বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

বশে থক
বারো হাত

গুছিয়ে শাড়ি পরা কি মুখের কথা? অনেককেই শাড়ি সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাদের জন্য হাজির শাড়ি-ড্রেপার। নির্ঝঞ্ঝাটে শাড়ি পরিয়ে দেওয়া যাদের বাঁ হাতের খেল। লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

বারো হাত শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নেওয়া, এ আর এমন কী! মা-কাকিমারা তো এইসব বলেই খালাস। এ প্রজন্মের কাছে অনেক সময়ই ধাঁধার থেকেও জটিল শাড়ি! বারো হাতের জাদুকে বশে রাখা আধুনিকাদের কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তাঁদের মাঝে মাঝেই মনে হয়, গোটা অঙ্গে এদিক-ওদিক বেশ কিছু সেফটিপিন আটকে শাড়িকে পোষ মানাতে পারলে তবেই শাড়ি পরা পোষায়। না হলে কখন কুঁচি নেমে এল, কখন আঁচল এদিক ওদিক হল, এত ছোটাছুটির যুগে সব সামলানো মাথায় ওঠে। 
অথচ পরিপাটি করে শাড়ি পরতে কার না ভালো লাগে? তাতে শাড়ি সামলাতেও ঝক্কি পোয়াতে হয় না। তাই না? যুগের প্রয়োজনেই বোধহয় আটপৌরে স্টাইল ছেড়ে শাড়ি পেয়েছে পোশাকি রূপ। এ ব্যাপারে ঠাকুরবাড়ির শিক্ষা সকলেরই জানা। জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর পার্সি স্টাইলে শাড়ি পরা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়েছে আমবাঙালির চোখে। আর এখন তো শাড়ি পরানো বা চলতি কথায়, ‘শাড়ি ড্রেপিং’ রীতিমতো একটি পেশা। ড্রেপিং-এ মুনশিয়ানা প্রয়োজন, এটা শাড়িপ্রিয় নারীমাত্রেই মানবেন। সেই মুনশিয়ানাকে পুঁজি করেই এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় নাম করেছেন কলকাতার বধূ ডলি জৈন। বলিউডের তাবড় অভিনেত্রীরা তাঁকে এক ডাকে চেনেন। সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অভিনেত্রী সারা আলি খানকে শাড়ি পরাতে ডলি নিয়েছেন দু’লক্ষ টাকা। চোখ কপালে তুলবেন না। হ্যাঁ, বিষয়টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চলে গিয়েছে। শুধু শাড়ি পরানোর দক্ষতা নয়, এক্ষেত্রে প্রয়োজন অভিনবত্বেরও। একই ধরনের শাড়ি পরার মধ্যে তো সেটা নেই। তাই শাড়ি পরানোর মধ্যেও ঢুকে পড়েছে সৃষ্টিশীলতা। শাড়ি ড্রেপিং-এর মাধ্যমে কে কতটা অভিনব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারলেন, তার উপরেই নির্ভর করে মূল্য। আর এই জন্য এ পেশা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। 

ডিজাইনারের মত
বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল কলকাতার ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক রায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘পেশা হিসেবে শাড়ি ড্রেপিং খুবই সম্ভাবনাময়। কারণ এখন মানুষ খুব ফ্যাশন সচেতন। গয়নার সঙ্গে মানানসই শাড়ি তার চাই এবং সেটি নিখুঁতভাবেই পরা চাই। আগেকার দিনে যেটা হতো না। এক্ষেত্রে মানুষ চাইছে পেশাদারি ছোঁয়া। ফলে চাহিদা বাড়ছে।’ 
পরানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের স্টাইল বেশি জনপ্রিয়? অভিষেক বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কথা ভাবলেই দেখা যাবে শাড়ি পরার কতরকম স্টাইল আমাদের দেশে রয়েছে। এখন সেই ভেরিয়েশনটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু সমসাময়িক ফর্ম তৈরি করে নেওয়া হয়েছে শাড়ি ড্রেপিং-এর। শাড়ির সঙ্গে বেল্ট বা স্কার্ট শাড়ি এখন খুব জনপ্রিয় বলে আমার মনে হয়।’
শাড়ি এমনিতেই খুব স্মার্ট লুক দেয়। সেটাকেই কি পাখির চোখ করা হচ্ছে? অভিষেকের কথায়, ‘মেয়েরা এখন শাড়ি পরতেও চাইছে। শুধু উৎসব অনুষ্ঠানে নয়, অফিস বা যে কোনও কর্মস্থলেও শাড়ি পরছে তারা। শাড়ি আবার অনেকের পছন্দ নয়, তারা স্বচ্ছন্দ নয় বলে। সেই জায়গা থেকেই ড্রেপিং-এর গুরুত্ব বাড়ছে। কারণ এতে শাড়ি পরেও সহজভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে।’
যে বাঙালি একসময় জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর স্টাইল আপন করেছে, তারা কি শাড়ি পরার এত কায়দা পছন্দ করছে? অভিষেকের মতে, ‘বাঙালি সব কিছুই খুব দ্রুত গ্রহণ করে— তা সে সংস্কৃতি হোক বা খাওয়াদাওয়া। স্টাইলও তাই। ঠাকুরবাড়ির স্টাইল পুরো ধারণাই বদলে দিয়েছিল। এবার এ যুগের স্টাইলও তারা নিচ্ছে। এখনকার বিয়ে বা পার্টির সাজ কিংবা অফিস লুক দেখলেই বোঝা যায়। সাবেকি সাজও তার জায়গায় রয়েছে। সঙ্গে সমসাময়িক স্টাইলও থাকছে। তাছাড়া বিনোদনের মাধ্যমে যে ধরনের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি হচ্ছে, তার প্রভাবও ফ্যাশনে পড়ে। বেল্ট শাড়ি ড্রেপ এখন খুবই চোখে পড়ে। আবার জ্ঞানদানন্দিনীর পিন-আপ স্টাইলটাও রয়ে গিয়েছে।’

অভিজ্ঞ ড্রেপার
নিয়মিত ফ্যাশন শ্যুট বা ব্রাইডাল সাজে শাড়ি ড্রেপিং যাঁর কাছে জলভাত— কথা হচ্ছিল সেই সানন্দা লাহার সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ড্রেপিং-এর গুরুত্ব সত্যিই ক্রমশ বাড়ছে। আগে যেমন মেকআপ শিল্পী, হেয়ারড্রেসার বা স্টাইলিস্টের এত চাহিদা ছিল না, সেই ক্ষেত্রটা বদলেছে। সময়ের দাবিতে একইভাবে ড্রেপিং আর্টিস্টেরও কদর বেড়েছে।’ সানন্দা জানালেন, তিনি যখন কাজটা শুরু করেছিলেন অর্থাৎ ছ’সাত বছর আগে ড্রেপার বা ড্রেপিং আর্টিস্ট নিয়ে ততটা মাতামাতি ছিল না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ছবি বদলাচ্ছে। মেকআপ বা হেয়ার নিয়ে মানুষ যেমন নানাবিধ জিনিস খুঁটিয়ে জানতে চান, তেমনই এখন ড্রেপিং নিয়েও জানতে চাইছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘বিয়ে বা রিসেপশনে আলাদা আলাদা ড্রেপিং তো করতেই হবে। তাছাড়াও অনেকের ইচ্ছা থাকে, শা‌঩ড়িকে লেহঙ্গা হিসেবে পরার। মানুষ এসব দিকে অনেক বেশি সচেতন বলেই ড্রেপিং আর্টিস্ট হিসেবে আলাদা কাউকে চাইছে।’
ড্রেপিং স্টাইল নানা রকম। কতগুলো রপ্ত করেছেন সানন্দা? তাঁর কথায়, ‘অন্তত ৫০ রকম স্টাইলে ড্রেপ করতে পারি। অনেকে আজকাল শার্ট বা জিনসের উপরেও শাড়ি পরতে চায়। এভাবে পাল্টে যায় স্টাইল।’ কয়েকটা স্টাইলের হদিশ দিতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘সাধারণ বাঙালি স্টাইল প্লিট সহ বা ছাড়া, বাঙালি বিয়ের সময়কার ড্রেপিং, মারমেড স্টাইল ড্রেপিং, রিভার্স মারমেড ড্রেপিং হয়। শাড়ির উপরও লেহেঙ্গা পরানো হয় বা লেহেঙ্গার উপর শাড়ি, সেটারও দু’তিন রকম স্টাইল হয়। আছে ওয়াটারফল ড্রেপিং। সবচেয়ে জনপ্রিয় বাঙালি স্টাইল আর মারমেড ড্রেপিং। অবাঙালিরা পছন্দ করে শাড়ির উপরে লেহেঙ্গা স্টাইল। লেহেঙ্গার ওড়নাটা কত সহজে কেউ ক্যারি করতে পারছে, সেটা দেখে। বরের শেরওয়ানির উপর দোপাট্টা ড্রেপিংও এখন গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গ্রুম ড্রেপিং-এর জন্যও এখন আর্টিস্ট খোঁজা হয়।’
শ্বশুরবাড়িতে শুধুই শাড়ি পরতে হবে এই বাধ্যবাধকতা থেকে শাড়ি পরার স্টাইল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন ডলি জৈন। এখন তিনি ড্রেপিং আর্টিস্টদের কাছে আদর্শ। সানন্দার কী মনে হয়? বললেন, ‘ওঁকে ফলো করি। কারণ পুরো ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন উনি। আজ উনি যে জায়গায় পৌঁছেছেন, অধ্যবসায় থাকলে অন্য কেউও সেটা করতে পারে। তবে কাজটা সৎভাবে করতে হবে। নিজের আইডিয়া বাড়াতে হবে।’ 

3rd     June,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ