বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

মিলেছে জুট জামদানি

ফ্যাশনে ফিউশন বহুদিনই চলছে। সম্প্রতি জুট বা পাট এবং জামদানির মেলবন্ধন ঘটিয়ে পোশাকে নতুনত্ব এনেছেন ওপার বাংলার ফ্যাশন ডিজাইনার চমন চৌধুরী। তাঁর 
সঙ্গে কথা বললেন অন্বেষা দত্ত।


সদ্য পেরিয়ে গেল একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষা তো বটেই, দুই বাংলার খাদ্যাভ্যাস এবং পোশাকের মতো আরও নানা বিষয়েই মনের টান যেন এক সুতোয় বাঁধা। সেই একসুরের ভাবনা এবং দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত থেকে বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনার চমন চৌধুরী কাজ করে চলেছেন তিন দশকের কাছাকাছি সময় ধরে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের মতোই তিনিও কাজ করেছেন গামছা নিয়ে। পরবর্তীতে চমন আপন করে নিয়েছেন সোনালী তন্তুকে। আর পাটের হাত ধরে তাঁর নকশায় এসেছে স্বতন্ত্র ছাপ। কিছুদিন আগেই তিনি ঘুরে গেলেন কলকাতায়। তাঁর পোশাকে সাজলেন এবাংলার মডেলরা। বাংলাদেশের এই ডিজাইনার জানালেন, এখানকার ফ্যাশনেও মুগ্ধ তিনি। দুই বাংলার ফ্যাশনে হাত ধরাধরি করে চলায় আস্থা রাখেন চমন।   
তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সব ছেড়ে পাটের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কীভাবে? চমন বললেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে কাজ করছি। ডিজাইনিং শুরু করেছিলাম দেশীয় পণ্য দিয়ে। যেমন গামছা খাদি ইত্যাদি। দেশ-বিদেশে প্রদর্শনীও করেছি। তখনই মনে হতো, পাট নিয়ে পোশাকের ক্ষেত্রে বেশি কাজ হচ্ছে না।  তাই আমি ‘র জুট’ দিয়ে কাজ শুরু করলাম প্রথমে। মানুষের কাছে পৌঁছতে নানারকম কাজ করলাম। তবে পোশাক বানানোর মতো উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ করে নিতে হয় জুটকে। এইভাবেই বিদেশিদের জন্য করলাম ফিউশন জুট। সেই পোশাক নেপাল, মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়েছি। ক্রমশ জুট আর জামদানিকে মেলাতে চেয়েছি। এইভাবেই আপনাদের দেশেও এলাম। মনে হল দু’টিই দেশীয় ঐতিহ্য। দু’টির মেলবন্ধন মানুষের মন ছোঁবে।’ 
পাট বললেই একটা সময় মনে হতো চাল ভরার বস্তা, খুব সাধারণ! তারপরে তা দিয়ে ব্যাগ, পাপোশ বা টুকটাক ঘর সাজানোর সামগ্রী হয়েছে। কিন্তু পোশাকের নকশায় পাট কতটা মানুষ পছন্দ করছেন? তাঁর কথায়, ‘কিছুদিন আগে আমাদের দেশে একটা বিরাট ফ্যাশন শো হয়েছিল। সেখানে ছিল ৪০টি দেশ। তাতে ওই ধরনের পোশাক ব্যবহার করেছি। বাংলাদেশের বস্ত্রবিভাগ এর আয়োজনে ছিল। শাড়ির আঁচলে পাট নিয়ে কাজ করেছি। দিনে দিনে পাট আরও সূক্ষ্ম হয়েছে। আগের মতো মোটা নেই। তবুও কেউ কেউ ওই খসখসে ভাবটা পছন্দ করে, কেউ আবার হালকা। গ্রীষ্মে অবশ্যই মানুষ বেশি খোঁজেন  হালকা ধরনের কিছু। ব্লাউজের নকশাতেও পাট এনেছি। পাটে আবার টাই ডাই-ও করছি। কখনও বা এমব্রয়ডারি। এখন তো জুটের জ্যাকেট, কুর্তি, শ্রাগ, ছেলেদের কুর্তা, ভেস্ট, হুডি সবরকমই করছি। মানুষ চাইছেন বলেই।’ 
আপনাদের দেশের ডিজাইনার বিবি রাসেলের নাম আজ দুনিয়াজোড়া। তাঁর থেকে কীভাবে অনুপ্রাণিত হন? চমন বলেন, ‘উনি যখন আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করছেন, তখন আমিও গামছা নিয়ে দেশে কাজ করা শুরু করেছি। উনি যেমন দেশীয় জিনিস যুক্তিযুক্ত দামে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন, সেই ভাবনাটা আমাদের মধ্যেও কাজ করে। নব্বইয়ের দশক থেকেই।’ আপনার কাজের অভিজ্ঞতা একটু বলুন, কীভাবে পোশাক নকশা করার কথা মাথায় এল? ‘ছোটবেলায় আমার আঁকতে ভালো লাগত। তারপর ওইভাবেই পোশাকেও কিছু করার কথা মনে হল। আগে এঁকে বোনকে দিতাম। বোন বানিয়ে দিত। কারণ তখনকার দর্জিরা এসব এত ভালো বুঝতেন না। আর সত্যি কথা বলতে কি, বুটিকের ধারণা তখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। এরপর বোনের বিয়ে হয়ে গেল, তারপর নিজে এঁকে নিজেই বানাতাম। আমার বানানো পোশাক দেখে বন্ধুরা উৎসাহিত হতো। ওরা অনুরোধ করলে ওদের জন্যও বানিয়ে দিতাম। এইভাবে হাত ক্রমশ পেকেছে। কিন্তু তখনও ভাবিনি এটাকেই ভবিষ্যতে পেশা করব। কারণ তখনও বুটিক বা ডিজাইনিং শেখার প্রতিষ্ঠান ছিল না।’ তাহলে? ‘একসময় চলে গেলাম ফ্লাইং শিখতে। প্রাইভেট লাইসেন্সও আছে আমার। প্রাক্তন পাইলট এখন! এরপর টিভিতে অ্যাঙ্করিং করেছি কিছু দিন। তখন আমাদের দেশে শুধু বিটিভি অর্থাৎ বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল। আমি খবরও পড়তাম। ফলে অনেকরকম কাজেই আগ্রহ ছিল। কিন্তু পারিবারিক কিছু কারণে নিজের অনেক কাজ শেষ করতে পারিনি। ডিজাইনিংটা শেষ অবধি সঙ্গে ছিল বলা যায়। মনে হয়েছিল, এটা তো নিজের মতো করতে পারি। অবসর পেলেই বসে পড়তাম ডিজাইন নিয়ে। নানারকম নকশা তুলতাম। দর্জিদের গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম আমার নকশা থেকে পোশাক বানিয়ে দেবেন কি না। এইভাবে একটু একটু করে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। এখন আমায় বাধা দেওয়ার কেউ নেই। নিজের জায়গাটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। মানুষের আগ্রহ আমার ভরসা জুগিয়েছে।’ 
এক্ষেত্রে আর কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন? ‘দেখুন সবসময় যে সকলের সমর্থন পেয়েছি তা হয়তো নয়। নিজের লড়াই নিজের মতো করে একটু একটু করে এগিয়েছি। আজকাল একইসঙ্গে অনেক লোক একইরকম ডিজাইন করে, নকল করার চেষ্টায়। এটা একটা সমস্যা। আমি তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আগে কিছু আপলোড করি না। বিক্রির আগে তো নয়ই। মহামারীর সময়েও করিনি। তখন শুধু নানারকম স্টাইলিশ মাস্ক করতাম।’ 
এবাংলা কেমন লাগল? ‘আপনাদের জন্য এই ফোটোশ্যুট করে খুব ভালো লেগেছে। জুটের সঙ্গে জামদানির মেলবন্ধন এখানকার মানুষেরও ভালো লেগেছে। ফিরে আসার ইচ্ছে রইল এখানে।’
মডেল: শানু সোমনাথ, আয়েশা ভারতী, উপেন বিন এবং মৈত্রী সরকার মেকআপ: অমিত কারক, ছবি: বাপ্পাদিত্য কুণ্ডু।

25th     February,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ