বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

হাতে বোনার দিন

আর দু’দিন পরেই জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবস। তার আগে হাতে বোনা পোশাকের সম্ভার নিয়ে ডিজাইনার প্রশান্ত চৌহান-এর সঙ্গে কথায় অন্বেষা দত্ত।

ফিরে দেখা
বছর আটেক আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট শুরু হয় জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবস পালন। আমাদের দেশের বস্ত্র ঐতিহ্যের ধারাটি মাথায় রেখে এই বিশেষ দিনে শুরু হয়েছে হাতে তৈরি বুননের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। সকলেই জানেন, স্বদেশী আন্দোলনের সময় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে হাতে বোনা কাপড়ের একটা বিরাট ভূমিকা তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের মাহেন্দ্রক্ষণে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ইন্ডিয়া গেটের প্রিন্সেস পার্কে ভারতের যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, সেটিও ছিল খাদির তৈরি। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্টই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গ হিসেবে শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন। বিদেশের বস্ত্র থেকে শুরু করে যে কোনও দ্রব্য বয়কট করার ডাক জোরদার হয় এই সময়। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেওয়ার যে শপথ সেদিন বাংলা তথা গোটা ভারত নিয়েছিল, তার রেশ মনে রেখেছে এসময়ও। বিশ্বের হাজারো ব্র্যান্ড যতই বাজার মাতাতে আসুক, এখনও প্রতিদিন বহু মানুষ দেশীয় শিল্পে আস্থা রেখে নিজেদের কাজটি করে চলেছেন। 

ক্লাসিক স্টাইল 
হাতে বোনা ফ্যাব্রিক নিয়ে বরাবর কাজ করে এসেছেন কলকাতার ডিজাইনার প্রশান্ত চৌহান। হ্যান্ডলুম দিবসের আগে কথা হচ্ছিল তাঁর কাজ নিয়ে। চার বছর আগে নিজের ব্র্যান্ড শুরু করেছেন তিনি। এবছর পুজোর আগে পোশাকের ট্রেন্ড নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম তাঁকে। প্রশান্ত বললেন, ‘ট্রেন্ডে আমি বিশ্বাস করি না। আমার কাছে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ব্র্যান্ডের মূল কথাই হল ক্লাসিক স্টাইল। আমার ক্রেতারাও সেটা জানেন। তাঁরা সেটা পছন্দ করেন। অন্ধভাবে ট্রেন্ড অনুসরণ করার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। ক্লাসিক স্টাইল এমন একটা জিনিস যা কখনও ফ্যাশন থেকে চলে যায় না। এথনিক বা দেশীয় পোশাকের মাহাত্ম্য এটাই। একটা সুন্দর পোশাক, ঝলমলে দোপাট্টা, একজোড়া ঝুমকো, একটু কাজল-টিপ, ব্যস পুজোর জন্য তৈরি আপনি।’
তাঁর ফেস্টিভ কালেকশনে প্রশান্ত থিম রেখেছেন ‘হোয়াইট অন হোয়াইট’। ভারতের মার্বেল আর্ট মনে রেখে তাঁর এই সংগ্রহ। সেপ্টেম্বরে আরও কিছু কালেকশন আসছে। সেখানে থাকবে রাজস্থান এবং গুজরাতের লোকঐতিহ্যের ছাপ। যেমন বানজারা, কচ্ছ এমব্রয়ডারি ইত্যাদি। প্রতি সংগ্রহেই কিছু না কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করে থাকেন তিনি, এটাই নতুন ক্রেতার কাছে পৌঁছনোর কৌশল। নিজের সিগনেচার স্টাইল নিয়ে কী বলবেন? প্রশান্তের কথায়, ‘খুব মিনিমালিস্টিক স্টাইল আমাদের। আমাদের ফ্যাব্রিক ভাগলপুরে হাতে বোনা হয়। আমি নিজে সেখানে যাই। বেস ফ্যাব্রিক রেখে তার সঙ্গে একটু পরীক্ষানিরীক্ষা করারও চেষ্টা করি, সঙ্গে নতুন ফ্যাব্রিক আনি। তারপর ডাই করা, নিজেদের ব্লক প্রিন্টও থাকে। একটা বিশেষ ধরনের জারদৌসি কাজও করি। রাজপরিবারের পুরনো ছবির পোশাক দেখে সেই স্টাইল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। তসর গিছা দিয়ে প্রচুর কাজ হয়। কিন্তু তাতে আধুনিকতার ছাপ সবসময় থাকে না। সেটাই তৈরি করার চেষ্টা করেছি আমরা। যেমন একটা বেসিক কুর্তা, তার মধ্যে একটু মারোরি এমব্রয়ডারি, মেটাল কর্ডস দিয়ে। এটা পরলে গায়ে ফুটবেও না। এই ধরনের কাজের সঙ্গে তসর গিছা তো বটেই, স্পান সিল্ক বা র-সিল্কও খুব ভালো যায়। শাড়ির ক্ষেত্রেও আমি এটা ফলো করি। হ্যান্ডলুম শাড়িতে সামান্য বুটি, এই ধরনের সূক্ষ্মতাই যথেষ্ট। একগাদা কাজ করে তার সৌন্দর্য নষ্ট করায় বিশ্বাসী নই আমি। বরং তার চেয়ে সুন্দর একটা ব্লাউজ পরুন। এতে হ্যান্ডলুম শাড়ি তার স্বাভাবিক ঐতিহ্য হারাবে না, অথচ পরীক্ষামূলক ব্লাউজের সঙ্গে পরলে স্টেটমেন্ট তৈরি হবে।’
আর পুরুষদের পোশাকের জন্য কতটা সময় দেন? প্রশান্ত জানালেন, ‘কাজ শুরু হচ্ছে খুব শিগগির। এক্ষেত্রেও ঐতিহ্যেই ভরসা রাখি। তসরে সেলফ কালেকশন আসছে। পুরুষদের পোশাক আমি আরও সাধারণ রাখার চেষ্টা করছি। কারণ আমার মনে হয় মহিলারা যতটা পোশাক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা ভালোবাসেন, পুরুষরা ততটা নয়। তাই পুরুষদের জন্য আমার ব্র্যান্ড যথাসম্ভব সিম্পল। অনেক বেশি সূক্ষ্ম কাজ, বেশি এমব্রয়ডারি নয়।’

ভারতীয় চেহারা
পোশাকে কতটা ক্রেতার পছন্দ-অপছন্দ অন্তর্ভুক্ত হয়? ‘দেখুন ভারতে একটা বিশেষ শারীরিক চেহারা নিয়ে আমরা বেড়ে উঠি। আমার পোশাক তৈরির সময় সেটা সবসময় খেয়াল রাখি। ক্রেতার মাথায় থাকে একটাই বিষয়। সেটা হল, পোশাকটা পরলে তাঁকে কেমন দেখাবে। আমাদের কাছেও সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধু জিরো ফিগার কখনওই আমাদের টার্গেট নয়। আমরা সবসময় সবরকম বডি-টাইপ মাথায় রেখে কাজটা করি। তা সে মিডিয়াম সাইজ হোক বা এল-এক্সএল।  প্রত্যেকে সেটাই চান। পোশাকটা পরলে তাঁকে যেন আরও সুন্দর দেখায়। তিরিশোর্ধ্ব ক্রেতা অনেক বেশি আমাদের। তাই এমনভাবে কুর্তাটা করা হয় যেটা কাঁধের কাছে একদম ফিটিং কিন্তু কোমরে খানিকটা লুজ হবে। এতে ভারতীয় বডি টাইপে খুব সুবিধা হয়। কালিদার বা ইয়োক কুর্তা বেশি করি আমরা। এর একটা সুবিধা হচ্ছে এতে কুর্তার মাঝামাঝি কাজটা সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। এই স্টাইলগুলো আমরা অনুসরণ করি। আমাদের ক্রেতারা সেটা পছন্দ করেন। সাধারণ পোশাকের মধ্যে অসাধারণত্ব তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা। পোশাকের মধ্যে ফুটে ওঠে শিল্প। সাধারণ গিছা পরে অভ্যস্ত যিনি, তিনি গিছায় একটা সুন্দর ডাই দেখে উৎসাহিত হন। কালার প্যালেটটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ এই সূত্রে বাঙালি ক্রেতাদের বিশেষ প্রশংসা করলেন প্রশান্ত। তিনি বললেন, ‘আমার কাছে যে ক’জন বাঙালি ক্রেতা আসেন তাঁরা ভীষণ সচেতন। সাধারণ অন্য ক্রেতার থেকে তাঁরা ফ্যাব্রিক নিয়ে অনেক বেশি জানেন। হয়তো পরিবারের কাছ থেকেই তাঁরা এটা পান। পোশাকের ঐতিহ্য, ইতিহাস, বুননের ধরন এসব নিয়ে তাঁরা আগ্রহ দেখান। সেটা আমাদের জন্য খুব উৎসাহদায়ক।’

কালার স্কিম
কথায় কথায় তাঁর কালার স্কিম জানতে চাইলে প্রশান্ত বললেন, ‘আমার ধারণা অনুযায়ী ভারতের মানুষ পিঙ্ক বা গোলাপির শেডটা একটু বেশিই পছন্দ করেন। আমেরিকানদের কাছে নেভি ব্লু যতটা আপন, ভারতীয়দের কাছে পিঙ্ক ততটাই— এটা আমি এক জায়গায় পড়েছিলাম। এটা আমার সত্যি বলেই মনে হয়। তাই পিঙ্ক কমবেশি আমাদের কালার স্কিমে থাকেই। এছাড়া থাকে মাস্টার্ড ও সাধারণ ইয়েলো। এই রংগুলোর সুবিধে হচ্ছে, যে কোনও বয়সে মানিয়ে যায়। সঙ্গে আমাদের সিগনেচার কালার বলতে পারেন মেরুন। এটা লাল নয় বলে এটাকে বিয়ের কনের রং হিসেবে ভাবেন না অনেকেই। মেরুন একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করে। আমরা উৎসবের প্রাক্কালে ভারতীয় কালার প্যালেট রাখারই চেষ্টা করি। কারণ তারপরেই আসে বিয়ের মরশুম। উৎসবে যেটা কেউ কিনলেন, সেটা বিয়ে বা রিসেপশনেও পরতে পারেন। এছাড়া সারা বছর ধরে আমাদের প্যাস্টেল শেডস চলে। তবে যে কোনও রং যে কোনও ফ্যাব্রিকে ফোটে না। সেটা খেয়াল রাখা দরকার।  মেরুন যেমন সিল্কে খুব ভালো লাগে, গিছায় ততটা নয়। সেটা আমরা খুঁটিয়ে দেখে নিই কাজ শুরুর আগে। মূলত সলিড কালার নিয়েই কাজ হয়।’   
পোশাকের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য জুতোর কালেকশনও আনছেন প্রশান্ত। এতেও তসর গিছায় এমব্রয়ডারির কাজ থাকছে, আছে জারদৌসি কালেকশন। ১৯ শতকে বা তার আগে মোগল আমলে যেমন জুতোর চল ছিল পা পুরো ঢাকা এবং তাতে নকশা। এতে নকশাটা ভালোভাবে ফোটে, বললেন প্রশান্ত।
পোশাকে যোগ করুন নিজস্ব স্টাইল কোশেন্ট আর পা রাখুন নিজের দেশের মাটিতে। পুজো হোক বা সারাবছর, আপনার সাজ হোক আপনারই মতো।     
মডেল: দিতি সাহা, ডিম্পল আচার্য
স্টাইলিং: নীল
ছবি: অর্পণ ধর
পোশাক: প্রশান্ত চৌহান ডিজাইন, যোগাযোগ: ৭৭৩৯৪১০০৯১
গ্রাফিক্স: সোমনাথ পাল

 

5th     August,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ