বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

পাতি   নয় সে

নামে আছে ‘পাতি’। কিন্তু তার গুণের শেষ নেই। রূপচর্চায় কীভাবে কাজে লাগে লেবু? লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

ইংরেজিতে একটা জনপ্রিয় কথা আছে— when life gives you lemons, make lemonade. লেমোনেডে মন দিতেই পারেন। তবে লেমন অর্থাৎ পাতিলেবুতেও একটু মন দিন। রূপচর্চার সামগ্রী হিসেবে পাতিলেবুর কিন্তু গুণের কোনও শেষ নেই। 
লেবু তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? একটু জেনে নিই সে ইতিবৃত্ত। বুনো লেবুর গন্ধ ছড়াত মায়োসিন যুগের শেষ দিকে। সে কোন সময়? মোটামুটি ২৫ মিলিয়ন থেকে ১৩ মিলিয়ন বছর আগের কথা। এ পৃথিবীতে লেবুর বাস আট মিলিয়ন বছর ধরে। ইতিহাসবিদরা বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে প্রথম দেখা গিয়েছিল তাদের। ক্রমে ক্রমে লেবু ছড়িয়ে পড়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। সেখানে অবশ্য কালে কালে বেশ ‘জাতের ফল’ হয়ে ওঠে এটি। 
গ্রিক রান্নায় একটা নিয়মিত উপাদানের মধ্যে পড়ত লেবু। আগ্রহ জাগানোর মতো আরও একটি বিষয় হল, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে অদৃশ্য কালি তৈরিতে ব্যবহার করা হতো লেবু। এই কালির মাধ্যমে পার্সিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত গ্রিসের মানুষ। এছা‌ড়া প্রাচীন গ্রিসে পাতিলেবু ছিল অলিভ অয়েলের আদর্শ সঙ্গী। রান্নাঘরের অতি প্রয়োজনীয় ফলটির রূপচর্চাতেও দর পেতে সময় লাগেনি।  
বলে রাখা ভালো, শুধু গ্রিস নয়, প্রাচীন রোমান সভ্যতায় লেবু হয়ে উঠেছিল অভিজাত মহলের স্টেটাস সিম্বল। অর্থাৎ ধনীদেরই একমাত্র ক্ষমতা ছিল এ ফল কিনে রাখা এবং কাজে লাগানোর। এ তথ্য কিন্তু খুব অতীতে পাওয়া নয়। মাত্র বছর পাঁচেক আগে গবেষণায় উঠে এসেছে খ্রিস্টের সময় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আসা প্রথম ফলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল লেবু। ইজরায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রাচীন লেখা, শিল্প, প্রত্নসামগ্রী, জীবাশ্ম ঘেঁটে জানতে পেরেছেন এই তথ্য। প্রথম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তও লেবু ছিল রীতিমতো দুষ্প্রাপ্য এবং দামি। ওই গবেষকদলের তরফেই জানা যায়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এখন যেমন লেবুর বাগান খুব স্বাভাবিক একটা দৃশ্য, প্রাচীনকালে তা ছিল না। বস্তুত লেবু এসেছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে। জেরুজালেমের কাছে পার্সিয়ান রাজপরিবারের বাগানে পাওয়া গিয়েছিল লেবুর সুপ্রাচীন জৈব প্রমাণ, খ্রিস্টপূর্ব ৫-৪ শতকের কথা। ধরে নেওয়া হয় ওখান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। 
পুরাতনী কথা ছেড়ে এবার আসা যাক একালে টক ফলটির বহুল ব্যবহারে। রূপচর্চায় আজকাল চলতে ফিরতে শোনা যায় ভিটামিন সি আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কথা। লেবুতে ভরপুর রয়েছে দু’টি উপাদানই। ত্বকে ডার্ক স্পট বা স্কিন টোন ঠিক করতে যার জুড়ি মেলা ভার। লেবুতে আছে সাইট্রিক অ্যাসিড যেটা প্রাকৃতিকভাবে এক্সফোলিয়েশনের কাজ করে, ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে ঝকঝকে উজ্জ্বল ত্বক হয়। অ্যাকনের সমস্যায় ভোগেন যাঁরা, তাঁদের জন্য লেবুর রস খুব ভালো সমাধান। এসবের সঙ্গে উপরি পাওনা কী কী বলুন তো? ত্বকে কোলাজেন বাড়াতেও সাহায্য করে লেবু। ত্বক টানটান রাখা এবং মুখের বলিরেখা কমানোর কাজে সিদ্ধহস্ত সাইট্রিক অ্যাসিড। 
 সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি-র প্রাবল্য থাকায় লেবু থেকে তৈরি তেল বা লেমন অয়েলের সাহায্য কটু গন্ধ দূর করার উপায় খোঁজেন অনেকে। এছাড়াও লেবুকে কাজে লাগানোর সহজ রাস্তা আছে। লেবুর রস জলে মিশিয়ে পাতলা করে তুলোয় করে ত্বকের বিভিন্ন অংশে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, কখনওই লেবুর রস সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হবে, ত্বক জ্বালা করবে। তাছাড়া মনে রাখুন আর একটা কথা। জলে  বা অন্য কোনও উপাদানে মেশানো লেবুর রস ত্বকে প্রয়োগ করার পরপরই কখনও সূর্যালোকে বেরবেন না। কারণ তাতে সানবার্ন এবং হাইপারপিগমেন্টেশন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। লেবুর রসের অ্যাসিডিক উপকরণে ত্বকের সাধারণ পিএইচ ব্যালান্স নষ্ট হতে পারে। তাতে ত্বকের আর্দ্রতা কমে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। কারও কারও সাইট্রাস অ্যালার্জি থাকতে পারে। না জেনে তাই ত্বকে কিছুই প্রয়োগ করবেন না।    
এবার আসা যাক অন্য উপকারের কথায়। লেবুর রসে তৈরি ফেস স্ক্রাবও খুব সহজে বানিয়ে ফেলতে পারেন। চিনি, লেবুর রস আর অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ সার্কুলার মোশনে চোখের আশপাশ বাদ দিয়ে সারা মুখে লাগান। তারপর উষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। একইসঙ্গে লেবুর রসকে টোনার হিসেবেও কাজে লাগাতে পারেন। তিনভাগ ডিসটিলড ওয়াটার বা পরিশোধিত জলে একভাগ লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। ওই জলটা দিয়ে তুলোয় ভিজিয়ে পরিষ্কার 
মুখে লাগান প্রতিদিন সন্ধেবেলা একবার করে। 
প্রাকৃতিকভাবে ফেস মাস্কও তৈরি করে নিতে পারেন লেবু দিয়ে। মধু, দই আর লেবুর রস মিশিয়ে নিন একসঙ্গে। এটা মুখে মেখে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। মুখের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে এটা দারুণ উপায়। এছাড়া নারকেলের জলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে সেটাও লাগাতে পারেন। নারকেলের জল ত্বককে আর্দ্র রাখে। আর লেবু ত্বককে করে উজ্জ্বল করে। তবে এই মিশ্রণটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্য প্রযোজ্য নয়। হাতের চামড়ায় প্যাচ টেস্ট না করে এগুলো সরাসরি মুখে প্রয়োগ করবেন না। 
মুখের যত্নের তো শেষ নেই। কিন্তু একটু কনুই বা হাঁটুর দিকেও তো নজর দিতে হয়। এই অংশগুলোয় বিভিন্ন কারণে কালো ছোপ তৈরি হয়ে যায়। সেটা দূর করতে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি খুব কার্যকর। যেসব জায়গায় এমন কালো ছোপ রয়েছে, তাতে পাতিলেবু হাফ করে কেটে আস্তে আস্তে বুলিয়ে নিন। সপ্তাহে বার কয়েক নিয়মতি করলে ফল পাবেন। 
পাতিলেবু কেন পাতি নয় এবার বুঝলেন তো? বুঝেশুনে লেবুর রস ব্যবহার করে দেখুন ত্বকের জেল্লা ফিরে আসে কত সহজে।  
 

15th     July,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ