বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

নেক  নজরে

মুখের ত্বকের চেয়ে গলার ত্বক আগে বুড়িয়ে যায়। তাই সময় থাকতে গলার দিকে নজর না দিলে চামড়া ঝুলে যাবে দ্রুত। সমাধান কী, লিখছেন অন্বেষা দত্ত।

মুচকি হাসি কিংবা অট্টহাস্য। অথবা আলসে হাই। বা ধরুন রসিয়ে রসিয়ে চিবিয়ে খাওয়া। আর সর্বোপরি কথা বলা— সবেতেই আমাদের মুখ নাড়তে হয়। কিন্তু মজার কথা হল, আপাতভাবে মুখের এইসব ক্রিয়াকর্ম যতটা আমাদের নজরে পড়ে, ততটা নজর থাকে না নেক-এ বা গলায়। আমাদের গলার নড়াচড়া কিন্তু কম নয়। বলা ভালো, মুখের তুলনায় অনেক বেশি। কেন জানেন? আপনি ঘুমের সময়ের কথা ভাবুন। ঘুমের মধ্যেও এপাশ ওপাশ যতবার করছেন, ততবার গলার মুভমেন্ট হচ্ছে। বা ধরা যাক কোনও কাজের জন্য নিচু হচ্ছেন বা প্রয়োজনে সিলিং-এর দিকে হয়তো তাকালেন, তখনই নড়ল গলা। তাহলে ভাবুন রোজকার এমন নানা কাজকর্মে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে আপনার ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন কী হারে কমছে! আর এই জন্যই মুখের তুলনায় গলা আগে বুড়িয়ে যায়। 

কেন বুড়িয়ে যায়
কোলাজেন আর ইলাস্টিন আমাদের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়লে এই দু’টি উপাদানই কমতে থাকে। যার জন্য চামড়া ধীরে ধীরে কুঁচকে যায়। রিঙ্কল বা ভাঁজ পড়তে থাকে। আধুনিক কাজের ধরনে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়। প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকানো আর এক বদঅভ্যাস যা আমরা রপ্ত করেছি এই সময়ে। দু’টি কারণই আমাদের গলার চামড়া দ্রুত ঝুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোভিডের পর থেকে সারা পৃথিবীতেই স্ক্রিন টাইম বেড়ে গিয়েছে মারাত্মক। সেই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না আমরা। স্ক্রিন দেখার জন্য যতবার ঝুঁকছি, ততবার গলার চামড়ায় অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছি আমরা। এটার প্রভাব পড়ছে কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের উপর।  
বুড়িয়ে যাওয়ার আগে থেকেই তাই গলার যত্ন নিতে শুরু করলে ক্ষতি অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব। বয়স কুড়ি ছোঁয়া থেকেই যদি একটা স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলা যায়, সেটা কাজ দেয় বেশি বয়েসে। যার মধ্যে রয়েছে রোজ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, রাতে ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজ করে শুতে যাওয়া ইত্যাদি অবশ্যপালনীয় কিছু কাজ। পঞ্চাশ ছুঁতে ছুঁতেই আমাদের ত্বককে টানটান রাখার উপাদানের ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। তখন যা বেঁচেবর্তে থাকে, তা দিয়ে ত্বকের আশ মেটে না। কোলাজেন নিজেই তখন বুড়োচ্ছে কি না। অথচ মুখের যত্নে প্রাণপাত করলেও গলার কথা একরকম ভুলেই থাকি আমরা। কিন্তু এ ভুলে থাকা ভালো থাকা নয়!

সমাধান কী
গলার যৌবন ধরে রাখার কিছু পথ বাতলে দিলেন রূপ বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ। তিনি জানালেন, পুরো শরীরের সঙ্গে গলার যত্ন অবশ্যই নেওয়া উচিত। অনেকেই মুখের বা হাত-পায়ের নিয়মিত যত্ন করেন, কিন্তু গলা বা ঘাড়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করেন। তাঁর মতে, এই যত্ন শুরু করা উচিত ছোটবেলা থেকে। অর্থাৎ ৮-১০ বছর ছুঁলেই এই যত্ন শুরু করা উচিত। তা না করলে অনেকেরই ঘাড়ে বা গলায় কালো প্যাচ তৈরি হয়। সেটা যে সবসময় নোংরা জমে হয়, তা নয়। অযত্ন থেকেও হয়। কীরকম যত্ন? কেয়া শেঠ বললেন, ‘মনে রাখতে হবে যে ক্রিমটা মুখে মাখব, তার অবশিষ্টাংশ গলায় আর ঘাড়ে মেখে নেব। মুখে যত্ন করছি, অথচ মুখ সংলগ্ন গলার দিকে তাকাচ্ছি না। সেটা কালো হয়ে যাচ্ছে। তাতে তো মুখের জৌলুসও নষ্ট হয়।’ আর কী কী উপায়ে গলা বা ঘাড়ের যত্ন নিতে হবে? তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন স্নানের সময় যেমন সারা শরীরে বডি শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করি, তেমন গলা-ঘাড়ের ক্ষেত্রেও করতে হবে। তারপর বডি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার যাই মাখুন, সেটা গলাতেও লাগান। সপ্তাহে দু-তিন দিন স্ক্রাব করা উচিত। যাদের ভারী চেহারা তাদের বেশি করে করা উচিত। কারণ ঘাড়ে বা গলার ভাঁজে ভাঁজে ময়লা ও ধুলো জমতে থাকে। ঘাম হলে সেগুলো চেপে বসে। গরমকালে পাউডারও জমে। তাই ঠিকমতো পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’ গলা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে মাসাজের মুভমেন্ট কেমন থাকবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কেয়ার মতে, থুতনি (চিনবোন) থেকে গলার ভাঁজ (কণ্ঠার কাছে) নীচের দিকে টানতে হবে। এতে ডবল চিন-ও কভার হবে। তেল বা ভালো ক্রিম দিয়ে মিনিট পাঁচেক মাসাজ করা উচিত। এতে চিনবোন ঠিক থাকে। আর গলার চামড়ায় রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। এমনিতে শরীরের অন্য অংশের থেকে গলার চামড়া ভীষণ লুজ থাকে। যে কারণে ভারী চেহারার ব্যক্তিদের গলায় ঘাড়ে ফ্যাট বেশি জমে। আবার সে রোগা হলে চামড়াটা দ্রুত ঝুলে যায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে গলার চামড়ার কতটা দেখভাল দরকার। ফেসপ্যাক লাগালেও তা গলার ব্লাউজ লেন্থ পর্যন্ত লাগাতে হবে।   

স্কিন ট্রিটমেন্ট
গলার চামড়া বুড়িয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে স্কিন ট্রিটমেন্ট করান। সেটা কতটা উপকারী বা তাতে কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে কি? কেয়া শেঠ জানালেন, যাঁদের বয়স হয়েছে, ওই অংশের স্কিন অনেকটা লুজ হয়ে গিয়েছে, সেটা ১০০ শতাংশ ঠিক করা কখনওই সম্ভবপর হয় না। তবে প্রয়োজন পড়লে লেজার ট্রিটমেন্ট চামড়া টানটান করে দেয়। গলার ভাঁজগুলোয় ফিলার করে দেওয়া হয়। কারও কারও জন্মগত দাগ থাকে, সেটা কিছু করা যায় না। কিন্তু বয়সের ভারে তৈরি হওয়া দাগের চিকিৎসা করা যায়। আগেকার দিনে বলা হতো, যে মেয়ের গলায় যত দাগ, তার গানের গলা তত ভালো হবে। এসব কথার কোনও ভিত্তি নেই। 
গলার চামড়া টানটান করতে থ্রেডও করা হয়। তারের সুতো দিয়ে এই প্রক্রিয়ায় কাজটি হয়। গলার চামড়ার নীচের লেয়ার থেকে কাঁথা স্টিচের মতো একটা সুতো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একদিক থেকে ধরে সেটিকে অন্য দিক থেকে টেনে ধরা হয়, তাতে গলা টানটান হয়। ডবল চিন কমানো যায়। এতে ক্ষতি নেই। এগুলোর প্রভাব সারা জীবন থাকবে, এমনও নয়। কোনওটা ছ’মাস কোনওটা বা এক মাস — এইরকম।  মেয়াদ ফুরলে আবার করাতে হয়। এছাড়া গলায় ব্ল্যাক প্যাচ, ডবল চিন থাকলে তারও ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

ঘরোয়া পথ
গলার চামড়া বুড়িয়ে যাওয়া রুখতে একটা ঘরোয়া উপায়ও আছে। কেয়া শেঠ বললেন, গলায় ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে একটা পাকা কলা (মর্তমান), এক চামচ মধু, অল্প চিনি, হাফ চা চামচ কফি গুঁড়ো দিয়ে সব চটকে মেখে তার সঙ্গে একটু অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার এটা দিয়ে স্ক্রাব করুন গলায়। এতে ময়েশ্চারাইজ তো হবেই, কালো দাগও উঠবে। এর সঙ্গে প্রচুর ফেসিয়াল এক্সারসাইজ আছে, সেগুলো খুব জটিল এমন নয়। সেগুলো নিয়মিত করলে গলার ফ্যাট অনেকটাই ঝরে যাবে। ফ্যাট না জমলে সেখানে ভাঁজ পড়ার সম্ভাবনাও কমবে। 
 

24th     December,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ