মা আসছেন। মায়ের উৎসবে ঘরের মায়েদের কথা ভুলে যাই কীভাবে? লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
নেহা ধুপিয়া, করিনা কাপুর বা সমীরা রেড্ডি। নামগুলো কেন এক সারিতে ফেললাম? হ্যাঁ, প্রত্যেকেই বলিউড অভিনেত্রী, কেউ বেশি জনপ্রিয়, কেউ কম। কিন্তু তাঁদের এক সুতোয় গাঁথার জন্য সেটা কমন ফ্যাক্টর নয়। তাঁরা এক, অন্য একটা জায়গায়। সময়ের একটু-আধটু ফারাকে এঁরা প্রত্যেকে মা হয়েছেন। তবে তাঁদের মা হওয়ার যাত্রাপথটা বেশ ব্যতিক্রমী। আর তাই তাঁদের এক সারিতে রেখে সমসময়ের মেয়েরা যদি আতসকাচে গোটা বিষয়টা দেখেন, দেখবেন অনেক কিছু আর আগের মতো নেই। চোখে ধরা পড়বে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন। যেটা ভাবী মায়েদের উদ্বুদ্ধ করতে তো পারেই, আর তার সঙ্গে পাল্টে দিতে পারে সমাজের একবগ্গা দেখার ধরনটাও।
কীরকম?
কনসিভ করার পর থেকে গোটা প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড এবং মা হওয়ার পরবর্তী সময় নেহা-করিনা-সমীরা বাঁচছেন প্রাণভরে। কখনও কাউকে অবসাদ এসে ধরলেও সময় নিয়ে তাকে পেরিয়েছেন বলিষ্ঠতার সঙ্গে। তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট থেকে একটা বার্তা স্পষ্ট: যাঁরা মা হতে চান বা হয়েছেন, অগুনতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে তাঁদের নিজেকে ভালো রাখার বিষয়টিকেও খুব সিরিয়াসলি নিতে হবে। যেটা ফেলে আসা সময়ে আমাদের মা-মাসিরা কখনওই ভাবেননি, বা বলা ভালো তাঁদের ভাবতে দেওয়া হয়নি। সন্তানের ভালো যেমন অবশ্যই ভাবতে হবে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাহ্যিকভাবে এবং অন্তর থেকে মায়ের ভালো থাকাটাও যে জরুরি, এটা অতীতের মায়েদের অনেকেরই চিন্তনে কখনও জায়গা করে নেয়নি। কারণ সমাজ তাঁদের সেভাবে ভাবতেই শেখায়নি।
ভালো থাকা
কাল বদলেছে। দেখার ধরনও। তাই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে শরীরী পরিবর্তনের জন্য কোনও মেয়ে এখন নিজেকে রেখেঢেকে বা লুকিয়ে রাখায় বিশ্বাসী নয়। বলি-মায়েরা সেটাই করে দেখিয়েছেন দৃপ্তভাবে। নেহা দুই সন্তানের জননী হয়েও নিজেকে সুন্দর রাখার মন্ত্র বিসর্জন দেননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মায়েরা যেটা করে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরা থেকে যে কুণ্ঠার শুরু, তা কিন্তু শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। আড়াল-আবডাল থেকে সে কুণ্ঠাই যেন নতুন মা-কে তাড়িয়ে বেড়ায়। মা সাজতে গেলে অপরাধবোধে ভোগেন। হয়তো অজুহাত দেন, সময় নেই। কিন্তু কেন? নিজেকে ভালোবাসা বা ভালো রাখায় কোনও
অপরাধ রয়েছে কি?
আর পাঁচজনের ভালো থাকার মতো হবু মা ও নতুন মায়ের ভালো থাকা এবং ভালো থাকতে চাওয়া তো খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু গোটাটাই শিশুর ভালো থাকায় পর্যবসিত হয়। অনেক সময় পরিবারের কেউ কেউ মায়ের খানিক যত্ন করলেও শুনিয়ে দেন, ‘তোমার জন্য করছি না। করছি যে আসছে, তার কথা ভেবে।’ অনেকেই মনে রাখেন না, মা হতে গিয়ে যে অসংখ্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একজন মহিলাকে, তাতে তিনি নিজেকে ভালো রাখার প্রয়োজনটুকু ভুলে যান। এত কিছু নতুনের সঙ্গে তাঁকে মানিয়ে নিতে হয় যে খেই হারিয়ে যায়। কিন্তু এই সময়টায় নিজেকে হারিয়ে না ফেলে নিজের দিকে নজর দিলে মাতৃত্বের সুখ অনুধাবন করতে এতটুকু ব্যত্যয় হয় না।
উপায় কী কী
মা হওয়ার আগে-পরে যোগাসন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মতো নানা নিয়মে থেকে নিজের আগেকার চেহারায় ফিরে গিয়েছেন করিনা কাপুর, এ তাঁর চাওয়া। অতীতের মতো স্মার্ট, ট্র্যাডিশনাল সব পোশাকই এখন পরছেন তিনি। নেহা নিজেকে ফিট রেখেছেন। মা হওয়ার ফলে শরীরে জমা হওয়া বাড়তি ওজন ঝরাতেই হবে, আগেকার ফিগার ফিরে পেতেই হবে, এমন কোনও টার্গেট স্থির করে তিনি এগননি, এটা তাঁরই চাওয়া। নিজস্ব স্টাইলোমিটার ঠিক করে নিয়েছেন তিনি। অ্যান্টিফিট মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ পোশাকে তাঁর দুরন্ত ফ্যাশন স্টেটমেন্ট রীতিমতো চোখে পড়ে। সমীরা প্রথম সন্তান আসার পর ওজন বেড়ে যাওয়া সহ নানা পরিবর্তনের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য। দ্বিতীয় সন্তান আসার পরে তাঁর ভাবনা বদলেছে। মা হওয়া এবং মা হওয়ার আগেকার মেয়েটা— দুটোই যে তিনি, একথা পরে মানতে পেরেছেন সহজভাবে। তাই সমাজের মেপে দেওয়া কাঁটায় ওজন দেখে আর কষ্ট পান না। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য এক্সারসাইজ করেন। সন্তানদের নিয়ে স্টাইলিশ নানা পোশাকে জীবনকে উপভোগ করেন, এ তাঁর চাওয়া। আমাদের রাজ্যের জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী কোয়েল এবং শুভশ্রীও কিন্তু অনেকটা একই পথে নিজের ভালো থাকায় মন দিয়েছেন। সন্তানকে প্রায়োরিটি দিয়েই। অতিরিক্ত ওজন ঝরানোর জন্য তাড়াহুড়ো করেননি, চেহারা নিয়ে ট্রোলিংয়ের মুখে পড়লেও তা গায়ে মাখেননি।
অনুপ্রেরণা
নিজেকে ভালো রাখা মানে শুধুই পোশাকের মধ্যে দিয়ে তা বোঝাতে হবে, তা নিশ্চয়ই নয়। আপনি যদি ভেতর থেকে ভালো থাকেন, সেই ভালো থাকাটাই আপনাকে দিয়ে করিয়ে নেবে সব স্বতঃস্ফূর্ত কাজ, যাতে
আপনি নিজের মতো স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারেন। তাহলে প্রেগন্যান্সি বা তারপরেও নতুন মায়ের চলার পথে নুড়িপাথরগুলো পায়ে বিঁধবে না।
নিজেকে কীভাবে মোটিভেট করবেন? সংবাদমাধ্যমে শোনা নেহার কথা, ‘আমি কোনও স্টিরিওটাইপ ভাঙার চেষ্টা করি না। গত কয়েক বছরে ক্রমশ নিজে নিজের মতো থাকতে স্বচ্ছন্দ হয়েছি কেবল। বয়স বাড়লে বুঝেছি সেটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের। কাউকে আঘাত না দিয়ে নিজের মতো থাকো, সেটাই আমার চাওয়া।’ নিজেকে ভালো রাখা বা নিজের মতো থাকার সময় পান তিনি? নেহার উত্তর, ‘এখন আমার স্টাইলটাও আমারই মতো। কী পরছি বা পরব তাই নিয়ে কম ভাবি। রেডি হওয়া নিয়ে কোনও চাপ কাজ করে না আমার মধ্যে।’
করিনা কাপুরকে বি টাউনের সবচেয়ে ‘ফিট মম’-এর তকমা দেওয়া হয়। মেটারনিটি অ্যাথলিজারে তাঁর যোগাসনের পোস্ট হবু মায়েদের অনেককেই অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আরামদায়ক কাফতান হোক বা লং গাউন, সবেতেই তাঁকে মনে হতো অভিজাত। এসব পোশাকে আরামই প্রথম সারিতে। তারপরে স্টাইল কোশেন্ট। যাতে আরাম পাবেন, তা আপনাকে এমনিতেই স্টাইলিশ করে তুলবে। চেহারা যখন আর বলিউডের নিখুঁত সুন্দরী নায়িকার মতো নেই? ভারী চেহারা, মুখে ক্লান্তির ছাপ— সে ছবি কি কেউ ফিরে দেখে? সমীরা দেখতেন। অবাধ আত্মবিশ্বাসে সে ছবি এখন পোস্ট করে তিনি মনে করান, ওই তিনিটাও তিনিই। তাকে ফিরে দেখায় কোনও গ্লানি নেই। সমাজ যতই সাইজ জিরো ঠিক করুক, সুস্থতাই হোক আপনার বাঁচার মন্ত্র।