বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

খেশেই বেশ

শতরঞ্চি থেকে গায়ের চাদর এবং তারপর পোশাক, খেশের রূপান্তর ক্রমশ বিচিত্র পথ ধরেছে। কেমন সেই রূপ বদল? ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানলেন কমলিনী চক্রবর্তী।

‘পুরানো জানিয়া চেয়ো না আমারে আধেক আঁখির কোণে অলস অন্যমনে।’ পুরনোকে নতুন রূপে আপন করে নেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে শিল্পরস। আর এটাই খেশ বুননের আদি কথা। ভাবনাটা নাকি মধ্যযুগীয়। শুরু হয়েছিল সেই মোগল আমল থে঩কে। রানিদের ব্যবহৃত রেশম কাপড় সামন্য ছিঁড়ে গেলে তা সরু লম্বা ফালিতে কেটে তার সঙ্গে পশমের সুতো মিশিয়ে একটা মোটা কাপড় বুনে গায়ে দেওয়া হতো তখন। সেটাই ছিল খেশ বোনার সূত্রপাত। তারপর ক্রমশ এই শিল্প ভিন্ন পথ নিয়েছে। তা নরম কাপড়ে বুনে পরিধানযোগ্যও হয়ে উঠেছে।

বস্ত্রে খেশ
খেশের বুননকে বস্ত্রে পরিণত করার চল শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায়। তথ্য অনুযায়ী, ১৯২০ সাল নাগাদ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পসদনে প্রথম খেশশিল্প শেখানো শুরু হয়। কলাভবনের প্রাক্তন ছত্রী, ডিজাইনার কৃষ্ণকলি ডেভিড বললেন, পুরনো কাপড় দিয়ে টানা দেওয়া হতো আর তার সঙ্গে সুতোর পড়েন— এই দুইয়ে মিলে তৈরি হতো খেশ। প্রথম দিকে পুরনো আর নতুনের এই যে টানা এবং পড়েন, তার মাধ্যমে একটু মোটা কাপড়ই বোনা সম্ভব হতো। কৃষ্ণকলির কথায়, ‘খেশ দিয়ে বোনা জিনিসগুলোর নকশার নতুনত্ব সকলের মনে ধরল। রঙের কম্বিনেশনের বিভিন্ন ধরন তৈরি করতে লাগলেন তাঁতশিল্পীরা। কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, লাল ইত্যাদি রঙের কাপড়ের সঙ্গে রং মিলিয়ে অথবা কনট্রাস্ট করে সুতো দিয়ে বুননের কাজ করা হতো। যে রঙের কাপড় দিয়ে টানা দেওয়া হবে, তার সঙ্গে  নতুন সুতোর রং এমনভাবে মেশানো হতো যে পুরো জিনিসটার মধ্যে নকশার নতুনত্ব তো থাকতই, আবার একটা ঔজ্জ্বল্যও আসত।’ 

ধরন বদল
ক্রমশ খেশ তার ধরন বদলাতে শুরু করল। বলা যায় মোটামুটি ২০০৫-২০০৬ সাল থেকে খেশের বেশ বদল শুরু হয়, জানালেন কৃষ্ণকলি। শাড়িতে এই নকশা তুলতে শুরু করলেন তাঁতিরা। তবে প্রথমেই যে শাড়ি বোনা হয়েছিল তা নয়, খেশকে পরিধানের বস্ত্রে রূপান্তরিত করা হয় শালের মাধ্যমে। 

নতুনত্বের খোঁজ
বীরভূমের প্রখর গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ সুতির কাপড়ের চাহিদা প্রচণ্ড। আর এই সুতির কাপড়ের মধ্যেই লোকে নতুনত্ব খুঁজতে শুরু করলেন। তখনই তাঁতে বোনা পাতলা সুতির কাপড়ের সঙ্গে মোটা খেশের মিলমিশ দেখা দিল। শাড়ির  ক্ষেত্রে আঁচলের দিকটা খেশের পুরনো পদ্ধতিতে বোনা হতো, আর গায়ের অংশটা সাধারণ তাঁতের শাড়ির মতোই বোনা শুরু হল। তারই মধ্যে একটা করে খেশের টানা দিয়ে শাড়ির চেহারা পরিবর্তন করতে শুরু করলেন তাঁতিরা।

পছন্দ আর আরাম
ক্রমশ খেশ কিন্তু শাড়িতেও আর সীমাবদ্ধ রইল না। তা দিয়ে পশ্চিমী কায়দার ড্রেস, ফ্রক, স্কার্ট ইত্যাদিও বানানো শুরু হয়ে গিয়েছে। সেটা অবশ্য খুব বেশি দিনের কথা নয়। লাভপুরের তাঁত ব্যবসায়ী মিতালী মণ্ডল জানালেন, পাতলা নরম সুতির শাড়িই এযুগের মেয়েরা বেশি পছন্দ করছেন। আর সেই চাহিদার সঙ্গে খেশ পুরোপুরি ফিট করে যায়। এরপর অবশ্য নব্য তরুণীদের পছন্দ অনুযায়ী খেশ দিয়ে ড্রেসও তৈরি করতে শুরু করেছেন তিনি। সেই ভাবনা অবশ্য এসেছিল মেয়ের কথা ভেবেই। কোভিডের সময় তাঁত যখন পুরোপুরি বন্ধ, তখনই এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে নিজের খেশের শাড়ি কেটে মেয়ের ফ্রক বানালেন মিতালী। প্রথম চেষ্টায় খেশের বুননগুলো সঠিক জায়গায় আনতে পারেননি। তখন তিনি ফ্রকের ডিজাইন অনুযায়ী খেশ বুনতে শুরু করেন। এমনভাবে টানাগুলো ফেলতে হবে যাতে ফ্রকের সামনে এবং হাতায় নকশাটা পড়ে। এই কায়দায় বোনার পর ফ্রকের ডিজাইনে নতুনত্ব আসে। 

রূপে বৈচিত্র্য
ফ্রকের পর শর্ট টপ এবং তারপর জ্যাকেট। মিতালীর ওয়ার্কশপে এমনই বিভিন্ন পোশাক তৈরি হয় খেশ দিয়ে। বললেন, জ্যাকেটের ক্ষেত্রে খেশের টানা এমনভাবে ফেলতে হয় যাতে তা সারা গায়ে পড়ে। ফ্রকের ডিজাইনের ক্ষেত্রে খেশ বোনার ধরন ও নকশা দুই-ই আলাদা। এক্ষেত্রে ডিজাইন অনুযায়ী গলার কাছে, কলারে এবং হাতের পট্টিতে একটু মোটা করে খেশের টানা দেওয়া হয়। বাকি জামায় সরু খেশ-স্ট্রাইপ।  
খেশ দিয়ে কটন ট্রাউজার ও পালাজোও বানানো হচ্ছে আজকাল। সেক্ষেত্রে খেশের স্ট্রাইপগুলো লম্বা হলে ভালো দেখায়। অনেকে কোমরে বেল্টের ব্যবস্থা রাখেন। সেই বেল্ট মোটা খেশে বোনা হয়। ট্রাউজারের ক্ষেত্রে তলার মোড়ানো অংশ একটু মোটা হলে ভালো লাগে, বললেন ডিজাইনার রমেশ পাড়ুই। তাঁর বিশেষত্ব খেশের র‌্যাপার, পালাজো আর ট্রাউজার্স। ট্রাউজার্সের ক্ষেত্রে তলার দিকে ঘন নকশা আর বাকিটা সরু ডুরে রাখেন। একটু উজ্জ্বল রঙের কাপড় দিয়ে খেশের টানা দেন। র‌্যাপারে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ডিজাইন করেন। খেশের সঙ্গেই থাকে অ্যাপলিক বা কাঁথা কাজের বাহারি নকশা। রমেশের কথায়, রূপান্তর না হলে শিল্প টিকে থাকে না। পুরনোর মধ্যে নবরস না ভরলে তার বিস্তার ঘটে না। নকশা, বুনন ইত্যাদিও পুনর্গঠনের মাধ্যমেই নবরূপ পায়।    

1st     April,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ