আখের রসে পাবেন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি ত্বকের ভীষণ বন্ধু, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন। কথা বললেন কমলিনী চক্রবর্তী।
প্রখর তপন তাপে শুধুই যে আমাদের ধরিত্রী রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে উঠছে তা কিন্তু নয়, একই রুক্ষতা পেয়ে বসছে আমাদের ত্বককেও। সেক্ষেত্রে চাই সঠিক দেখভাল। এমন কিছু, যার মাধ্যমে ত্বক উজ্জ্বল আর ঝলমলে হয়ে উঠবে। আমাদের প্রকৃতিতেই এমন উপাদানের সন্ধান রয়েছে। তার নাম গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। ত্বককে কোমল করে তুলতে এই পদার্থটির জুড়ি মেলা ভার। অ্যাসিড শব্দটি শুনেই কপালে ভাঁজ পড়ল নাকি? ভাবছেন অ্যাসিড দিয়ে ত্বকের যত্ন! হয়, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন। শেহনাজের কথায়, ‘ত্বকের যত্নের জন্য আমি প্রথম সব্জির খোসাকে কসমেটিক থেরাপির কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। তারপর মনে হল দুধ ও ফল থেকে যদি অ্যাসিড তৈরি করে সেটাকে ত্বকের চিকিৎসার কাজে লাগানো যায় তাহলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে, আবার সুন্দরও হবে। আর সেই নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই ত্বকের বন্ধু গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের সন্ধান পাই। এটি আখের রস থেকে তৈরি হয়। জলে সহজে গুলে যায় বলে এটি দিয়ে ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি বানানো যায়। ত্বকের পক্ষে সেই ক্রিম খুবই উপকারী।’
ফলের জাদু
আখের রসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড থাকলেও অন্যান্য ফলের রসেও তা কম বেশি পাওয়া যায়। ফলে ত্বকের টোনিং-এর জন্য যদি কমলালেবু, পেঁপে, আপেল, আঙুর ইত্যাদির রস ব্যবহার করা যায় তাহলে প্রাকৃতিক উপায়ে এই অ্যাসিড ত্বকে মিশবে। ফলে যদি আপেল, পেঁপে, কমলালেবু বা আঙুরের রস রোজ দু’বেলা মুখে মেখে পনেরো মিনিট রেখে দেন, তারপর তা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলেন, দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এই ধরনের পরিচর্যা বিশেষত তাঁদের পক্ষে উপযোগী যাঁদের ত্বকে তৈলাক্তভাব খুবই বেশি। সেক্ষেত্রে ফলের রসের মাধ্যমে ত্বকে যে পরিমাণ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড মেশে তাতে ত্বক উজ্জ্বল তো হয় বটেই, পাশাপাশি তার তৈলাক্তভাবও অনেকটাই কমে।
ছোট বড় সকলের
শেহনাজ জানালেন, ত্বকের দাগ ছোপ দূর করাই শুধু নয়, ত্বক উজ্জ্বল করা, ত্বকে মৃত কোষ সরিয়ে তা সতেজ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও গ্লাইকোলিক অ্যাসিড খুবই সাহায্য করে। এছাড়াও রুক্ষ ত্বক মসৃণ করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। স্কিন ইলাসটিসিটি বাড়াতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সাহায্য করে। ফলে বয়স্কদের জন্যও এই অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার উপকারী। ত্বকে বলিরেখা বাড়লে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত নাইট ক্রিম রোজ লাগান, বলিরেখা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
টিন-টুইনদের জন্যও এই ক্রিম খুবই উপকারী। টিনএজাররা অনেকেই ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যায় ভোগে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার অথবা ক্লেনজার ব্যবহার করলে সেই সমস্যা মিটবে। ব্রণ তো সারবে বটেই, পাশাপাশি আবার ব্রণর দাগও মিলিয়ে যাবে। কেন এমন হয় তাও বুঝিয়ে দিলেন শেহনাজ। তাঁর কথায়, ‘গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের ভিতর পর্যন্ত ঢুকে তার যত্ন নেয়। ফলে ত্বকে যেসব ছিদ্র বা পোরস থাকে সেগুলোও একেবারে ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় এই ক্রিম লাগালে। আর ভিতর থেকে পরিষ্কার হয় বলেই ব্রণর সমস্যা সহজেই দূর হয়। দাগও মিলিয়ে যায়।’
ত্বক উজ্জ্বল
এবার একটু উজ্জ্বলতার বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। শেহনাজ বললেন, এই ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে একটু হালকা হাতে মাসাজ করলে ত্বকে রক্ত চলাচলও ভালো হয়। এতে একটা বাড়তি গ্লো বা ঔজ্জ্বল্য আসে। আর ত্বকের মৃত কোষগুলো সরিয়ে দেয় বলে তা অ্যান্টি এজিং-এরও কাজ করে। অনেক সময় অতিরিক্ত রোদের তাপে একটা কালো ছোপ পড়ে চোখে মুখে। এই ধরনের ক্রিম বা লোশনের ব্যবহারে তাও মিলিয়ে যায়। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিমের নিয়ম মতো ব্যবহারের ফলে ত্বকের ছিটছিটে দাগ পুরোপুরি মিলিয়ে না গেলেও অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।
রোদ ঝলসানো ত্বক
মোটামুটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম উপকারী। তবে কিছু ত্বক এমনও হয় যা রোদে পুড়ে যায় বেশি। এমন ত্বকের জন্য তো এই ধরনের উপাদান একেবারে একশোভাগ কার্যকর। হাইপার পিগমেন্টেশনের (ঝলসে যাওয়া) সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই লাগান গ্লাইকোলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্রিম বা লোশন। রোদে বেরনোর মিনিট পাঁচেক আগে এই ক্রিম মুখে, গলায়, ঘাড়ে, হাতে লাগিয়ে হালকা মাসাজ করে নেবেন। সেক্ষেত্রে ত্বকে এই ক্রিম ভালোমতো মিশে যাবে। তাতে উপকারের মাত্রা আরও বেশি হবে।
প্রসাধনীর নানারকম
ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, লোশন তো বটেই এছাড়াও ফেসওয়াশেও এই অ্যাসিড ভালো কাজ করে। স্কিন টনিক, মাস্ক বা সিরামেও এই অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। ত্বককে রোদের হাত থেকে বাঁচাতে এই অ্যাসিড অতুলনীয়। অনেক সময় আবার তা সানস্ক্রিনেও ব্যবহার করা হয়, জানালেন শেহনাজ হুসেন। সেই ধরনের সানস্ক্রিনে এসপিএফ অনেক বেশি থাকে। তবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করলে তার সঙ্গে কখনওই স্ক্রাবার ব্যবহার করবেন না। এতে কিন্তু গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উপকার মাঠে মারা যাবে, জানালেন শেহনাজ।