বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

ত্বকের বন্ধু নিয়াসিনামাইড

আধুনিকাদের ত্বকচর্চায় ঢুকে পড়ছে এই উপাদান। জানেন কি বলিউডও এর গুণে আবিষ্ট? আপনার নিত্য সাজগোজে কেন জায়গা দেবেন নিয়াসিনামাইডকে? লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।
 
সহজ কথায় বলতে গেলে এটি ত্বকচর্চার ‘সুপারস্টার’! আদতে জিনিসটি ভিটামিন বি৩-রই একটি ধরন। বিয়ের আগে বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট তাঁর নিত্য রূপসজ্জার রুটিন জানাতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন এই মহার্ঘ্য বস্তুটির। তারপর থেকে এর চাহিদা তুঙ্গে। এবার সেই ‘নিয়াসিনামাইড’ ব্যবহার করে আপনিও ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। রূপসজ্জায় রেটিনলকে ছাপিয়ে জায়গা নিয়েছে নিয়াসিনামাইড। বইয়ের ভাষায়, ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন)-র এই প্রকারটি ত্বকের ‘মাল্টিটাস্কিং এজেন্ট’! ত্বকের অন্যতম পুষ্টি উপাদান। সব ধরনের ত্বকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে নিয়াসিনামাইড। এটাই এর মূল ইউএসপি। ত্বককে উজ্জ্বল করার পাশাপাশি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে তাকে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখে। চিকিৎসাবিজ্ঞানেও নিয়াসিনামাইডের কদর রয়েছে। ত্বকবিশেষজ্ঞ ডাঃ কৌশিক লাহিড়ীর মতে, ‘নিয়াসিনামাইড পিগমেন্টেশন, ব্রণ ও ত্বকের বয়সজনিত সমস্যার বেশ ভালো দাওয়াই। একে একসময় নিকোটিনামাইডও বলা হতো। একটা সময় ছিল যখন ত্বকের অসুখ পেলেগ্রা হলে এই নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করা হতো। তবে তখন এর প্রভাব এত বেশি জানা ছিল না। গত কয়েক বছরের গবেষণায় নিয়াসিনামাইডের গুণাবলি দেখে ত্বকের চিকিৎসায় একে নতুন করে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বয়স ধরে রাখার কাজে এই উপাদান বেশ ভালো ফল দিচ্ছে।’ কিন্তু ভিটামিন ই কিংবা রেটিনলকে ছাপিয়ে নিয়াসিনামাইড হঠাৎ চর্চায় কেন? কৌশিকবাবুর মতে, আমাদের ত্বকের রোমকূপ এতই সূক্ষ্ম ও ছোট যে তাতে ভিটামিন ই-র কণা আদৌ ত্বকে ঢোকে কি না তা নিয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। এখানেই নিয়াসিনামাইডের কেরামতি। এর অণু আরও সূক্ষ্ম। ত্বকের রোমকূপে ঢুকতে সক্ষম বলেও গবেষণায় প্রমাণিত। তাই চিকিৎসক ও রূপবিশেষজ্ঞ সকলেই এর উপর বিশেষ ভরসা করছেন। আগে ত্বকের বন্ধু বলে ধরা হলেও পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে রেটিনলের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সেদিক থেকে নিয়াসিনামাইড অনেক বেশি ফলপ্রসূ। 
উপাদানটি নিয়ে আশাবাদী রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরাও। তাঁর কথায়, ‘ত্বকের বেলায় ভিটামিন বি৩-র বিবিধ উপকার আছে। নিয়াসিনামাইডকে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উপাদান হিসেবে ধরা হচ্ছে। বারবার ব্রণ বেরনো থেকে শুরু করে যে কোনও স্পর্শকাতর ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া, নিষ্প্রাণ দেখানো সবেতেই এই উপাদানটির বহুল প্রচলন শুরু হয়েছে। ত্বকে সেবাম উৎপাদনকে রুখে দিতে পারে নিয়াসিনামাইড। এই সেবাম ব্রণর জন্য দায়ী। ত্বকের বাড়তি সেবাম ও তেল মিলেই ত্বকের রোমকূপকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ত্বক চকচকে দেখায় ও ব্রণ বেরয়। নিয়াসিনামাইড সেবামকে প্রথমেই রুখে দেয়। ফলে ব্রণর পার্লার ট্রিটমেন্টেও এর জুড়ি মেলা ভার। শুধু ব্রণ নয়, আজকাল ত্বকের যে নানা ধরনের ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছে, সেসব পণ্যেও নিয়াসিন বা ভিটামিন বি৩ ব্যবহার করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সেলিব্রিটিরাও নিজেদের রূপচর্চায় নিয়াসিনামাইড রাখছেন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা, সব ধরনের ত্বকে এটি কার্যকর।’
কেন মাখব
জেল্লাদার ত্বক: নিয়াসিনামাইড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যালস ও পরিবেশগত বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে এই উপাদান রক্ষা করে। মুখ পরিষ্কার রাখতে ও ত্বকের ব্রণ ও দাগছোপ দূর করতে এর তাই জুড়ি নেই।
রুখে দেয় বয়স: নিয়াসিনামাইড ত্বকের ভিতরে থাকা কোলাজেনের যে ফাইবার, তার প্রোটিন গ্লাইকেশন হতে দেয় না। এটি হলে কোলাজেন শক্ত হয়ে ত্বকের উপরে বলিরেখা ও সূক্ষ্মরেখা তৈরি করে। ত্বক ঝুলে যায়। নিয়াসিনামাইড এই গ্লাইকেশন রুখে দিয়ে ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ত্বককে বাঁচিয়ে রাখে এই উপাদান। 
পিগমেন্টেশনের শত্রু: সেবাম তৈরি হওয়া রোধ করে নিয়াসিনামাইড। রোমকূপকে সংকুচিত করে ত্বকে মসৃণভাব এনে দিতে সক্ষম এটি। ফলে মুখে নতুন করে দাগ তো হয়ই না, উল্টে যেটুকু দাগছোপ আছে তা-ও দূর করে। ফলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 
স্পর্শকাতর ত্বকের বন্ধু: যে কোনও ক্রিম বা প্রসাধন ব্যবহার করলে ত্বকের ভিতরে অনেকের প্রদাহ হয়। ত্বক লালচে হয়ে ওঠে। নিয়াসিনামাইড এসব ত্বকের বন্ধু। চামড়ার ভিতরের স্তর এন্ডোডার্মে লিপিডের স্তর জোরদার রেখে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা এর অন্যতম কাজ। ফলে ত্বক শীতল থাকে। সহজে প্রদাহ হতে পারে না। ফলে নিয়াসিনামাইড যুক্ত ক্রিম বা প্রসাধন ব্যবহার করলে ত্বকে সমস্যা দেখা দেয় না। 
পাব কোথায়?
নিষ্প্রাণ ত্বক রুখতে এত কার্যকর এই উপাদান আলাদা করে কিনতে পাওয়া যায় না। নিয়াসিনামাইডযুক্ত নানা ক্রিম ও সেরাম বরং বাজারে পাবেন। রাতে ঘুমানোর আগে নাইটক্রিম হিসেবেও নিয়াসিনামাইড যুক্ত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। রূপসজ্জায় বহু ব্র্যান্ড আজকাল তাদের নানা পণ্যে এই নিয়াসিনামাইড যোগ করে। তাই ক্রিম, সেরাম ও লোশন কেনার আগে তাতে নিয়াসিনামাইড যুক্ত কি না, তা যাচাই করে নিন। ত্বককচর্চায় নিয়মিত হারে নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করলে আপনিও অনায়াসে হয়ে উঠতে পারেন যে কোনও পার্টির শো স্টপার!

11th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ