঘা, অমৃতসর হয়ে যেমনভাবে রান্নার ধরন বদলে গিয়েছে, তেমনই রেসিপি রেখেছেন শেফ এই ফুড ফেস্টে। ভিন্ন স্বাদের এইসব খাবারের সন্ধান পাবেন তাজ নিউটাউনে। ফেস্ট চলবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। লাঞ্চ ও ডিনারে আ-লা-কার্ট মেনুতে পাবেন পদগুলো। সেই মেনু থেকে একটি রেসিপি জানালেন শেফ সঞ্জীব চোপড়া।
শিঙাড়া (আড়) ফিশ ফ্রাই
উপকরণ: আড় মাছ দেড় কেজি, মল্ট ভিনিগার হাফ কাপ, নুন আন্দাজ মতো, আদা বাটা ৩ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ৩ টেবিল চামচ, জোয়ান ৩ টেবিল চামচ, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো হাফ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো হাফ চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো হাফ চা চামচ, ছোলার ছাতু ১ কাপ, অরেঞ্জ বা লাল ফুড কালার ২ ফোঁটা, সামান্য তেল ভাজার এবং চাট মশলা উপরে ছড়ানোর জন্য ।
পদ্ধতি: পাঞ্জাবি ভাষায় ‘আড়মাছ’-কে শিঙাড়া বলে ডাকা হয়। এই রান্নায় প্রথমে মাছের টুকরো মাঝের কাঁটা সমেত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ভিনিগারে নুন মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে মাছের টুকরোগুলো অন্তত ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর তা তুলে শুকনো ন্যাপকিন দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। জোয়ান ধুয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর তা বেটে নিন। এবার জোয়ান বাটার সঙ্গে আদা-রসুন বাটা, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, অল্প নুন ও ছোলার ছাতু একসঙ্গে মেশান। তাতে পরিমাণ মতো জল আর ফুড কালার মিশিয়ে একটা ঘন ব্যাটার তৈরি করে নিন। এই ব্যাটারে মাছের টুকরোগুলো কোট করে নিন। মাছের দু’দিকেই সমানভাবে যেন ব্যাটার লাগে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এবার একটা ট্রে অল্প গ্রিজ করে তার উপর মাছের টুকরোগুলো সাজিয়ে দশ মিনিট রাখুন। ইতিমধ্যে কড়াইতে তেল গরম করে নিন। তারপর খুব আস্তে আস্তে মাছ ভেজে নিন। এপিঠ ওপিঠ করে ভাজবেন একে একে। দু’দিকেই সমান ভাজা হলে তেল থেকে তুলে নিন। তার উপর চাটমশলা ছড়িয়ে লেবুর চাকা সাজিয়ে পরিবেশন করুন।