বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

জয় জয় দেবী

আর ক’দিন পরেই বাগদেবীর আরাধনা। হাতেখড়ি অথবা অঞ্জলির জন্য সাজটাও চাই মানানসই। লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

আগের সন্ধে থেকেই প্রস্তুতি শুরু। কাগজের শিকলি কেটে প্যান্ডেল বানানো। ঠাকুর এলে শৈশবের রাতজাগা চোখ উত্তেজনায় ঘুমোতে চায় না। ভোরবেলা উঠেই স্নান করে পরিপাটি বাসন্তী সাজে তৈরি হওয়া। বইখাতা বিদ্যেবতীর পায়ে অর্পণ করে রাখা। তারপর বড়দের কথামতো চোখ বন্ধ করে হাতজোড় করে বসা। হাতভর্তি অঞ্জলির ফুল। প্রার্থনা: মা গো বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও। খাগের কলম দিয়ে বেলপাতার উপরে লেখার চেষ্টা, ‘ওঁ সরস্বত্যই নমঃ।’ লিখতে গেলেই কি লেখা যায়! বেলপাতা ছিঁড়ে যায় যে। মনে মনে তাই আউড়ে নেওয়া, মা সরস্বতীর বানান তো জানি। ওতেই হবে না হয়! পুরোহিত মশাইয়ের সুরে সুর মেলায় শৈশব, ‘জয় জয় দেবী...।’
এ তো গেল বোঝার বয়স। আর তারও আগে? যখন সবে মায়ের কোল ছেড়ে নেমে একটু একটু হাঁটি হাঁটি পা পা। মায়ের শখে হলুদ-লাল মিঠে শাড়ি বা পাঞ্জাবিতে একরত্তি বয়সের হাতেখড়ি। আধো কথায় হয়তো বা একটু আধটু মন্ত্রোচ্চারণ। এমন খুদে বয়সের কথা স্মৃতিতে থাকে না। তবে পুরনো ছবিরা কথা বলে। সেখান থেকেই ফিরে পাওয়া নিজেকে। আর বড় হওয়া মা সন্তানের মধ্যেও খুঁজে পান ফেলে আসা ছোটবেলাকে। তার জন্যই যেন নিজের খুদেটিকে এত যত্নে সাজানো। সে বুঝুক না-ই বা বুঝুক, তার বড় হওয়ার মধ্যে নিশ্চিন্তে ঢুকে পড়ে সরস্বতীর বাহন হাঁস... কখনও বইখাতায় পা না ছোঁয়ানোর সতর্কতা... মা সরস্বতীকে আঘাত না দেওয়ার পণ...  বিদ্যে থেকে বাদ্যির পুজোর সব নিয়ম... তালিকা অনন্ত।
এসব অনুষঙ্গের ছোঁয়া মাখা ছোটবেলাকে কি খোঁজেন সবাই? কথা হচ্ছিল সেলিব্রিটি মা, অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি জানালেন তাঁর কন্যা কিয়াকে নিয়ে ‘সরস্বতী বেলা’ খুঁজে পাওয়ার কথা। কনীনিকার কথায়, ‘শ্বশুরবাড়িতে যেখানে থাকি, সেখানে আরাধ্যা ঠাকুরের মধ্যে মা সরস্বতীই রয়েছেন। যাঁকে আগেরবার পুজো করেছিলাম, তিনিই সিংহাসন আলো করে আছেন। কিয়াও মা সরস্বতীকে খুব ভালো করে চেনে। ও জানে আমি পুজো করি। আমার বইখাতা-পুরস্কার সব কিছু ছোঁয়াই। মাত্র তিন বছরেই ওর হাতেখড়ি হয়। তখন অতটা বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু পরে যখন থেকে ও নিজে অক্ষর চিনে লিখতে শুরু করল, ও বুঝল মা সরস্বতী বিদ্যার দেবী। নাচগান, বাজনা সবকিছুই তাঁকে ঘিরে। নিজের ছোটবেলা ওর সঙ্গে ফিরে পাওয়া এভাবেই।’ 
বাচ্চাদের সরস্বতী-মাহাত্ম্য বোঝানোর মাধ্যমে একটা শৃঙ্খলাবোধও তৈরি করা যায়, মনে করেন কনীনিকা। তাঁর মতে, ‘সব দেবদেবীই কিছু না কিছুর প্রতীক। এগুলো ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় বইতে পা দিও না, মা সরস্বতী কষ্ট পাবেন। খাবার নষ্ট কোরো না, মা লক্ষ্মী দুঃখ পাবেন। আমরাও এই শিক্ষা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। এগুলো তো তারই অঙ্গ। আবার নিজেরা সন্তানদের মধ্যে সেগুলো দিয়ে যাব।’
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে কতটা একাত্মবোধ করেন?  কনীনিকার উত্তর, ‘মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে যা যা করি, সেগুলো বোধহয় নিজের জন্যই করি! এবার যদিও সরস্বতী পুজোটা করতে পারছি না। আমার স্পাইন সার্জারির পরে এখনই সেটা সম্ভব নয়। তবে গতবার পটুয়াপাড়ায় গিয়ে কাকার সঙ্গে দু’ঘণ্টা ঘুরে ঠাকুর ঘরে এনেছিলাম। তারপর বাজার করা। আগে ভাবিনি পুজো করব। হঠাৎ ভেবে শ্যুটিং থেকে চলে গিয়েছি ওখানে। পায়ে মায়ের চটি। তা সে চটি ছিঁড়ে গেল! খালি পায়েই প্রচুর খুঁজে খুঁজে ঠাকুরকে আনলাম। যে ঠাকুর সারা বছর আমার সঙ্গে থাকবেন, তাঁর মুখ যেন মায়ের মতো হয়। এত সুন্দর ঠাকুর পেলাম, তাঁকে এবছর ভাসান দিতে হবে ভেবেই মন খারাপ। এছাড়া ভোগ রান্না, আলপনা দেওয়া সবই তো ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া।’
বাগদেবীর আরাধনায় কিয়ার সাজ-পর্ব কেমন চলে? ‘গত দু’বছরই শাড়ি ড্রেস পরিয়েছি। তবে বাসন্তী নয়। লাল আর রানি । বাসন্তী তো সবাই পরে। তাই আলাদা চেয়েছিলাম। ওর হাতের মতো চুড়িও জোগাড় করেছিলাম। সুন্দর করে সাজিয়ে মা সরস্বতীর সামনে বসানো, হাতে ফুল দেওয়া— একটা অন্যরকম তৃপ্তি! মন দিয়ে অঞ্জলি দেয় মেয়ে। খুবই লক্ষ্মী!’
যুগ বদলায়। তার সঙ্গে সময়ও। তবু কিছু  জিনিস হয়তো এভাবেই বেঁচে থাকে। বেঁচে থাক!  

21st     January,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ