বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

মখমলের পরশ

ত্বক  ঝকঝকে রাখতে আধুনিক নারীর সঙ্গী ওয়্যাক্সিং। ত্বক থেকে রোম দূর করার উপায়টি প্রাচীনকাল থেকেই পাশ্চাত্য সমাজে প্রচলিত। কেমন ছিল সেই ধরন? তার বদলই বা কতটা হয়েছে? বিউটিশিয়ান বিদ্যা সিং-এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় কমলিনী চক্রবর্তী।

মিশরের মহিলারা ছিলেন ভীষণ ফ্যাশনদুরস্ত। স্নানের জলে সুগন্ধি মেশানো, হাত পায়ের ত্বক মোলায়েম রাখার জন্য নিরন্তর ত্বকচর্চা ছিল প্রাচীন মিশরীয় রীতি। ক্রমশ এই রূপচর্চায় নতুনত্ব দেখা দিল। হাত ও পায়ের ত্বক আরও পেলব রাখতে অবাঞ্ছিত লোম ফেলার কথা ভাবলেন রাজপ্রাসাদের মহিলারা। রানি ও রাজকন্যাদের মধ্যে এই নিয়ে গবেষণা শুরু হল। দাসদাসীরা বিভিন্ন ধরনের অয়েন্টমেন্ট, লোশন ইত্যাদি বানাতে শুরু করল প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে। এই গবেষণা থেকেই উঠে এল একটা ‘স্টিকি জেল’। একটু চটচটে। ত্বকে লাগালে কামড়ে ধরে, টেনে তুলতে হয় গা থেকে। আর সেই সময়েই অবাঞ্ছিত লোমও উঠে আসে। কী ছিল সেই চটচটে জেলটিতে? তেল, মধু ও চিনি। সেই সময় অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলার পদ্ধতিকে বলা হতো ‘স্কিন সুগারিং’। মধু ও চিনির ব্যবহারের কারণেই এই নামকরণ। তবে লোম তোলার এই পদ্ধতিটি একটু বেদনাদায়ক ছিল বলেই ক্রমশ চিনি ও মধু বাদ দিয়ে লেবু, চালের গুঁড়ো এবং আর্সেনিক মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তাতে চটচটে ভাবটা একটু কম হলেও লোম তোলার কাজে এই মিশ্রণ ভালোই কার্যকর হয়ে উঠেছিল। বিশ্বজোড়া খ্যাতি মিশর থেকে ওয়্যাক্সিং বা লোম তোলার এই প্রথা পাড়ি জমিয়েছিল রোম দেশে। রোমে পুরুষ নারী নির্বিশেষে দাড়ি, গোঁফ ও হাত পায়ের লোম তুলতেন সুন্দর হয়ে ওঠার জন্য। ক্রমশ এই প্রয়াস ব্রিটেনের রাজপরিবারেও ছড়িয়ে পড়ে। রানি প্রথম এলিজাবেথ তো ভ্রু আলাদা করে শেপ করার জন্য তা সম্পূর্ণ কামিয়ে কপালের উপর ভ্রুয়ের রেখা আঁকতে শুরু করেন। যাই হোক, ওয়্যাক্সিং প্রসঙ্গেই ফেরা যাক, ব্রিটিশ রাজপরিবারে নিয়মিতভাবে ওয়্যাক্সিং-এর চল শুরু হওয়ার পরে তার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়াতে আর বিশেষ সময় লাগেনি।

আধুনিক ছোঁয়া
এরপর ক্রমশ আমাদের ত্বকচর্চার উপায় আধুনিক ও উন্নত হওয়ার পর প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে কিছু কেমিক্যালেরও ব্যবহার শুরু হল হাত পায়ের লোম তোলার মলমে। সেই পদ্ধতিতেও কালের নিয়মে নানা বদল ও বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে। তারই কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করলেন বিউটিশিয়ান বিদ্যা সিং। তাঁর কথায়, ‘ভাবলে আশ্চর্য লাগে যে, পাশ্চাত্য রূপচর্চায় ক্রিম বা লোশনের প্রচলন যত না পুরনো, তার চেয়ে ঢের বেশি পুরনো হাত ও পায়ের লোম তোলার পদ্ধতি! এই নিয়ে একটু পড়াশোনার পর জানতে পারলাম আদি সভ্যতায় গুহামানবদের লোমশ চেহারাকে ‘অসভ্য’ (আনসিভিলাইজড) মনে করতে শুরু করে পরবর্তী যুগের মানুষ। তারা তখন নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চায়। এবং সেইক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপই হয় পরিচ্ছন্নতা। এই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্যই লোম তোলার বিভিন্ন উপায় তারা অবলম্বন করতে শুরু করে।’ 

তেল মধু কিশমিশ
এই পদ্ধতিতে আধুনিকতার যত ছোঁয়া লাগল, তত তা কম বেদনাদায়ক হতে শুরু করল। একেবারে গোড়ার দিকে তেলের সঙ্গে একটা কেমিক্যালের মিশ্রণে এক ধরনের হেয়ার রিমুভিং ক্রিম তৈরি হয়। এই ক্রিমে আঙুরের পাল্প বেটে মেশানো হতো। তাতে একটা চটচটে ভাব তৈরি হতো। বেশিক্ষণ খোলা হাওয়ায় রাখলে তা জমে যেত। তখন অল্প গরম করে ক্রিমটিকে প্রায় তরল অবস্থায় এনে তা হাত ও পায়ে লাগানো হতো। এরপর নরম কাপড় দিয়ে তা তুলে ফেললে লোম উঠে আসত। এই পদ্ধতিতে লোম তোলার পর ত্বক একটু রুক্ষ হয়ে যেত। নানারকম লোশন ও অয়েন্টমেন্টের ব্যবহারে তখন ত্বকের মোলায়েম ভাব ফেরাতে হতো। এরপর তেলের বদলে মধু ও কিশমিশ বাটা মিশিয়ে একটা ক্বাথ তৈরি করলেন বিউটিশিয়ানরা। তাতে লোম তোলার কাজ একটু সহজ হল ঠিকই, কিন্তু অনেকেরই আবার এই মিশ্রণ স্যুট করল না। ত্বকে র‌্যাশের সমস্যা দেখা দিল। ফলে ওয়্যাক্সিংয়ের আরও নতুন উপাদান ও পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু হল।

বেরি ও প্লামের মিশ্রণ
অতিরিক্ত সেনসিটিভ ত্বকের কথা ভেবে কিছু ফলের রস ও ক্বাথের সঙ্গে মধু, তেল ও সামান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে বডি ওয়্যাক্স বানানোর কথা ভাবলেন বিউটিশিয়ানরা, তখন ইংল্যান্ডে প্রাপ্ত কয়েক ধরনের বেরির (ব্লুবেরি, র‌্যাস্পবেরি) সঙ্গে প্লামের ক্বাথ ও রস মিশিয়ে তার সঙ্গে সামান্য কেমিক্যাল দিয়ে একটা চটচটে ভাব আনা হয়। এই জেল ত্বকে লাগিয়ে তা তুলে ফেলা হলে দেখা যায় যে তাতে খুব একটা লাল ভাব, র‌্যাশ ‌ইত্যাদি হয় না। ফলে এই ফ্রুট ওয়্যাক্স মহিলামহলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

চকোলেট ও আমন্ড অয়েল
সময় যত এগিয়েছে ততই ওয়্যাক্স জেলের মান উন্নত হয়েছে।  ফ্রুট ওয়্যাক্সের থেকেও উন্নত ওয়্যাক্স, চকোলেট ও আমন্ড অয়েল ওয়্যাক্স ব্যবহার শুরু করেছেন আধুনিকারা। এই ওয়্যাক্স যে শুধু কম যন্ত্রণাদায়ক তাই নয় এতে ত্বক ভালো থাকে এবং উজ্জ্বল হয়। চকোলেট ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে। ফলে এই চকোলেট যখন তরল করে তা আমন্ড ও সয়া অয়েলের সঙ্গে মেশানো হয় তখন ওই মিশ্রণ ত্বক উজ্জ্বল তো করেই, সঙ্গে ভিটামিনেরও জোগান দেয়। এই মিশ্রণের সাহায্যে যে বডি ওয়্যাক্স তৈরি হয় তা একইসঙ্গে সৌন্দর্য বাড়াতে এবং ত্বককে পুষ্ট করতে সাহায্য করে। ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে যে লালভাব দেখা দেয়, ত্বকে চকোলেট ওয়্যাক্স ব্যবহার করলে তা হয় না।

চিনি আর লেবুর রস
‘মজার কথা হল আধুনিক যুগের পেনলেস ওয়্যাক্স কিন্তু সেই প্রাচীন উপকরণ দিয়েই তৈরি হয়েছে’, বললেন বিদ্যা। লেবুর রস, তেল ও গরম জল একসঙ্গে মিশিয়ে তা ফুটিয়ে ঘন করে এই ওয়্যাক্সটি তৈরি করা হয়। এতে কোনও রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার করা হয় না বলে তা যে কোনও ত্বকের পক্ষেই উপযুক্ত। এই ওয়্যাক্সটি ত্বকের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকে না বলে তা তুলতে কোনও ব্যথা লাগে না। শুধু তাই নয়, এটি ক্রমাগত একই জায়গায় লাগানো যায়। ত্বকের কোনও ক্ষতিও হয় না। ফলে এই ধরনের ওয়্যাক্স ত্বকের পক্ষে সবচেয়ে ভালো। তাছাড়া লেবুর রস ন্যাচারাল ক্লেনজার। ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতেও তা সাহায্য করে। রোমকূপের গায়ে লেগে থেকে তা লোম তোলার কাজ করে বলে ব্যথা হয় না। 

26th     August,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ