বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

ফুরফুরে শিফন

শিফনের শাড়ি আবার ট্রেন্ডিং! তার আগমন থেকে জনপ্রিয়তার কথা জানালেন কমলিনী চক্রবর্তী।

ঘোড়দৌড়ের মাঠ। একের পর এক বাজি রাখা ঘোড়াগুলো ছুটে যাচ্ছে। অপেক্ষমান দর্শকের মাঝে শোনা গেল উত্তেজিত এক রমণী কণ্ঠ, সোসাইটি লেডির মতো সাদা কালো শিফন ককটেল ড্রেস আর শিফন ট্রিম লাগানো হ্যাটে সজ্জিত হয়েও যিনি উত্তেজনার বশে কুকথা বলে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গে শ্মশানের নিস্তব্ধতা মাঠে। হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘মাই ফেয়ার লেডি’র কথাই বলছি। অড্রে হেপবার্নের সাজে পরিচালক শিফনের পোশাক আর লেসের কারুকাজের আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার কয়েক দশক পরে ‘প্রিটি উওম্যান’ ছবিতেও একইরকম দৃশ্য। সেই রেসের মাঠ, নায়িকার বেশে জুলিয়া রবার্টস। পরনে পোলকা ডটেড শিফন সান ড্রেস। 

সিল্ক থেকে শিফন   
সিল্কের সুতোকে আরও সূক্ষ্ম কায়দায় বুনলে যে সুতোটি তৈরি হয়, তারই নাম শিফন। ফরাসি শব্দ ‘শিফে’ থেকে শিফন। আক্ষরিক বাংলায় ন্যাকড়া! অতিরিক্ত নরম বলেই এমন নামকরণ, বলেন ফরাসি ডিজাইনার নিকোল ফারহি।  
ফরাসি শব্দ থেকে নামকরণ হলেও ফ্যাব্রিকের আগমন কিন্তু প্রাচ্যের চীন থেকে। ১৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে শিফনের আগমন। নিকোলের কথায়, ফরাসি কোতিয়র বরাবরই ট্রেন্ডসেটার। শিফনেও তার অন্যথা হয়নি। দামি এই ফ্যাব্রিকটি প্রথম জায়গা করে নেয় একেবারে উচ্চবিত্ত মহলে। সেই সময় রানিদের গাউন কিংবা আর্ল-ডিউকদের ইনার কোট তৈরি করতে এই কাপড় ব্যবহার হতো। ক্রমশ শৌখিন পরশ উচ্চবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। ১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই ফ্যাব্রিক দিয়ে নানা পোশাক তৈরি শুরু হয়, জানালেন নিকোল। এর মধ্যে শিফনের উপর নানা পরীক্ষা হয়েছে। সুতো বোনার কায়দায় তারতম্য এসেছে। উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের ঘরে পদার্পণের জন্য ফ্যাব্রিকের গুণগত মান হয়তো একটু মার খেয়েছে। পিওর সিল্ক থেকে সফট সিল্ক বা পলি সিল্কের সুতোকে আরও সূক্ষ্ম কায়দায় বুনে সফট শিফন বা পলি শিফন তৈরি হয়েছে। এমন নানা বদল পেরিয়ে শিফন আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। 

পোশাকের রূপ বদল
নিকোল জানান, প্রথম দিকে যখন শিফন সুতো বোনা শুরু হয় তখন বিদেশে বস্ত্র বোনা হতো মূলত সিল্ক বা পশমের সুতো দিয়ে। বস্ত্র ব্যবসার বাজার যত ছড়িয়েছে ততই তার গুণগত মানে বদল এসেছে। পলিয়েস্টার, সিন্থেটিক দিয়ে পোশাক তৈরি শুরু হয়েছে। ভারতে ব্রিটিশ শাসনপর্বে সুতির কদর বাড়তে থাকে ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের অন্যান্য দেশে। ফলে বস্ত্রশিল্পের বদলের হাত ধরেই শিফন সুতোও পাল্টায়। পোশাকের নকশাতেও বদল আসে। গাউন স্টাইলের পোশাক থেকে ইউরোপের মহিলামহলে ক্রমশ সানড্রেস, ফ্রক, ইভনিং ড্রেস ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়। সেই অনুযায়ী শিফনের ফ্যাব্রিকও তার রূপ বদল করে। বল গাউনে যেমন শিফন সুতো ব্যবহৃত হতো, সামার ড্রেস বা ইভনিং গাউনে তেমন সুতো ব্যবহার করা হয় না। 

সুতো বোনার প্যাটার্ন
শিফন সুতো বোনার কায়দাটাই আলাদা। একটা এস-জেড প্যাটার্নে এই সুতো বোনা হয়। যে মেশিনে সুতোটা পরানো হয় সেটা এস শেপে তৈরি। সেই মেশিনে সুতোটা বোনা হয় জেড প্যাটার্নে। এই বুননে একটু খরখরে ভাব আসে কাপড়ে। সেটাই শিফন ফ্যাব্রিকের বিশেষত্ব, জানালেন দিল্লিনিবাসী ডিজাইনার রিনা ঢাকা। তাঁর কথায়, ‘প্রথম দিকে এখানে শিফনের কদর ছিল না। সি থ্রু বা স্বচ্ছ এই ফ্যাব্রিক আমাদের দেশের ফ্যাশনের সঙ্গে খাপ খেত না। বিদেশি প্রভাবে ক্রমশ তা জনপ্রিয় হয়। মোটামুটি ২০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি থেকে শিফনের আগমন ঘটে আমাদের দেশে। এবং রাজপরিবারের মহিলাদের হাত ধরেই এই ফ্যাব্রিক ভারতীয় ফ্যাশনে ঢুকে পড়ে।’ 

ভারতে শিফন সাজ
রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের রাজপরিবারে শিফনের শাড়ির কদর শুরু হয় নববধূদের মাঝে। রাজপরিবারে হালকা সাজের চল দেখা দিয়েছিল তখন। ভারী সোনা বা হীরকখচিত গয়নার বদলে মুক্তো, রুবি, এমারেল্ড ইত্যাদির গয়নার সঙ্গে হালকা ফ্যাব্রিকের অফ বিট প্রিন্টের শাড়ির খোঁজ শুরু হয়। তখনই শিফনের কদর শুরু ভারতে। তখন শুধু শাড়িতেই এই ফ্যাব্রিক মিলত। আর সেই শিফন খুবই দামি সিল্ক সুতো থেকে বোনা হতো। ক্রমশ খাস ছাড়িয়ে আমজনতার মাঝে শিফনের কদর শুরু ১৯৩৮ সাল নাগাদ। শিফনের জ্যাকেট, লং গাউন, মিডি ফ্রকের চল দেখা গেল ভারতের অ্যাংলো সমাজে। প্রিন্টেড শিফন মধ্যবিত্ত মহিলাদের প্রিয় হল সাতের দশকের শেষ দিক বা আটের দশকের গোড়ায়, জানালেন রিনা। শিফনের প্রিন্টেড থান থেকে শাড়ির মতো ড্রেস মেটিরিয়ালও তৈরি হতো। শাড়ির জন্য রেশম সুতোয় বোনা সরু পাড়ওয়ালা শিফন ফ্যাব্রিকও ব্যবহার করা হতো। 

বলিউডে শিফন স্টাইল
যে যাই বলুক ভারতে শিফনের জনপ্রিয়তার ৯০ ভাগ ক্রেডিট চোখ বুজে প্রয়াত পরিচালক যশ চোপড়াকেই দেওয়া যায়। বলিউড ছবির নাচগানের দৃশ্যে শিফন শাড়ির দৃশ্যায়ন না ঘটলে এই ফ্যাব্রিক হয়তো বা উচ্চবিত্ত মহলেই একচেটিয়া থেকে যেত। 
‘তেরে মেরে হোঁঠো পে ...’ চাঁদনী ছবির জনপ্রিয় গানটি মনে পড়ছে? হলুদ সেলফ এমব্রয়ডারি করা শিফন শাড়িতে সবুজ গালচে বেছানো পাহাড়ি উপত্যকার ঢাল বেয়ে নৃত্যের ছন্দে নেমে আসছেন শ্রীদেবী। তারও বেশ কয়েক বছর আগে সিলসিলা ছবিতে, ‘নীলা আসমাঁ সো গ্যয়া...’ গানের দৃশ্যে রেখার পরনে গাঢ় ধূসর রঙের শিফন কামিজের কথাই বা ভোলে কার সাধ্য? যশ চোপড়া মনে করতেন প্রেমের দৃশ্য নাকি শিফন শাড়ি ছাড়া বেমানান। হাওয়ায় শাড়ির আঁচল উড়লে তবেই প্রেম জমে ওঠে! এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন নায়িকাদের জীবনে প্রেম ‘একটু লার্জার দ্যান লাইফ’ নাহলে উপস্থাপনায় ভাটা পড়ে। সেই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চিত্রটা শিফন শাড়ির আঁচল উড়িয়ে, ধোঁয়া ওঠা শীতের কম্পন তুলে বোঝাতে চেয়েছিলেন পরিচালক। পরবর্তীতে ক্যাটরিনা কাইফ, অনুষ্কা শর্মা, আলিয়া ভাট-রাও শিফন সুন্দরী হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহিনি’ ছবিতে আলিয়া ভাটের টাই অ্যান্ড ডাই করা শিফন শাড়ির সাজ তো রীতিমতো হিট। পুজোর ফ্যাশনে তাই এবার শিফন-রাজ হতেই পারে, মত ডিজাইনার থেকে দোকানিদেরও।

12th     August,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ